গোপন বিপর্যয়ের রাতে

 

 

গোপন বিপর্যয়ের রাতে

 

গোপন বিপর্যয়ের রাতে যারা

শুনেছিল কালপুরুষের নিশুতি পদধ্বনি

সপ্তর্ষির সভায় তারা নিমন্ত্রণ পাবে কিনা

                        জানি না। কি হবে জেনে

 

সূর্যের জন্ম দিতে গিয়ে আঁতুরেই

যে নারী বিপর্যস্ত হয় কিংবা হবে

কে রাখে তার খবর

                        মাটির গভীরে নির্জনতা জমুক বরং

 

আরও হাজার বছর পার হলে হোক

এই শরীর থেকে ঝরে গেলে যাক হৃদয়

অজস্র ইতিহাস ঘেঁটে আত্মার আলোড়ন ছাড়া

                        দোতারা ওঠে না ঠিক বেজে

 

 

অনন্ত ঋতুচক্রে পাক খেয়ে খেয়ে

রজঃস্বলা নারীর মতো আয়ত স্বপ্ন মেখে নিয়ে

প্রসন্ন ঘুমের প্রহর। তারপর নাগরিক যেনিপথ ধরে

যতদূর খুশি চলে যেতে পারো যতদিন

 

পৃথিবীর শেষ ডাকঘর এসে গেলে কাছে

দেখা যায় আদি জরায়ু শূন্যই পড়ে আছে।

 

১৭ই ভাদ্র’ ১৪২৫

ঘুম

  

ঘুম

 

গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছি

সম্প্রতি, অনেকদিন পর

দুচোখের স্বপ্ন ধুয়ে নিয়ে

 

এই ঘুম কিংবা ঘুমও নয় হয়তো বা

নয়ত ঘুমেরই মতোন ঘুম ঘুম

তবু ঘুম, ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে

 

তাকিয়ে আছি, চারিদিক অন্ধকার

ছেয়ে আছে নিঃশ্ছিদ্র নিরাপত্তায়

আলোর সামান্যতম রেখাও

 

শুষে নিচ্ছে নিমেষে। সূক্ষ্মতম

আলোক কণাগুলিও নেই হয়ে

মিলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে

 

এই অন্ধকার সচেতন সজাগ

অতন্দ্র প্রহরায় জেগে থাকে

পাছে কেউ জেগে ওঠে

 

শিরদাঁড়া সোজা করে খাড়া

চোখ মেলতে চায় চারদিকে

অন্ধকার দেখে ফেলে পাছে

 

তাই ঘুম। ঘুমাও আবার

স্বপ্ন দেখ, দেখাও ঘুম ঘুম চোখে

অন্ধকার ঘন নিকষ আঁধারে

 

১২ই শ্রাবণ’ ১৪২৬

চিত্রকর দ্বিধাগ্রস্ত

 

 

চিত্রকর দ্বিধাগ্রস্ত

 

চিত্রকর দ্বিধাগ্রস্ত

 

সমস্ত ক্যানভাস জুড়ে নরকঙ্কাল শুধু

খেতে না পাওয়া হাড়গিলে লিকেলিকে

স্তূপীকৃত পতাকা ফেস্টুন ব্যানারের তলায়

বিচূর্ণ স্লোগানের গুঁড়ো ছিটকিয়ে এদিক সেদিক

 

চিত্রকর দ্বিধাগ্রস্ত

 

উন্নয়নের সৌধ আর সমাধি দুইই পাশাপাশি

পেটে লাথিমারা রাজকীয় লালকার্পেট চারদিকে

দেশপ্রেমের দামামা দাদারা কাহারবায় স্মিতহাসি

কালো হাতের সাদা হাতনাড়া দেখে উল্লসিত জনতা

 

চিত্রকর দ্বিধাগ্রস্ত

 

বিশ্বস্ত ইজেল মহাকালের ঘোড়ার মতো মুখথুবড়ে পড়ে

অবশ তুলির হাড়হিম নিরবতা শিরদঁড়া বেয়ে নিম্নগামী

ইতিহাস প্রকম্পিত নয় তবু সময়ের গ্লানি সময় পিঠে

চিত্রকর চোখ বোঁজেন আত্মগ্লানির অহংকারের মুখোমুখি

 

 

 

চিল নয় শকুন নয় তবু

 


চিল নয় শকুন নয় তবু

 

চিল নয় শকুন নয় এ এক অনন্ত বিস্ময়

বাতাসের মতো শ্বাস নেয়

জলের মতো কথা বলে

মাটি দিয়ে পেতে রাখে ফাঁদ

 

হাত নাড়ে মুখে হাসি শিষ দেয়

তাল দেয় সকলে সকাল বিকাল

মাঝে মাঝে অন্নকূট হরিরলুট

কিংবা বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রী

 

প্রচারের সবকটি মুখে দানা দেয়

নাচায় হাতের ইশারায়

ঈশ্বরের হাতের কব্জার মতো ভাঁজে

ধরে রাখে তুরুপের তাস

 

চিল নয় শকুন নয় তবু

স্থান কাল পাত্র ভাগাড়ের মতো

পড়ে থাকে দৃষ্টির নীচে

উপরে প্রতিদিন ইতিহাস লেখাচ্ছে

 

শ্রাবণের ১৩’ ১৪২৫

 

চৌকাঠের সীমানায়

 

 

চৌকাঠের সীমানায়

 

সংসার সমুদ্রের বিষ সেঁকে নিয়ে

স্থির নেত্রে বসে আছি

বয়সের অর্ধ শতাব্দী পাড়ে

 

পাসপোর্টের ছবিতে ঢ্যাড়া পড়ে গেছে

রেটিনার অন্দরমহলে বদল হবে না আর

রামধনু রঙের কোলাজ

 

এক আকাশের নীলিমায় জমি কিনতে চেয়ে

যে নারীর হাত ধরে টেনে ছিলাম

ম্লান হেসে বলেছিল সে, বেকুব একটা

 

অনধিকার চর্চার কুচকাওয়াজে যাই নি আর

তবু কোলাহল থামেনি আমায় ঘিরে

সামুদ্রিক বিষ সেঁকে নিয়ে থেমেছি চৌকাঠে

 

২৩শে আশ্বিন’ ১৪২৭

 

জপমালা

 

 

জপমালা

 

অক্ষরের সীমান্ত জুড়ে কাঁটাতারের রুটমার্চ

সমস্ত শব্দের মেঠো পথ থেকে

প্রশস্ত নাগরিক রাজপথে আমাদের সাজঘর

 

আমাদের সাজগোজ দেখে এখন আর

অবাক হয় না সেই বালক

উলঙ্গ রাজাকে দেখে যে প্রশ্ন করেছিল

 

না আজ আর প্রশ্ন নয় কোন

সব প্রশ্নের মীমাংসা হয়ে গিয়েছে

উত্তরের ভগ্নস্তুপে জপমালার জয়পতাকা ওড়ে

 

রঙিন জপমালা হাতে আমাদের নিত্যদিন

বাজিকরের জাদুদণ্ডে মশগুল

প্রতিশ্রুতির শিলান্যাসে আমাদেরও ভোট রয়ে গিয়েছে

 

১লা আশ্বিন ১৪২৫

জলজ সম্ভোগ

 

 

জলজ সম্ভোগ

 

বৃষ্টি পড়ছিল বেশ জোর

উন্মুক্ত বর্শাফলকের মতো

নাগরিক ঠিকানায়

 

আমরা কজন নারী পুরুষ

ভিজে কাপড় গায়ে

পরস্পর অচেনা আড়চোখে

 

বাসের অপেক্ষায়

 

পায়ে পায়ে জল বাড়ে

নাগরিক শহর পরিকল্পনায়

আমরা কিছুটা সন্ত্রস্ত

 

বেহাল, তবু বাসের দেখা নাই

শরীর জুড়ে জলের রেখাঙ্কন

টুপ টুপ উপর থেকে নীচে

 

শারীরিক সন্তাপে বিন্যস্ত

 

সকলেই নিশ্চুপ নিরব

বৃষ্টি ক্লান্ত বাড়ি ফেরার বিকেল

জলে ডোবা সংলাপ

 

ফোঁটায় ফোঁটায় ডুব সাঁতার

শুকনো জামা কাপড়ের মতো নয়

জলজ জীবনের অনাদী ডাকে

 

নাগরিক শৃঙ্খল, পরিতাপ

 

ভাদ্রের এগারো’ ১৪২৫

 

ঝড়

 


ঝড়

 

ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে দেখি

পীড়িত স্তনের আভাস

সেখানে জমাটা ব্যাথা জমে আছে

অবরুদ্ধ মিছিলের স্লোগানের মতো

বেহায়াদের লজ্জা কি

                        আমিও তাই হাত বুলাই

শীত গ্রীষ্মের আকাশ জুড়ে আষাঢ়ের মেঘ নামে

আকাশে ঝড়ের আভাস

প্রতিবার গড়পরতা জীবনের মতো গল্প সব

বাকিটা ইতিহাস লিখে নেবে

                         একদিন

 

টিপ ছাপ

 

 

টিপ ছাপ

 

খাল কেটে বসে আছি জানি

ঘরে খিল নাই

            মুখে আগল

                        চোখে সুখনিদ্রা

            ওরা খুশি

আমার পকেটেও যৎসামান্য

দিলখুশ আতরের ঘ্রাণ

রবিবার মুর্গীর ঠ্যাং কখনো সখনো

 

আর পতাকা মিছিলে পা

কানে ডেসিবেলের মাত্রা চড়তে থাকে

              শিঙা ফুঁকে বিশ্বাসের মার্চপাস্ট

              বিতর্ক নয়। কূটতর্ক যদিও বা

              সবটাই ম্যানিফেস্টো মেপে

আমারও পকেটে যৎসামান্য

দিলখুশ আতরের ঘ্রাণ

রবিবার নেচে ওঠে ঠ্যাং কখনো সখনো

 

কাটা খাল দিয়ে বেনোজল ঢোকে

হাতে ঢাল নাই

             পেটো আছে গোটা দুই

             সাপ্লাই চেন

             ওরা খুশি

আমার পকেটেও যৎসামান্য

দিলখুশ আতরের ঘ্রাণ

রবিবার বেআব্রু ঠ্যাং কখনো সখনো

 

ঠিকানা ২

 


ঠিকানা

 

কিছু কিছু মুহূর্ত আসে এগোতে এগোতে

যখন পথের চিহ্ন ছেড়ে দিয়ে দিকহারা হতে হয়

আসলেই কোন দিকই নির্দিষ্ট দিক নয়

সবটাই কল্পনার আশ্রয় ছাড়া দিকশূন্য

 

সেই পথে পথের অযাচিত চিহ্ন ছেড়ে দিয়ে

যদি যায় এগোন কিছুটা যেদিক যায় চোখ

কেননা সব দিকই দিকশূন্য দিকহারা তাই

সামনে পিছনে সবদিকেই সেই একই পথ

 

সেই পথে রাত্রি আর দিন আলো কিংবা অন্ধকার

আমাকে হঠাৎ হঠাৎ চমকিত করে

ভালোবাসা প্রেম কিংবা শত্রুতা বিদ্বেষ

কোনকিছুই শাশ্বত নয় এমনকি মানুষও

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন