আবহমান অন্ধকার

 

আবহমান অন্ধকার

 

আমাদের শিকড়ে শিকড়ে ছড়িয়ে রয়েছে

দ্বেষ, সকাল বিকাল দর্পণে মুখ দেখে নিয়ে

তবু চমৎকৃত হই… আশ্বস্ত করি হৃদয়কে

দেখো আমি ভালো আছি, এগিয়ে চলেছি

 

পরস্পর কোলাকুলির সন্ধ্যায় করমর্দনের

গীতিআলেখ্য গাঁথি পারস্পরিক অনুমোদনে

সকলেই শান দিয়ে চলেছি শানিত আঁধার

মননের দিগন্তজুড়ে ঐতিহ্যের নকশিকাঁথায়

 

আমাদের মাটির শিরায় শিরায়, আবহমান

অন্ধকার হামাগুড়ি দিয়ে চলেছে নিরন্তর

গর্ভধারণের দিনে আমরাও সামিল সেই

-উৎসবে। অনন্ত উদ্দীপনায় রাত্রি নিশীথে

 

৪ঠা অক্টোবর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 


আবহমান

 

আবহমান

 

যারা চলে গিয়েছিল বহু আগে

মান্ধাতার বাবার জন্মের সময়

তাদেরও ঠাণ্ডা হাতে হাত রেখে

অনুভব করা যায় স্বচ্ছন্দে

দ্বেষ ঈর্ষাজনিত মনোবিকলন

 

জন্মের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে নিরন্তর

যতদূর ভ্রাম্যমান মানব সমাজ

ততদূর রক্তে ভেজা পথিকের পথ

সংহার কিংবা সুরক্ষায়, সময়ের

দুই মুখেই রক্তের রঙ রক্তিম!

 

এরপরেও বড়ো আশ্চর্য্য লাগে

তোমাকে জড়িয়ে ধরলে, যখন

পরিতৃপ্ত হয়ে ওঠে তোমার মন

বড়ো বিস্ময়ে আনন্দের প্রস্রবণে

হামাগুড়ি দেয় মন্ধাতার বাবার আমল

 

৬ই অক্টোবর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র


ঈশ্বরের সমীপে

 

ঈশ্বরের সমীপে

 

প্রেয়সীর বুকে

উন্মুক্ত আকর্ষণে যখন ক্রমশ

নিমজ্জিত আমি, উন্মত্ত ওষ্ঠের ভাষায়

সব পুরুষই দিশেহারা তখন

তখনই নারীর সময়

 

এবং এই আমি

পূর্ব পুরুষের মতো বারবার

শরীরের অক্লান্ত উৎসাহে

সেই নারীর শরীরের কাছে

                        বন্ধক রেখেছি নিজেকে

 

এত আলো, এমন নীল আকাশের

সীমানা ছেড়ে, নারীর সীমায়

বাকি সব পুরুষের মতো

প্রতিদিন ক্লান্তিহীন আমরা সব

                        কলুর বলদ যেন

 

ঈশ্বরের কথা জানি না

জন্ম মৃত্যু নিয়তির ঘরে, নারীর ইশারায়

পুরুষের ঠিকুজিকুলজি সব ঠিক হয়ে যায়,

পূর্বপুরুষের মতো তাই আমি

                        আমিও সেই নারীর ঠিকানায়

 

২৩শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র


কষ্ট

 

কষ্ট

 

পাহাড় ভাঙ্গা নদীর জলে

কান্না জমে নেই?

 

সময়ের বিষণ্ণ ঘড়িতে?

কিংবা অবসন্ন যৌনমিলনে!

 

কোন কোন ছায়া যখন

প্রলম্বিত হয়, মলিন দেওয়ালে

 

মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছিয়েও

যাঁদের ফিরে আসতে হয়

 

কবর দেওয়া ভালোবাসার স্মৃতিতে

যাঁদের দিন রাত্রি একাকার

 

এঁদের সকলের সাথে কথা বলে

বরং দেখা যাক একবার

 

এত আলো এমন নীল অবকাশ

পিছনে ফেলে কান্নার ভিতরে

 

কি আছে এমন! যার কাছে

নতজানু হতে হয় বারংবার…

 

২৩শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 


ধারাবিবরণী

 

ধারাবিবরণী

 

বাতাস কমে এসেছে

গাছে গাছে পাতায় পাতায়

আতঙ্ক ছড়িয়েছে দ্রুত

 

আমি তবু বন্দুকের শব্দ শুনি

বারুদ পোড়া গন্ধে

শতকের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে

 

ব্রেকিং নিউজের পাঠশালা

খোলা রয়েছে অষ্টপ্রহর

বাকি’রা শান্তিতে ঘুমিয়ে

 

আততায়ীর প্রলম্বিত ছায়ায়

ইতিহাস ঢাকা পড়ে যায়

রাজপথ গলিপথ সব বেদখল হয়

 

ধু ধু মঞ্চে আমি একা

বাকিরা বাড়ি ফিরে গিয়েছে চলে

বন্দুকের নলই পৌরোহিত্য করে সবখানে

 

২৭শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 

 

 


পথের নির্জনে

 

পথের নির্জনে

 

হারিয়ে ফেলেছি

বাড়ি ফেরার পথ

সে পথের ঠিকানা…

হয়ত সে দাঁড়িয়ে রয়েছে

পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে বলে

যাঁকে দাঁড় করিয়ে রেখে

এসেছি একদিন, কুক্ষণে

 

এমনই অনেক দিন

চলে গিয়েছে আলগা হাতের

মুঠো থেকে। যাঁর কাছে

গিয়ে পৌঁছানোর কথা ছিল

মনে করতে পারিনি

হয়তো তারই মুখ

সময়ের ঘূর্ণনে।

 

এদিক ওদিক কত পথ

এগিয়ে চলেছে

পথিকের টানে

তবু নিজের পথরেখাটুকু

ঠিক মতো কজনই বা

খুঁজে পায়, ঘুরে চলি

দিশেহারা পথের নির্জনে

 

২৭শে অক্টোবর

©শ্রীশুভ্র


মধ্যরাতের তূর্য

 

মধ্যরাতের তূর্য

 

বাঁকাচোরা স্বপ্নের রাতে যেমনটা হয়

চেনা পথ হারিয়ে যেতে থাকে

মৃত মানুষ কবর থেকে জেগে উঠে

আবারো হ্যাণ্ডশেক করে ফিরে যায়

 

তেমনই সেই নারী মধ্যরাতের উন্মত্ততায়

একা, কড়া নাড়তে থাকে আমার দরজায়

মশারির ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে থাকা

হাড়পাঁজরা নিয়ে আমি তখন বড়োই বেকায়দায়

 

বিশ্বায়নের দগদগে ক্ষত বুকে নিয়ে

যাঁরা হাঁটতে চায় নাগরিক মিছিলের পতাকায়

বাঁকাচোরা স্বপ্নের মতো বিপ্লবের হাতছানি

তাঁদের মতোই আমাকেও ডাক দিয়ে যায়

 

তবু আমি, নিতান্ত ভালো মানুষের মতো

স্বপ্নের অভিসারে হাতে হাতে হাত ধরি না

এ জীবন প্রপঞ্চময় জেনে, সংযত থাকি

থাকি না বাঁকাচোরা স্বপ্নের ভরসায়…

 

২৩শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 


রোগশয্যায়

 

রোগশয্যায়

 

শব্দের সাথে অভিসার যাদের

প্রতিদিন সহবাসের পর

কবিতার খাতা যাদের ভোরে ওঠে

পুরস্কার মঞ্চের উপরে ডাক পড়ে

বছর বছর। অক্ষরের বর্ণমালায়

বরমাল্য গাঁথা হয়ে যাদের

 

আমি তাদের মতো কেউ নই

তবু কবিতার পাতা উল্টাই

 

শারদীয়া থেকে বইমেলা

কত শব্দ, শব্দের ভিড়ে কেউ কেউ

দিশেহারা হলে হারিয়ে যায়

কলেজস্ট্রীট। চোখের সামনে

শব্দেরা লোফালুফি শুরু করে দেয়

কবি মহাকবি সভাকবিদের

আমি চেয়ে চেয়ে দেখি শুধু

 

অনেকদিন হলো জলের রঙে

চোখ বোলানো হয়নি

অনেকদিন চলে গেছে

যায়নি কার্তিকের নবান্নের মাঠে

অনেকদিন হারিয়ে ফেলে

দেখি, চোখে পড়ে না আর

বিশল্যকরণী। বুক ভরে জমেছে

বিষাদের ভার, কষ্টের কীট

 

নাগরিক সমাজ থেকে

বিক্ষোভ মিছিল, মৌন মোমবাতি

মঞ্চের কাছাকাছি ঘোরে

মঞ্চের উপরে তখন প্রলম্বিত

কবিতা পাঠের আসরে

উঁকি দেয় চেনা চেনা মুখ

সে সব মুখ আমি দেখে ফেলেছি

জেনে গিয়েছি তাদের অসুখ

 

অসুখ নয় রোগ নয় বিকারও নয়

নীরোগ মুখের মানুষ, আমি চোখে দেখিনি

এখনো হাঁটা হয়নি কত পথ

কত পথ বাকি পড়ে রয়েছে জানি না

এদেশের বুকে এখন

আমার মতো নয়, দরকার

মানুষের মতো হৃদয়ের কয়জন পথিক

 

যাঁরা পারি দেবে বাকি পথ

পথের বাঁকে বাঁকে যাঁদের হৃদয়

হৃদয়ের তন্ত্রীতে বেজে উঠবে

মানুষের যন্ত্রণা, আশা আকাঙ্খার

বিশুদ্ধ কবিতা আবার, এই বাংলার বুকে         

কবি নয় মহাকবি নয় সভাকবি নয়

কবিতার পথিক, পথের কবি

পথ যাঁদেরকে ডেকে নেবে

আরও একবার। অন্তরে বাইরে…

 

২৪শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র


সময়ের চক্রব্যূহে

 

সময়ের চক্রব্যূহে

 

এত কথা এত কলরব ছাড়িয়ে

নিস্তব্ধ পাহাড়ের মতো

স্থিতু হয়ে বসতে সাধ হয়

 

কি এমন কথা আর বাকি আছে

দ্বেষ নয় বিদ্বেষ নয়, ঈর্ষার পালে

ভালোবাসার সুরভী ছড়াতে পারে?

 

মহাকাব্যের পাতায় পাতায়

আমাদের স্বপ্ন সাধ সাধনার

সব ইতিহাস লেখা শেষ হয়ে গেছে

 

হাড়হাবাতের স্তুপের উপরে, পতপত

সাম্রাজ্যের জয়পতাকা ওড়ে, মৃত

হাড়গোড় বুকে নিয়ে ইতিহাস পাতা ওল্টায়

 

মধ্যরাতের যোনিতে, তারপরেও…

বিপ্লবের জন্ম হবে বলে তর্কে বিতর্কে

কেউ কেউ এখনো উৎসাহিত হয়

 

সময়ের চক্রব্যূহে সব কথা তবু

বলা হয়ে গিয়েছে বহু আগে

নতুনের বাণী, সবটাই অলীক কাহিনী

 

২৩শে অক্টোবর ২০২২

©শ্রীশুভ্র


সুড়ঙ্গ

সুড়ঙ্গ

 

এদিকে অনন্ত সুড়ঙ্গ, আবহমান কালপর্ব জুড়ে

সময়ের পাকদণ্ডী বেয়ে নিরন্তর ঘুরপাক খায়

তুমি বলবে, তবু ভালোবাসি, ভালোবেসেছি তোমায়

 

প্রতিদিনের এক একটি আমি জুড়ে, জোড়াতালি দিয়ে

যে উপাখ্যান-মালা তুলে দিয়েছি তোমার দুই হাতে

সেখানে বিস্তর গলদ রয়ে গিয়েছে, সাদাতে কালোতে

 

উত্তেজক আদরের মায়াজালে প্রতি রাত সহবাসের পর

নিজেকে চিনে নিতে সুবিধে হয় অনেক, প্রবঞ্চক

অন্তর্দাহের উত্তাপে ঘেমে উঠলে শরীর, ফুরফুরে মন

 

তারপর অবাঞ্ছিত উপদ্রবের মতো বিদঘুটে অন্ধকারে

নিষিদ্ধ প্রশ্নমালার উকুন সারা মাথা দাপিয়ে বেড়ালে

যদি আহত করে ফেলি তোমায়, ক্ষমা করে দিও প্রিয়

 

৫ই অক্টোবর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 


যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন