রোজকার ধারাপাত

রোজকার ধারাপাত

 

আমার কথায় রাগ করে না

একটু আধটু ধাক্কা লাগে,

লাগুক তাতে যায় না ছড়ে।

ঘড়ির কাঁটা তফাৎ গেলে

দেখবে যখন কবর খুঁড়ে

স্মৃতির ঢেলা:

সৃর্য ডোবা লাশকাটা চোখ

বিকেল বেলা। হাসবে তখন

অন্য মনে ঘরের কোণে।

দেখবে না কেউ সংগোপনে।

দেখবে পরে তোমার হাসি

উছল স্মৃতি উস্কে দিতো বুকের পাঁজর।

রাতকানা ঘর আলতো টেনে হাজার সূর্য

মধ্যেখানে। বলতো হেসে

তোমার কানে- রাগ পড়েছে?

লাগেনি তো। যায় নি ছড়ে?

 

তুমি তখন  নতুন ভোরে

ঘাড় উজিয়ে নতুন করে,

ঢ়েউ তুলতে শাড়ীর পাড়ে;

আমার নামে হাসলে একটু

ছোট্টো করে। তাতেই আমি

বন্য হলাম।

তাইতো তোমায় কথা দিলাম।

 আমার কথায় রাগ করে না।

একটু আধটু ধাক্কা লাগে।

লাগুক তাতে যায় না ছড়ে। অমন করে।

লং মার্চ

লং মার্চ

 

দুমুঠো সকাল সামান্য মুচমুচে রোদে ভেজে নিয়ে

বসে আছি

তুমি এলে তোমার আঁচলে বেঁধে দেব

প্রলম্বিত রাতের কুচকাওয়াজে

তোমার অবিন্যস্ত শিথিল শাড়ী টানটান করে নিও

আমাদের লং মার্চের এখনো অনেকটা পথ বাকি

আজকের আকাশটা

যতটা টান টান নীলের উত্তেজনায় কাঁপছে

আমরাও উত্তেজিত পারদ ছোঁব ঐ আকাশের মাপে

নয়তো নবজাতকের শিরদাড়াঁয় মানবিক প্রত্যয়

দৃঢ়তা পাবে কি আর?

ঢের প্রতিজ্ঞা শপথ গড়াগড়ি খেয়েছে

পূর্বপুরুষের শিথিল প্রত্যয়ে

কতো শিলান্যাসে হেসেছে নিয়তি।

জমেছে কষ্টের ধুলো

আমাদের মিলনবিন্দুতে মেলাতে হবে প্রিয়া

সে সব টুকরো হিসেবগুলো

মুঠো মুঠো সকাল মুচমুচে রোদে ভেজে নিয়ে

তোমার আমার লং মার্চ

এখনো অনেকটা পথ বাকি

 

(০৬/০৭/১২)

ললাট লিখন

ললাট লিখন

 

আসুন দেখে যান কবি

এইখানেই আপনার মূর্তি উন্মোচন পর্ব শুরু হবে

আমরা বলতে পারি সগর্বে

আপনার মৃত্যুর পর আমরাই প্রথম মূর্তি গড়লাম

ঐ দেখুন কবি আমলা তন্ত্রের সারি এগিয়ে আসছে

মঞ্চের দিকে স্বপারিষদ মন্ত্রী

সরাসরি তথ্য সংস্কৃতি দফ্তর থেকে লালবাতি জ্বালিয়ে

গাড়িতে ধনকুবেররাও আছেন

দেখুন প্রথম সারির আলোতে

 

জানি আপনি অবাক

এরাও ন আমরাও ন

 আপনার কবিতার বই যারা কেনে,

কেউ পড়ে কেউ সাজায় ঘরে

তাদের ভোটের মূল্যে আমাদের কাজ

তাই আজ এই আয়োজনে আপনিও সামিল

আবক্ষ মূর্তির পরিধিতে

লিখিত ভাষণের ধ্বনিতে

এই তো আপনার নবজন্ম

কবি

কাব্য সংকলনের মলাট থেকে আপন মূর্তির ললাটে

 

(০৬/০৭/১২)

লাবণ্যপ্রভার লগ্নে

লাবণ্যপ্রভার লগ্নে

 

আড়ংধোলাইয়ের সাথে আইডিন ফ্রি

তবে যদি বিশুদ্ধ হয় গঙ্গাজল

দুশ্চিন্তার মেঘে মেঘে বয়স অনেক হল

 আইন যখনই চলে আইনের পথে

তখনই ভণিতার আড়ম্বর বড় বেশি ধরা পড়ে চোখে

এ নয় ধান ভানতে শিবের গীত

 এ নয় নতুন ম্যনিফেস্টো তবু জেনো লাবণ্যপ্রভা,

বদ্ধ মুষ্ঠিগুলো ঘূণে ধরা সব

পতাকার রঙে যত অসাধু আহ্বান

পরস্পর মুখে দেখ অপলাপ সত্য

কেমন অনায়াস হাসিতে ঢেকে যাওয়া আয়নার কাঁচ

তবুও মিছিলে আমাদের পা

 

লাবণ্যপ্রভা তোমার আঁচলে আজ

উদ্ধত লোভ উন্মুক্ত লালসা

উত্তপ্ত লক্ষ্যগুলো ঢেকে দেবে কি?

একটা দুর্নিবার দুরন্ত দুঃসাহসিক প্রেমে

মানবিক বিপ্লবের নবজাতকের জন্মের জন্য

অপেক্ষায় আমরা কয়জন তবু

লাবণ্যপ্রভা এখন তোমার সময়

লৌকিক অলৌকিক

লৌকিক অলৌকিক

 

পৃথিবীর ভাণ্ডারে খুব বেশি ভালোবাসা

 অলৌকিক হয়ে নেই হয়তো যেটুকু আছে;

সমস্ত লৌকিকতার পরিমাপে

কিছুটা ক্রিয়াকর্ম আর বাকিটা পূর্বরাগ অব্দি গড়ায় বড়োজো

নয়তো ধাপে ধাপে

পরস্পরের প্রয়োজনের সিঁড়িতে ওঠা নামা শুধু

জানি বিশ্লেষনের ঘেরাটোপে

অনেকটাই কড়া হয়ে গেল বিবৃতি

তবু গৌতম বুদ্ধ থেকে ক্রশবিদ্ধ যীশুর প্রতিবিন্দু রক্তের ওজন মেপে

যদি পড়ে দেখা যায় গোটা ইতিহাসটা আগাগোড়া

খুব বেশি মহাপুরুষ জন্মায় নি কিন্তু ঘরে ঘরে

বরং সেনাপতিদের কুচকাওয়াজে অনেক বেশি কাজ হয়েছে

অর্থাৎ প্রতিদিনের চুমুগুলো

গোনাগুনতি দেনা পাওনার ইস্তাহার মেপে

সাবলীল যতটা,

 ততদূর ভালো আমরা সবাই

লৌকিক ভালোবাসায় সখী

তবু বিশ্বাসের ডুমুর ফুটবে হয়তো দেখো

 

(৩০/০৭/১২)

শঙ্খমালার তীরে

শঙ্খমালার তীরে

 

শঙ্খমালা নদীর ঢেউয়ে বৃষ্টির গান শুনছি

শ্রাবণ সন্ধ্যার ভিজে বাতাস

মনের মাঝে আসর বিছিয়েছে নীল নির্জনে

কতগুলি রাজ হাঁস জিরো আওয়ার্সের মত

হট্টোগোলে পরস্পরের ওজন বুঝে নিচ্ছে

 যান্ত্রিক বিমানের যাত্রীরা যখন

মেঘের উপর পার্থিব ঘর্ষণ থেকে অনেকদূর

এই সেই শঙ্খমালা নদী

যমুনার জলে ভেজা স্মৃতিগুলো নিয়ে

আজও চোরা স্রোতে ভাটিয়ালী গায়

সারাদিন যত ঢেউ নেচেছে শরীরে

যত ঘূর্ণীতে ডুবেছে হৃদয়,

যত শপথ ভেঙ্গে আমি জ্যোৎস্নার শরীরে

এঁকেছি দুষ্ট ক্ষত- সে সব ঢেউ গুনে দেখ

কত তাজমহল করতে পারে জয়

 মেঘেঢাকা প্রেয়সী আমার যত ব্যাথা দিয়েছি জীবনে

তত পাপ দেখ ধুয়ে নিয়ে কেমন শঙ্খমালা নদীটির তীরে

আমি তাজমহল জপেছি অন্তরে

 

(০৬/১০/১২)

শতাব্দীর কুঁড়ি থেকে

 

শতাব্দীর কুঁড়ি থেকে

 

বটের পাতায় ঝিমোচ্ছিল মেয়েটা

,-- পৃথুলাই

কি আশ্চর্য্য না?

আমিও কি কম চমকে

উঠে ছিলাম

ঘোর কাটতে দেখি;

সে হাসছে

মিট মিট হাসি

দু ঠোঁট গড়িয়ে পড়ছিলো

টুপ টুপ করে

টাপ টুপ বটের পাতায়

 

সদ্য ঘুম ভাঙ্গা রোদের সকালে সে এক

আশ্চর্য্য অভিজ্ঞতা

নীরব রাতের অরব শিহরণ

বটের পাতায় তখন

সে হাসি সফেন সমুদ্র নিয়ে

ঢেউ হয়ে নেচে নেয়

ঢেউয়ের মাথায়

কি এক অনন্ত বিস্ময়

পরম আনন্দ হয়ে

 

 

সুর হয়ে

বেজে ওঠে নাড়িতে আমার

আমি চোখ মেললাম

তার চোখে

টলটলে পায়ে

পাতার পর পাতা বেয়ে

নেমে এল সে আর এক পাতায়

 

সদ্য জেগে ওঠা রোদের

পদ্যে বলল--

কেমন আছো?

কেমন আছ সুর হয়ে

সুরে ঘুরে চলল--

আকাশের নীল থেকে

আরও দূর-- নীল- নীল-

নীল আকাশে

নিরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসের ডগায়

অমল ধবল বাতাস থেকে

বাতাসের অনন্ত ছোঁয়ায়

জলপ্রপাতের শব্দেপুঞ্জে

জলে ভেজা তৃষ্ণার জলে

 

 

শুধু কেমন আছো

কেমন আছো?

কেমন আছো?

 

.......... কেমন আছি?

আজও কেমন আছি?

আমি?.........

 

জৈষ্ঠের খর দুপুরে

- বসন্ত কি প্রলাপ বকছে

আজ?

 

নামিয়ে নিলাম চোখ

ঘুরিয়ে নিলাম মুখ

ফিরিয়ে নিলাম সুখ

আর ঠিক তখনই

..........ঝুপ করে খসে পড়ল

একটা সকাল;

শতাব্দীর কুঁড়ি থেকে

একটা অনন্ত সকাল........

যার স্বপ্নে

এক পৃথিবী মানুষের

রাতজাগা; -রাতে

 

(১৯৯০)

শতাব্দীর বেদনা

শতাব্দীর বেদনা

 

আমার চোখের দিকে তাকাও

স্পষ্ট সুর্য্যের আলো নিয়ে দুফোঁটা;

নিরুক্ত আবেগে ভাঙ্গা রাজপ্রাসাদ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।

লোকশ্রুতি পরম্পরা

সন্ধ্যাপ্রদীপের শিখরে দাঁড়িয়ে নাচে।

কয়েক শতাব্দী আগে এইখানে জনান্তিকে হৃদয়;

তোমার আঁচল ছুঁয়েছিল-- বুকের উষ্ণ গরলে

অমৃতের সঞ্চয়নের সে সাধ

তোমার বিস্বাদ মনে হলো।

শঙ্খমালা কঙ্কাবতী নদী রামধনু রঙ স্বপ্নে

উড়ান দিয়ে শিকড় ভরা জলের উৎস নিয়ে-

স্পষ্ট দেখো তোমার দিকে চেয়ে।

 কিন্তু তোমার পক্ষীরাজের ঘোড়া।

লাগাম তোমার হাতে কি ছিল মেয়ে?

প্রগাঢ় মন্ত্রে আর্তনাদ চেপে নিয়ে অবিরাম

জ্বলে যেতে যেতে যেতে

কত শতাব্দী এল গেলো।

নিরুদ্ধ আবেগ নিয়ে বুকে ঐকান্তিক।

ভারতবর্ষ  পা বাড়ালো।

 

(১৫/০৫/১২)

শপথ

শপথ

 

আগলে রেখে শরীর জুড়ে

তোমার গভীর গোপন

আমার গহন দহনে

 

স্মৃতি আর উষ্ণতার ছোঁয়া

নিয়ে খেলে যায় ইতিহাস

রাত বারোটার রাতে

 

তবুও যুদ্ধ মানে রক্ত

অস্ত্র মানে লোভ

সময়ের হালে পানি না পেয়ে

 

পথ ভুল করে পৃথিবী

ছায়াপথের তিমিরে

কালপুরুষের আঁচলে

 

লড়াইয়ের অবিন্যস্ত ময়দানে

রোদ আর রক্তের ফোটায়

তুমি বৃষ্টি দিও দুধের

 

তবুও বিপন্ন সময় যদি

মানুষের কথা স্মরণে

যিশুক্রুশে হাসি হয়ে ঝোলে

 

ফসল কাটা মাঠে হেমন্তের

সকাল খুঁজে নেবে

সম্ভাবনার বীজ নিশ্চয়

 

আমাদের রাজনীতির রঙে

কত অন্ধকার ঘনালো

তবুও বীজ জানে মনে

 

কবিতার দূর্মর আবেগের বেগে

অনাদি অন্তহীন পথে

তুমি আমি ও আমরা

 

রেখে যাব আমাদের

শেষ প্রণতি- নবজাতকের

জীবনের ভিতে....

 

 (২৯/০৩/১২ )

শয্যা বদল

শয্যা বদল

 

এইখানে পরবর্তী শয্যা পেতেছি।

এইখানে সমুদ্রের গর্জনের সাথে

এলোমেলো হৃদয়ের সংলাপ।

এইখানে সময় এখন মধ্যরাত।

 

ছায়াপথের আলো হাতে

নিহত প্রেমিকদের শোকমিছিল দেখছি।

হয়ত মুচকি হাসিতে রেবতীর ঠোঁট ঝুলে গেছে

 

সপ্তর্ষির দিকে।  ধ্রুবতারা

পাশে আছে দেখে নিয়ে

আমার জবানবন্দি আপেল পড়ার শব্দটুকু সাক্ষি রেখে।

 

(২২/০৫/১২)

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন