আজ আর কবিতা নয়

 

 

আজ আর কবিতা নয়

 

খানে শ্মশানচুল্লীর ঘন অন্ধকারে

অস্থিচূর্ণ হাসির জলসা।

প্রেতলোকের ইশারায়

ঈশ্বরের নাভিশ্বাস সংবাদ শিরোনামে

বেআব্রু প্রতিদিন।

বস্ত্রহরণ পর্বের ড্রপসিনের আড়ালে

মুখোশ নৃত্যের ছন্দে গণতন্ত্রের সহজপাঠ।

আমাদের বর্ণপরিচয়ের স্বরবর্ণে ব্যঞ্জনে

স্লোগান মিছিল ধর্মঘট,

খিড়কি থেকে সিংহদূয়ারে।

গোরস্থানের মাটিতে ধর্মগ্রন্থের আত্মবিলাপ

নাটকের পঞ্চমে শরশয্যা পাতলে

তীর্থক্ষেত্র পবিত্র হয়।

সংবিধান স্তোত্রে রাজনীতির মুখে ভাত।

ডোডো পাখির মতো

প্রতিশ্রুতি শপথ অঙ্গীকার জুড়ে

দেশপ্রেমের ফুলঝুড়ি।

সময়ের সংবর্তনে ইতিহাস জুড়ে

অজস্র প্রলাপ ঘূণধরা কাঠের মতো ফাঁপা।

তবু মনীষীর আত্মজীবনী জুড়ে

মানুষের মুখে ভাতে-কানাগলির অন্ধকার।

 

(০৩/০৭/১৩)

 

আজকের কবিতা

 

আজকের কবিতা

 

শেষ দিন

 

কিংবা ধরা যাক এই সেইদিন

       দিনের শেষ ট্রেন চলে গেলে

       আলো অন্ধকার প্ল্যাটফর্মে

               আমি একা

               এবং ছন্দপতন

 

 

বাসর

 

মানুষের মতো অসুখ যাদের

        আমিও তাদেরই মতো

        প্রেয়সীর আঁচল ভেবে

                রাত্রি জেগেছি রাত্রিদিন

                ওদিকে হয়তো তুমিও বা

 

 

শপথ

 

নেওয়ার দিন এলে দেখেছি

         আমিও তোমারই মতোন

         বিশ্বাসের দানা ছড়িয়ে

                  ডেকেছি কবুতর

                  বাকিটা ইতিহাস

 

 

আলিঙ্গন

 

ছোঁয়াচে রোগের মতোন

       আসক্তির ভাইরাস নিয়ে

       আমিও টেনেছি তোমায়

                  বিকলাঙ্গ চুম্বনের

                  গোপনাঙ্গ ক্ষতে

 

 

প্রেম

 

সর্ষের মধ্যে ভুতের মতোন

        পরস্পর হৃদয়ের চৌকাঠে

        উঁকি ঝুঁকির দিন

                    ভালোবাসার অ আ ক খ

                    স্লেট পেনসিল

 

আজীবন ডট কম

 

 

আজীবন ডট কম

 

একটু আগে এক আকাশ স্বপ্নের ঝিলমিল নামল

আটপৌরে আশাবরীর ঝালরে।

সকালের ভিজে শাড়ীর আঁচলে ধুয়ে গেছে

রাতের দাপাদাপি। স্মৃতি রোমন্থনের ডালায়

মাইক্রোচিপের ভিড়। তবুও আত্রেইয়ের

ঢেউ ভাঙ্গা লাবণ্যে যাবতীয় খুনসুটি ফেলে দিয়ে

দুচোখ বাড়ানো তিস্তায় ভাগীরথী নামলে.....

কি রোম্যান্টিক মনে হয় ভালোবসা ডট কম্।

 

পিলসুজ ওল্টানো অন্ধকার জমে ওঠা বুকে

জলপ্রপাতের শব্দে কান পেতে শোনো,

শীতরোদ শুয়ে আছে একা

মাইল মাইল হলুদ পাতার মর্মর শয্যায়।

তবুও আরক্ত চুম্বনের সৌরভ ছড়ানো

আলিঙ্গন মেখে রাজপুত্র রাজকন্যারা

হাত নেড়ে গেলে দীর্ঘশ্বাস ক্ষণস্থায়ী হয়।

আলোকবর্ষব্যাপী জীবন

সপ্তপদী শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে

নিমগ্ন আজীবন ডট কমের চতুর্দিকে।

 

(৩০/১১/১২)

 

আড়ি আড়ি আড়ি

 

 

আড়ি আড়ি আড়ি

 

নক্ষত্রের বিষাদ মাখা রেখাঙ্কনে

অক্ষর ভিজিয়ে নিয়ে নিশ্চিন্তে বসে আছি।

শব্দের অন্তরালে মহাবিশ্বের  বিস্ময় উকিঁ দিয়ে গেলে

মাঝে মধ্যে স্বপ্নের অভিসারে তাকে দেখি।

বিষাদসিন্ধুর ঢেউ এসে অবুঝ স্মৃতির খুঁটি ভিজিয়ে দিলেও

ভেজে না অভিমান।

চোখের কোলে কালি বয়স কিংবা  পুষ্টির অভাব।

 অন্য কিছু নয়। ধ্বনি কিংবা প্রতিধ্বনীও নয়,

স্তব্ধতার বিপুল বিস্ময়

মাঝরাতে মোম জ্বেলে

রাতের সাথে একা বকে যায়।

মহাকাব্যের স্বরবর্ণ ব্যাঞ্জনে

আমাদের দিনলিপি জুড়ে

যুদ্ধের দামামা।

ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ভেজা আদরে

কি লাভ আবার সংলাপ বুনে বুনে?

ভালোবাসার কুরুক্ষেত্রে

অভিমন্যু নয়।

মহাপ্রস্থানের পথে ঢের ভালো,

রাত্রি নিশীথে

অনিমিখ নিরালা সময়।

 

(০৫/০৭/১৩)

 

 

আত্মজৈবনিক

 

 

আত্মজৈবনিক

 

আত্মজীবনীর পাতায় পাতায়

থোকা থোকা লজ্জা ঝুলে আছে।

ঈর্ষার কচুরিপানায় ঢেকে যায় মুখোশ ছেঁড়া মুখ।

 পাঁজরে প্রেমের কৌটোয়ে

আছড়ে পড়ে বিষাক্ত অসুখ।

 

শেষ ট্রেন হাতছাড়া হলে

লাইনের ধারে বিমুখ অন্ধকার।

 ইতিহাস উসখুস করে নিঝুম কবরে।

পৃথিবী বিমুখ নয় তবু লোভগুলো বালি হয়ে ঝরে।

 

চশমার কাঁচে তছনছ যৌবন

আটপৌর রাতের হিসাব রাখে

 প্রসূতিসদনের বিলাসী চৌকাঠে।

নিরন্ন ক্যানভাসে পরিবার পরিকল্পনা হো হো করে হেসে ওঠে।

 

আত্মজীবনী সলতে পাকায়

সংখ্যাতত্বের গভীর জিজ্ঞাসায়।

ছায়াপথের বারান্দায়

নীহারিকা আলো দেয় তবু-

সূর্যের ভাঁড়ারে সময়

ধুলো হয়ে জুবুথুবু।।

 

(২৩/০৪/১২)

আত্মহারা প্রেম

 

 

আত্মহারা প্রেম

 

তুমিই আমার তন্বী সাকি

মত্ত মদিরা সুরা।

তুমিই আমার প্রেমের ফাগে

এভারেস্টের চূড়া।

 

তুমিই আমার প্রাণের হাসি

হৃদয় উতরোল।

তুমিই আমার পূর্ণ শশী

জ্যোৎস্না ভরা কোল।

 

তুমিই আমার বাঁধনহারা

আকাশভরা নীল।

তুমিই আমার ঝর্ণা সখী

নির্ঝর ঝিলমিল।

 

তুমিই আমার ধ্রুবতারা

সকল পথের দিশা।

তুমিই আমার সকাল ওগো।

আধাঁর কাটা নিশা।

 

তোমার সুরের ঝর্ণাতলায়

আমার অবসর।

তোমার বুকের দোদুলদোলায়

থাকব জীবনভর।

 

তোমার তনুর রূপের শ্রীতে

আমার অহংকার।

তোমার মদির চুম্বনেতে

ভাসব বারংবার।

 

তোমার দুঃখ সুখের মাঝে

আকুল আমার প্রেম।

তোমার জীবন যৌবনেতে

ভাসিয়েই দিলেম।

 

তোমার অভিমানী বীণায়

বাজলে করুণ সুর।

আমার আমি পড়বে ভেঙ্গে।

ব্যাথায় ঝুরঝুর।

 

(২৯/০৮/১২)

আদিগন্ত শূন্য অন্তহীন

 

 

আদিগন্ত শূন্য অন্তহীন

 

অক্ষরের স্তূপে চাপা পড়লে কবি।

কবিতা সাঁতরে পাড় পেলে না খুঁজে?

এই পৃথিবী বৃহৎ মহেঞ্জোদরো।

কালের খেয়ায় ঠাঁই হয় না কারো।

 

শব্দ দিয়ে যতই ফোটাও রঙ।

ক্যানভাস তো দ্বিমাত্রিকই শুধু।

শব্দে ছন্দে যায় কি কাটা কবি

মাটির ভিতর শিকড় গভীর নদী।

 

ছায়াপথের সুদূর ইশারা

শব্দে তোমার হয়তো দিল সাড়া।

আদিগন্ত শূন্য থেকে শুরু।

তাই কি তোমার ছন্দে দিল নাড়া?

 

আজকে তোমার আয়ুর কোঠায় দিন

মহাকালের আঁধারে হলে লীন।

কাব্য ছেঁকে অমৃতময় সুধা

কালের খেয়ায় সেও মূল্যহীন।

 

এই যে জীবন আঁধার থেকে আলো।

এই যে মরণ শেষ হিসেবে ভালো।

আদিগন্তশূন্য অন্তহীন।

তুমিই বলো এই কি সমীচিন???

 

(১৯শে এপ্রিল) ২০১২

আদিম রমণীর মতো

 

 

আদিম রমণীর মতো

 

[এক]

এক পৃথিবী ব্যাসার্ধ ঘুরে দেখেছি, আদিম রমণীর মতো

নিটোল দুটো চোখের পাতায়; হরিণেরা খেলা করে না আর।

বিপন্নতার কৌটোয় স্মৃতির ঔষধি হয়তো শেষ।

অবসন্ন তৃণের বুকে নাগরিক কর্কট রোগ

 

সূর্যের ছায়ায় ম্লানমুখ তুলে হয়তো ধর্মগ্রন্থের পাতা ওল্টায় রোজ।

তবু ব্যাবিলন থেকে মদিনা, কাশী থেকে কুরুক্ষেত্র

সব চুপ, সমস্ত অক্ষর জুড়ে নিস্তব্ধ বুলেটের ঘ্রাণ

শেষ কথা বলে চলে যায়।

 

প্রেম আর বিষাদের মাঝে জেগে থাকা অশ্রুবিন্দু জুড়ে

আর কোনো মহাকাব্য নয়,

ম্যানিফেস্টোর পোড়া পাতায় মাংস পোড়া দগ্ধ প্রত্যয়।

এক পৃথিবী ব্যাসার্ধ জুড়ে শুধু বিদগ্ধ সম্মেলন।

 

[দুই]

জীবনের অনেকগুলো দিন কেটেছিলো নিরাপদে,

রমণীর স্তন থেকে নিরাপদ ঠোঁটের কিনারায়।

বাসী খবরের মতো সেসব আজ রিক্ত যোনির আসেপাশে

ভিড় করে, ঝাঁচকচক আমাদের শহরে।

 

এযুগের তুলিতে যে কটা রঙ খুঁজে পাওয়া গেল

ভালবাসা আদরের ধারাপাতে, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ জুড়ে

তবু দেখি ঘূণেদের উৎসবে সকলের অবাধ আমন্ত্রণ।

ইজেল জুড়ে তাই ছায়াপাত ধর্ষকের।

 

আলো অন্ধকার গায়ে মেখে, সময়ের সিঁড়িতে

অশরীরী আলপনা জুড়ে দেখেছি মহাপুরুষদের ব্যর্থ আনাগনা শুধু।

তবু মুড়িমুড়কির মতো স্লোগানের আড়ালে

চাপা হাসি শুনে ডুকড়ে উঠেছে গোনাগুন্তি পাঁজর।

 

[তিন[

মহাকাশ পরিক্রমা সেরে, অন্ধকার ছায়াপথের নিঃসঙ্গ রাত

এক পৃথিবী ব্যাসার্ধ জুড়ে তারপর বোধিবৃক্ষের তলায়।

আমাদের বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগ থেকে সমস্ত সংবিধান

দেখে চোখের বিপর্যয়, সুজাতাকে চেয়েছে হৃদয়ে।

 

আবারো আদিম রমণীর মতো নিটোল গড়নে

বাইবেল ত্রিপিটক কিংবা কোরাণ

সূর্যে সূর্যে চলে যদি? নব বসন্তের কলির মতো

রঙ ধরুক বেদে বেদান্তে।

 

সংঘ নয়, কি হবে শুকনো অক্ষরে?

অন্ধকার যোনির উৎসমুখ থেকে নিরন্তর আলোর অভিমুখে

খুলে যাক আগামী শতক। আদিম রমণীর নিটোল

স্তনের মতো, সুজাতার পরমান্নে!

 

(০৭-০৫-১৪)

 

আনুভূমিক

 

 

আনুভূমিক

 

আনুভূমিক নগ্নতায় পার্থিব সুখের কৌট ভরে

আছে দলিল দস্তাবেজ। সরকারী-

দরকারী শীলমোহরে বিশ্বাস নিশ্চিন্ত।

রাত্রি তৃতীয় প্রহরে মিলন পরাগ।

 

নদীর জলে মুখরেখাগুলি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে

গলিত শপথ স্থবির--বিষধর বেঁচে থাকা।

অমৃত সঞ্চয় লোভে নিশাচর ক্ষোভের

শানিত তরবারি হাওয়া কেটে চলে।

সাত সমুদ্রের লোনা জলে বিক্ষোভের আঁচ

প্রশমিত হলে, দেখা যায় সকলের পকেটেই

জমে গিয়েছে হত্যার সংকল্প।

মানবের অস্থি পোড়া ছাইটুকু থেকে বারুদ সঞ্চিত হলে;

আশাভঙ্গের পাশায় শকুনীর  ফের জয়োল্লাস।

পাঁজরে দুষ্ট কীট নড়ে।

 

ভালোবাসা ভালো।

তবে মালিন্যবর্জিত নয় এখনো।

পরাগ মিলনের রাতে

ভালো করে খোঁজ নিতে হতো

আনুভূমিক নগ্নতা:

বিষের-থলি কি রেখেছে অক্ষত?

 

(১৬/০৮/১২)

 

আমায় তুমি মন্দ বলতে পারো

 

 

আমায় তুমি মন্দ বলতে পারো

 

আমায় তুমি ভালোবাসবে ভেবে

ডেকেছিলাম তোমায় আমার কাছে।

আপন সুখে তোমার মনের মধু

মিশিয়ে নেব যুগল প্রেমের আঁচে।

 

শরীর মনের অন্ধ কানা গলি

যুক্তাক্ষর ছাঁদের টানে টানে।

তাপ উত্তাপ রাত্রি দিয়ে ছেঁকে।

দাঁড় করাল প্রেমের একটা মানে।

 

এখন আমার জীবন জুড়ে শুধু

গন্ধে তোমার রাত বারোটার গান।

আমায় তুমি মন্দ বলতে পারো।

রক্ত গরম সুখের প্রতি টান।

 

কিন্তু তবু তোমার শরীর জুড়ে

আদর যত হয়েছে অম্লান।

আড়ালে তার হৃদয় আছে অনেক।

নেই কিন্তৄ মেয়ে মানুষের টান।

 

(১০/০২/১২)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন