দূরত্ব কত নিকটে

 

দূরত্ব কত নিকটে

 

পঁচিশ বছর পর

অনেকটা সময় চলে গেল তোমার আমার....

কিছুটা মেদ জমেছে চর্বিতে

কিছুটা ব্যালেন্স বেড়েছে ডিপোজিটে

দৃষ্টিতে উঠেছে বাইফোকাল

অনেকটা দেখা যায় এখন

শুধু শিহরণ গেছে কমে

হাসিতে ঝুলিয়ে অভিজ্ঞতার ব্যানার

আমাদের গতি হয়েছে মন্থর

 তবে স্থিতপ্রাজ্ঞ অনেক এখন সময় মূল্যবান

হাতঘড়িতেই বাস

 

পঁচিশ বছর পর তোমাকে অনেক স্পষ্ট পড়তে পারি এখন

নিজেকে জেনেছি যে অনেক দেখে

আজ ধর হয়ত দেখা হয়ে গেল কোথাও তোমার আমার?

জানি অপ্রস্তুত হব না দুজনে

যে হাসিটা দিয়ে নিজেদের আড়াল করব,

সেটা মহার্ঘ্য হলেও

দুর্মূল্য নয়

অনেক অমূল্য সঞ্চয় অর্জিত আমাদের বিপ্রতীপ পথে

পঁচিশ বছর ধরে

 

(২০/০৮/১২)

দেওয়াল

 

দেওয়াল

 

এইখানে আর রাজপথ নাই

অভিশাপের দেওয়াল উঠেছে খাঁড়া

করোটিতে রৌদ্র দগ্ধ দিন

শিকড় ধরে দিল প্রবল নাড়া

 

মায়ামৃগের স্বপ্ন ছেঁচে রোজ

দিন রাত্রির উথাল পাতাল খোঁজ

স্নায়ু শিরার কণ্টকিত পথে

ছুটতে ছুটতে উঠতে হবে রথে

 

তবুও আমার শরীর জুড়ে ঘাম

জুড়িয়ে ছিল তোমার শুভ নাম

পথের মাঝে পথ হারানোর গ্লানি

নষ্ট রাতের ব্যর্থ মিলন খানি

 

সাত সমুদ্র তেরো নদীর পথে

মাইল মাইল দেওয়াল জোড়া ভ্রম

নয়তো যীশু সে ই কি ঝোলে ক্রুশে?

ম্যানহাটন এর এটোম কার্যক্রম

 

(০২/০৫/১২)

দেওয়াললিখন

 

দেওয়াললিখন

 

প্রসাদভোগী বুদ্ধিজীবি বদহজম কি হচ্ছে না?

হোককলরব ঢেউযের দোলায় অসাড় পা কি নড়ছে না?

নিভিয়ে আলো পিটিয়ে পুলিশ ঢাকতে চটি পারল কই?

বিশ্বজুড়ে হচ্ছে ছি ছি! হোক কলরব উঠছে ঐ!

বঙ্গ জুড়ে বুদ্ধিজীবি রঙ পালটে নাচছো তাও!

বুদ্ধি বিবেক বিসর্জনে কার আঁচলে মুখ লুকাও?

মোমবাতি সব পুড়ল বেবাক পরিবর্তন আসল কই?

তোমরা যারা বঙ্গভূষণ, দলতন্ত্রের ঝাঁকের কই!

লোক ঠকানো লক্ষ টাকায় চৌদ্দো পুরুষ গুছিয়ে নাও-

ধর্মের কল নড়বে যেদিন, বলবে কিন্তু তফাৎ যাও।

 

দুকান কেটে ভাবছো যদি, নেই তো কোনো নীতির দায়!

ইতিহাসের কুলোর বাতাস রয়েছে তোমার অপেক্ষায়।

নীল মেখেছ সাদা মেখেছ, শাল পেয়েছো নিজের গায়,

লাল বাতিতে চড়ছো গাড়ি, ভাবছ তুমি অমরায়!

বুদ্ধিজীবি বেচছো বিবেক, ঢাল করেছো আঁচলকে।

টের পাও না! সরছে মাটি, দেওয়াল লিখন লিখছে কে!!

 

দোতারা

 

দোতারা

 

বহুদিন পর তোমার চিঠি

এল

সোনালী ওড়নার আনন্দ

জড়িয়ে গায়ে।

সব দূঃখ ফিকে হয়ে আসে।

দুরন্ত কষ্টগুলো নিয়ে

গুটিয়ে সময়।

বুকের শিহরণে ওম হয়ে।

সব মেঘ ঘরে ফিরে গেলে

ফাঁকা আকাশটাও

বাউল হয়ে ওঠে।

একতারা বাজিয়ে

তোমার হৃদয়।

 

(১২/০৪/১২)

দৌড়

 

দৌড়

 

অবিন্যস্ত চুলের মতন আকাঙ্খাগুলো নিয়ে

রেখেছিলাম আশার ফাইলে গেঁথে।

বড়ো জটিল পথঘাট জেনেও প্রতিটি ক্রসিং-এ

বিশ্বাসের খুঁটি পুঁতে পুঁতে বেলা পড়ে আসে ক্রমশ।

ভরসার প্রদীপে সলতে পাকাতে পাকাতে

কবে যেন চুল পেকে গেল।

তবুও কি অপেক্ষা ফুরোলো?

 

যুগে যুগে যুগান্তরের পথিক এসে

 আমার খুঁটিতে জ্বেলে দেবে বলে

প্রেমপ্রদীপ্ত আলোর সোহাগ।

ভালোবেসে রেখে ছিলাম হৃদয় দহনান্তের

পোড়া ভস্মাবশেষ।

 

প্রতিদিনের নাওয়া খাওয়ার মাঝে রোজকার গ্লানি এসে

নিষ্প্রদীপ সন্ধ্যা ঘনালে আমারও হৃদয়,

ভাঙ্গা মাস্তুলের মত টলমল করে ডুবে যায়।

তবুও দেখ যুগান্তরের মানুষ।

তোমার ঠিকানায় ইচ্ছেডানায় উড়িয়েছি

শেষ ইচ্ছেটুকু।

সূর্যোদয়ের রঙে আমার কবিতাখানি।

 

(১২/১০/১২)

ধূসর পাণ্ডুলিপি

 

ধূসর পাণ্ডুলিপি

 

নদীর জলে, কলসি দড়ি

মানুষের এক পোয়া স্বপ্নমাখা

সন্ধ্যা এসেছে আজ

জানি না কি কাজ বাকি আছে আর।

স্বপ্ন পূরণের চাবি সাফল্যের খোলা তালায়

অট্টহাস্যে কেড়েছে পড়শির ঘুম।

বিজয়মাল্যের লেলিহান খ্যাতি

প্রশস্তির চার মিনারে ঘিরেছ পিতৃদত্ত নাম।

তবে কেন সন্ধ্যার বাতাসে এ আর্তনাদ।

 

কালপুরুষের রাতে অমাবস্যার অভিসার,

সেও যথাবিধি সেরেছে উপাচার

বংশ পরম্পরায় স্মৃতির মাদুরে

কিংবদন্তীর নকশা হয়েছে উজ্জ্বল উজ্জ্বলতর।

তবু নয়নাভিরাম এ জীবন

কেন আরশিতে এত ম্রিয়মান।

 

এ পৃথিবীর ক্যানভাসে সময়ের সীমানা আছে

বিবর্ণ রঙের গল্পে তাই কিংবদন্তীও ম্লান হয়ে যায়

ভাঙা থাম পাথর বুকে পড়ে থাকে

মহেঞ্জোদরো হরপ্পায় নাগাসাকি হিরোশিমায়

 

 (১৯/০৩/১২)

 

নথিপত্র ১

 

নথিপত্র ১

 

কবিদের বুঝি মুখ খুলতে নেই।

কবিদের কথা মনে মনে

নাগরিক মধ্যাহ্ন ঝুলে থাকে যখন

কপালের ভাঁজে,

ব্যাস্ত হাসির বিন্দু বিন্দু ঘাম

পাল তুললে কবিদের ডাক পড়ে

মধ্যরাতের আড়ালে।

শব্দের দুটুকরো মায়াবী মিছিলে

কখনো আমরা পাশাপাশি মুখোমুখি হই।

সাদা পাতার ধোঁয়াটে কবিতারা বাক্যবন্ধনে

নেমে আসতে চায় যেন হাঁড়ির খবরে।

 

সমস্ত কাঁটাতারের বিরুদ্ধে

শেষমেশ কবিতাই লড়ে যেতে পারে।

গড়ে তোলে মানবিক প্রতিরোধ,

কামান দাগার জবাবে কবিতাই মন্ত্র।

মন্ত্রই মানবিক প্রত্যয়ের গল্প।

 

কবিদের কথা বলতে নেই।

জ্যোৎস্নার কাজ আঁধারে।

নিবিড়তা অম্লান রাখুক

কবিদের আলো।

সূর্য আরো রোদ হয়ে উঠুক তাতে।

 

 (০৯/০৭/১২)

নন্দিত নরকে

 

নন্দিত নরকে


আজকের শিরোনাম সংবাদে

তোমার খবর উড়ে এলো।

উড়ো খবর হয়তো নয়।

সমুদ্রের নীল ঢেউয়ে তোমার শরীরের বিভা

পৃথিবীকে এনে দিয়েছে সৌন্দর্য্যের শ্রেষ্ঠ শিরোপা।

অন্ধকার আলো অন্ধকারে

জোনাকির প্রাণের দ্যূতি

তোমার শোভায় আশার বাণী দিল জ্বেলে,

এমনই সংবাদ এনে দিল আকাশের রঙ।

আমি কিন্তু আমার শরীরী দ্বন্দ নিয়ে আছি তো সংশয়ে।

 

তবুও সমস্ত মৃতদেহ বুকে

ঘর করে যে মায়াবী বাতাস।

তোমার সংবাদে তার বুকেও

জেগেছে প্রত্যয়।

এই ছবির মোহ ছেড়ে ধ্যানে বসেছে

আমাদের অপাঙতেও নিস্তব্ধ নিরাকার সময়।

 

এদিকে সংবাদ শিরোনামে

তোমার বিভঙ্গে মেতেছে

কামনা, নিসঙ্গ মধ্যাহ্নের

উত্তপ্ত প্রহরে। নির্জন ঘরে।

 

(৩১/০৫/১২)

নবান্নের গান

 

নবান্নের গান

 

যন্ত্রণার ঝিনুকে মুক্তোর মতো ভালোবাসা ছড়িয়ে রেখেছি।

হে অরণ্য আমার দুচোখে রামধনু ফোটার দিনে,

সমস্ত সবুজ ভোরের শিশিরে ভিজতে দিও।

অন্তহীন নির্জনতার বিজন বাসরে দেখ

আমার শিকড়ে কেমন শুদ্ধতার সাধনা।

বোমারু বিমানের ঝাঁক তোমার বুকে হয়ত

দগ্ধ দহন পোড়াবে

তবুও এ মাটি আজও সূর্যে সূর্যে চলে।

বৃষ্টিস্তনী মেঘের কাছে নারীর ভালোবাসা আছে।

বোমারু বিমানের নিশান কিছুই তো নয় তার কাছে।

 

রাষ্ট্রসঙ্ঘের আষাঢ়ে গল্পে যত ভিড় বাড়বে ততই

হে অরণ্য,

দাবানলের সমস্ত ক্ষত ধুয়ে যেতে হবে একদিন।

আমার শরীর ডিনামাইট হলে জেনো

নারীর বুকে আবার আপেল ফলবে।

ভোরের সূর্য গোপন ইস্তাহারে যতই

আগুন জ্বলবে-নবান্নের এই সংগ্রাম

ঠিক চলবে।

 

 

নষ্ট রাতের পদ্য

 

নষ্ট রাতের পদ্য

 

একটা দুটো নষ্ট ভ্রূণের মাঝে

জরায়ু জুড়ে কান্না জমে আছে

শয্যা জোড়া নিঝুম আঁধার পোড়ে

শরীর জলে ঢেউ ভাঙ্গে অধরে

 

তবুও গোপন কুলুঙ্গীতে রেখে

কষ্টগুলো বধির হতে শেখে

স্বপ্ন ভাঙ্গা সিঁড়ির রেলিং ধরে

ক্লান্ত শরীর হাঁফিয়ে ওঠে ভোরে

 

তবুও গোপন শিকড় জুড়ে ঢেউ

জুড়িয়ে নেবার মন্ত্র নিয়ে কেউ

আঙ্গুল ছুঁয়ে বাকল যদি হয়

রাত নিশুতি নোংরা তত নয়

 

(২৩/০৪/১২)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন