চাক

  

চাক

 

আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি

শব্দেরা মিছিল করে হাঁটে

শপথের উড়ানে চলেছে স্বদেশ

বারোমাস হাতড়ে পকেটে

যৎসামান্য থাকে

অথচ মাল্টিপ্লেক্সে দেখুন

আমলাশোলের ডকুমেন্টারী

থাকলেও ঠোঁটে ভদ্কার

ঢেঁকুর ওঠে

হাইরাইজ কলোনি---

স্যাঁতস্যেঁত বস্তির সূর্যটাকে

ছেঁটে

উদ্বিগ্ন জননীর চোখে

বিনিদ্র রাত্রির ফাঁকে

বিপ্লব অস্তমিত

কেউ নেই

ঢিল ছোঁড়ে ভীমরুলের

চাকে

 

(২৪/০৩/১২)

চুপচাপ জেগে থাকা ভালো

  

চুপচাপ জেগে থাকা ভালো

 

চুপচাপ জেগে থাকা ভালো।

কি হবে কূটতর্ক করে?

কি হবে মুখোশে টান মেরে? শিউরে ওঠা ছাড়া?

মঞ্জরিত ভালোবাসার সুধা অমৃত নয়,

গরল হয়ে গেলে  কি হবে বিলাপ করে

যুক্তি তক্কে অযথা ডানা মেলে?

গূঢ়তর সৌন্দর্য্যের মানে

চোখে নেশার কাব্য পড়তে পারে।

তবু চোখকে বলে রাখা যাক;

ভালো বলে তারিফ কোরো।

নেশায় পড়ো না যেন।

জানতে চেও না কারণ কিংবা কেনো।

 

বিসর্জনের লাইনে দাঁড়িয়ে যথারীতি

কাণ্ডজ্ঞানে যতি পড়তে পারে।

তবুও যাবার আগে সেদিন,

চিতার উষ্ণতা আর কবরের গভীরতা

মেপে যাওয়া ভালো।

ওপারে গিয়ে ধান ভানতে হতে পারে।

সংসারী মানুষ বলে

চারিত্রিক দোষ নেই ভাবলে

দায় কে নেবে?

প্রতিধ্বনি আদর না দিলেও

রোজকার চুম্বন যথাস্থানে

ছুঁয়ে রাখতে হবে।

 

(১০/০৮/১২)

 

চেনা না চেনার গল্প

  

চেনা না চেনার গল্প

 

তুমি কি পেরেছো চিনতে

এলোমেলে শব্দের বিন্যাসে

লেখকের রঙ?

কমা সেমিকলন ড্যাসের সাজানো বাগানের

বিস্ময়ের ভিতর।

আকাশের নীল যার চোখের আঁধার,

উচ্চারণে বারাবার তোমার নাম।

 

স্মৃতির জড়তায় দহন তীব্র জটের বিবস্ত্র মিছিলে।

তুমি কি দাঁড়িয়েছো জানলায়

অলস পায়ে নিভন্ত দিনে।

যে জানলার ধারে

স্বপ্ন আর হারানো ঠিকানারা খেলা করে যায়

ইতিহাসই বহন করে জানি ইতিহাসের ভার।

তুমি কি নিয়েছো হাতে

রোজকার পরিচিত চেনা আয়না তুলে

 

মুহূর্তের মুহূর্ত গলে...

যখন আগুন নেভে আর এশট্রেতে ছাই

নিবিড় সন্ধ্যায় বনলতা সেন

আর আকাশ ঝলসানো রুটি পোড়া ছাই?

 

তুমি কি পরেছো চিনতে

এই এলোমেলো বয়সের পাড়ে লেখকের ঢং।

 

(২৩/১২/৯০)

চোরাবালি

  

চোরাবালি

 

যেখানেই দাঁড়াই

পায়ের তলার চোরাবালিতে দৃষ্টি যায় আটকিয়ে।

দূর্বোধ্য যুক্তিগুলো দিয়ে অজুহাত বুনতে থাকি।

খাপছাড়া এলোমেলো দূর্বল জোড়াতালি

বিশ্বাসের আরোকে তবু মতবাদ লিখতে হয়।

প্রচারের আলো হাপিত্যেশ করে বসে থাকে

গজদন্তমিনারে।

মন্দিরের চূড়ো থেকে মেহনতী মানুষের ম্যানুফেস্টে

দরবারি কানাড়া থেকে নিরাপত্তা পরিষদের সনদে

মতবাদের খসড়া তৈরী হয়।

তারপর ধোলাই যন্ত্র

ও বিবিধ টোটকা।

পিরামিড থেকে তাজমহল

আইফেল থেকে টুইন টাওয়ারে

আভিজাত্য ঠিকরাতে থাকে।

ইতিহাসের খেরোর খাতায়

মহাপুরুষদের গতিবিধি

বৃথাই ভরসা দেয় আলোকের।

যেখানেই দাঁড়াই

সীমাহীন বিরুদ্ধ স্রোতের গড্ডালিকায়:

পায়ের তলায় নিজস্ব

একটু মাটি থাক সঞ্চয়।।

 

 (০৬/০৪/১২)

জনান্তিকে

  

জনান্তিকে

 

নিজের সাথে কিছুক্ষণ

আড়ালে আবডালে যথকিঞ্চিৎ।

আলোর ফ্রেম থেকে উত্তাপ খুলে নিয়ে

দেখি হৃদয়ে দুলছে হাড়গোড় শুধু, নির্বাক কঙ্কালে।

বাক্যগুলোর মুখরতা ধুয়ে নিলে কিছুটা সততায়,

কেবলই অনৃত ভাষণের পাহাড় জমে যায়।

সযতন হাসির প্রসাধন

পিছনে অহংটুকু নিয়ে দাঁড়িয়ে মঞ্চের ফোকাসে কেবলি।

ভালোবাসার ডায়রীতে  রাত নামলে আঁধারে,

সবটাই প্রেম থাকে না আর।

অথচ সূর্য ছিল আলোকিত।

বাতাসে জীবনদায়ী শ্বাস।

জলের বিন্দুতে উচ্ছ্বসিত প্রাণ।

আমাদের মাটির উন্মুখে

সৃষ্টির নির্মলতা নিয়ে

রোজকার সবুজ।

আর ছিলাম তুমি আমি

আমি তুমি মুখোমুখি

পরস্পর পরিসরে।

(১৩/১০/১২)

 

জন্মান্তরের পথিক

 

জন্মান্তরের পথিক

 

জন্মান্তর থেকে কোনো এক মধ্যরাতের বাঁশিতে

মৃত হাড়গোড় ফসিলে উত্তজনার অনুভবে

খান কয়েক অতীতের আমি

জ্যোৎস্নার আলো গুনে গুনে

আমার জংশনে।

 

গুঁড়ো গুঁড়ো হলুদ নিউজপ্রিন্ট বিবর্ণ হেডলাইনস

বমি করে দিয়ে গেল সেই সাথে।

সাম্রাজ্যের পতনের পর

তবুও ইতিহাসের দালানে বট অশ্বত্থর শিকড়।

প্রত্যয়ে দৃঢ়।

মাটির ছন্দের টুং টাং ছড়িয়ে দিতে সবুজের অবুঝ আনন্দে।

 

আনন্দী ঘাস দূর্বা দূর্বা

পায়ে আমার শরীরে ধীরে ধীরে

বাংলার প্রান্তর যেন।

 

জন্মান্তরের পথিক

নিরাময় হাত দুটো মুঠো খুলে বাড়িয়ে ধরে

অতীত আমিগুলোর দিকে।

সামনে এই বাংলা

আলোকবর্ষ ব্যাপী মৃত হাড়গোর পাঁজরে

আরও এক বিপ্লবের অঙ্গীকারে।

 

(২৪/০৫/১২)

জন্মের আগে

  

জন্মের আগে

 

নক্ষত্রের আলো ধরে ধরে

বার বার ফিরেছি

উকিঁ দিয়ে দেখে নিয়েছি

শতাব্দীর গর্ভে সূর্যের অস্তাচল।

নিপুণ চিত্রকরের তুলির মোচড়ের মতো।

 

কৃষ্ণগহ্বরের নাগাল এড়িয়ে

হয়ত শেষবারের মতো

গোধূলির সরল আলোয়

রাত ঠেকিয়ে রাখতে পারতো

তোমার চকিত চুম্বন

কবির মগ্নতার মতো।

 

এই পৃথিবী ততটাই ভালো

যতটা আমাদের হৃদয়

তৃষ্ণার জলে ঢেলে রাখে

আকাশের মুক্তি

বাতাসের গান।

নবজাতকের জন্মের আগে

সুস্থ হোক সব অভিমান।

 

(২৬/০৪/১২)

জবানবন্দি

  

জবানবন্দি

 

যা কিছু আমার জমিয়ে রাখা চিত্ত বিত্ত নারীর সুখ

যা কিছু নিজের দেখেছি ছুঁয়ে মান অভিমান ইদুঁর দৌড়

যা কিছু তোমায় করছি শপথ

প্রেম ভালোবাসা ভাত কাপড়

যা কিছু তোমায় দিয়েছি ভরে

অসহ্য সুখ রাত দুপুর

 

সমস্ত ঐ আমিটুকু নিয়ে

ধরে রাখা এই অহংকার

ঈশ্বরে আর আশ্রয়ে

তাই পুরুষার্থ বারংবার

 

যা কিছু তোমার জমিয়ে রাখো শরীর মনের তিতিক্ষা

যা কিছু তোমার অঞ্জলি দাও হৃদয় সুধা প্রতীক্ষা

যা কিছু আমার করেছ আপন স্বপ্ন সাধ অনিমিখ

যা কিছু আমার হয়েছে ঋদ্ধ

অবচেতনের চতুর্দিক

 

সমস্ত ঐ তুমিটুকু দিয়ে

অনাদী এবং অনন্ত

মমত্ব আর ভালোবাসাতেই

নারীর মর্ম একান্ত

 

(২৮/০৩/১২)

জরিপ

  

জরিপ

 

ভালো!

এক কপাল ঘাম নিয়ে

যৌবনস্মৃতি চোখের ব্যস্ততা পেড়িয়েও জানতে চাইল

মাধবী.--- সচল বাসের লেডিজ সীট থেকে

পার্শ্বচাপ কাটাতে কাটাতে সামাজিক হাসিতে উৎফুল্ল হই

বাসের ঝাঁকুনিতে ঘাড় নারি হাসির সমর্থনে

 

তারপর!

কী খবর!

ধ্বনি আর প্রতিধ্বনি!

 

বেশ আছ।

উত্তর সমর্থিত হয়ে ঘোরে দৃষ্টি হাঁটা চলা করে

জরিপের ফিতে হাতে করে দৃশ্য থেকে অদৃশ্যে

পথ হারাই হিসেবের গড়মিল?

 

-যাই

মৃদু হাসি ফেলে পথ করে নেয় মাধবী

জমাট ভীরের ভেতর

সচল জানলায় দ্রুত সরে যায় শেষ ছবি

 

আসপাশের সরস চোখের বেড়া ডিঙ্গিয়ে

পুরানো ক্যালেন্ডার.....কত দিন বাদ।।

 

স্টপেজ না আসা পর্য্যন্ত

...... নিশ্চিন্ত…..

 

(০২/১১/১১)

জলঝর্ণার ধ্বনি

  

 

জলঝর্ণার ধ্বনি

 

সপ্তর্ষিরাতের সিম্ফোনী তোমাকে ডাকলে-

একান্ত দর্পনের আদরে আমাকে পেতে পারো।

আদিগন্ত সবুজ যেন তোমার নাভিমূলে

শস্যমুখ সূর্যের প্রত্যয়ে উষ্ণতার ছবি আঁকে

শ্রাবণের বাঁশিতে।

চিরঞ্জীব সুধা ধারণ করেছে

গোটা পৃথিবী, আঁচলে তোমার।

ভালোবাসা ঝর্ণা হলে অরুন্ধতী আদরে

অধরের ক্যানভাসে প্রেমের মোমবাতি জ্বলে।

ছায়াপথের জোনাকিরা হয়তো বা হরপ্পা মহেঞ্জোদরোর রাতেও

সঙ্গম সুড়ঙ্গে পৃথিবীকে নবীন করতে পারে তোমার ইশারায়।

তোমার নূপুরে পক্ষীরাজের গল্পে

যত রাজকুমার সওয়ার হল এযাবৎ,

তাদের চেতনার রঙে তুমি না পান্না- না চুনী,

না মেনকা- না উর্বসী।

শুধু বনলতা সেনের মত পৃথিবীর শেষ ঠিকানা।

পাখির নীড়ের মতো নয় শুধু

জলঝর্ণার ধ্বনির মত তুমি।

 

(০১/০৬/১৩)

 

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন