ফেরা ২.০

 

ফেরা ২.০

 

এসেছিলে, ফিরে গেলে

ফিরে যাওয়া সে’তো শুধু ফেরা নয়

বিবস্ত্র পথের মাঝে

ফেলে দেওয়া লাশের মতো

ফেলে রেখে গেলে, সব স্মৃতি

 

প্রখর রোদের আগুনে

সেই সব স্মৃতির দগ্ধাবশেষ

তবু লেখে তোমার নাম

এই নদীনালা সাঁতরানো

সবুজ ঘাষের দেশ, এই বাংলায়

 

তবু তুমি ফিরে গেছো

একেবারে। চেয়ে দেখনি ফিরে

এখানে আকাশের নীলে

কার আঁচল ওড়ে এখনো

ঘোলাটে স্মৃতির ধুসরতায়

 

ফিরে গেছো, ফিরেই যেতে চলে

তাই বলে আর বাকি সব কিছু

কারা যায় ফেলে? এই উদাসীনতা

ভালো নয়, ভালো নয় সে সত্য

এমন কঠিন কিংবা ক্ষমাহীন অক্লেশে

 

৩০শে মে ২০২৩

©শ্রীশুভ্র

অজগর সন্ধ্যা

 

অজগর সন্ধ্যা

 

পোড়া কবিতার হাড় মাংসের

টুকরো টুকরো স্মৃতি

ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিটকিয়ে

পড়ে রয়েছে, গলি থেকে বাই লেনে

 

শহরের দেওয়াল জুড়ে

কান পাতলে, এখনো শোনা যাবে

ছাই হতে হতে ধূসরতর শব্দের

কানাকানি, ক্লেদ কালিমা গ্লানি

 

অজগর সন্ধ্যার দমবন্ধ সিঁড়িতে

কালি থেকে কলমে শব্দের অক্ষরে

দরাদরি, সময়ের ঘুণপোকায়

কবি, সভাকবি ভক্ত-পাঠক সবই

 

তবু, শতকের ম্লান আলোয়

ইতিহাস পাতা ওল্টাবে

কোন কোন পাণ্ডুলিপির পোড়া

ফসিলে, উষ্ণতা ঘাম ফিরে পেলে

 

২১শে মে ২০২৩

©শ্রীশুভ্র

 

 

তবু মনে পড়ে

 

তবু মনে পড়ে

 

যারা সরে পড়ে, সময়ে সুযোগে

তারা আর আসে না ফিরে

যে চলে গেছে অম্লান রোদের আলো কে

উপেক্ষা করে, আরও দূরে

সুদূর কোন নক্ষত্রের টানে

তার সময়ের মূল্য আছে

 

সন্ধ্যার মিষ্টি বাতাসে

মন ভালো করা কোন কথা

মনে পড়ে গেলে, ভালো কথা

আরও ভালো, ব্যাথা ভুলে

বেদনার আড়াল দিয়ে

সেই কথাগুলিতে সুর দিয়ে যাওয়া

 

সব কথায় সুর লাগে না হয়ত

না লাগুক। সেগুলিও জমা থাক

স্মৃতির বিভ্রম কালে

সেগুলি হয়তো ফিকে হয়ে যাবে

যাক, সব কিছু ধরে রেখে কি হবে?

সব কিছুই ফিকে হয়ে যাবে এককালে

 

২৭শে এপ্রিল ২০২৩

©শ্রীশুভ্র

 

পথের পাঁচালি

 

পথের পাঁচালি

 

চেনা পথের জানা দিশায়

রয়েছি দাঁড়িয়ে

পথিকের মতো চোখদুটি তুলে

অনেকটা দূরের দিকে তাকিয়ে

 

রাত্রি ঘনিয়ে এলেও

উপায় কি?, এমন অন্ধকারে

কিংবা ধরা যাক এখন দিন

দিনের আলোতেও, অচেনা পথে

 

কে’ বা পা বাড়াতে চায়?

তবু পথিকের মতো চোখদুটি

মেলে, দূরে দূরান্তরে ছুটোছুটি

পথিকের মতো না হলেও, পথে পথে

 

পথ ভেবে হয়তো বা গোলকধাঁধায়

ঘুরপাক মহাসমারোহে।

তবু পায়ে পায়ে অনেকটা জ্ঞান

জমে ওঠে অজ্ঞান ভাঁড়ারে…

 

৩০শে মে ২০২৩

©শ্রীশুভ্র

ফাঁক

 

ফাঁক

 

চলে গেছে, যাঁদের চলে যাওয়ার কথা ছিল

সরে গিয়েছে তাঁরাও, যাঁদের তাড়া ছিল খুব

সরে সরে যাওয়ার। ঝরে গেছে আর বাকি সব

 

কিন্তু এই আমি, যেতে পারিনি এখনো

নিজেকে ছেড়ে, নিজেকে নিয়ে যতদূর যাওয়া যায়

ততদূর কজনের যাওয়া হয়? তবু বসে আছি

 

একদিন বাকিদের মতো, আমিও আমাকে ফেলে

চলে যাবো বহু বহু দূরে। স্মৃতি বিস্মৃতির মোহ

মায়াজাল কাটিয়ে, না, কোন খেদ আক্ষেপ নিয়ে না

 

শুধু এইটুকুই বলে যাওয়া ভালো, প্রথম কিংবা শেষ

সবটাই জুড়ে রয়ে গেছে মস্ত বড়ো ফাঁকি, যার ফাঁকে

যত আঁকিবুঁকি, তার সবটাই নিজেকে ভুলিয়ে রাখা। রাখি

 

৩০শে মে ২০২৩

©শ্রীশুভ্র

 

বসে থাকা ভালো

 

বসে থাকা ভালো

 

বসে আছি, যারা বসে থাকে

তাদের মতোন আমিও

কিছুটা প্রেমিক, আদতে বেকুব

 

তুমিও জেনে গিয়েছো সেদিন

সে কথা, নিভৃতে নয় তবু

পথ চলতি পথের দেখায়

 

সেদিনের সেই দুটি চোখ

আর পাঁচটি মেয়ের মতোন

সময়ের জবানিতে স্মার্ট

 

আমি শুধু দেখে নিয়েছি

তোমার সেই চোখে

লেখা আছে কোন ঠিকানা

 

তবু বসে আছি, বসে থাকা ভালো

যারা বসে থাকে, তাদের মতোন

আমিও বেকুব, কিছুটা প্রেমিক তবু

 

৩০শে মে ২০২৩

©শ্রীশুভ্র

 

 

বেকুব

 

বেকুব

 

যাঁরা বলেছিল, আশা আছে

রাতকানা রাতের আড়ালে

যাঁরা ভেবেছিল কাজ হতে পারে

ভালোবেসে দুহাত বাড়ালে

 

যাঁরা চেয়েছিল, সত্যের জয়

ট্র্যাজেডি’র শেষ রাতে

যাঁরা দেখেছিল স্বপ্নগুলো

বলিষ্ঠ দুই হাতে

 

যাঁরা হেঁটেছিল মিছিল পেড়িয়ে

কানা গলি, গলি পথে

যাঁরা মিলেছিল পা’য়ে পা’য়ে সব

দুর্বার শপথে

 

মাথা কুটে কুটে দেওয়ালে দেওয়ালে

পায়নি সাড়া, জাগেনি তো কেউ

শাসক হেসেছে, হেসেছে সময়

অনড় সমাজ, ওঠেনি তো ঢেউ

 

২১শে মে ২০২৩

©শ্রীশুভ্র

 

 

ভ্রূণ

 

ভ্রূণ

 

অনেকক্ষণ কেটে গিয়েছে তারপর

রাত্রি আরও গভীরে ডুব দিয়ে

নিমগ্ন হয়েছে গহন নিস্তবদ্ধতায়

 

এই সময় শিথিল শরীর

বুনো লতার মতো এলিয়ে পড়ে ছিল

এই সময় মন স্বচ্ছ জলের মতো

টাপটুপ, কিন্তু আয়নার মতো

কোন প্রতিফলনের সাক্ষী ছিল না

 

মাঝখান বরাবর দূরত্বের সংলাপগুলি

ততক্ষণে বিবস্ত্র লজ্জায়

পরস্পর মুখ লুকাতে ব্যস্ত

রাত্রি তখন তৃতীয় প্রহর

যখন হামাগুড়ি দিতে দিতে

শরীর জুড়ে ঘুম

 

সেই সময় আর কোন আলাপ নয়

নিশব্দের আলপনায়

ঈষদুষ্ণ শান্তিটুকুই

প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে

 

১লা মার্চ ২০২৩

©শ্রীশুভ্র

 

সৎ পাত্র ২.০

 

সৎ পাত্র ২.০

 

দেখতে পেলে রাস্তা দিয়ে—

যাচ্ছি আমি জামাই নিয়ে?  

ভাবছো ছেলের দারুণ কামাই

জানতে চাও সে কেমন জামাই?

 

মন্দ নয় সে জামাই ভালো!

বৌয়ের মনে জ্বালতে আলো

দিবা রাত্র করছে যতন

চরিত্রবান স্বামীর মতন

 

বিদ্যে বুদ্ধি? বলছি শোন

বিদ্যের ধার ধারেনি কোন!

কিন্তু ছেলের বুদ্ধি বেশি

বাপ মা তো তাতে’ই খুশি!

 

ধন্যি ছেলের বুদ্ধির ধার

টাকায় কেনা চাকরিটি তার!

বিশ লক্ষ টাকার নোটে

দালাল ধরে কেল্লাফতে

 

পরীক্ষাতে গোল্লা পেলেও

ফেল করেনি সেই ছেলেও

মেরিট লিস্টে নাম তুলেছে

ছাদনাতলায় গিয়ে বসেছে!

 

ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়!

শাসকদলের ঘন্টা বাজায়

বেতন তোলে মাস পয়লায়

হেসেখেলে দিন চলে যায়

 

কিন্তু ভায়া আমার কপাল

চাকরিটি তার গিয়েছে যে কাল!

গোদের ওপর বিষের ফোঁড়া

হাকিম সাহেব বেজায় গোঁড়া

 

মাস পয়লার সকল কামাই

ফিরিয়ে ফকির হলো জামাই!

যাহোক এবার জেনেই গেলে

জামাই আমার কেমন ছেলে!

 

১লা এপ্রিল! ২০২৩

©শ্রীশুভ্র

 

 

সময় ফুরিয়ে যায়

 

সময় ফুরিয়ে যায়

 

তবে কি এখনই যাওয়ার সময়

এলো কি চলে?

এই খাট, বিছানা, ধবধবে শাদা চাদর

নিথর নীরব থাকবে পড়ে!

একলা আয়না দাঁড়িয়ে একা

ঘরের কোণে

যাবে না দেখা চোখের ভাষা

আপন মনে

 

তবে কি এখনই বলার সময়‌

যাওয়ার আগে?

শেষ কথাটি হলো না বলা

বলার কথা ছিল যাকে।

একলা স্মৃতি থাকবে পড়ে

শূন্য ঘরে

দমবন্ধ গুমোট বাতাস

সেই কথাটি রাখবে ধরে।

 

৩০শে মে ২০২৩

©শ্রীশুভ্র

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন