তবুও অমলিন

 

 

তবুও অমলিন

 

দুচোখ বিভ্রমে নিপাট অন্ধকার

যে দিকে চোখ যায় যাক

এ জীবনে কিছু নাই তুমি ছাড়া আর

 

সমুদ্র মন্থনের দিন থেকে এই,

অমৃত গরলে সন্ধ্যা ঘনায়

যোনিস্নিগ্ধ রাত্রির উত্তাপ ছাড়া

লিঙ্গের স্বাক্ষরে আমি নিরুপায়

 

তাই তো ডেকেছি তোমায়

 

যে জীবন এখন‌ো দাঁড়িয়ে অমলিন

আরও দূর, দূরের যাত্রিকের আহ্বানে

যদি আমি চলে যাই কোনদিন

 

তবুও সময়ের দিনলিপিতে সেই তুমি

রয়ে যাবে নিপাট অন্ধকার অন্ধকারে

সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো সময়ের কলরোল

তোমাকে ডাক দেবে বারে বারে

 

যোনিস্নিগ্ধ রাত্রে লিঙ্গের স্বাক্ষরে

 

২৮শে আষাঢ়’ ১৪২৭

তুমি আমি আর যারা

 


তুমি আমি আর যারা

 

এসো বস, বসে থাকো

সবাই বসে থাকে না

তারা কায়দা কানুন জানে

সবাই জানে না

        তাই বসে থাকতে হয়

        বসে থাকতে থাকতে

একদিন উঠে দাঁড়ানোর ইচ্ছে চলে যায়

যাবে। যাক তাতে ক্ষতি নাই

তুমি আমি আর যারা

বসে আছি। থাকি থাকবো

        একদিন গল্পের সিঁড়ি দিয়ে

        উঠে দাঁড়ানোর গল্পে মশগুল

সেদিন মৃত মনীষীদের অক্ষর ছেঁকে নিয়ে

শিশুতোষ বইয়ের পাতায় ফেলে ছড়িয়ে

আর ধর্মগ্রন্থের মলাটে সেঁটে নিশ্চিন্ত

তুমি আমি আর যারা

 

 

তুমি আর আমি

 

 

তুমি আর আমি

 

তোমার চুমুতে আদর জমানো আমার চুমুতে লোভ

তোমার আঁচলে উড়বে একদিন সঞ্চিত বিক্ষোভ

তোমার কলমে ভালোবাসা নামে আমার কালিতে স্তব

তোমার আশার ব্যালকনি জুড়ে কাল্পনিক বাস্তব

 

কিসের এ চাওয়া পাওয়ার বাসনা আমায় বুকেতে টেনে

না পাওয়ার জ্বালায় জ্বলবে যেদিন সব কিছু ঠিক জেনে

সেদিন মাধুরী তোমার বিতানে শুকনো ফুলের মালা

প্রলয় নাচনে ক্ষত বিক্ষত ব্যর্থ বরণডালা

 

তোমার চোখের মায়াময় ঘোর সৃজনের ভালোবাসা

আমার দুচোখে চেয়ে দেখো ধীরে রাত্রিসুখের ভাষা

তোমার চলার ছন্দে ধরেছো আদরের আয়োজন

আমার পথে রাত্রি নিশীথে শরীরের প্রয়োজন

 

তোমার আমার দুপথের দিশা ভিন্ন মেরুর দিকে

বিপন্ন প্রেম সঙ্গমসুখ ক্রমে হয়ে যায় ফিকে

রামধনু মন শরীরে ফাগুন তবুও আগুন নেভে

ছেঁড়া তারগুলি বেসুরেই বাজে ক্ষোভে আর বিক্ষোভে

 

৮ই মে ২০১৮

দাম্পত্যে পরকীয়া

 

 

দাম্পত্যে পরকীয়া

 

সম্পর্কের গোলমালে আটকিয়ে আছি

চব্বিশ ঘন্টা মেপে দুই ভাগ করেছি

ঠিক ফেঁসে যাওয়া নয়, নয় অপরাধও কোন

কারণ পরস্পর কানাকানি হয়নি এখনো

 

একই আকাশে তো দেখি চন্দ্র ও সূর্য

সময়ের দু-পারেই তো বাজিয়েছি তূর্য

কারুর কি তারপরও অভিযোগ সাজে

কাউকেই বাদ দিয়ে ভাবতে পারি না যে

 

ভালোবাসা প্রেম হলে জীবনটা নদী

দুই কুল ছুঁয়ে থাকে বয়ে চলি যদি

বাঁকে বাঁকে কুল ছুঁয়ে জীবনের গতি

দুর্বার বয়ে চলে, চললে কী ক্ষতি?

দিনবদলের স্বপ্ন

 

 

দিনবদলের স্বপ্ন

 

যতদূর চোখ যায় দেখি

ভাঁড়েদের সাম্রাজ্য

প্রায় চরাচর ব্যাপী

নগরিক রাজধানীর পথ

শিঙা ফুঁকে রুটমার্চ

প্রতিশ্রুতির জয়রথ

মোসাহেবদের সান্ধ্য আসরে

সব চেনা মুখ সকলেই সৎ

কিন্তু অসৎ অপরে

 

মূঢ়েদের মতো তবু ভাবি

কার কথা ঠিক কে’বা ভুল

কার হাতে দিন বদলের চাবি

তখনই লাশের গন্ধ পাই

বিপ্লব নয়, শেষ কথা

আগাগোড়া মসনদটাই

আমিও গুছিয়ে নিতে চাই

মূঢ়েদের জলসায়

মোসাহেবদের তেল দিয়ে যাই

 

আমিও ভাঁড়েদের টানে

মুখোশে দিলখুশ

ভাঁড়ামির গানে

 

এই পথে এইভাবে

হয়তো বা ভাঁড়ারের চাবি

আমারও হাতে গড়াবে

 

সেদিন ভাঁড়েদের মতো

আমিও যথার্থ

দেশসেবক সতত

 

চরাচর ব্যাপী আমি তাই

বুথ জ্যাম হোক না হোক

ভাঁড়েদেরই ভোট দিয়ে যাই

 

১৮ই ভাদ্র

দিনযাপন

 

 

দিনযাপন

 

রোদ তেতে আছে দেখি

তোমার মেজাজের মতো

খট খট দুপুরের ডাক

তোমার প্রতিধ্বনি করে

 

তবুও নবদম্পতি দেখি

নিমন্ত্রণ আসরে, সকালের

মিঠে রোদের মতো নরম

চোখে চোখে কথা সারে

 

দমবন্ধ বৃন্দাবনে রাত্রি নামে

মশারির ভিতর পরস্পর

নিত্যকর্ম শেষে হাই তুলি

গাঢ় ঘুমে ঘুমন্ত শরীরে

 

৩রা চৈত্র’ ১৪২৭

দিল্লী থেকে কোলকাতা

 

 

দিল্লী থেকে কোলকাতা

 

মানুষ পুড়ছে

আর আমি বেহালায় বাজাচ্ছি

স্বরচিত প্রেমের কবিতা

যে বালক আজ পিতৃহারা হলো

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সমাসে

সে’ও দুচোখের বিস্ময়ে

আমার বাজনা শুনবে একদিন

আমি বাজাচ্ছি ভালোবাসার

মৌতাত রাগিনী

যে কিশোরী আজ প্রথম টের পেল

নিরাপদ নয় পুরুষের পৃথিবী

সেও অঙ্গ দোলাবে

তালে তালে একদিন

আমার অটোগ্রাফে

 

মানুষ পুড়ছে

আর আমি বলছি

ওরা তোমাদের শত্রু

মিত্রকে ভোট দাও

আমি তোমাদেরই লোক

বেহালায় সুখের দিনের ওমে

সংবাদ শিরনামে আমি

পোড়া আধপোড়া লাশ ছাড়িয়ে

ছড়িয়ে যাচ্ছে সুখ

স্বরচিত কবিতার কোলাজে

ট্রাফিক সিগন্যালে গ্রীন করিডোর

কলকাতা লণ্ডন হয়ে যাবে একদিন

শত্রুর কুৎসায় কান না দিয়ে

শুনুন, কাল কি সুর বেঁধেছি বরং

 

৩০শে কার্তিক

দুঃস্বপ্নের রাত

 

 

দুঃস্বপ্নের রাত

 

দুঃস্বপ্নের রাতের মতো মিছিলে হেঁটেছি

পতাকার স্লোগানমুখর মানচিত্রে

তবুও ইতিহাস বোরেদের গল্প লেখা না

কোনদিন

 

মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে দেখি

সব রাস্তা থেমে যায় আস্তাকুঁড়ে গিয়ে

আমাদের জীবন ডাস্টবিনে পড়ে থাকে

দেখি, দেখতে থাকি

 

দমবন্ধ হওয়ার রাতে অন্ধকার সূর্য

উঁকি দিয়ে যায় আমার জানলায়

তবুও স্বপ্নের জোয়ারে স্থিতু হওয়ার

 আয়োজন আমার, তখন

 

দুঃস্বপ্নের সময়

 

 

দুঃস্বপ্নের সময়

 

দুঃস্বপ্নের মতো অস্থির আবেশে আছি

আমার বনেদি রক্তে

হামাগুড়ি দেয় বিক্ষুব্ধ প্রলয়

এখানে কামানের গোলায় স্থির হয়ে যায়

ন্যায় অন্যায়, রীতি

মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে গেলে

আন্ধকারের মতো হিম স্তব্ধতা এসে

কাছে বসে, কথা বলি

নির্বাক ভাষায় মুখচ্ছবি দেখি

ক্ষুধার্তের গ্রাসে যে অভিশাপ আছে

তার গন্ধ টের পাই

 

হয়ত‌ো এইসব দেওয়ালের ওপারে

কঙ্কালের মৃত হাড়গোড়ে

গড়ে দেবে আজ নয়। আরও

অনেক শবদাহের শেষে

তিমিরভেদী বাণ, তবু এই অন্ধকার-

ছেৃঁচে এই অস্থিরতাই তুরুপের তাস

আজ আমার, অস্তিত্বের নাভিশ্বাস

 

১৯শে চৈত্র ১৪২৫

 

দু’পাত্র সময়ের গল্প

 


দু’পাত্র সময়ের গল্প

 

আসুন তাহলে বসা যাক এবার

দু’পাত্র নিয়ে সান্ধ্য বাতাসে

এলোমেলো কথার বিলাসে

পান করি রূপসুধাটুকু, সুন্দর

মেকআপে তন্বী এখনো বেশ

আপনি। বয়সের ধারে ধারালো।

 

এ শহর কেমন বদলিয়ে নিচ্ছে

নিজেকে, পাল্টে যাচ্ছে দিন দেখুন

তেমনই হয়তো আমরাও মুখোমুখি

আজ দুজনায়। দু’পাত্র সময়

কি’ই বা বেশি আর বলুন! শুনুন

গল্পটা কোনদিকে তবু গড়ালো

 

বাস করি পৈত্রিক ভিটেতে নয়

আজ। যৌতুক প্রাপ্তির ফ্ল্যাট।

ঘরে বৌ’য়ের শাসনে চলি

শরীরের ঋণ মেটাতে, তবু

শরীরের ভাষ্য বোঝা দায়

অনেকটা হালকা লাগে আড়ালে

 

এই যে দু’চোখ দিয়ে দেখছেন

ঢক ঢক চুমুক দিয়ে চুমুকে

এই চোখ, এই দৃষ্টির আঙিনায়

কতদিন পর ভালো লাগছে নিজেকে।

হয়তো বা সেই একই কথা আজ

আপনার, এই আমি হাত বাড়ালে

 

দু’পাত্র সময় কিই বা বেশি আর,

তবু এই ঢক ঢক চুমুকে চুমুকে

ছলকে টেবিলের দুই প্রান্তে দজনে

হয়তো বা সেই একই গল্প ভুবনে

নিত্য রুটিনের বাইরে, না হয়

আর একটি গল্প জোড়া যাক

 

এলোমেলো সান্ধ্যমদিরা বাতাসে

চোখে চোখে খোলামেলা সে অভিসার

দু’পাত্র সময় কি’ই বা বেশি আর তবু

এই আমি এই আপনি বয়সের ধারে

ধারালো, নিত্য দিনের আড়ালে

হাতে হাতে হাতদুটো তবু ধরা থাক

 

৩০শে কার্তিক’ ১৪২৫

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন