অনেক অন্ধকার

 

 

অনেক অন্ধকার

 

কখনো মনে হয়, কি লাভ ডিম্বানু নিষিক্ত করে

ঝাঁকে ঝাঁকে শুক্রাণু পাঠিয়ে।

 

অন্ধকার নিজেদের রাতে বরং পাশাপাশি পড়ে থাকা ভালো।

 

পরস্পর আলিঙ্গন আশ্লেষ ঘিরে

ভালোবাসার সময় এখনো আসেনি মনে হয়।

শরীরে শরীর শুধু নয়। যৌবন উদ্বৃত্ত হলে

হয়ত ভালোবাসা মধু হয়ে শরীর জুড়াবে

রাতের একান্ত আলোর বুক চিরে।

 

তবু কি মানব নিষিক্ত হবে ডিম্বাণু শরীরে।

হয়তো বা আমাদেরই ভ্রূণে

আমরাই এককোষী স্বার্থের জঠরে।

লোভের আগুন হয়ে লালসার বাতিঘরে

আলো দেব এযুগেরই মতন

আগামীর শতকে।

 

তার চেয়ে কিছুটা বিন্যস্ত সময়

বরং খুঁজে নেওয়া যাক পরস্পর

রাতের শরীরে।

ডিম্বাণু নিষিক্তের আগে

এবং পরে।।

 

(১৮/০৫/১২)

অনেকদিনের ঈশ্বর

 

 

অনেকদিনের ঈশ্বর

 

অনেকদিন ঈশ্বরের অধরে ছোঁয়াইনি সিক্ত চুম্বন

অনেকদিন ঈশ্বরের কাঁধে রাখিনি বরাভয় হাত

অনেক দিন ঈশ্বরের অশ্রুকণায় সিক্ত করিনি দশ আঙ্গুল

অনেকদিন ঈশ্বরের নির্জনে বসিনি সাথে....

দুপাত্র হাতে কটা নিরিবিলি কথার ফাঁকে

কুশল সংবাদ নেওয়া

সাংসারিক সুখ দুঃখের ছিটমহলে

দুটো দরকারী কথা দেওয়া

অনেকদিন ঈশ্বর ফিরে গেছে

বন্ধ দরজার চৌকাঠে বসে অনেকক্ষণ

রেখে গেছে দরকারী না বলতে পারা সে সেসব কথার

অনেক দীর্ঘ দীর্ঘ শ্বাস

অনেকদিন ঈশ্বর হয়ত ভেবেছে আমায় ঠগ

অলীক চূর্ণ বিচূর্ণ বিশ্বাসের রচিত মায়া

অবাস্তব অর্থাৎ অবান্তর

 

অনেকদিন ঈশ্বর বিবাগী বৈতরণীর পার ধরে

খুঁজে চলেছে নিতান্ত একটা বিশ্বাস

সবটাই অবান্তর হয়ত নয়

 

(২৩/০৮/১২)

 

অন্তর্দহন

 

 

অন্তর্দহন

 

এখানে হেমন্তের চিঠি নিয়ে নিমের পাতা উড়েছে

শিশিরের শব্দের মতো মেয়েরা সরে গিয়েছে

জোনাকির আলোর মতো ইচ্ছে নাচনে হৃদয় যদিও

তবু রাতগুলো অন্ধকারে আজ বাংলা ধরেছে

 

বৃষ্টির মতো মন খারাপের ছাঁটে কাক ভেজা মন

সুইচ অফ থাকা নম্বর গুলোর লাইন জুড়ে

গলাকাটা শপথগুলোর পচন ধরেছে আজ

 

সমস্ত মুখোশগুলোর মেকআপ জুড়ে আবার

পুরোনো গল্প চেনা ছকে

বেলতলা ফাঁকা থাকেনা তাই

 

এবংবিধ শিরোনামে তবুও বাসর

সানাইয়ের সুর হনিমুন ভীড়

বার্থ সার্টিফিকেটে আবারো পুরোনো নাম

নতুন বানানে

 

আজ রাতে তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি সে জন্য নয়

বিশ্বাস বেলুনের মতো জানো

কতটা ফোলাবে সেখানেই হিসেবের কাঁটা

সামান্য ভুলে অন্তর্দহন

 

(২৮/১০/১২)

 

অন্তর্নিহিতা

 

 

অন্তর্নিহিতা

 

সবটাই রোদ নয়।

নয় কাঁচা সোনা নরম

ভোরের উষ্ণ গল্প।

ভেতরে তীব্র দ্বন্দ্ব ক্ষোভ

বিক্ষুব্ধ গ্লানিতে

দগ্ধ দহন সৌরঝর।

 

সবটাই নিকষ কালো

অমাবস্যাও নয়।

নয় সুষুপ্তির তিমির।

রাত্রির ধ্যানে

অনাদী অনন্তের

গর্ভে এক অখণ্ড সকাল।

 

সবটাই উষ্ণ অভ্যর্থনা

নয়। নয় যুগল নৃত্যের

সংবেদী নুপূর ছন্দ।

অনুরাগ সংরাগে লোভ লালসা

স্বার্থের ঘূর্ণন ঘানিতে

আত্মরতি উদযাপন।

 

সবটাই রণ রক্ত সফলতা

নয়। নয় শরীরের তাপ

প্রজন্মে সঞ্চরণ।

তমিস্রার অন্তরাল হতে

জ্যোতির্ময়ী তিথিতে

হয়ত আত্মোন্মোচন।

 

(২৫/০৪/১২)

অন্তহীন শুশ্রূষা

 

 

অন্তহীন শুশ্রূষা

 

শুশ্রূষার মত অন্তহীন দুটি চোখ নিয়ে

 রক্তার্ত নীলিমার ক্লান্তি মুছে দিতে যদি।

যদি রজনীগন্ধা শুভ্র হয়ে আরক্ত চুম্বনে একেঁ যেতে

একজীবন সূর্যমুখী ফুল।

যুদ্ধ মৃত্যু হাহাকারের অশ্রুতে?

এই পৃথিবীর আঁধার খুঁড়ে এখনো খুঁজে পেতে হবে

বিন্দু বিন্দু আলো।

আলোর অমলিন সূত্র......

সত্যমূল্যের বেদীতে।

সমস্ত যুদ্ধ শেষের সাদা পতাকা........

রক্ত মোছার জন্য যথেষ্ট নয়।

শান্তিচুক্তির হাসির তলায় বিষদাঁতের সযতন থলির

শীতঘুম প্রহরে তুমি সাবধানে এসো।

 

চারিদিকে জীবন কালিমা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

হৃদয়ের ক্ষত থেকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ে যে অভিমান।

সেইখানে আলোর বীজ রয়ে গেছে

 শুশ্রূষার সিঞ্চনে তোমার একবিন্দু ভালোবাসা

 মহীরুহ হয়ে ওঠার সময় এসেছে।।

 

(২০/০৭/১২)

অন্তিম সিম্ফনী

 

 

অন্তিম সিম্ফনী

 

অন্তিম মৃত্যুর নির্লিপ্ত চাহনির

ঝুলবারান্দায় আমি

বেতস লতার মতো প্রবল হাওয়ার রাত

সূর্যমুখী ভোরের সময় গেঁথে তুলছে

একরৈখিক ভালোবাসার আঁতুরে

বিষন্ন রাতের কোরাস নয়

নিয়তির নিয়ত অভিসারে আমারও নিমন্ত্রণ তবু

হিমশীতল নিথর অভীপ্সার ভাঙ্গা মাস্তুলে

তবুও আমার রাজ্যপাট প্রণয়ের কথা বলে

যে রাতে একাকী চাঁদ বিষন্ন আলোর জোনাকি জ্বালে

- সপ্তর্ষীর অন্ধকারে আমি একা

কাঁটা কম্পাসে ধ্রুবতারার মুখোমুখি

মৃত্যুর নোটেশান গুলোয় সে রাতে আমারও

অহংকার সবুজে সবুজে ছুটে চলে

ধ্রুবতারার স্থির চোখে

অন্তিমের অভিমান নেই জেনে;

আমার স্বাক্ষর ধীরে ধীরে আরও নির্লিপ্ত হয়ে ওঠে

সাগর কন্যার গানে

মৃত্যুর সিম্ফোনী জীবনের ঢেউয়ে ছোটে

 

(১৯/০৬/১৩)

 

অন্ত্যেষ্টি

 

 

অন্ত্যেষ্টি

 

মালোবিকা সান্ন্যালের তাড়া আছে

লাভ লোকসানের বন্দরে নোঙর ফেলার জন্য

 

সদর দরজার চৌকাঠ ডিঙানো মখমল পায়ের

রিনিঝিনি নুপুর আদরে উন্নাসিক রাতের চাদরে

 

ভোর ভোর শিশির চোখের নির্বাক বারান্দার

নাগরিক মায়াকান্নার শ্লোক মালোবিকার ব্যক্তিগত ঝোঁকে

 

এখানে রাজ্যপাটের অলিন্দে

চক্রব্যূহ থেকে বেনামী শিবিরে মালোবিকার অবারিত গতি

বন্দরে রোজকার জাহাজ ভিরাতে

 

তুমি বলেছিলে একদিন ঝিলিমিলি জোনাকি আদরে

মানুষের জঙ্গল পারিজাত উদ্যান হবে হৃদয় জুড়োবে

 

তুমি বলেছিলে পরজীবী নগর বন্দরে,

গোলটেবিল গোপন আঁতাতে- ষড়যন্ত্রের ট্র্যাডিশন ফুরাবে

 

মালোবিকা সান্ন্যালের ভগ্নস্তুপে

ধ্বংস চিহ্নের ডানায় অবিনাশী ভালবাসা

পাখি হয়ে হৃদয় উড়াবে

 

(১২/০৬/১৩)

 

অপাপবিদ্ধ নয়

 

 

অপাপবিদ্ধ নয়

 

অনেক শূন্যতা বুকে-শান্ত নদীর ঢেউয়ের মতো

সময়ের পর সময় ভেঙ্গে পাণ্ডুলিপির স্তুপে চাপা পড়েছে

আত্মজীবনীর তুলোটে সংঘটন।

বোধিবৃক্ষের পরও টুপ টুপ রক্তবিন্দুর ক্রুশে

ঝুলিয়ে রাখা ভালোবাসার মায়াবী ভূবন।

মহাপ্রস্থানের পথে ইন্দ্রপ্রস্থ এথেন্স ব্যাবিলন

রোম বার্লিনওয়াল থেকে দূরবীন চোখে দেখা যায়

নোয়ার নৌকায় আদম আর ইভের আঁচলে উড়ছে

প্রত্যয়ী চুম্বনের দুদণ্ড নিরিবিলি অবসর।

ঘনিষ্ঠ বিশ্বাসের সিঁড়িভাঙ্গা অংকে

অনেক বেনোজল আর বীভৎস উল্লাসের

জলসায় সন্ধিচুক্তির সনদে

রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ অধিবেশন।

পরমাণু বিস্ফোরনের কাব্যে মস্তিষ্কের সমস্ত সঞ্চালন

বোধিবৃক্ষ খুঁজে পায়নি আজো।

ভেজেনি দুচোখ তবু ক্রুশবিদ্ধ রক্তের অক্ষরে।।

 

(০৯/১১/১২)

 

অপুষ্ট বিবেক

 

 

অপুষ্ট বিবেক

 

আমাদের হাতের তালুতে

সমস্ত সংকেতে যদি ধরো তোমারই নাম লেখা থাকে?

যদি তোমার সমস্ত ভালোবাসা প্রেম হয়ে ঝরে

সব কটা সংকেতের উন্মন শরীরে?

 

এসব অলস কল্পনা শোনাবার জন্য ডাকিনি তোমাকে

আমরা আমাদের রোজকার অন্ধকার অক্ষরে।

আমারা যারা কবিতার শরীরে ভালোবাসা বুনে দিতে এসে

বারুদ বুলেটে ঝাঁঝরা করে ফেলেছি সমস্ত প্রত্যয়।

 

আকাশের নীল থেকে টুপ করে খসে

গেছে বিশ্বাসের মায়াবি ভাঁড়ার।

পরস্পর আস্তিনে দেখছি গোটানো সাপ।

উদ্যত ছোবলে মুখোশ নৃত্য, আর

 

নীলকণ্ঠ বিষের আধারে নেই কোনো মানবিক দলিল

শান্তিচুক্তির বিষ কৌটোয় বন্ধক দিয়েছি চক্ষুলজ্জার সব।

ভাবি কালের ফাঁসিকাঠে

তুমি আমাদের হয়ে বোলো।

 

(১৯/০৭/১২)

অবগাহন

 

অবগাহন

 

তোমার জন্য গুঁড়ো করেছি হৃদয়ের ব্যস্ততা

প্রশস্ত ভালোবাসার উঠোনে

বিশ্বস্ত গোবর জলে নিকিয়ে রেখেছি অপেক্ষা

রাত শুকনো চাদরে

স্বপ্নের আদর ধরে রাখার নিবিড় তোড়জোড়

তুমি আসবে বলে সদরে মঙ্গল ঘট

সুরভিত ধূপে নিবিষ্ট বুকের ওম

মুখ আয়নায় সকাল সকাল বিস্মিত চোখের উপাচার

মন উপচিয়ে রোজ

কবিতা লেখার এলোমেলো দুপুরগুলো

অধীর হাওয়ায়

উড়ছে চৌখুপী মনের চার দেওয়ালে

তর্জনী অনামিকা মধ্যমা বুড়ো আঙ্গুলের কব্জায়

কবিতা লেখার বিশ্বস্ত শব্দগুলো সব

তোমার নামে মিল খুঁজেছে

ঘণ্ট মিনিটের কাঁটায় প্রতি সেকেণ্ডে

 

মহাকালের মাটিতে

অমোঘ আবেগ

বীজ বুনছে

স্পর্শের।।

 

(০৩/০৪/১২)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন