মহাপুরুষ কাপুরুষ

মহাপুরুষ কাপুরুষ

 

পূজো নিজেই নিজেকে করেছি

ভুলেছি নিজেকে

আজ আর ভোলাতে পারি না

 

আজ আরতির শিখা

আত্মরতি ভীমরতি হয়ে দেখা দেয়

কালের অভিশাপে

 

স্তবকে স্তবকে এ জীবনের সঞ্চয়ে

স্তাবকের আনাগোনা শুধু

দাঁড়াবার স্থান অকুলান

 

কপালে সাফল্যের জয়ঢাক

আড়ালে দাঁড়িয়ে পিতৃদত্ত নাম

মাতার আত্মজ

 

মহাকালের ভাঁড়ারে

আত্মগ্লানি, আত্মগর্বের ঔদ্ধত্যে

ঢাকে আজীবন লজ্জা

 

তবুও পরাভূত নই

সম্ভূত আবেগের তাড়নায়

মকশো করি মহামানবের বরাভয়

 

(০৩/০৪/১২)

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই

 

মাঝে মধ্যে আমার

আমারই মৃত্যুর সাথে কানাকানি

ঘন্টা মিনিট কাঁটাকে দিয়ে ফাঁকি

মরণের পিঠে হাত রেখে

দাঁড়িয়ে পড়ি চৌমাথার মোড়ে

অপেক্ষায় থাকি

বুকের ওপর দিয়ে চলে

যাক দুরন্ত দানবীয় ট্রাক

কালবৈশাখীর মরমী ঝড়

উঠুক জীবনমৃত্যুর ঘূর্ণিতে

পুঁতে দিক হঠাৎ

একার চেয়েও একাকী

মরুভূমির হাহাকারের মতো

একাকী একা সে তবু

 

হলুদ গাছের পাতার

ঝরে পড়ার আনন্দের মতো,

ঘূণপোকা ধরা ফাঁপা কাঠের

মুক্তির মতো স্ফূর্তিতে সে

হাতে হাত রাখে

ছায়াপথের আলো এসে

চমকায় আমাদের মুখে

নক্ষত্রের জন্মের আগে

কিংবা পরে; নীহারিকা মণ্ডলের আনন্দ নয়

নয় সব খানি

তুপ্তির সারাৎসার নিয়ে বুকে

কৃষ্ণগহ্বর আরও আন্তরিক

আরও অনুপম

মনে হয় না কি?

 

 (০৯/০৪/১২)

মাৎস্যন্যায়

মাৎস্যন্যায়

 

জানলার শিকে চোখ রেখেছিলো সুস্থিতি

পশ্চিমের আকাশে তখন দিনের বিদায় প্রস্তুতি

সুস্থিতির চোখ অবশ্য সেদিকে হাঁটে নি

পরিস্থিতির আঙিনায় তাকে অবশ্য দোষ দেয় নি কেউ

 

 

শুধু খান কয়েক চিল

নীচের দিকে তাকিয়ে

চতুর হাসি হেসে গেল

 

আর

 

পাশের নোংরা পুকুরে কটা পোনা মাছ----

বোধহয়, সুস্থিতিকে সমবেদনা জানাতে

উকিঁ দিয়ে যায় দুবেলা

 

১৩/১০/৯০)

মাধবীলতা রঙে

মাধবীলতা রঙে

 

খোয়াবসিন্ধুর জলে তিনটে মাছরাঙা

সংবিধান লিখছিল যখন, ঠিক তখনই

আমাদের চৌকাঠে ফরমান জারি হয়ে গেল

সরকারী বদান্যতায় তাল গাছের মতো নয়

ভাবতে হবে মাধবীলতার মতো চলনে

গনতন্ত্রের জয়ঢাকে চাঁটি মারা যাবে তবে

তাল মেলানো তালে অন্যথায় আইনী ছোবল

 

খোয়াবসিন্ধুর জলে এ সংবাদ পৌঁছালে

তৎক্ষনাৎ-মাছরাঙা রঙ কালো করে

ওরা তিনটে মমি পেয়ে গেল

যদিও বিরোধী পক্ষ অনেক বোঝালো

তবু সুখের থেকে বড়ো শান্তি নাই জেনে

আমাদের হৃদয়-বিপ্লবের পতাকায়

হাত মুছে নিয়ে নিয়ত চর্বিত চর্বন

 

তর্পনের জলে আকণ্ঠ বিষে

নীলকণ্ঠ হওয়ার লাইনে প্রচুর ভিড়

মাল্টিপ্লেক্সের নীল নির্জন হাওয়ায়

ভিড়ের আমি ভিড়ের তুমি; --

ভিড়ে থেকে দাও চেনা

মাধবীলতা রঙে

 

মানুষের মৃত্যু হলে

মানুষের মৃত্যু হলে

 

মানুষের মৃত্যু হলে

মানুষের স্মৃতি এসে তুলে নিয়ে যায় তাকে

শোক প্রস্তাবের আনাচে কানাচে প্রশস্তির ফালি দিয়ে

নিন্দে দোষারোপ উকিঁ ঝুঁকি মারে

সদ্য ফাঁকা ঘরে

অনেকটা হালকা বাতাস

এসে জীবনের খবর রেখে যায়

সকাল সকাল রোজকার বিষণ্ণ রোদ, সেদিন

প্রসন্ন চিত্তে ভোর রেখে যায় ঘরে

মানুষের মৃত্যুতে জল বাতাস রোদ কিচিরমিচির করে

স্মৃতির ঝাঁপি নিয়ে বিব্রত প্রিয়জন ধীরে ধীরে

অন্য কথা পারে

টুকিটাকি রোজকার ছোঁয়া,

শখের জমানো খুচরো ভালোবাসা থেকে

প্রয়োজনের ফরমাশ ধীরে ধীরে স্মৃতির পথ ধরে

মরা মানুষের নিস্প্রয়োজন ঘরে নতুন ধারাবাহিক তখন

জমা খরচের নতুন হিসেব রাখে

সম্ভোগে দূর্ভোগে

অমরতার লোভে

আর বেঁচে থাকার রোগে

 

(২৪/০৭/১২)

মানুষের সীমানায়

মানুষের সীমানায়

 

মানুষের প্রতি

বিশ্বাসের নোঙর রেখে স্থির-

যে ধ্রুবপদ দিয়ে গেলে বেঁধে;

মানুষের অহংকারের সেই পটে

যত একেঁছি আকাশের নীলে সগরের ছলাৎ ছলাৎ জল

নারীর বসনে চন্দ্রিমা রাতের আভাস

আর সংঘর্ষে শান্তিচুক্তির সনদ;

তত ঘনিয়ে উঠেছে কবি চোরাবালির উল্লাস

ওদিকে অভিজ্ঞ তত্ত্বজ্ঞানির অঙ্গুলি নির্দেশের সীমানায়

অসীমের সাধনা ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরী করে,

ধৃতরাষ্ট্র আজ  নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে

বীণাহীন সভায় যন্ত্রীর আঙ্গুল নাচছে কবি,

ন্যাপামে এটোমে আর প্রতিরক্ষা খাতে

নির্বাক বিধাতা

সময় জপছেন পাগলের মত

না সুন্দর না ভালোবাসা

না আমি না তুমি

এ জগত প্রপঞ্চময়;

অস্তিত্বের গণিততত্ব নিয়ে

বাকি কিছু অলস দুপুর

আর কিছু নয়।।

 

২৫শে বৈশাখ

 

মালোবিকাদের ব্রতকথা

মালোবিকাদের ব্রতকথা

 

মেয়েদের রঙে রেখায়

ভালোবাসাদের নিত্য আনাগোনা.

বাসি কাপড়েও তাই

মহাকাব্য লেখা হয়.

যে সূর্যটা হাতছানি দেয় রোজ--

বাসি আচঁলে তার নিত্য

বীজ বোনা.

 

জলপাই রঙের আশাকে পসরা করে

মেয়েদের রোজকার যে দৌড়

সে শব্দে পৃথিবীটা চোখ বোঁজে

রাত আকাশে শ্বাপদের হুঙ্কার

বুড়ো পৃথিবী নিশ্চিন্তে তাই ঘোরে.

 

এসব কথা মালোবিকারা

সব জানে.

শাড়ীর পাড়ে তাই সে আত্মহারা

ভাঙা চশমার টুকরো টুকরো কাঁচে,

জীবন যখন রক্ত ফেলে বাঁচে.

মেয়েদের রঙে রেখায়

সুর ধরে যায় ভালোবাসার গানে

 

(১৯৯২)

মাল্টিপ্লেক্স

মাল্টিপ্লেক্স

 

আমার এই সকাল ভোরের মুখ:

চায়ের কাপে প্রথম চুমুক।

ঝাঁচকচকে রোদ

থমকে যাবে মেঘলা মনের চৌকাঠে।

ধূমায়িত চায়ের মৌতাত ধুমপায়ী ঠোঁটের সুখটান।

আর মোবাইলের রিমাইণ্ডারে

তোমার সাথে এপয়েন্টমেন্ট। মাল্টিপ্লেক্স।

আমাদের কমপ্লেক্স মনন

মুখোশ রঙিন ঠোঁটে

ভালোবাসার লক্ষ ইলেকট্রনের টাইমিং এবং দৌড়ঝাঁপ।

তুমিও বিশ্বাসের লৌকিকতায় সাবলিল।

সাবলিল আমিও। মিথ্যে বলবো না কেউ

হাসি পড়ে অধরে।

হয়তো পোড়ে জনান্তিকে-

হয়তো জীবন যৌবন ভালোবাসার স্নিগ্ধ সবুজ।

হয়তো প্রাগৈতিহাসিক সময় পেড়িয়ে আসলে এমনই হয়।

হয়তো এই ভালো।

তুমি আমি কেউ কারো নয়।

একটু হাসির সময়।

দামি প্লেট দামী সীট এফোর্ডেবল পার্স।

আমরা মিলব।

মাল্টিপ্লেক্সে সারপ্লাস মানির জৌলুসে।

 

(০৫/০৩/১২)

মুক্তি

মুক্তি

 

ভালোবাসার দূরত্বে অমৃত বিন্যাসে

সাজিয়েছি তোমার আনন্দ

যত কৃষ্ণচূড়া রক্তিম হল পলাশ দিল বসন্ত

মধ্যরাতের সংলাপে

শুভ্রহাসি নিয়ে রজনীগন্ধা

দাঁড়ালো শিয়রে

তৃতীয়ার একবগ্গা চাঁদও

ডিঙ্গি হাসিতে মায়া ছড়িয়ে তোমার দিকে পা বাড়ালো

 

জলভেজা বরফের মত টুপ টুপ করে

গলতে লাগল অযথা অহংকার

ঈর্ষা গরল দৃষ্টিগুলো

হিংস্র খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে শূন্যের কোঠোয়

ঘর বাঁধল অন্তিমের

সমস্ত তুচ্ছ সঞ্চয়ের মুখে আগুন দিল বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস

 

মুক্তির শিরায় শিরায়

সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শিখায়

দেখা হল সেদিন

নিজের সাথে নিজের একান্তে; তোমার একান্ত

আলিঙ্গনে

 

......সে এক

অনন্ত............কাহিনী

 

 (১৩/০৭/১২)

মৃত মোমবাতির আলো

মৃত মোমবাতির আলো

 

পৃথিবীর সব পথ ছেড়ে ঢং ঢং রাতের চাদরে

একান্ত আলাপে আর হয়তো ডাকবো না তোমায়

প্রাচীন অন্ধকারের গভীর নিশুতি

কর্মব্যস্ত নাগরিক ভিড়ে

অনেকটাই বিপর্যস্ত নিভৃত অন্তরে

আমাদের সাররাত –

দরজার চৌকাঠে

নির্লিপ্ত কালো আকাশটার মতো চোখ বুঁজে থাকে,

আমাদের নরম সংলাপে

প্রত্নতত্বের নিরুদ্বেগ কাহিনী জুড়ে ভালোবাসা প্রেম

মৃত মোমবাতির আলো হয়ে জ্বলে

ঐতিহাসিকের নির্মম আতস কাঁচে

হয়তো তোমার আমার মুখ জুড়ে নিরালম্ব সত্যের আলো

ম্রিয়মান হবে আরও

তবুও সঙ্গম গোপনে

নিভৃত আদরগুলো আত্মসমর্পনের

অম্লান তৃপ্তিটুকু যেন আবারও হারালো

পৃথিবীর সব পথ ছেড়ে

ঢং ঢং হৃদয় অন্তরে

আমিও পারিনি তোমার মতো,

একটিবার বিহ্বল হতে নাগরিক ভিড়ে

 

 (০৭/০৭/১৩)

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন