২৩শে মে’ ২০১৯

 

 

২৩শে মে’ ২০১৯

 

উন্নয়নের পথে তর্জনীর গর্জনে

বধির ছিল কান

উন্নয়নের পথে এদিকে নীল ওদিকে সাদা

অন্ধ ছিল চোখ

 

উন্নয়নের গল্পে মন্ত্রী নেতা-লোক

শুনিয়েছিল গান

উন্নয়নের গল্পে এ মগের মুলুকে

ধামাচাপা ছিল শোক

 

উন্নয়নের তাসে শক্তির অর্জনে

মদমত্ত প্রাণ

উন্নয়নের তাসে এদিকে তোলা ওদিকে তোলা

নগদ থোক থোক

 

উন্নয়নের রথে কত আহাম্মক

ধরেছিল এক তান

উন্নয়নের রথে তবু এ বুথে ও বুথে

গর্জ্জে উঠলো শোক

 

১৩ই জ্যৈষ্ঠ’ ১৪২৬

 

১২৩

 

 

১২৩

 

কেউ কেউ সবার মতো নয়

সমতলে হাঁটে সোজা পথ

অভিমুখ ঋজু কপটতা নাই

বাকিরা সকলের মতো সবাই

 

রোজকার জয় পরাজয়

হিসাবের ভার বিশ্লেষণ

সরীসৃপের মতন চলন

কেউ কেউ ঠিক উল্টো ধরণ

 

খাপে ঢোকে না মাপে মেলে না

দই মারে না নেপোর মতো

আদতে বেকুব তাই শিরদাঁড়ায় ভর

যদিও সংখ্যায় নেহাতই অকিঞ্চিৎকর

 

অটোগ্রাফ

 

 

অটোগ্রাফ

 

সময়ের অগ্রন্থিত কবিতায়

আমারও স্বাক্ষর আছে

আমিও সকলের সাথে

সকলের মতো দিশাহীন

 

নির্লিপ্ত ইতিহাসের চোখ

হয়তো ভেজে না। ভিজলেও

দেখেনি হয়তো কেউ

আমরা তাই অদম্য সবদিকেই

 

সব ভুল সব পাপ কিংবা পরিতাপ

বারবার ক্ষমাহীন অক্লেশে

চাঁদ নেমে আসা জ্যেৎস্নার

নিরিবিলিতে সহস্রাব্দ পার

 

ভাদ্রের তৃতীয় দিবস’ ১৪২৫

অতিথি

 

 

অতিথি

 

শেষ রাতের অতিথির মতো বিদায় নিয়ে

চলে গেছ কবে সাতসকালে

রেলস্টেশনের ফাঁকা প্ল্যাটফর্মের মতো

ধূধূ মনটা পড়ে আছে

নির্ভেজাল বোকা মানুষের মুখের মতো

 

ফিরে এসো বলতে আর ভরসা পাইনি কোনদিন

যারা চলে যায়, কে আর ফিরেছে কবে

পড়ে থাকা স্মৃতিকণাগুলি টাটকা ব্যাথা মতো

মুখ আয়নায়, পুরানো বালিশে, সোফায়

লেখার টেবিলে আর রাতের গভীরে

 

কিংবদন্তীর কথা নয়, প্রগাঢ় চুম্বনের দংশন

কুটকুট করে বাঁকাচোরা অক্ষরে

শাদা পাতাগুলো বিমূঢ় দর্শকের মতো

বিরক্ত হয়। কাটাকুটি খেলা করে

আয়ুর পঙতিমালা জুড়ে………

 

২৭শে’ মাঘ ১৪২৫

অনুতপ্ত সময়চিহ্ণ

 

 

অনুতপ্ত সময়চিহ্ণ

 

যেসব নারীদের ছুঁয়ে দেখিনি কোনদিন

তারাও যেন কার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে

এই হিমেল রাতে, অশরীরী ছায়ার মতন

গোপনাঙ্গের ওম মেখে এই রাতের চাদরে

 

পুরানো দস্তাবেজ খুলে পাতা ওল্টাই

ভাঙ্গা শীলমোহর, বিবর্ণ স্বাক্ষর আর কিছু

ফ্যাকাশে মুখচ্ছবি চোখের কালি নিয়ে

তাকিয়ে রয়েছে দেখি। এখনো এই হিমেল রাতে

 

সেসব নিবিড় অনুভুতির চোখ, চোখের ভাষা

জীবনের দুই মলাটের ভিতর পূর্ণতা পায়নি

হয়তো নিঃশব্দ ব্যাথা নিয়ে প্রগাঢ় বোধ

আর অভিজ্ঞতাই তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে আজও

 

এইসব নারী, শরীর ও মননের প্রতীতি নিয়ে

অশরীরী ছায়ার মতো নির্বাক দেওয়াল তুলেছে

নিঃস্পন্দ দৃষ্টির চৌকাঠে অভিশপ্ত মমির মতোন

চেয়ে দেখে আমাদের। আমিও বাকিদের মত কী?

 

২৭শে অগ্রহায়ণ’ ১৪২৭

 

অন্তর্বাস

 

 

অন্তর্বাস

 

অন্তর্বাস ভেদ করা বাসনাগুলো

সব নয় যথার্থ যাযাবর

তবু বেদুইন মন সঙ্গী খোঁজে---

 

নাতিশীতোষ্ণ ঠৌঁঠের আদরের সাঁকো পেড়িয়ে

আরও নিবিড়তা যদি হাতছানি দিত

শিশিরে শিশিরে ---

 

যদি আঁচলের সীমানা ডিঙিয়ে হানা দিতে পারো

এক বুক কার্পেটে অভিবাদন জানাবো তোমায়

বৃন্ত থেকে বৃন্তে টুপটুপ বিন্দুতে বিন্দুতে---

 

আমাদের বয়সসন্ধির সব ঋতু

বৃন্ত থেকে বৃন্ত খসিয়ে যত রঙ

রামধনু হতে চেয়ে দেখ কিরকম হোঁচট খেয়ে যায়---

 

অন্তর্বাসের সীমানা ছেঁটে দিতে

ভালোবাসার সংলাপ সব

অন্তর্বাস হয়ে ওঠে না তবু---

 

অন্তিম আকাঙ্খা

 

 

অন্তিম আকাঙ্খা

 

একতাল মাটির গভীরে

শুয়ে আছি

কফিনের পয়সা জোটেনি

জমানো সঞ্চয় ভেঙ্গে

সামর্থ্যে কুলায়নি সেদিন

তারপর থেকে মাটির সাথে মিতালি

 

দূর্বা’র স্পন্দন বুকে নিয়ে

এক পৃথিবীর মাটি

মাটির গভীরে খেলা করে যায়

মাটির গভীরে শুয়ে শুয়ে

আমি কান পেতে থাকি

দূর্বা’র স্পন্দনে বিপ্লবের দুন্দুভি শুনি

 

আমার নিথর হাড়গোড় জুড়ে

দূর্বা’র দুর্বার কুচকাওয়াজ

এক পৃথিবীর ইতিহাস জুড়ে

অনেক কলঙ্ক জমে আছে,

সেসব পঙ্কিলতা শুদ্ধ করা যেত যদি

এক পৃথিবীর মাটি দিয়ে

 

২৯শে ভাদ্র’ ১৪২৮

 

অবাক বাঙালি

 

 

অবাক বাঙালি

 

অবাক বাঙালি! অবাক করলে তুমি

জন্মেই দেখি খণ্ড বঙ্গভুমি

অবাক বাঙালি! আমরা যে লাজহীন

অবাক, কী দ্রুত স্মৃতি ক্ষয়ে ক্ষয়ে ক্ষীণ;

আবাক বাঙালি অবাক করলে আরো-

দেখি এই নিয়ে শোক নাইতো কারো।

আবাক বাঙালি অবাক যে বারবার

বাংলার বুক চিরে চিরে কাঁটাতার।

যখনি চেয়েছি বাঙালির মুখ পানে

দেখেছি বিভেদ হিন্দু মুসোলমানে

এদেশে জন্মে হানাহানিই দেখে গেলাম

অবাক বাঙালি! সেলাম তোমাকে সেলাম।

 

 

অভিশপ্ত কবিতা

 

 

অভিশপ্ত কবিতা

 

হারানো স্বদেশের ভাঁজে ভাঁজে

ইতিহাসের পাতা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে

বেআব্রু কুটিল নকশার কারুকাজ

 

আর আমাদের একান্ত শিকড় জুড়ে

অনাবিল শীতঘুমে আচ্ছন্ন বাংলা

আজন্ম বিশ্বস্ত ভুখণ্ডে আহত হৃদয়

 

অসম্পূর্ণ উপাখ্যানে অভিশপ্ত ছায়ামুখ

দিনে দিনে অবিকল আমার ভাষায়

পূর্বপুরুষের মতো কথা বলে যায়

 

জলছবি জুড়ে পরস্পর পরস্পরের মতো

অবিকল, তবু দূরে দূরে দূরত্বে হাঁটি

আমি তুমি নয়ন নাসির নুসরৎ নন্দিনী

 

২৯শে মাঘ’ ১৪২৭

 

 

 

 

অলৌকিক নয়

 

 

অলৌকিক নয়

 

ট্রেনের লাইনের মতো পারস্পরিক

কাছাকাছি তবু ~

পরিচয়ের নিবিড় সান্নিধ্যও

সবসময় যে কাছে টেনে নেবে

ঠিক তেমটি নয় বোধহয়

 

মোহ আছে, আকর্ষণ নাই

প্রীতি আছে, পাগলামো নাই

 

পরস্পর সম্প্রীতির লগ্নে

সময়ের স্রোত পেরিয়ে যায়

দ্রুতবেগে রাত্রি আর দিন

তরুণী সকাল প্রৌঢ় সন্ধ্যায়

সাঁঝ প্রদীপ জ্বেলে ফুঁ দেয় শাঁখে

 

এরপর নিরিবিলি জোনাকির খেলা

পরস্পর সম্প্রীতির লৌকিকতায়

 

২রা শ্রাবণ’ ১৪২৫

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন