শূন্যদৃষ্টির ওপারে

 

শূন্যদৃষ্টির ওপারে

 

শূন্যদৃষ্টির ওপারে দাঁড়িয়ে থাকে কি হৃদয়

আলো অন্ধকারে গিয়ে আলোর থেকে

আরও যেন গভীর অন্ধকারে

পাকে পাকে জড়িয়ে ধরে আরও গভীর,

গভীরতর অন্ধকার কোন

 

আমিও সেইরকম এক ঘনঘোর গোলকধাঁধায়

চারিদিকে ধু ধু শূন্যতার মাঝখানে একা

হয়তো বা তোমারই মতো, কিংবা

বাড়ি ফিরতে না পারা পরাজিত সৈনিক

যেমন হাতড়াতে থাকে জীবনের মানে

 

শূন্যতার মাঝে শূনত্যার মানে খোঁজা বৃথা

জানি, তবু কি এক অমোঘ তাড়নায়

সেই কবেকার কোন উন্মাদের মতো

প্রতিটি প্রলাপের ভাঁজে ভাঁজে আজও

জীবনের মানচিত্র আঁকার প্রয়াস

 

শূন্যদৃষ্টির ওপারে কি থাকে জানি না

শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি, প্রতিটি পলকের ভিতরে

স্বপ্ন সাধ সাধনা কিভাবে মুখ থুবড়িয়ে পড়ে

আলো থেকে অন্ধকারের ভিতরে

অন্ধকারই যেন আলো হয়ে ফোটে বারংবার

 

©শ্রীশুভ্র ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 

 


শকুন

 

শকুন

 

ভাগাড়ে শকুনেরা ডানা ঝাপটায়

লাল বাতি নীল বাতি সাইরেন

সকালের হেডলাইন রাতের ব্রেকিং

নাক ডাকে, নাক ডাকে সংবিধান

 

ভাগাড়ে শকুনেরা ডানা ঝাপটায়

মিছিলের ধারাপাত জুড়ে কত রঙ

রঙিন পতাকা কাঁধে কনিষ্করা

নামতার মতো আউরায় স্লোগান

 

ভাগাড়ে শকুনেরা ডানা ঝাপটায়

প্রতিশ্রুতি শিলান্যাস ফিতে কাটা

মিডিয়ার তাথৈ তাথৈ মাভৈ নৃত্য

সিধেঁল চোরের চৌকিদারি গান

 

ভাগাড়ে শকুনেরা ডানা ঝাপটায়

হাড়গোড় রক্ত ঘাম, পচা ঘন্ধ

ইতিহাসের অধ্যায় মানচিত্র জুড়ে

রামমন্দির ভক্তি ভাতা অনুদান

 

©শ্রীশুভ্র ২৪শে ফেব্রুয়ারী ২০২৪


বোঝাপড়া

 

বোঝাপড়া

 

স্বপ্নের ভিতরে ঘুমিয়ে রয়েছি

দুপাশে চলমান দেওয়াল

মনে হয় নিজেই চলেছি

 

দৃশ্যমানতা

খবরের হেডলাইন অব্দি

অন্ধের হস্তীদর্শন তারপর

এবং চায়ের কাপে তুফান

 

এবংবিধ সময়ে তাঁর প্রবেশ

তিনি, ঈশ্বর প্রেরিত কিনা, জানি না

তবে, বাদবাকি যা কিছু হচ্ছে,

হয় নি, হবে কিংবা নাও হতে পারে

সবকিছু তাঁরই একক প্রেরণায়

 

স্বপ্নের ভিতরে ঘুমিয়ে রয়েছি

রাজসভা আলোকিত মোসাহেবে

মোসাহেবি গান শুনছি

 

ঘুমের সময় জাগাতে নেই

ঘুমের ভিতরে আরও অনেক ঘুম

সাত কুঠরি নয়’ দরজা নয়

আরও অনেক বেশি গোলকধাঁধা,  

 

এবংবিধ সময়ে যাঁদের পথ হারিয়ে যায়

কিংবা গেলেই ভালো হয়, নয়তো

শিয়রে সমন, লোকলজ্জা

তার থেকে পথ হারানো ভাল

নিজেকে প্রবোধ দেওয়া যায়

 

©শ্রীশুভ্র ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 


প্রত্যাশা পূরণের রাতে

 

প্রত্যাশা পূরণের রাতে

 

নিশীথ চুম্বনের মানচিত্র জুড়ে

প্রত্যাশা পূরণের রাতে

অনেক কথা গোপন করতে হয়

 

রাতের পোশাকের মত

মনের বাকল খুলে ফেলা

সহজ কথা তো নয়

 

মানবগর্ভ জুড়ে ইতিহাসের ভ্রূণ

ক্রমে ক্রমে আরও বেশি অন্ধকারে

আত্মক্ষরণের দহন জ্বালার ভিতরে

 

তবুও কি মনস্তাপের সন্ধ্যায়

আত্মসমর্পণের তিথিতে

ঝাঁপ দিতে পারি প্রার্থিত হৃদয়ে!

 

©শ্রীশুভ্র ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 


দূরবীনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে

 

দূরবীনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে

 

দূরবীনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছি

বহুকাল পূর্বে কিংবা পরে

যারা এসেছিল কিংবা চলে আসবে

তাদের মুখশ্রীর মতো

আমাদের মুখ নাকি?

 

বহুকাল আগে, বিষাক্ত বর্শাফলকে

বিষদৃষ্টির আগুন আমি দেখেছি

বহুকাল পরে হয়তো বা সে আগুন

আরও ভয়ঙ্কর রূপে ভয়াবহ তাণ্ডবে

দগ্ধাবে জীবন,

 

তারপরেও দূরবীনে দাঁড়িয়ে রয়েছি

রক্তস্রোতের গহনে যদি কোথাও

অমৃতমন্থনে প্রীতি ভালবাসা

সব গরল ধুয়ে নিয়ে স্থিতু হয়

জীবনের আগে পরে, মরণের সীমানায়

 

©শ্রীশুভ্র ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 

 


তখন মাঝ রাত

 

তখন মাঝ রাত

 

তখন মাঝ রাত,

অস্ফূট পায়ের আওয়াজ

বাইরে অমাবস্যা এলো চুল খুলে

 

ঘুম নেই অনেক প্রহর,

খালি চোখে অন্ধকার ঘোর

হঠাৎ হঠাৎ দরজা ওঠে দুলে

 

দেওয়ালে টিকটিকি জাগে

ওঁত পেতে শিকারের আগে

আমি তখন ঠুঁটো জগন্নাথ

 

ওদিকে দরজা ওঠে দুলে

কেউ কি দুয়ারে পথ ভুলে?

তখনও আমি ঠুঁটো জগন্নাথ

 

©শ্রীশুভ্র ২৮শে ফেব্রুয়ারি


ছায়া হয়ে ছায়ার মতোন

 

ছায়া হয়ে ছায়ার মতোন

 

প্রতিদিন আমি লোকটাকে দেখি

একদমই আমার মত নয়

তবু ছায়ার মতোন ছায়া হয়ে

ঘোরে পিছনে পিছনে

 

মুখে কোন কথা নেই

চোখের দৃষ্টি চোখে পড়ে না ভাল

শুধু পায়ে পায়ে চলার সাথে,

সাথে চলে পিছনে পিছনে

 

প্রতিদিন লোকটাকে দেখি, একদমই

আমার মতোন নয়, অচেনা-

জানি না সে কেমন, কেমনতর

শুধু জানি থাকে পিছনে পিছনে

 

তবু আমি বারবার পিছন ফিরি

ভাল করে জানা যেত যদি

কি চায় সে, কি’বা তার পরিচয়

কেন আমার পিছনে পিছনে

 

প্রতিদিন তাকে নিয়ে চলি

মানুষের ভিড়ে, আলো অন্ধকারে

সিসিটিভির মতো আমি তার নজরে

কোন কথা নেই, অভিযোগ নেই

নিঃশব্দে আমার পিছনে পিছনে

 

©শ্রীশুভ্র ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪


ঈশ্বর কিংবা ভালবাসার কেউ

 

ঈশ্বর কিংবা ভালবাসার কেউ

 

মন্দিরে মসজিদে যাই না

ঈশ্বরের সাথে কোন

ডাইরেক্ট কানেকশন নেই

 

অষ্টপ্রহর নিজের নাম জপি

পরনিন্দে পরচর্চা ছাড়াও

আমার বিস্তর কাজ বাকি

 

মুখ আয়নায় নিজেকেই দেখি

অন্য কারুর কথা জানি না

নিজেকে দেখা সহজ কথা নয়

 

এরপর বাকি থাকে যা কিছু

সেসব বিষয় নিয়ে কেউ কেউ

ঢাক পেটায় হয়ত, আমি নই

 

শুধু জানি অষ্টপ্রহর এই এক গ্লানি

নিজের মতোন আর কেউ নেই,

ঈশ্বর কিংবা ভালবাসার কেউ

 

©শ্রীশুভ্র ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 


আত্মরক্ষার সহজপাঠ


আত্মরক্ষার সহজপাঠ

 

দেখুন, অলরেডি অনেক লাশ পড়ে গিয়েছে

শুনুন, এরপরেও আপনারা যদি সরকারের বিরোধীতা করেন

তবে, আইন কিন্তু আইনের পথে চলবে

 

দেখুন, ভোটের ম্যানডেট সবাই মানতে বাধ্য,

শুনুন, সংবিধান কিন্তু তাই বলে

বিশ্বাস না হলে সমস্যা আপনার

 

দেখুন, আপনার কাজ ভোটের লাইনে দাঁড়ানো

শুনুন, সরকারের কাজ আপনাকে শাসনে রাখা

বুঝুন, নয়তো ভুগুন আইনের যে’কোন ধারায়

 

দেখুন, নিজের ভালো পাগলেও বোঝে

শুনুন, সরকারের পাশে থাকুন। সরকারের কথা মানুন

না’হলে আরও আরও লাশ গুণুন

 

দেখুন, লাশগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে

শুনুন, কথায় বলে বোবার শত্রু নেই

সব লাশ সেই কথা বুঝতে পারে, তবে মরণের পরে

 

দেখুন, নাগরিক কর্তব্য সরকারী দাওয়াই মেনে চলা

শুনুন, গণতন্ত্রের সেটাই কিন্তু শেষ কথা

তারপর জয়ধ্বনি দিন, আবীর খেলুন সমর্থনে

 

©শ্রীশুভ্র ২৮শে ফেবরুয়ারি

 

 

 


অবনী ভালো আছে

 

অবনী ভালো আছে

 

দুয়ার এঁটে জেগে ঘুমায় পাড়া

যতই আমি নাড়তে থাকি কড়া

অবনী আর দেয় না কোন সাড়া

 

মিছিল এগোয়, কনিষ্করা হাঁটে

কারুর কারুর জলপানিটা জোটে

অবনী এখন হিসেব কষে খাটে

 

মঞ্চ জুড়ে সেলিব্রেটি মুখ

হাসে কাঁদায় নাচিয়ে পায় সুখ

অবনী দেখি নেই আর উজবুক

 

নেতামন্ত্রী বাড়িয়ে দিলে হাত

বাঁদর নাচন আনন্দে কুপোকাৎ

অবনী তাই আড়াই চালে মাত

 

মিডিয়া জুড়ে মাভৈ বারোমাস

রাজার নামে জয়দ্ধধ্বনি উল্লাস

অবনী এখন সব পরীক্ষায় পাশ

 

দুয়ার এঁটে জেগে ঘুমায় পাড়া

যতই আমি নাড়তে থাকি কড়া

অবনী আর দেয় না কোন সাড়া

 

 ©শ্রীশুভ্র ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪


যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন