আগুনখেকো রাক্ষসের মিছিল

 

 

আগুনখেকো রাক্ষসের মিছিল

 

আরও কত অন্ধকার গড়াগড়ি খাচ্ছে, খাবে

আমাদের মাঝ নিশীথের লেখাপড়ায়

রাতের এই অন্ধকার দিয়ে কত অনুভব

কত উপাচার সাজিয়ে চলেছি দিনভর

 

স্মৃতির আবর্জনা জুড়ে বাপ ঠাকুরদা

হাতে নিয়ে গীতা বাইবেল কোরান

সময়ের বিষে সেঁকে নিচ্ছি অন্তর বাহির

আজ এই অন্ধকার জুড়ে দাঁড়িয়ে সবাই

 

পরস্পরের মুখ আয়নায় একই ছবি

মাঝখানে বিষের কৌটোয় প্রাণভোমরা

আমাদের, বাকিটা রাজনৈতিক কুটকচালি

সাংবিধানিক উচ্চাশা থেকে বিষের দহন

 

এই এক আশ্চর্য্য রূপকথা, পাতার পর

পাতা জুড়ে আগুনখেকো রাক্ষসের মিছিল

নৃমুণ্ড হাতে শান্তির বাণী শোনায় নৃপতি

আমরাও মন্ত্রমুগ্ধ ভক্তকুল ভক্তিতে মশগুল

 

রাতের কথাই লিখি তাই দিনভর, এই আলো

এই রোদ এই সব দিন জুড়ে বৃশ্চিক দংশনে

বিষাক্ত অক্ষর অভিশপ্ত কলম বন্ধ দরজার

চৌকাঠে রাবণের চিতা জ্বালিয়ে দিয়ে…

 

৩১শে অক্টোবর’ ২০২১

 

 

আদরের সাতকাহন

 

 

 

আদরের সাতকাহন

 

কিছুটা আদর জমিয়ে রাখি রোজ

না, ব্যাংক ব্যালেন্সের মতো নয়,

সুদ নয়, আসলটুকুই সম্বল থাক বরং

 

তুমিও জমাতে পারো আরো কিছুটা

তোমার নিজের মতো করে

এই পৃথিবীর মতন হয়তো বা

 

আসলে আজকের খবরে

যারা ধনকুবের হলো, তাদের

মতোন নয়, বরং বুদ্ধ কনফুসিয়াস

 

যিশুর মতোন, আরও একটু আদর

জমিয়ে রাখা যাক, সন্তান সন্ততি

শুধু নয়, আপামর মানবসমাজ

 

একদিন, যদি আরও ভালো করে

মিলতে পারে পরস্পর পরস্পরে

আদরে আদরে এক পৃথিবী ভালোবাসায়

 

৯ই অক্টোবর’ ২০২১

 

তারপর

 

 

 

তারপর

 

এর পর থেকে যত কথা আছে

সেসব বরবাদ করে দিয়ে

আকাশের মতো নীল হয়ে যাওয়া ভালো বরং

 

কি কথা বলে আকাশ?

আকাশের নীলে

সোনালি রোদের ডানা মেলে দিয়ে?

 

কোন কথা? আমাদের মতো কি?

প্রতিশ্রুতির শিলান্যাসের দিন, কিংবা

পাকা দেখার আসরে!

 

প্রেমের চিঠির সব লাইন

কার মনে পড়ে? গার্হস্থ ঝঞ্ঝাটে

বাড়ি না ফেরার দিনে!

 

শত্রুর কপালে বুলেটের ক্ষতচিহ্ণ এঁকে দিয়ে

শান্তির ললিত বাণীতে

দেশপ্রেম প্রথম পাঠের মতো

সেসব কথা বলেছিল না’কি

রাতঘুম থেকে উঠে ভোরের

আকাশ, শিশিরের দিকে মুখ করে?

 

তাই আমিও যাবতীয় সব কথা

হলুদ পাতার মতো প্রাগৈতিহাসিক রঙে

ডুবিয়ে দিয়ে আকাশের মতো আজ

 

আরও নীল, আরও নীল হয়ে গিয়ে

গভীরতর নীলে লীন হতে চেয়ে

শব্দহীন নীলের মতো অনাদী অনন্ত দেখো

 

২৩শে অক্টোবর’ ২০২১

 

দহন

 

 

 

দহন

 

মৃত্যুর দরজায় কড়া নাড়া ভালো নয় ভেবে

কেরোসিনের ডিবে সরিয়ে রেখে দেখেছি

উসখুস দেশলাই কাঠির ম্রিয়মাণ মুখ

 

অন্তরের অসুখ ঈশ্বরের মতো পরিব্যাপ্ত হলে

চোখের ভাষাও বদলিয়ে যেতে পারে, যায়

তখন জতুগৃহের জানলায় দহনের আরতি

 

রাতারাতি সব কিছু ফেলে, সব কিছু

যা কিছু নিজস্ব, নিজের জড়ো করা

এক জীবনের রঙ্গমঞ্চ জুড়ে……

 

সেসব, সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে

এইভাবে একান্তে মৃত্যুর দরজায়

কড়া নাড়া- ভালো নয়, ভালো নয়

 

৯ই অক্টোবর’ ২০২১

নাগরিক নির্ঘন্ট

 

 

নাগরিক নির্ঘন্ট

 

বেওয়ারিশ লাশের ইচ্ছেগুলোর মতন

টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে রয়েছি

 

স্মৃতির খাদে, বিস্মৃতির অতলে

আত্মঘাতী বিস্ফোরণের স্প্রিন্টারের মত

 

রেলের লাইন বরাবর ছিটকে পড়ে থাকা

জবানবন্দীগুলি উদ্ধার করেনি কেউ

 

পরিত্যক্ত রেলস্টেশনের ফাঁকা লাইন জুড়ে

এমনই অসংখ্য খবর প্রতিদিন হারিয়ে যেতে থাকে

 

শরীর জুড়ে লেপ্টে থাকা ব্যথায়

বিক্ষুব্ধ সঙ্গমের অসমাপ্ত গল্পমালা

 

ইতিহাসের ফ্রেমের পর ফ্রেমে বাঁধিয়ে

নাগরিক প্রদর্শনীর হলঘরে আমরা সকলে

 

৩১শে অক্টোবর’ ২০২১

 

পাখি নেই পালক রয়েছে

 

 

পাখি নেই পালক রয়েছে

 

‘পাখি নেই পালক রয়েছে’

শক্তির কবিতায় পড়ে ছিলাম

তারপর আর

শক্তি পাই নি কবিতা লেখার

 

কথা নেই অক্ষর রয়েছে

শূন্য দৃষ্টি মেলে দিয়ে একা

তারপর সব

কিংবদন্তী বাকিটা জনশ্রুতি কলরব

 

এমন’কি ইতিহাস নেই ফসিল রয়েছে

দেখে তুমি সেই ফিরে এসেছিলে

তারপর আর

ইচ্ছে হয়নি আমায় ফিরে ডাকার

 

পাখি নেই পালক রয়েছে

থাক, তবু স্মৃতি জড়ে থাকা

তারপর সব

মুছে গেলে যাক যাকিছু বাকি সব

 

২২শে অক্টোবর’ ২০২১


প্রশ্ন ছিল প্রশ্ন ছিল

 


প্রশ্ন ছিল প্রশ্ন ছিল

 

আমার কিছু প্রশ্ন ছিল,

রক্তগঙ্গা বইলো অনেক

পুড়লো গৃহ পুড়লো হৃদয়

পড়লো মাথায় লাঠির বাড়ি

 

ধর্ম গ্রন্থ শুদ্ধ হলো?

মানুষ খুনের রাঙা হাতে?

দেব দেবীরা থাকে কোথায়?

মানুষ যখন কাঁদতে থাকে,

 

আমার কিছু প্রশ্ন ছিল,

এই যে আমি এই যে তুমি

পরস্পরের হন্তারক

ধর্মগ্রন্থের বুকে নিয়ে

 

সবই তো সেই যেমন বলো

সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু

এমনটাই কি ধর্ম মতে

সত্যি বলো কাম্য ছিল?

 

২৪শে অক্টোবর’ ২০২১

 

বোধিবৃক্ষের তলায়

 

 

বোধিবৃক্ষের তলায়

 

বোধিবৃক্ষের তলায়

আর কেউই যায়নি তারপর থেকে

ন্যাড়ারা বেলতলায় যায় বৈকি!

যায়, বার বার যায়

কেউ বা বাধ্য হয়ে, কেউ স্বেচ্ছায়

 

না, তাই বলে বোধিবৃক্ষের তলায়

আমিও যাই নি তাই

দেখিনি গিয়ে, কোথায় বা বসা যায় সাধনায়

এক জীবনে এত ত্যাগ

আমাকে মানায়?

 

এই দেখো এই তুমি

কতবার বেলতলায় গেলে

কখনো বা আমায় নিয়ে, কখনো একা

কটাই বা বেল কুড়ানো গেল বলো

এক জীবনে ফাঁকায় ফাঁকায়?

 

তবু এই আমি, এই তুমি

সেই বেলতলা মুখি ন্যাড়া মাথায়

বেলা অবেলায়, ওদিকে

বোধিবৃক্ষের তলায় মানুষটার সবকিছু স্মৃতি…

পড়ে থাক অবহেলায়

 

৯ই অক্টোবর’ ২০২১

মুখোশের মিছিল

 

 

মুখোশের মিছিল

 

এক মাথা চিন্তা নিয়ে বসে থাকা যায়

বসে থাকা ভালো কি? কতদিন বসে থাকা যায়?

মানুষ ফুরিয়ে গেলে মানুষের মতো মুখে

মুখোশের মিছিল পথে নামবে জানি

আগেও নেমেছে, ইতিহাসের পাতায়

ছবি রয়ে গিয়েছে, দেখে নিতে হয়, হবে

 

শাদা শাদা পাতা জুড়ে মানুষের কথা তবু

মানুষের কাছাকাছি আরও বেশি কাছে

আসতে চেয়েছে, আসতে চেয়ে হোঁচট খেয়েছে

পোকামাকড়ের মতোন মানুষের ভিড়

কেবলই জড়ো হয়, হবে মন্দির মসজিদ গীর্জায়

মানুষের কথা নয়, সেকথা কে শুনতে চেয়েছে কবে?

 

আমরা বরং আরও বেশি করে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে

জমানো সঞ্চয়ে ভাঁড়ার বোঝাই করি,

মদ মাংস মেয়ে মানুষের প্রার্থনায়

ধর্মগ্রন্থ পাঠ জারি থাক আমৃত্য সাধনায়

মানুষ ফুরিয়ে গেলে যাবে যাক, মানুষের মুখ নিয়ে

মুখোশের মিছিল পা মেলাবে শোকে উৎসবে

 

১১ই অক্টোবর’ ২০২১

হন্তারক

 

 

হন্তারক

 

সকাল সকাল মিঠে রোদে আমিও

নেমেছি পথে, যে পথে মানুষের মুখ

যে মুখে খই ফোটে অনর্গল অবিরত

ভিসুভিয়াসের মতো লাভাস্রোত

বিসংবাদের

 

প্রতিদিন খবর হয়ে যায় কত মানুষ

কে কোথায় পড়ে থাকে রথের চাকায়

থেঁতলানো পিঁপড়ের পরিতাপ নিয়ে

তাই নিয়ে বাকিদের উল্লাস দেখা যায়

                                    রণহুঙ্কারের

 

সকাল সকাল মিঠে রোদে তুমিও

নামতে পারো এই পথে, যে পথে

ধর্মগ্রন্থ হাতে জল্লাদেরা মেতেছে উল্লাসে

তুমি আমি আমরা সবাই হন্তারক দেখ

                                    পরস্পরের

 

২৫শে অক্টোবর’ ২০২১


যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন