পরস্পর একা

 

পরস্পর একা

 

শেষ রাতের ট্রেনের মতো

একলা অন্ধকারে

মহাজাগতিক রাতের মুখোমুখি

নিজের সাথে একা

 

                        মৃত্যুর হিমশীতল ঠোঁটের মতো

                        নিরুত্তাপ হৃদয়ে

                        প্রেম ভালোবাসা বিরহ

                        রোজকার সংলাপ

 

ভিড়ের প্ল্যাটফর্ম ঠেলে

গন্তব্যের অভিমুখে

মহাপ্রস্থানের পথ নয়

স্বপ্নের অভিসার

 

                        মাঝরাতের ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নে

                        পরস্পর দেখা হয়ে গেলে

                        মহাজাগতিক অন্ধকারে। মুখ

                        লুকাতে হয়, হবে

 

২৪শে জ্যৈষ্ঠ’ ১৪২৭

পাখিজন্ম

 

পাখিজন্ম

 

আমি একটা পাখিজন্ম

                        চেয়েছিলাম

দুহাতে ডানা মেলে

আকাশের বুক চিরে

ঘন নীল

নীল ছুঁয়ে

 

আমি একটা পাখিজন্ম

                        চেয়েছিলাম

সুনীল বাতাসে ভেসে

সারাদিন তারপর সারারাত

দুচোখে শান্তি নিয়ে

            শান্তির ঘুম

 

আমি একটা পাখিজন্ম

                        চেয়েছিলাম

হিংস্র কোলাহল ছেড়ে

উন্মত্ত স্লোগান ভুলে

উদ্যত পতাকার অনেক

            অনেক উপর দিয়ে

 

আমি একটা পাখিজন্ম

                        চেয়েছিলাম

পেট্রাপোল বেনাপোল

আজান উলুধ্বনি নয়

উষ্ণ আদরে প্রেমের

            রাগিনী হৃদয় গভীরে

 

আমি একটা পাখিজন্ম

                        চেয়েছিলাম

অক্ষরেখা দ্রাঘিমায় নয়

মানচিত্র সীমান্তে নয়

এক প্রাণ ডানা মেলে

            উড়ুক সকলে

 

৬ই শ্রাবণ’ ১৪২৬

প্রশ্ন

 

 

প্রশ্ন

 

অমীমাংসিত স্বপ্নের পর আর যা কিছু

বাকি থাকে কিংবা হারিয়ে যায়

পরাশ্রয়ী হৃদয়ের খোলনোলচে জুড়ে

দৃষ্টিপাতের সমীকরণে বিব্রত হতে হয়

 

স্বাক্ষরিত আত্মজীবনীর পাতা জুড়ে

ফুসফুস সংক্রমিত হলে বিদ্বেষে-

চৌষট্টি খোপের তরজায় আমিও

আড়াই পায়ে ভর দিই হিসাব কষে

 

জন্মদাগের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাক

জরায়ুর অন্তিমে সংকল্প না সংশয়

আদিম রণনীতি ফেলে অক্ষর বিন্যাসে

আত্মসমর্পণ ঐতিহাসিক ভ্রান্তি কি নয়?

 

১৯শে কার্তিক’ ১৪২৭

 

প্রাকৃতিক

 

 

প্রাকৃতিক

 

কড়ি ও কোমল থেকে শুরু করে

জলতরঙ্গের ঢেউয়ের মাথায় টুপ করে

খসে যেতে পারে কারুর সরগম

 

গাংচিল ওড়া আকাশের নীল জুড়ে

কবিতার ষড়ভুজ এঁকে ক্লান্ত কবিত্ব

টুপ করে ডুব দিতে পারে বিলাপে

 

আদরের বিছানা জুড়ে নিভৃত সঙ্গমে

গোলাপী ঠোঁটের কারুকাজ টুপ টাপ

ঝরে যেতে পারে বিবস্ত্র সকালে

 

তারপর বিপর্যস্ত সময়ের সংঘটন

প্রলয়ের পরে শান্ত নিস্তরঙ্গ রেলিং

প্রাক ইতিহাসের মতোই প্রাকৃতিক

 

৩রা শ্রাবণ ১৪২৫

বকলমে

 

 

বকলমে

 

বকলমে স্মৃতি হাতড়াই

না অন্ধের মতো তো নয়

আজ যারা ঘুরাচ্ছে সময়ের চাকা

চাক ভাঙা মধুভাণ্ডের মৌতাতে দিশাহার

তাদের কথাই কি কথা নয়?

 

নির্দিষ্ট গন্তব্য কারই বা থাকে

তবু এগোনোর মকশো করে সবাই

আমিও বকলমে এগোই

না অন্ধের মতো তো নয়

পতাকার সাজানো মিছিল যেদিকে এগোয়

 

ভারী বুটের নিঃশব্দ রুটমার্চ

কলমের কালি ও কাকলি সেইমত

আঁচর কাটে সময়ের ক্যালেণ্ডারে

আমিও বকলমে স্বাক্ষর করি

মানুষের দলিলে। সময় সাক্ষ্য দেয় রোজ

 

০৬-০৫-২০১৮

বন্ধ মলাটের কাব্য

 


বন্ধ মলাটের কাব্য

 

দুই মলাটের ভিতর অক্ষর সাজিয়ে

অপেক্ষায়, আপনি বিমুগ্ধ চোখে

বাঁহাতে চোখের উপর থেকে

আলগোছে চুলের গোছা সরাতে সরাতে

ডান হাতে তুলে নিচ্ছেন

অখ্যাত কবির অগ্রন্থিত পাণ্ডুলিপির

প্রথম সংস্করণ~

এই প্রথম, আপনার বাম হাতের আঙুলে

খুলে যাচ্ছে অপ্রকাশিত কাব্যের

এক একটি পঙতি

বিনা প্রস্তুতি ছাড়াই আঙুলে আঙুলে

জড়িয়ে নিচ্ছেন ছন্দ অনুপ্রাস বিমূর্ত আবেগ

সেদিনের বইমেলায় একান্তে

 

অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি জুড়ে

জমানো সমস্ত শিহরণে তখন

শান্তির ভিসুভিয়াস

আপনার দুই চোখের অপলক মুগ্ধতায়

ছড়িয়ে পড়ছে পঙতি থেকে পঙতিতে

 

বিকেল গড়ানো বইমেলাসন্ধ্যা

বড়ো বেশি মোহময়

অক্ষর জুড়ে অসম্ভবের স্বপ্নে

দুই মলাটের ভিতর তখন

অস্থির হৃদস্পন্দন

ঠিক যখন আপনার হাতে

উঠে এসেছে প্রিয় কবির

নবতম কাব্যসংকলন

বিমুগ্ধ আবেশে আপনার আঙুল

জড়িয়ে প্রিয় কবির প্রিয় মুখ

 

 

বাংলা দাওয়াই

 


বাংলা দাওয়াই

 

ঠাস্ ঠাস্, দ্রুম দ্রাম্, শুনে লাগে ভড়কি!

বোম্ মারো- মুখে বলে? চোখে দেখি চড়কি!

বাঁজখাই গলা তার, ভয়ে কান বন্ধ!

কুলকুল নেয়ে উঠি, ঘামে ভেজে রন্ধ্র!

দুড়দাড় তেড়ে ওঠে, আমি আর নাই রে!

দেখছ না তোড় তার! যেও না কো বাইরে!

চুপ চুপ ঐ শোনো দিদি কি যে বলছে-

নীতি বুঝি ডুবে গেল, চারিদিক টলছে!

গেল গেল সব গেল, রাত কাটে কই রে?

ভেঙ্গে সব চুরমার, তবু সব সই রে।

কত আশা ভালোবাসা, বড়ো বড়ো চিন্তা!

চারিদিকে নাচে আজ, প্রলয়ের ধিন্ তা!

বড়ো বড়ো মাথা সব! মুখ দিয়ে কুলুপে,

সুখে আছে বিন্দাস্ তুঘলকি মুলুকে!

শুন শান্ ফাঁকা মাঠ, লড়াইয়ের ময়দান!

দিকহারা ডিগবাজি, কমরেড- পিঠটান?

ঠুং ঠাং ঢং ঢং, ধর্মের ঘন্টা!

দুরু দুরু নড়বে কি, ভাবে মোর মন্ টা!

ধুপ ধাপ ছুটে আসে বোম্ মার চিৎকার---

হরিদাস পাল আমি কেটে পড়ি এইবার!

 

বাংলার মুখ

 

 

বাংলার মুখ

 

আমাকে দেখুন, বিশুদ্ধ জ্যোৎস্নায় পা ডুবিয়ে

দোল খাচ্ছি অনাদিকাল ধরে। রাত্রিদিন

হাতের একতারা বাজিয়ে সুখের ঠিকানায়।

এই আমি কিংবা আমার মতো আপনারা সব

 

পাহাড়ের চুড়া থেকে সাগরের জল ছেঁচে

এই বাংলায় মানুষের মুখের অন্নে বাংলার মুখ

খন্ড খন্ড বাংলা জুড়ে বাংলার ইতিহাস

ঠিক করে দিয়ে যায় ভিনদেশী বর্গীর দল

 

কখনো নিজেকে প্রশ্ন করে দেখি নি, দেখবো না

আমাদের ধ্যান জুড়ে ভাষাতীত আত্মঘাতী শ্লাঘা

এই আমি, আপনি কিংবা সে পরস্পর বিদ্বেষী

হাতে হাত ধরে থাকি ভিনদেশী বর্গীর সাথে

 

৩০শে আষাঢ়’ ১৪২৬

বারুদ পোড়া গন্ধ

 


বারুদ পোড়া গন্ধ

 

বেইমানের লাশ দেখলে 

তালপাতার সিপাইও যেমন নেচে ওঠে

অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষপ্রান্তে।

সাজানো পুরস্কারের মঞ্চসজ্জার পেছনে আলো পড়লে 

ঠিক যেমন হাড়হাভাতেদের  পেটের খিদে মোচড় দেয়

প্রতিশ্রুতির হাইওয়েতে। সেইমতো।

কিংবা ধরা যাক অর্দ্ধনমিত পতাকার নীচে

সাজানো নাটক দেখতে যাদের ক্লান্তি নেই।

তাদের প্রগলোভ পারস্পরিক পিঠ চাপড়ানোর মত

ছন্দের সিঁড়িভাঙ্গা অঙ্কে বিধাতা পুরুষও যখন থৈ পান না। 

সেইমত গোড়ায় গণ্ডগোলের লগ্নে

যদি পরস্পর মুখোমুখি হতে হয় তোমায় আমায়!

তোমার আস্তিন গোটানো তুরুপের তাসে

টেক্কার বাড়বাড়ন্ত থাকতে পারে,

তবু যেনে রাখা ভালো বারুদ পোড়া গন্ধে 

আজ প্রতিদিন সেঁকে সেঁকে দেখে নিচ্ছি নিজেকে,

একটু একটু করে ঠিকমতো 

একদিন------!   যদি সুযোগ হয় তবে

 

(জুলাই-০২ ২০১৫) 

বিচ্ছিন্ন স্বাক্ষর

 


বিচ্ছিন্ন স্বাক্ষর

 

কি আর এসে যায় শেষে!

সারা রাত বৃষ্টি পড়েছে, ভিজে গেছে শব

নিভে গেছে চিতার আগুন

ভিজে ছাই ভিজে কাঠ, জল থই থই

আধ পোড়া মাংস কিছু নিয়ে

শেষ রাতের উঁকি দেওয়া চাঁদের পাশে

এই আমি। হয়তো শেষ বারের মতো

এই মাটি, গন্ধ পোড়া ভালোবাসা

টুকরো স্মৃতি, দুর্বল মুহুর্ত সব, সব নিয়ে

সব কিছু জড়িয়ে পড়ে রয়েছি

চিৎ হয়ে, ভিজে কাঠ আধ পোড়া চিতায়

 

কোন ফুল নাই। ফুলের মতো গন্ধ

কোন আলো নাই। আলোর মতো সেতু

কোন ব্যাথা নাই আর। ব্যাথার মতো অভিমান

 

শুধু, জল থই থই এই বৃষ্টির কাদা রাতে

শুধু, টইটম্বুর সবুজ ভেজা ভিজে আঘ্রাণে

শুধু, ঘড়ি টিক টিক অবিরাম সময়ের ঘোরে

 

এই আমি। সব গ্লানি ধুয়ে নিয়ে

সারারাত, আধ পোড়া মাংসের গন্ধ নিয়ে বুকে

স্বপ্ন নয়। স্বস্তি নয়। বিচ্ছিন্ন স্বাক্ষরে

 

সবটাই সাদা ক্যানভাস। আদি ও অন্তিমে

 

মধ্যবর্তী আঁকিবুকি যত…… থাক

 

সে কবি’র কথা নয়…….

 

৮ই আষাঢ়’ ১৪২৭

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন