কোরাস ২.০

 

কোরাস ২.০

 

পিছনে আততায়ী নিয়ে হেঁটে দেখছো কি?

কিংবা মুখোমুখি ছদ্মবেশী খুনির স্বরূপ

 

সকলেই বোকা নয়, কিংবা বোকা সেজে

থাকে না সকলে। তাই আমার মতোন

 

মানুষের ভিড় বাড়ে মিছিলের নাগরিক পথে

মিছিলের নিজস্ব সংবিধান থাকে

 

তার বাইরে আততায়ী ঘোরাফেরা করে

বেয়াদপ দেখলেই ঘাড় মটকে দেবে ধরে

 

তবু ভালো পা মেলানো মিছিলে মিছিলে

কোরাসের ঘেরাটোপ বরং নিরাপদ এখানে

 

২৯শে নভেম্বর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

অ আ ক খ

 

                                                অ আ ক খ

                                               লাইনে দাঁড়িয়ে আছি

                                                সকলের পিছনে

                                                তবু পিছনে ভিড় বাড়ে

                                               

                                                সামনে অনন্ত সময়

                                                অপেক্ষামান, ধৈর্য্যের ধারে

                                                শান দিয়ে নিয়মিত

                                               

                                                আমার কোন নতুন কথা নেই

                                                লাইনের নিজস্ব ভাষা থাকে

                                                শিখে নিতে হয়

                                               

                                                অন্য কথা কাজে আসে না কোন

                                                যারা বলে, তারা কল্কে পায় না

                                                যারা পায়, তারা বলে না কখনো

                                               

                                                ২৯শে নভেম্বর ২০২২

                                                ©শ্রীশুভ্র

                                               

                                               

অবসর

 

অবসর

 

এখন অবসর যাপনে এসে

তার কথা মনে পড়ে খুব

 

কর্মের কোলাহল থেকে দূরে

দেনা পাওনা মিটিয়ে দিয়ে

 

সেও যেন এসে দাঁড়ায়

কাছে, কাছাকাছি

 

মুখ তুলে মুখোমুখি

বসি দুজনে

 

চোখ জানে চোখের ভাষ্য

চোখে চোখে

 

কথা কানাকানি হয়

যে কথা হয়নি বলা

 

কোনদিন আগে, তাও যেন

বলা হয়ে যায় অবসর যাপনে

 

২৯শে নভেম্বর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

আদি অন্তহীন

 

আদি অন্তহীন

 

মহাকালের উত্তর জানা নেই

নিজের যোগ্যতার খোঁজ রাখি না

সাফ কথা, আমি মন্ত্রহীন

 

এই দেশ এই বিশ্ব কিংবা চরাচর জুড়ে

কথা আর কবিতার কোলাজে

আমার কোন সাক্ষর নেই

 

না থাক। ক্ষতি নেই

প্রতিদিন দুবেলা পেটে ভাত পড়ুক

সাকি আর সুরায় সন্ধ্যা রাত্রি হোক

 

তৃপ্তির আঙিনা জুড়ে ছড়িয়ে থাকুক

বাপ ঠাকুর্দার বনেদি ঢেঁকুড়

দেহের ভাঁজে ভাঁজে মহাকাল খেলে যাক

 

২৯শে নভেম্বর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

তালপাতার সিপাই

 

তালপাতার সিপাই

 

তালপাতার সিপাইয়ের সাজে

উপদ্রুত সময় উদ্ধার, বড়ো কঠিন

তবু বনেদী সংলাপে কুচকাওয়াজ চলে

রাত্রিদিন না হোক, সময় অসময়ে

 

এসময় এমনই হয়। চারিদিক বিবস্ত্র নগরী

উৎসবে শোকে আমোদে আহ্লাদে,

মুখোশ নৃত্যের তালে তালে ভিড় বাড়ে

সে ভিড়ে বিব্রত হতে হয় নিজেকে নিয়ে

 

জমানো হিতোপদেশ ঝেড়েঝুড়ে দেখেছি

প্রলাপের অট্টোহাসির মতোন শোনায়

বাকিরা কানাকানি করে চাপা হাসি ঠোঁটে

আমি তাই নিজেকে শুধরে নিতে যাই

 

তালপাতার সিপাইয়ের সাজ তোলা থাক

কানকাটা বেহায়া না হোক, চাপাচুপি দিয়ে

তবু যদি মুখোশে মুখ ঢোকানো যায়

উলঙ্গ নৃত্যে তবে পরস্পর বেশ মানায়

 

২৯শে নভেম্বর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

নাগরিক পাঁচালি

 

নাগরিক পাঁচালি

 

সমাজের কথা বলি না

সমাজ গোল্লায় যাক

আয়নায় নিজেকে সাজাই

 

দেশের কথা জানি না

দেশ গোল্লায় যাক

নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত প্রতিদিন

 

এবং সুখী গৃহকোণে

হাসিখুশি দাম্পত্য

সেখানেই সাবলীল সৌন্দর্য্য

 

নাগরিক এপিসোড জুড়ে

সম্ভোগের তাথৈ নৃত্যে

পা মেলাই, আপনিও আসুন বরং

 

২৯শে নভেম্বর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

প্রধান অতিথি

 

প্রধান অতিথি

 

ফিতে কাটার সময় হলে

আমাকে ডাকবেন

আমি ফিতে কাটার সনদ পেয়েছি

 

দেখে নেবেন আগে

মোড়কের বহুবর্ণ ঠাট

ঠিকঠাক পর্যাপ্ত কিনা

 

ভুষিমাল চালাতে চাইলেও

অসুবিধে কি, বলবেন আমাকে

ফিতে কেটে দেবো

 

একেবারে ঝকঝকে অক্ষরে

সাজানো কথার ফুলঝুড়ি

যে কোন ভিড় সেটুকুই চায়

 

২৯শে নভেম্বর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 

ব’য়ে বুদ্ধিজীবী

 

ব’য়ে বুদ্ধিজীবী

 

অনেকেই জানে মেরুদণ্ড থাকলে

কখন কোথায় ঝুলিয়ে রাখতে হয়

আমিও তাই শিরদাঁড়া সামলে সামলে চলি

 

মাথা দোলাই, হাত কচলিয়ে দণ্ডবৎ

দুই কান খাড়া রেখে সজাগ থাকি

আকর্ণ বিস্তৃত হাসিতে সেলাম ঠুকি

 

তারপরেও ঠোকাঠুকি লেগে গেলে

শিরদাঁড়া মেরামত করে নিই, নতশিরে

টোটকায় কাজ দেয় ভালো, তাল ঠিক থাকে

 

তালে তালে বাকিদের সাথে, হ্যাঁ হ্যাঁ

আমিও ভালো থাকি। ঘরদোর নতুন নতুন

স্মিতহাসি ঘরণীর কোলে মাথা রাখি

 

ক্ষমতার লেজ নাড়া দেখি চোখ বুঁজে

খুঁজে খুঁজে খুঁটে খুঁটে আখের গোছাই

সন্তান সন্ততি যেন থাকে দুধে ভাতে

 

২৯শে নভেন্বর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

বেহালাবাদ্য

 

বেহালাবাদ্য

 

সম্প্রতি বেহালা বাজানো শিখছি

জানি না, নিরোর মতোন সুরঝংকার

 

প্রয়োজনের সময় আয়ত্ত হবে কিনা,

তবু চেষ্টার অন্ত নেই

 

তড়িতাহত ধুকপুক সময়ের ঘোলাটে চোখে

চোখ রেখে শিল্পের নোটেশান টুকে রাখি হৃদয়ে

 

বাকি সব সভাকবিদের সভামঞ্চের নীচে

বসে থেকে জীবনের অ আ ক খ শিখি

 

বেহালার সুর মূর্ছনায় মজে থাকার কৌশল

আয়ত্ত করা, বড়ো সহজ কথা নয়

 

২৯শে নভেম্বর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

সংযোগ

 

সংযোগ

 

নৈঃশব্দের কানে কানে

কথা বলে দেখেছি

নিজের কথা স্পষ্ট শোনা যায়

 

কত কিছু বলার রয়েছে

সকলেই তো আর শ্রো‌তা নয়

সবকিছু ঠিকঠাক শুনে যাবে

 

নিস্তবদ্ধ সময়ের মতো

কোন কাল পেলে

কত ভালো হতো

 

মন খুলে কথা বলা যেত

যেসব কথা মুখে আনতে

লজ্জা হয়,

 

যেসব কথায় ভিত টলে ওঠে

হিতোপদেশ গড়াগড়ি খায়

বাকিরা কান চাপা দেয়

 

তবু নৈঃশব্দের কানে কানে

কথা বলা ভালো

নিজের কথা নিজে শোনা যায়

 

২৯শে নভেম্বর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

আবহমান অন্ধকার

 

আবহমান অন্ধকার

 

আমাদের শিকড়ে শিকড়ে ছড়িয়ে রয়েছে

দ্বেষ, সকাল বিকাল দর্পণে মুখ দেখে নিয়ে

তবু চমৎকৃত হই… আশ্বস্ত করি হৃদয়কে

দেখো আমি ভালো আছি, এগিয়ে চলেছি

 

পরস্পর কোলাকুলির সন্ধ্যায় করমর্দনের

গীতিআলেখ্য গাঁথি পারস্পরিক অনুমোদনে

সকলেই শান দিয়ে চলেছি শানিত আঁধার

মননের দিগন্তজুড়ে ঐতিহ্যের নকশিকাঁথায়

 

আমাদের মাটির শিরায় শিরায়, আবহমান

অন্ধকার হামাগুড়ি দিয়ে চলেছে নিরন্তর

গর্ভধারণের দিনে আমরাও সামিল সেই

-উৎসবে। অনন্ত উদ্দীপনায় রাত্রি নিশীথে

 

৪ঠা অক্টোবর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 


আবহমান

 

আবহমান

 

যারা চলে গিয়েছিল বহু আগে

মান্ধাতার বাবার জন্মের সময়

তাদেরও ঠাণ্ডা হাতে হাত রেখে

অনুভব করা যায় স্বচ্ছন্দে

দ্বেষ ঈর্ষাজনিত মনোবিকলন

 

জন্মের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে নিরন্তর

যতদূর ভ্রাম্যমান মানব সমাজ

ততদূর রক্তে ভেজা পথিকের পথ

সংহার কিংবা সুরক্ষায়, সময়ের

দুই মুখেই রক্তের রঙ রক্তিম!

 

এরপরেও বড়ো আশ্চর্য্য লাগে

তোমাকে জড়িয়ে ধরলে, যখন

পরিতৃপ্ত হয়ে ওঠে তোমার মন

বড়ো বিস্ময়ে আনন্দের প্রস্রবণে

হামাগুড়ি দেয় মন্ধাতার বাবার আমল

 

৬ই অক্টোবর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র


ঈশ্বরের সমীপে

 

ঈশ্বরের সমীপে

 

প্রেয়সীর বুকে

উন্মুক্ত আকর্ষণে যখন ক্রমশ

নিমজ্জিত আমি, উন্মত্ত ওষ্ঠের ভাষায়

সব পুরুষই দিশেহারা তখন

তখনই নারীর সময়

 

এবং এই আমি

পূর্ব পুরুষের মতো বারবার

শরীরের অক্লান্ত উৎসাহে

সেই নারীর শরীরের কাছে

                        বন্ধক রেখেছি নিজেকে

 

এত আলো, এমন নীল আকাশের

সীমানা ছেড়ে, নারীর সীমায়

বাকি সব পুরুষের মতো

প্রতিদিন ক্লান্তিহীন আমরা সব

                        কলুর বলদ যেন

 

ঈশ্বরের কথা জানি না

জন্ম মৃত্যু নিয়তির ঘরে, নারীর ইশারায়

পুরুষের ঠিকুজিকুলজি সব ঠিক হয়ে যায়,

পূর্বপুরুষের মতো তাই আমি

                        আমিও সেই নারীর ঠিকানায়

 

২৩শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র


কষ্ট

 

কষ্ট

 

পাহাড় ভাঙ্গা নদীর জলে

কান্না জমে নেই?

 

সময়ের বিষণ্ণ ঘড়িতে?

কিংবা অবসন্ন যৌনমিলনে!

 

কোন কোন ছায়া যখন

প্রলম্বিত হয়, মলিন দেওয়ালে

 

মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছিয়েও

যাঁদের ফিরে আসতে হয়

 

কবর দেওয়া ভালোবাসার স্মৃতিতে

যাঁদের দিন রাত্রি একাকার

 

এঁদের সকলের সাথে কথা বলে

বরং দেখা যাক একবার

 

এত আলো এমন নীল অবকাশ

পিছনে ফেলে কান্নার ভিতরে

 

কি আছে এমন! যার কাছে

নতজানু হতে হয় বারংবার…

 

২৩শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 


ধারাবিবরণী

 

ধারাবিবরণী

 

বাতাস কমে এসেছে

গাছে গাছে পাতায় পাতায়

আতঙ্ক ছড়িয়েছে দ্রুত

 

আমি তবু বন্দুকের শব্দ শুনি

বারুদ পোড়া গন্ধে

শতকের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে

 

ব্রেকিং নিউজের পাঠশালা

খোলা রয়েছে অষ্টপ্রহর

বাকি’রা শান্তিতে ঘুমিয়ে

 

আততায়ীর প্রলম্বিত ছায়ায়

ইতিহাস ঢাকা পড়ে যায়

রাজপথ গলিপথ সব বেদখল হয়

 

ধু ধু মঞ্চে আমি একা

বাকিরা বাড়ি ফিরে গিয়েছে চলে

বন্দুকের নলই পৌরোহিত্য করে সবখানে

 

২৭শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 

 

 


পথের নির্জনে

 

পথের নির্জনে

 

হারিয়ে ফেলেছি

বাড়ি ফেরার পথ

সে পথের ঠিকানা…

হয়ত সে দাঁড়িয়ে রয়েছে

পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে বলে

যাঁকে দাঁড় করিয়ে রেখে

এসেছি একদিন, কুক্ষণে

 

এমনই অনেক দিন

চলে গিয়েছে আলগা হাতের

মুঠো থেকে। যাঁর কাছে

গিয়ে পৌঁছানোর কথা ছিল

মনে করতে পারিনি

হয়তো তারই মুখ

সময়ের ঘূর্ণনে।

 

এদিক ওদিক কত পথ

এগিয়ে চলেছে

পথিকের টানে

তবু নিজের পথরেখাটুকু

ঠিক মতো কজনই বা

খুঁজে পায়, ঘুরে চলি

দিশেহারা পথের নির্জনে

 

২৭শে অক্টোবর

©শ্রীশুভ্র


মধ্যরাতের তূর্য

 

মধ্যরাতের তূর্য

 

বাঁকাচোরা স্বপ্নের রাতে যেমনটা হয়

চেনা পথ হারিয়ে যেতে থাকে

মৃত মানুষ কবর থেকে জেগে উঠে

আবারো হ্যাণ্ডশেক করে ফিরে যায়

 

তেমনই সেই নারী মধ্যরাতের উন্মত্ততায়

একা, কড়া নাড়তে থাকে আমার দরজায়

মশারির ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে থাকা

হাড়পাঁজরা নিয়ে আমি তখন বড়োই বেকায়দায়

 

বিশ্বায়নের দগদগে ক্ষত বুকে নিয়ে

যাঁরা হাঁটতে চায় নাগরিক মিছিলের পতাকায়

বাঁকাচোরা স্বপ্নের মতো বিপ্লবের হাতছানি

তাঁদের মতোই আমাকেও ডাক দিয়ে যায়

 

তবু আমি, নিতান্ত ভালো মানুষের মতো

স্বপ্নের অভিসারে হাতে হাতে হাত ধরি না

এ জীবন প্রপঞ্চময় জেনে, সংযত থাকি

থাকি না বাঁকাচোরা স্বপ্নের ভরসায়…

 

২৩শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 


রোগশয্যায়

 

রোগশয্যায়

 

শব্দের সাথে অভিসার যাদের

প্রতিদিন সহবাসের পর

কবিতার খাতা যাদের ভোরে ওঠে

পুরস্কার মঞ্চের উপরে ডাক পড়ে

বছর বছর। অক্ষরের বর্ণমালায়

বরমাল্য গাঁথা হয়ে যাদের

 

আমি তাদের মতো কেউ নই

তবু কবিতার পাতা উল্টাই

 

শারদীয়া থেকে বইমেলা

কত শব্দ, শব্দের ভিড়ে কেউ কেউ

দিশেহারা হলে হারিয়ে যায়

কলেজস্ট্রীট। চোখের সামনে

শব্দেরা লোফালুফি শুরু করে দেয়

কবি মহাকবি সভাকবিদের

আমি চেয়ে চেয়ে দেখি শুধু

 

অনেকদিন হলো জলের রঙে

চোখ বোলানো হয়নি

অনেকদিন চলে গেছে

যায়নি কার্তিকের নবান্নের মাঠে

অনেকদিন হারিয়ে ফেলে

দেখি, চোখে পড়ে না আর

বিশল্যকরণী। বুক ভরে জমেছে

বিষাদের ভার, কষ্টের কীট

 

নাগরিক সমাজ থেকে

বিক্ষোভ মিছিল, মৌন মোমবাতি

মঞ্চের কাছাকাছি ঘোরে

মঞ্চের উপরে তখন প্রলম্বিত

কবিতা পাঠের আসরে

উঁকি দেয় চেনা চেনা মুখ

সে সব মুখ আমি দেখে ফেলেছি

জেনে গিয়েছি তাদের অসুখ

 

অসুখ নয় রোগ নয় বিকারও নয়

নীরোগ মুখের মানুষ, আমি চোখে দেখিনি

এখনো হাঁটা হয়নি কত পথ

কত পথ বাকি পড়ে রয়েছে জানি না

এদেশের বুকে এখন

আমার মতো নয়, দরকার

মানুষের মতো হৃদয়ের কয়জন পথিক

 

যাঁরা পারি দেবে বাকি পথ

পথের বাঁকে বাঁকে যাঁদের হৃদয়

হৃদয়ের তন্ত্রীতে বেজে উঠবে

মানুষের যন্ত্রণা, আশা আকাঙ্খার

বিশুদ্ধ কবিতা আবার, এই বাংলার বুকে         

কবি নয় মহাকবি নয় সভাকবি নয়

কবিতার পথিক, পথের কবি

পথ যাঁদেরকে ডেকে নেবে

আরও একবার। অন্তরে বাইরে…

 

২৪শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র


সময়ের চক্রব্যূহে

 

সময়ের চক্রব্যূহে

 

এত কথা এত কলরব ছাড়িয়ে

নিস্তব্ধ পাহাড়ের মতো

স্থিতু হয়ে বসতে সাধ হয়

 

কি এমন কথা আর বাকি আছে

দ্বেষ নয় বিদ্বেষ নয়, ঈর্ষার পালে

ভালোবাসার সুরভী ছড়াতে পারে?

 

মহাকাব্যের পাতায় পাতায়

আমাদের স্বপ্ন সাধ সাধনার

সব ইতিহাস লেখা শেষ হয়ে গেছে

 

হাড়হাবাতের স্তুপের উপরে, পতপত

সাম্রাজ্যের জয়পতাকা ওড়ে, মৃত

হাড়গোড় বুকে নিয়ে ইতিহাস পাতা ওল্টায়

 

মধ্যরাতের যোনিতে, তারপরেও…

বিপ্লবের জন্ম হবে বলে তর্কে বিতর্কে

কেউ কেউ এখনো উৎসাহিত হয়

 

সময়ের চক্রব্যূহে সব কথা তবু

বলা হয়ে গিয়েছে বহু আগে

নতুনের বাণী, সবটাই অলীক কাহিনী

 

২৩শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র


সুড়ঙ্গ

সুড়ঙ্গ

 

এদিকে অনন্ত সুড়ঙ্গ, আবহমান কালপর্ব জুড়ে

সময়ের পাকদণ্ডী বেয়ে নিরন্তর ঘুরপাক খায়

তুমি বলবে, তবু ভালোবাসি, ভালোবেসেছি তোমায়

 

প্রতিদিনের এক একটি আমি জুড়ে, জোড়াতালি দিয়ে

যে উপাখ্যান-মালা তুলে দিয়েছি তোমার দুই হাতে

সেখানে বিস্তর গলদ রয়ে গিয়েছে, সাদাতে কালোতে

 

উত্তেজক আদরের মায়াজালে প্রতি রাত সহবাসের পর

নিজেকে চিনে নিতে সুবিধে হয় অনেক, প্রবঞ্চক

অন্তর্দাহের উত্তাপে ঘেমে উঠলে শরীর, ফুরফুরে মন

 

তারপর অবাঞ্ছিত উপদ্রবের মতো বিদঘুটে অন্ধকারে

নিষিদ্ধ প্রশ্নমালার উকুন সারা মাথা দাপিয়ে বেড়ালে

যদি আহত করে ফেলি তোমায়, ক্ষমা করে দিও প্রিয়

 

৫ই অক্টোবর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 


সময়ের ক্ষত

 

 

 

সময়ের ক্ষত

 

মৃত হাড়গোড় নিয়ে সময়ের ক্ষত

মাটি পাথরের বুকে, ক্ষোভ লালসা

বারুদের গন্ধ সব জমা করা আছে

 

ক্রমাগত মিথ্যের আঁচড় বুকে নিয়ে

দাঁড়িয়ে থাকে শপথের অক্ষর, শব্দ-

মালা, ফাঁপা প্রত্যয় আর অভিসন্ধি

 

আমি দেখেছি কিভাবে ইতিহাসের

পাতা জুড়ে, ভুল আর ভুলের পাহাড়

একই নাটক মঞ্চস্থ হয় প্রতিদিন

 

যতদূর চোখ যায়, চতুর্দিক জুড়েই

যতদূর যায় না দেখা, তারও বেশি

এক পৃথিবী পাপের পূর্ণ ঘড়ায় –

 

পুণ্যের নকশীকাঁথা বোনা হয় যত্নে

প্রযত্নে সুশীলসমাজ বুদ্ধিজীবী মোহন্ত

মুখ আর মুখোশ এক হয়ে যায়, ক্রমে

 

৬ই সেপটেম্বর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 

মড়ক

 

 

 

মড়ক

 

ছাই চাপা দিতে দিতে দেখি

খসে পড়ে লজ্জার আবরণ

ধামাচাপা দেওয়া অধ্যায়গুলি

দুর্গন্ধ ছড়ায় মড়কের

 

ভোকাট্টা ঘুড়ির সুতোর মতো

আত্মসম্মান ধুলায় লুটালে

ঘুণ ধরা কাঠের মতো অট্টহাস্য

আনন্দ করে নেয় বিরোধী শিবির

 

সব অক্ষর ম্লান হয়ে গেলে

ভিড় পাতলা হয় দিনে দিনে

উদাসীন সময় সরণীতে

ইতিহাস পাতা উল্টিয়ে নেয় ধীরে

 

৪ঠা সেপটেম্বর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

এই আমি

 

 

 

এই আমি

 

স্বপ্নের ইতিবৃত্ত ঘিরে রাখে

আকাঙ্খার বনেদি চৌকাঠ

শতাব্দীর পাকদণ্ডি বেয়ে বেয়ে

দোতারার সুর ঝংকারের নদী’র মত

এই আমি, পাপ নয় পুণ্য নয়

ইতিহাসের শাদা পাতা জুড়ে

স্বপ্ন থেকে স্বপ্নের ভিতরে

আকাঙ্খার বনেদি চৌকাঠে

 

সময়ের বালুতটে নির্জন রাত নামে

উদাসীন ঈশ্বরের মতো নিষ্পলক

এই পৃথিবী, কিংবা আরও দূর

সময়ের পিছনে এগিয়ে গেলে

এই আমি, স্বপ্ন থেকে স্বপ্নের ভিতরে

আকাঙ্খার বনেদি চৌকাঠে…

 

৩রা সেপটেম্বর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

রেলিং

 

 

 

রেলিং

 

দুই চোখে ঘুম লেগে রয়েছে…

যাপিত জীবন জুড়ে

টলমল সাঁকোর রেলিঙ ধরে

হেঁটে যাই। আমিও বকিদের মতো

চোখ বুঁজে জানি

কোন দিকে হেঁটে যেতে হবে কতখানি

তারপরে সরকারী বেতার ভাষণে

দেশপ্রেমের পাঠ নিতে নিতে

একদিন ইহকালের শেষ চৌকাঠে

বেহেড মাতালের মতো

নিশ্চিন্তের একটানা ঘুমে পড়ে থাকা

যে ঘুম ভাঙ্গে না কখনো!

 

দুই চোখে ঘুম লেগে রয়েছে…

যাপিত জীবন জুড়ে, এই ভালো

রেলিং ধরে হেঁটে যাওয়া শুধু

টলমলে সাঁকোর উপরে

 

২রা সেপটেম্বর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

আত্মজৈবনিক ২


  

 

আত্মজৈবনিক ২

 

আমি ঈশ্বরের কথা ভাবি না

তার ঘেকে ভালো পেট ভরা সাদা ভাত,

নামাজ দোয়া, সন্ধ্যাহ্ণিক জানি না

খাদ্যের সন্ধানে আয়ু ফুরিয়ে যায়

গীতা বাইবেল কোরান ত্রিপিটক

আপাতত কুলুঙ্গিতে তোলা থাক

মৃত্যুর পর, অখণ্ড অবসরে

ধর্মের কথা নিশ্চিন্তে পড়া যাবে

 

আমি ঈশ্বরের কথা ভাবি না

তার থেকে ভালো প্রেমিকার হাসি মুখ

নামাজ দোয়া সন্ধ্যাহ্ণিক জানি না

মধ্যরাতের মিলনেই পাই সুখ

 

২রা সেপটেম্বর ২০২২

© শ্রীশুভ্র

 

 

 

আঘ্রাণ

 

 

 

আঘ্রাণ

 

নারীর গন্ধে ভরপুর সন্ধ্যা

তুলসী প্রদীপ থেকে

বলড্যান্সের ফ্লোর,

 

বিজ্ঞাপন আর হলিউড

হরিপদ কেরানীর বৌ

কিংবা প্রিন্সেস ডায়না

 

গন্ধবিধুর সমীরণে

কবিতার অক্ষর কিংবা

দলিলের স্বাক্ষরে

 

পুরুষ তার লেখে নাম

বীর্য পতনের শব্দ, কিংবা

কালের কপোলতলে

 

শুভ্র সমুজ্জ্বল তাজমহল

নারীর গন্ধে ভরপুর

স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যত

 

আর আদরের ধুম!

 

১১ই নভেম্বর’ ২০২১

©শ্রীশুভ্র

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন