খোয়াব

                                                              

খোয়াব

 

দমকা হাওয়ার মতো তোমায়

হঠাৎ করে ভালোবাসার ঝড়ে

ধর যদি উড়িয়েই নিয়ে যাই

এই পৃথিবীর বাহির সংসারে?

 

ভাবছ তুমি; "তাই কি আবার হয়?

এই যে তোমার সকল সঞ্চয়

সকাল বিকাল সারা সংসারময়

এসব ছেড়ে কোথায় আছে ঘর

 

নেই যেখানে কোনো আপনপর

সেই যেখানে বিশ্বভরা সুর

 গান বেঁধেচে জীবন ভরপুর

সেই যেখানে মায়ায় ভরা রাত

 

স্বপ্নে আনে হৃদয় আচিনপুর

সেসব সেতো রূপকথারই ছবি

কেবল আঁকেন বিজন ঘরে কবি

সেই ঠিকানা আমার কাছে কই?"

 

তাই তো তোমায় ডাকছি আমার সই ।।

তাই তো তোমায় বলছি আমি প্রিয়ে

তোমায় আমি সেথায় যাবো নিয়ে

সেই যেখানে তেপান্তরের মাঠ

 

 সেই যেখানে কল্পতরুর হাট

দেখবে তুমি সেই সেখানে গিয়ে

বিশ্বসাগর

মত্ত তোমায় নিয়ে।।

 

(০১/০৮/১২)

গণশক্তি

  

গণশক্তি

 

উড়ন্ত হাইওয়ের ডানায়

বেআব্রু মন তোমাকে খুঁজেছে

কৃষ্ণচতুর্দশীর তৃতীয় প্রহরে।

সমুদ্রমন্থন নয়,

শিশির ভেজা নিশীথিনী আকুলতা

বিন্দু বিন্দু নীলজ্যোৎস্নার শরশয্যায় দেখো;

মহাকাব্যের অমৃতগরল শব্দভাণ্ডার

চুঁয়ে টুপ টুপ ঝরে পড়ে কয় ফোঁটা

অশ্রুউষ্ণ প্রত্যয়।

 

বিম্বিত ইতিহাসের অন্ধকার,

সময়সিন্ধুতে দোতারা বাজালে,

তোমার ভ্রূভঙ্গে পঞ্জিকার পাতায়

মেষ তুলা মীন গোলমাল করে যায়।

সূর্যগোলার্দ্ধের সমস্ত রোদ্দুর ছেঁকে নিয়েও

ম্রিয়মান ম্যানিফেস্টো দেখেছি

তোমাকে খুঁজেছে

স্লোগান পোড়া ছাইয়ের লেলিহান চিতায়।

আকাশপ্রদীপ শিখায়, মনোময় তুলি

নবজাতক সকালের লংমার্চের পদধ্বনি-

এঁকে যাবে জানি। উড়ন্ত হাইওয়ের ডানায়

তুমি চলে এলে। এলেই

 

(১২/১২/১২)

 

গর্ভ যন্ত্রণা

  

গর্ভ যন্ত্রণা

 

কি হবে কবিতার শরীরে অক্ষর চৌচির করে

শব্দের টাপুরটুপুর শুনে?

কি হবে আকাদেমী পুরস্কারের ফলকে

হাততালি গুনে?

কি হবে নিজেকে নিঃশ্বেষ করে

আলুথালু যুবতীর মতো,

কাব্যের শরীরে।

কি হবে ভগীরথের মতো জীবনের খিড়কিতে

কাব্যের জলপ্রপাত খুঁড়ে।

কি হবে মৃত্যুর শীতল ওষ্ঠে

চুম্বনফেরির তৃপ্তি নিয়ে

স্বর্ণালী দেড়শো পা করে?

কি হবে ছন্দের হাতছানি দিয়ে,

আদিগন্ত স্বপ্নহীন নগ্ন নিবিড় ভোরে?

 

এ পৃথিবী স্বপ্নের প্রতিধ্বনি নয়।

সোনালী ফসলের নবান্নের ঘ্রাণে

মাছি ওড়াউড়ি করে;

গলিত ভূখা মিছিলের কবরে

মানুষের আর্তনাদ

শকুনির পাশার দানে ঘুঁটি হয় নড়ে।

আসমানী চাঁদের ঝালরে

তাজমহল জুড়ে

যুদ্ধ মৃত্যু মহামারী

সাম্রাজ্যের শ্বেত পতাকা হয়ে ওড়ে ।।

 

(১৯/১১/১২)

 

গল্পকথা

  

গল্পকথা

 

মধ্যরাতের নিরালার মতো

সমুদ্রনীল ক্যানভাসের মতো

যুদ্ধ ফেরত সৈন্যের মতো

কিছুক্ষণের জন্য

লাবণ্যপ্রভার স্বপ্নে বিভোর ছিলাম।

অমাবস্যার তৃতীয় প্রহরে

মৃত মানুষের অস্থিচূর্ণ হাসির মতো-

দুই একটা প্রশ্নের শতায়ু মিছিলে

কল্পনার জট খুলছিলাম।

স্বাভাবিক রণনীতি অনুযায়ী আত্মপক্ষ সমর্থনে।

খেয়াল করিনি

বেহূলার ভেলার মতো কখন যেন

তুমি এসে পৌঁছোলে শঙ্খমেলা নদীটির ধারে।

মৃত্যুও শেষ নয় ভেবে

গলিত স্থবির মাংসল স্তুপে বসা কীটের পাখনায়,

জীবনের অম্লান আঘ্রাণ মেলে এসেছো জানি।

তবু আমি; সারাদিন ধরে

মৃত্যুর মিছিল দেখেছি অহরহ,

লাবণ্যপ্রভার নরম ভিজে চোখের নালিশে।

প্রতিটি প্রেমের মৃত্যু হলে

এ পৃথিবী- শুধুই গল্পকথা বলে।

 

(২১/০৪/১৩)

 

গোলাপকাঁটা ফুল

  

গোলাপকাঁটা ফুল

 

সকাল ভরা শরীর নিয়ে অঙ্গে অঙ্গে

মধু হয়ে এসেছো এসো

যে পথে সমস্ত প্রেমিকারা ফিরে গেছে আগে,

সে পথ থাকুক তোমার অজানা

সব পথেই চিনতে হয় না জেনো

কতগুলো পথ হয়তো দারুণ ইশারা

তবু বিপদের কথা কে বলিতে পারে

 

অমন করে তাকিয়ে থাকো যদি

নদীর মতো ভাসাতে আমায় পারো

প্লাবন দিলে;

তোমার পলিতে ফোটাবো তবে গোলাপকাঁটা ফুল

তোমার আমার নিভৃত সংলাপ পাপড়ি হয়ে ঝরেও যদি যায়;

থাকবে জেনো গোলাপরাঙা স্মৃতি

 যতোই শরীর ছড়ুক না কাঁটায়

 

এই যে দেখো একটি পুরুষ নারী

কালের ভেলায় যুগল সাতকাহন

কত সূর্য অস্তমিত হলো

কতই জ্যোৎস্না পোড়াল তাজমহল

তাও তো তুমি

অধর দংশনে সেই

আমাকেই আবার ছুঁয়ে গেলে

গোলাপকাঁটার ফুলেল মৌতাতে

 

(২৬/০৬/১২)

ঘূণ

  

ঘূণ

 

সমস্ত স্মৃতির ভিতর জলপ্রপাতের শব্দ শুনি।

মরুভূমির রঙ লাগলে শব্দ বিন্যাসে,

চেতনার বলিরেখা

ধরা পড়ে যায় ঐতিহাসিকের কাছে।

তাই স্মৃতি খুঁড়ে, তুলে আনি হৃদয়ের হাড়গোড়।

সেখানে ব্যার্থ চুম্বনের অব্যর্থ ডিএনএ লেগে আছে।

ক্ষমতার বিন্যাস মানুষের ধমনীতে

বিষদাঁতের চাষ করে গেছে,

আজ তার আপেল ফলেছে।

সূর্যঘড়ির সাথে কানাকানি করে জেনে গেছি

এখনো প্রলয়ের ঢের দেরি আছে।

অতএব এবার যাওয়া যাক মানুষের কাছে।

স্থানুবৎ ওষ্ঠের তাপ

চাড়াদামে বিকিকিনি করে

পৃথিবীকে বাঁধা যায় ভাঁড়ারের ঘরে।

পূর্ব পুরুষের কথা জানি না।

উত্তরপুরুষের কাছে

ঢের লজ্জা জমে আছে।

তবুও প্রেমের মানে কবিতা।

শব্দের বিন্যাসে যদিও ঘূণ ধরে গেছে।

 

(০৯/০৩/১৩)

 

ঘূণপোকার গল্প

  

ঘূণপোকার গল্প

 

লিখছ তুমি অগণন আরও শব্দ

ছাপার কাগজ কালি কলমে একাকার

হাতের লেখার নীরব গভীর গল্প

নিজের মুখে মুখ দেখা বারবার

 

এই যে জীবন রঙ চিনে চিনে এগোনো

শিবিরে শিবিরে মুঠো পাকানো মহড়া

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে হাসে ঘূণ পোকা

মিছিলে মিছিল রায়চক থেকে রহড়া

 

এই যে তোমার পায়ের তলায় বাঁধানো

স্লোগান মুখর কলকাতা মহানগরী

শিলান্যাসের শপথে চোখ ধাঁধানো

গণতন্ত্রে দলতন্ত্রের লহরী

 

বুদ্ধিজীবির শিবির রাঙানো বরাভয়

শিল্পের ধার ভোঁতা হয়ে যাওয়া হাতুড়ি

তাই দিয়ে জারি মগজে মগজে কার্ফু

ইতিহাস দেখে কলমে কলমে চাতুরী

 

ঐ যে তুমি সাহিত্য সভা আলোতে

বঙ্গভূষণ পেয়ে গেলে আজ উপাধি

কবিবন্ধু বন্ধঘরের আয়নায়

দেখতে পেলে কি আস্ত সলিল সমাধি?

 

(২০/০৩/১২)

চন্দ্রকেলির রাতে

  

চন্দ্রকেলির রাতে

 

সমস্ত রাত;

প্রিয়পাঠক বসে ছিলাম তোমার জন্য

লেখাটা নিয়ে।

মরুভূমি আর মরূদ্যানের গল্পকথা নয়।

তবু স্বপ্নের খিলানের ভিতে

হামানদিস্তায় সংকল্প অভীপ্সা কুটে কুটে

মানবিক অক্ষরের ছাঁদে-

একটা দুটো সত্য কাহিনী বুনে রেখেছিলাম তোমার জন্য।

কাল চন্দ্রকেলির রাতে।

বৈশাখের মধ্যাহ্ণ থেকে ছেঁকে নিয়ে উত্তাপ

রক্তকণিকায় রোপন করে যাব প্রতিরোধ প্রত্যয়।

এখনো এখানে শত শত মাইল ব্যাপী

ইতিহাস পড়ে আছে বিচারের বাণীর নিরব অশ্রুপাতে।

সক্রেটিসের বিষ নয় শুধু।

কুরুক্ষেত্র হিরোশিমার ফর্মূলা গুঁড়ো করে করে

প্রতিষেধক দিয়ে যেতে হবে।

চলে যাবার আগে।

নয়তো পাঠকের সাথে

বেইমানি হয়ে যাবে চন্দ্রকেলির রাতে;

প্রিয়পাঠক।

বসে ছিলাম তাই কাল রাতে।

 

(০৬/০৪/১৩)

 

চল পাল্টাই

  

চল পাল্টাই

 

দৈবাৎ একটা দুটো

বেওয়ারিশ লাশের গন্ধ পেলে মনটা উড়ু উড়ু করে

সন্ধিহান সিঁড়ির রেলিং ধরে দাঁড়ানো প্রেয়সীর বুকের মতো নয়,

তবে বিঁড়ির আগুনের মতো ছাই চাপা স্বরে, আলাপ জমাই

 

নাগরিক অধিকারের হলুদ মলাটে-

আত্নজীবনী লেখা মৃত মানুষেরা কি

 গৌতম বুদ্ধ হয়ে যায়

 বেওয়ারিশ লাশের তালিকায়?

 

মতবাদের ঘুড়ি উড়িয়ে পৈতৃক লাটাই

জনসমর্থনের সুতো নিয়ে খেলা করে গেলে-

আমাদের স্বরবর্ণে ব্যাঞ্জনে বিশ্বায়নের মাঞ্জা

সার্থকহয় সমস্ত গোপন নথিতে

 

বেওয়ারিশ সন্ধ্যার গোপন জবানবন্দীতে

ইতিহাসে পচন ধরে গেলে;

চারধারে খোঁজ পরে কয়েক খণ্ড নীল,

গাঢ় নীল আকাশের

 

দৈবাৎ

ঠিকানা পেয়ে গেলে বেওয়ারিশ শপথের,

আমরাও মনে হয়-

এবার আলাপ জমাই

 

(১২/০৪/১৪)

চাঁদজ্যোৎস্না

  

চাঁদজ্যোৎস্না

 

মাঝরাতে চাঁদজ্যোৎস্নার জলসায়

নীলনদের বুকেও জেগেছে অনন্ত বিস্ময়!

লঘু পায়ে যমুনার ঝুমুর বেজে গেলে

ফ্যারাওয়ের দেশে- মিহি ভালোবাসার ঠোঁটে

অস্ফূট সন্ধ্যা, মমির মতো শীতল।

সাম্রাজ্যের শেষে। শতাব্দীর গ্রন্থনায়

সুদর্শনা সূর্য নক্ষত্র আলো

হরিণের মতো নিরালা নির্জন পথে

আবারো দেখা দিলো।

কিংবদন্তীর অন্তরা থেকে

সঞ্চারীর স্বরলিপি জুড়ে

উষ্ণ অধরের চৈতালী আমন্ত্রণ

স্থাবর অস্থাবর ইতিহাসের চৌকাঠে

অভিমানী শীতের শহরে

প্রেমের পিরামিড

আমাদের সৌখিন শিলালিপি

তবু বোধিবৃক্ষের বহু দূরবর্তী।

সব নদী ডালাপালা ছড়িয়ে

সাম্রাজ্যের ভাঙা গড়ার ঘাটে সঙ্গম তিমিরে-

চাঁদজ্যোৎস্নায়!

 

(১৫/০৮/১৩)

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন