ঘুমের ভিতরে

 

ঘুমের ভিতরে

 

ঘুমের ভিতরে

আরও গভীর ঘুমের হাতছানি

আদি এবং অনন্ত সময় যেখানে স্থির

 

বহুদূর নক্ষত্র পতনের শব্দ শুনি

শুনতে শুনতে ক্লান্ত হই

ঘুমের ভিতরে

 

আরও গভীর ঘুমে

অনন্ত শরশয্যা পেতে শুয়ে আছি

অমাবস্যার অবারিত নিবিড় রাত্রিতে

 

নীল কামনার নারীর মতোন কেউ

এই সময় ঘুম ভাঙাতে এলে চলে যাবো

আরও গভীর গভীরতর ঘুমে

 

২৭শে আগস্ট ২০২৩

 

 

 

 

 

 

জলের মাতন

 

জলের মাতন

 

জলের ভিতরে চঞ্চলতা আছে

জলের মতো করে ছন্দে ছন্দে

পা ফেলতে চেয়ে পিছলে পড়েছি

সময়ের হাইওয়ে এগিয়ে গিয়েছে

 

তারপর কত জলের উত্তাল ঢেউ,

ঢেউয়ের মাতন আমার হৃদয় জুড়ে

আছড়িয়ে পড়েছে বারবার, তবু

আমি নিশ্চল কিংকর্তব্যবিমূঢ়

 

পরিযায়ী মন ডানা মেলতে চায়

এই আকাশ, আকাশের নীল

বাতাস, বাতাসের মতো উচ্ছ্বাসে

তবু আমি তল্পিতল্পা নিয়ে স্থির

 

স্থিতু হয়ে বসার মতো নিরুপদ্রব

এক অনন্ত জীবনের খোঁজে, শিকড়

নামিয়েছি একটু একটু করে প্রতিদিন

তবু জলের মাতন আমার ভিতর…

 

২৮শে আগস্ট ২০২৩

 

তবু কোলাহল

 

তবু কোলাহল

 

যে কথাগুলো বলা উচিত ছিল

নীতিবাক্য নয়, প্রলাপ কিংবা বিলাপও নয়

নয় মনের দুঃখ পাতায় ভিজে অক্ষরে লেখা

সে সব কথার ভিতরে কুড়ে কুড়ে খাওয়া সত্য

 

কফিনবন্দী জবানবন্দির মতোন, সত্য

জমাট বাঁধা অন্ধকারের মতোন নিত্য

সে সব কথার ভিতরের কথাগুলো সব

চলে যাওয়ার আগে বলে যাওয়া ভালো

 

এই যে জমকালো আলোর মায়াজালে

সম্মোহিত বিবেকের পটে শৃঙ্খলিত সুখ

গৌতম বুদ্ধ নয়, চৈতন্যের আলো নয়

ইঁদুরের মতো দৌড়, সকলের আগে

 

তারপর সাদা পাতা জুড়ে আত্মশ্লাঘার ঘুণ

জয়মাল্য বরমাল্য চমকানো প্রহর, তরপর

সেই খড়কুটো উড়ো খই, সেই ধুলো ঝেড়ে

ইতিহাস উঠে দাঁড়াবে নিজের গরজে না’কি!

 

কে বা কাকে মনে রাখে, ফটোর ফ্রেমে

কয়টি দিন ধরাই বা থাকে? বাকি সব

শিশিরের জল, ভেজাতে পারে কি মাটি?

শস্য ফলে না শিশিরের জলে, তবু কোলাহল

 

২৭শে আগস্ট ২০২৩

বিষের মন্থন

 

বিষের মন্থন

 

জলের সঙ্কেত ধরে ধরে

পা ফেলছি সাবধানে

এখনো মড়া হাড়ে

প্রাণের স্পন্দন খুঁজি

এখানে ওখানে

 

শহর নগর জুড়ে

ভুত প্রেত দৈত্য দানো

তবুও কবর খুঁড়ে

আবারো মহাকাব্যের

সলতে পাকানো

 

চারিদিক নরক গুলজারে

বিষের মন্থন প্রতিদিন

তবুও জমাট অন্ধকারে

জন্ম দিয়ে যেতে হবে

চে গুয়েভারা লেলিন

 

২৭শে আগস্ট ২০২৩

বুকের বাঁদিকে

 

বুকের বাঁদিকে

 

বুকের বাঁদিকে

অনেকেরই ব্যাথা হয়,

অনেকের হয় না

চেতনার ছায়ায়

সকলেই স্থির নয়

কারুর কারুর ভিতরে

ঘুণ পোকা নড়ে চড়ে

কুরে কুরে খেয়ে নেয়

চৈতন্যের অস্থিমজ্জা রস

 

সেইরকমই কয়েকজন

শ্রীমুখ দেখিয়ে, দেখি

মঞ্চ কাঁপায়, হাত নাড়ে

বারবার মঞ্চ বরাবার,

স্মিত হাসি হেসে

অনৃত ভাষণে করতালি

মুখরিত সন্ধ্যায়

নিজেরাই পুলকিত হয়

সবচেয়ে বেশি

 

বুকের বাঁদিকে

অনেকেই ব্যাথা পায়

এই সব ছবি দেখে,

মুখশ্রীতে আঁকিবুঁকি যন্ত্রণায়

পাশ ফিরে শোয়।

মগজ বরাবর অনিদ্রার

অভিশাপ মহানিদ্রার অভিসারে

ভুলিয়ে রাখে, নয়ত

বেদনা সহ্য করাই দায়

 

২৭শে আগস্ট ২০২৩

 

শব্দের পরিখা

 

শব্দের পরিখা

 

যতদূর পারি, শব্দের শরীরে

নিজেকে জড়িয়ে নিই

 

সমস্ত ইন্দ্রিয় জুড়ে এই জ্বালা

নিঙড়ে নিতে থাকে এই আমাকে

 

ওদিকে, সেই তিনি

যিনি মিটমিট হাসিতে গুণ টানেন

 

ইরেজার হাতে বসে থাকেন

মহাকালের পাড়ে

 

শব্দের হাত ধরে তবু আমি

আমাকে সাজাতে থাকি

 

দেওয়াল লিখন থেকে কপালের রেখায়

অক্ষরের মায়া জুড়ে আত্ম প্রতিলিপি

 

মাঝখানে পড়ে থাকে পাণ্ডুলিপি জুড়ে

বিধিলিপির রেখা, পাঠকের নাগালের বাইরে

 

২৩শে আগস্ট ২০২৩

 

 

সকলের মতোন

 

সকলের মতোন

 

এই দেখুন, এখনো কেমন বেঁচে আছি

বাকি সকলের মতোই লজ্জার মাথা খেয়ে

 

মননে ধু ধু প্রান্তর মরুভুমির মতোন বিশুষ্ক

হৃদয়ে ইট কাঠ পাথরের দেওয়ালের সারি

 

চোখ? চোখের সাম্রাজ্যে শপিং মলের ভিড়

আর ফ্যাশন শো’য়ের মিস ইউনিভার্স

 

হাতে এতো কাজ, যে ঘড়ি দেখার সময় নেই

নির্দিষ্ট গন্তব্য ছাড়া নামি না কোথাও

 

বিয়ের পিঁড়িতে বসে ছাদনাতলায় এসেছিল সে

তারপর আদাজল খেয়ে সংসার পাতানো

 

বকেয়া রোমান্সগুলো মধ্য রাতের ক্লান্তিতে

একটু তাড়িঘড়ি ঘুমিয়ে পড়ে পাশাপাশি বালিশে

 

পরকীয়া নেই, পিএনপিসি ষোলআনা দুইজনে

‘নেবার্স এনভি ওনার্স প্রাইডে’র প্রোজেক্টে ব্যস্ত

 

তারপর, সকালের কাগজে চোখ বুলিয়ে নিয়মিত

ছ্যা ছ্যা করি, সবকিছু গোল্লায় গেল যাহোক…

 

২৮শে আগস্ট ২০২৩

সুড়ঙ্গ এগিয়ে চলেছে

 

সুড়ঙ্গ এগিয়ে চলেছে

 

সুড়ঙ্গের প্রান্তসীমায় পৌঁছাতে চেয়েছি

জেনেছি, ও প্রান্তেই সমস্ত অন্ধকার ছাপিয়ে

অনন্ত জ্যোতির্লোকে তিনি রয়েছেন

 

এপারে আমাদের রাজত্ব, হাঁটি কিংবা হামাগুড়িই দিই

এপারে দেখিনি কোথাও তাঁকে, এতটাই অন্ধকার

এপারে পথ হারানোর ভয় তাঁকেও পিছু ছাড়েনি বোধহয়

 

সুড়ঙ্গের প্রান্তসীমায় পৌঁছাতে চেয়েছি

জেনেছি, ও প্রান্তেই সমস্ত অন্ধকার ছাপিয়ে

অনন্ত জ্যোতির্লোকে তিনি রয়েছেন

 

এপারে আলো নেই, তিনি নেই, অন্তহীন গহন সুড়ঙ্গে

আমরা কয়জন, তাঁকে দেখতে চেয়ে পথিক হয়েছি

আমাদের পথে পথে, পথই এগিয়েছে শুধু

 

সুড়ঙ্গের প্রান্তসীমায় পৌঁছাতে চেয়েছি

জেনেছি, ও প্রান্তেই সমস্ত অন্ধকার ছাপিয়ে

অনন্ত জ্যোতির্লোকে তিনি রয়েছেন

 

সেই পথে অন্ধকার আরও গাঢ় হয়ে সুড়ঙ্গ এগিয়ে চলেছে

বহুদূর, বহুদূরে দূরে সরে গিয়েছে অমৃত জ্যোতির্লোক

আমরা এগিয়েছি যত, তিনি তত দূরে দূরে গিয়েছেন সরে

 

২৭শে আগাস্ট ২০২৩

সে আছে

 

সে আছে

 

মহাশূন্যের মতো গভীরে

অনন্ত শূন্যতায় ভেসে আছি

পরম বিশ্বাসে

……সে আছে

 

গোপন অভিসারের মতোন মাতনে

নিবিড় সান্নিধ্য যেন নিয়ত

পরম তৃপ্তিতে

……সে আছে

 

কল্পনা? না’কি স্পষ্ট অনুভব!

এই তো হাতে হাত ধরা

আলিঙ্গনে

……সে আছে

 

অনন্ত সময় গ্রন্থিতে শাশ্বত উষ্ণতা

এই ছোঁয়া, ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা

পরস্পরে

……সে আছে

 

তবুও নক্ষত্র পতনের মতোন মুহুর্মুহু

শব্দ শুনি, শুধু জানি স্থির

নিশ্চিন্তে

……সে আছে

 

মহাশূন্যের মতোন গভীরে

মহাবোধি প্রত্যয় না’কি মহাভ্রান্তি?

শুধু জানি

……সে আছে

 

২৭সে আগস্ট ২০২৩

হোমাগ্নি

হোমাগ্নি

 

স্বপ্নবীজতলায়

স্বপ্নের রঙে নীলচে নীলচে দাগ

কালসিটে নয়, তবু যন্ত্রণার মন্থন রয়েছে

 

এই সময়

ফলবান উদ্ভিদের মতো

মাকাল ফলের গরম বাজার

 

আলোকিত মঞ্চে

স্বপ্নের ফেরিওয়ালাদের ভিড় দেখে

মন্ত্রমুগ্ধ জনতার উল্লসিত মহামিছিল

 

রোদবাতাসের মতো

সেই মিছিলেও আমি মানুষের মুখ খুঁজি

একজন দুইজন যে কয়জন হয় হোক

 

তবু দুই একজন নিয়ে

আরও একবার প্রজ্জ্বলিত হোমাগ্নি

যদি জ্বালানো যেত!

 

২৭শে আগস্ট ২০২৩

 

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন