শব্দের কঙ্কাল

  

শব্দের কঙ্কাল

 

শোওয়ার ঘরে পরস্পর একা

সম্পর্কের সুতোয় দোলে বীর্যপতনের শব্দ

বুকে হাত রেখে হৃদয়ের উত্তাপ অনুভব

প্রেমের স্টেথস্কোপে

 

আমি জানি সব নারীর কোমল হৃদয়ে

একটা আমির ঘর খোঁড়ার আয়োজন

সব পুরুষের গলা জড়িয়ে অন্ধ আবেগে

একটা বন্দরে নোঙর ফেলার গান

 

মধ্যবর্তী শূন্যতার বুক জুড়ে পরস্পর

আলিঙ্গনের নকশি কাঁথায় এক্কাদোক্কা খেলা

কখনো সখনো সন্তানের আবোধ ঠোঁটে

চুমু দিতে দিতে ঘুমের অতলে ঘুমিয়ে যাওয়া

 

সেই ঘুম, ঘুমের অতলে ঘুম ঘুম ঘোরে

যারা এখনো কবিতার আসরে এসে বসে

তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি

মহাপ্রস্থানের পথে শব্দের কঙ্কাল শুধু

 

                                               ৮ই আষাঢ়’ ১৪২৭

শিকড়ে নোঙর ফেলে দেখো

 

 

শিকড়ে নোঙর ফেলে দেখো

 

বসন্তসখীরা শোন, এ কোন মৃতের গল্প নয়

আমার জন্মের দাগ জুড়ে অনেক গল্প রয়ে গেছে

পারস্পরিক প্রতিশোধস্পৃহা নয়, নয় আত্মগ্লানি।

কিংবা গেলাপী আতর মেখে ভ্রমরনৃত্য গোলাপে

 

সমুদ্রের ঢেউয়ের মত বীভৎস তাণ্ডবে প্রকম্পিত রাত

বিবস্ত্র আকাশের সীমানায় বিদ্ধস্ত পাণ্ডুলিপি জুড়ে

কেবলই রূপকথার কারুকাজ নিপুণ কৌশলে।

সরীসৃপ সময়ের পাকদণ্ডী বেয়ে গল্প জন্ম নেয়

 

প্রতিটি নির্জনতার নিজস্ব স্বাক্ষর আছে, আছে

নিরিবিলি আঘ্রাণ। পারস্পরিক যুদ্ধ জয়ের আমেজ

আর সামুদ্রিক জলের মতো অতলান্ত লবণাক্ত ঘাম।

তারপর মানুষ বিশ্বাস করে ভালোবাসা প্রেমে

 

শিকড়ে নোঙর ফেলে দেখো আগুন লেগে আছে

কে কাকে পোড়াবে কখন কিংবা পুড়বে দুজনেই

এ আগুন থেকে জল এক ফোঁটা দুই ফোঁটা ফোঁটায়

ফোঁটায় ভিজাবে তোমাকেও, দেখো আমিও ভিজে আছি

 

কার্তিকের ১৫’ ১৪২৫

 

শূন্যতার কোলাজ

 

শূন্যতার কোলাজ

 

সব কবিতা লেখা হয়ে গিয়েছে

 

সকালের রোদের মতো

 

অনন্ত রাতের অন্ধকারের অপেক্ষার মত

 

বিচুর্ণ সময়গ্রন্থীর সুরঙ্গ ধরে এগোলে

 

এগোনো যায়, এগোতে পারো কবি।

 

কিন্তু যা বলবে বলাবে সেসব

 

জেরক্স কপির মতো ফুটফুটে

 

ফুটবে না তবু নতুন কোন কথা, নতুন কলরব

শেষ কথা নেই শেষ কথা কে বলবে?


 

শেষ কথা নেই শেষ কথা কে বলবে?

 

এখানে প্রত্নতত্বের সমাধি আছে।

উনছুট্টি মন আর কবুতরের পাখনার মত নয়।

মহাজগতের ইশারার মতো

গুপ্ত বার্তার রঙ লেগে আছে যেন চারিদিকে।

তবুও মানুষের মন গোপনাঙ্গের নিভৃত লগ্নের মতো।

পরস্পরের গাঢ় সান্নিধ্য দাবি করে।

কোথাও গল্পের প্লট নেই কোনো আর।

সব গল্পই শেষ অক্ষরে এসে মিলিযে গেছে।

সেই কবে– ধ্রুবতারা জন্মের আগে।

তারপর মহাস্থবির শুন্য পরম শান্তি হয়ে

চুপ হয়ে নিশ্চুপে বসে আছে।

মানুষের মন তবু চুম্বনের প্রলম্বিত আস্বাদের মত।

পরস্পরের প্রগাঢ় সান্নিধ্য দাবি করে।

সমস্ত কোলাহল শেষে

ধ্রুবতারার থেকে কয়েক আলোকবর্ষ পরে

কোন এক দিন যদি দেখা হয় পরস্পরে।

এখানে প্রত্নতত্বের সমাধি প্রান্তরে।

সন্ধ্যারাত্রির নিবিড় সান্নিধ্যের মতো।

মহা নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে কে প্রথম কাছে আসবে প্রিয়ে?

 

শেষ প্রশ্ন

 

 

শেষ প্রশ্ন

 

মোমের মতো গলে পড়া সন্ধ্যা

মহানগরীর ত্রিফলা আলোর স্রোত

বারবনিতার মতো মুগ্ধতা ছড়ায়

চৌষট্টি কলার রাত দাঁড়িয়ে থাকে

 

সিলেবাস জুড়ে হাড়হাভাতের স্বপ্ন

ভাতের থালা থেকে বিশ্বসুন্দরীর ঠোঁট

ক্যানভাস জুড়ে বণিকের মানদণ্ডে

নিরুপিত প্রতিটি জয় পরাজয়

 

না এটা কোন বিষয় নয়, মহাকাল

নেমে এসে দাঁড়ালে চারপাশে

অন্যতর গূঢ় উদ্দেশে বিপ্লবের

নতুন কোন পাঠে

          আর কি প্রয়োজন আছে?

 

আশ্বিনের নবম দিবস’ ১৪২৫

শেষ প্রস্তর যুগ

 

 

শেষ প্রস্তর যুগ

 

এখানে এককালে সেল্ফি তোলা হতো খুব

নিজের সেল্ফিতে নিজেই আত্মহারা সকলে

তখন অখণ্ড অবসরের সময়, সারাদিনে

‘আমাকে দেখুন’ পর্ব ওয়ালে ওয়ালে

 

কে যে কখন কাকে কিভাবে দেখতো

সেটা জানতেই যত আনন্দ

সে এক দিন ছিল, হাতে হাতে

হাতের মুঠোয় দুনিয়ার ভালোমন্দ

 

বাকি কথা অনন্ত ঘুমের অতলে

পরস্পর দ্বিধা দ্বন্দ্ব ঈর্ষার আড়ালে

সে এক দিন ছিল, হাতের মুঠোয়

দুনিয়া নিয়ে পরস্পর চলতো সকলে

 

সেসব অনেক অনেক দিন আগেকার কথা

মানুষের ঘরে ঘরে চাবি দেওয়া তালা

মনে মনে কাঁটাতারের উঁচু উঁচু পাঁচিল

সেল্ফির ক্ষতজুড়ে শুধু বিষাক্ত জ্বালা

 

৫ই চৈত্র ‘১৪২৭

 

শ্রীনগরের পথে

  

 

শ্রীনগরের পথে

 

এখানে আর্ত চুম্বনের আস্বাদ

এখানে বিবস্ত্র লাশের আলিঙ্গন

এখানে পোড়া মাংসের আলপনা

         এখানে রাজনীতির কনভয়

 

এখন জনসভায় দেশপ্রেমের পতকা

এখন জনরোষে উৎফুল্ল জননেতা

এখন জনমানসে রাষ্ট্রই ঈশ্বর

       এখন ক্ষমতার পৌষমাস

 

এরপর ভোটের লাইনে আমজনতা

এরপর পেটের ভাতে প্রতিদিন

এরপর নতুন খবরে হেডলাইন

        এরপর কার কি বা এসে যায়

 

                                                ৩রা’ ফাল্গুন ১৪২৫

সংকল্প

  

সংকল্প

 

শব্দের নোঙর ফেলে দেখেছি

জলন্ত চিতার আগুনে

 

সর্পিল সময়ের স্রোতে ঢেউ তুলে

তবু কোন বেদবাক্য আসেনি উঠে

 

ভালোবাসার ঠোঁটে ফোঁটা ফোঁটা চুমু

নাক্সভোমিকার মতো টুপ টুপ ঢেলে দিয়ে

 

জুড়াতে পারেনি হৃদয়, কাঁচ ভাঙ্গা

প্রণয়ের পাশে বেমানান সব’ই

 

শরীরের ওমে ধ্রুপদ ধামারে বরং

আর একবার এসো ফিরে

 

আদিবাসী নৃত্যের জ্যোৎস্নার মতোন

অমলিন গল্প ধরা যায় কি না যায়…….

 

                                               ৫ই শ্রাবণ’ ১৪২৭

সংক্রমণ

  

 

সংক্রমণ

 

থালা বাজলো তালি বাজলো বাজলো কাঁসর ঘন্টা

মন্ত্রী খুশি শান্ত্রী খুশি, খুশি সবার মন’টা

            রাত নয়টা ভারতবাসী নয় মিনিটের যুদ্ধে

            নিভিয়ে আলো জ্বালিয়ে প্রদীপ করোনাকে রুখবে

আকাশ জুড়ে পুষ্পবৃষ্টি দেখলো ভারতবাসী

কোটি টাকার ফুলের স্মৃতি হয়নি আজও বাসি

            ফুল পড়েনি তাদের মাথায় হাজার মাইল পথে

            বাড়ির পথে হাঁটার সময় ভগ্ন মনোরথে

রিক্ত ওরা ছিবড়ে জীবন, রাজার এঁটোর মতো

এই ভারতের পথে পথে মরলো কতো শত

            আমরা আছি দিব্বি সুখে করছি কত তর্ক

            মুখোশ এঁটে দিবানিদ্রায় সব্বাই সতর্ক

হাঁচি হচ্ছে? কাশি হচ্ছে? করোনা হয় যদি

তফাৎ যাও! তফাৎ যাও! অটুট থাকুক গদি

            বিশ্বক্রমে আজকে ভারত চার নম্বর স্থানে

            হাজার দশেক মৃত্যু খুবই তুচ্ছ কে না জানে

এই সাফল্য নজির বিহীন জানে ভক্তজন

চোখের দেখায় কানের শোনায় ছড়ায় সংক্রমণ

 

                                               ৩২শে জ্যৈষ্ঠ’ ১৪২৭

সংলাপ আলাপে প্রলাপে

 

সংলাপ আলাপে প্রলাপে

 

সময়ের রুগ্ন হাতলে ভর দিয়ে এখনো কি দেখ তুমি?

মৌখিক আলাপের চড়া মেকআপ

সাংবিধানিক ঘোমটায় আমাদের তাথৈ নৃত্য

বুদ্ধির অলিন্দ জুড়ে শুধু চৌখশ হয়ে ওঠা

মুখোশটা ঠিক রেখে- রাখো!

 

অনেক মনীষীর ভ্রূণ ঘেঁটে এই বাংলা দেখেছে

যা দেখার ছিল। পরজীবী গোত্রের মন্ত্রে

উল্লসিত সমাজ সম্প্রদায় সকালের রোদ

সমস্ত ইচ্ছার সলতেতে আগুন দিয়ে

কাঁটাতার খেলা করুক হৃদয়ে তাহার!

 

অভিধান ঘেঁটে দেখি সকাল বিকাল

শিরদাঁড়ার ঘ্রাণ মুছে দিয়ে ফিনিশিং লাইনে ভিড়

তবু দুপাটি দাঁতের খাসা হাসি সময়ের কাস্তেতে

শান দেয় রোজ। এই পথে হেঁটে দেখো

তোমারও প্রপিতামহদের লম্বা লাইন!

 

সিঁড়িভাঙ্গা অঙ্ক জুড়ে বেয়াদপ মইয়ের দাপাদাপি

আমিও দেখেছি। মঞ্চজুড়ে কাঠপুতুলের

কালোয়াতির রাতে বেদখল হয়ে যায়

হারানো জমি। যাক তবু তো সোনার বাংলা জুড়ে

সোনার বিষবৃক্ষ ফলিয়াছে তোমার আমার!

 

কাটা ঘা জুড়ে নুনের ছিটে দেওয়ার মতোও

কেউ নেই আজ আর। তাই পোয়াবারোর সময় এখন

নেপোদের তর্জন গর্জন আর ইস্তাহার

বিলাতী ঢেকুড়ে নয়তো

হাতছাড়া হয়ে যায় সবেধন নীলমনি!

 

তাই এসময়ে লজ্জা পেতে নাই

সময়ের আঁচে বুদ্ধি সেঁকে দেখি আমিও সকলের

মতো আমাদের হয়ে বাঁচি। হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব

বিবিধ রতন। আমি তুমি আর সে পরস্পরের মুখে

প্রতিবিম্ব পড়ে এই বাংলার তোমার আমার!

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন