প্রথম প্রেম শেষ প্রতিশ্রুতি

প্রথম প্রেম শেষ প্রতিশ্রুতি

 

এই প্রেম এই হাতে হাত ধরে চলা

অনর্গল অবান্তর কথা বলা

একদিন ফুরাবে

তখন কি হৃদয় জুড়াবে আরো?

এমনই রাজপথ ট্রাফিক জ্যামে ঝিমোবে,

মিছিলে মিটিঙে আসর কাঁপাবে নেতারা আবারো

তবু কি সুদিন ফেরাবে বলতে পারো?

আমাদের প্রেমের সংলাপ

বৃষ্টির মতো নদী হয়ে প্লাবন আনত যদি

যদি সত্য হতো মিথ্যা শিলান্যাস

প্রেম বল প্রতিশ্রুতি বল কৃষ্ণের বাঁশির মতো সব

গোপিনী নৃত্যের বৃন্দাবন

রাধার বিরহ তবু কাটে না তো আর জ্বলে যায় অন্তর শুধু

জ্বলে যায় পোড়ায় না কোনো ক্ষত

ব্যাথাহত আগুনের মতো  অঙ্গার হয়ে জ্বলে বারবার

তবু কি আমাদের প্রেম কোনোদিন সত্য কথা বলে

ভাঙ্গা শিল্যানাসের মতো সব একা

 অবুঝ প্রহর জুড়ে শুধু মানিয়ে নিতেই শেখা

 

(০৫/০৮/১৩)

 

প্রলাপ ও সংলাপের অন্তর্বর্তী

প্রলাপ ও সংলাপের অন্তর্বর্তী

 

গাছের পাতা বাসি হলে

বৌয়ের ঘরে আগুন

প্রেমের গতি অথৈ জলে

বৃথাই আসে ফাগুন!

 

আকাশভরা ঘোড়ার ডিমে

পকেট ভরা মানি

জীবন বীমার নানান স্কীমে

ঘুরছে কলুর ঘানি!

 

আসতে যেতে বাসি খবর

নেতার মুখে হাসি

ছাদনাতলায় খুঁড়ছে কবর

বরের ঘরের মাসি!

 

দরজা খোলা অর্থনীতি

ঘোমটা ফেলা বৌ

সুদের হাটে ভারত প্রীতি

উঠছে জমে মৌ!

 

জীবনভর হিসেব নিকেশ

প্রেমের গল্প ফেঁদে

নেতার মুখে স্বদেশ প্রীতি

ভোটার মরে কেঁদে!

 

ইতি উতি প্রেম পীরিতি

স্বামীর ঘরে চুরি

গণতন্ত্রের কেক কাটতে

সবাই শানায় ছুরি!

 

আমার তুমি তোমার আমি

এধার ওধার চুমি

ভালোবাসা হাঁফিয়ে পড়ে

ফোঁফায় বঙ্গভূমি!

 

(১৯৯১)

প্রহসন

প্রহসন

 

মেয়েটির কাপড় চোপড় নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময়

বিচারকদের চোখ জুড়ে

রাত নেমেছিল নিয়নে

 

মেয়েটির স্বভাব চরিত্র নিয়ে

বিধান দিতে গিয়ে

বিচারকদের ভাষা

আইন এঁকে গেল নিয়মে

 

আকাশ আর সমুদ্রের নীলে

ঈশ্বরের সোহাগ যদি থেকে থাকে

ও মেয়ে তুই দূর্বাশা হ

অভিশাপ দিসনে শুধু গর্ভ আর গর্ভিণী তোর মাকে

 

(২১/০৫/১২)

প্রেমিকের সাজ

প্রেমিকের সাজ 


বসন্তের হলুদে যখন

হলুদ হয় হেমন্ত।

 

শরীর জুড়ে শীত নামবে

অবুঝ মাতালের মতো.....

 

ঠোঁটের চৌকাঠ পেড়িয়ে

শীৎকারের অঙ্গীকার সার।

 

হৃদয়ের ধ্রুপদ ধামারে প্রেমের

ঘটি ডোবে নাতো আর।

 

ভালোবাসার বীজ তলায়

প্রয়োজনের আগাছা

 

ফিক্সড ডিপোজিটের স্কীমে

নিরাপদ রোজকার বাঁচা.....

 

তবুও শরীর জুড়ে বসন্তের

মড়া স্মৃতি বসন্তের পর....

 

টিকটিকি গিরগিটির

গ্রীষ্ম বর্ষার  কুচকাওয়াজ।

 

আমিও অনেক দিন পর

পড়েছি প্রেমিকের সাজ।

 

(০১/১১/১১)

ফাগুনে পলাশে কৃষ্ণচূড়ায়

ফাগুনে পলাশে কৃষ্ণচূড়ায়

 

প্রতিরাতে ঘুমোতে পারি না আর।

ফাগুনে পলাশে কৃষ্ণচূড়ার ঘোরে।

প্রতি রাত্রে ঘুমোতে পারি না আর

মালোবিকা সান্ন্যালের ঘ্রাণ অন্তর্বাস ঘুরে ঘুরে

ভুরভুর করে।

 

প্রতি রাতে ঘুমোতে পারি না আর।

পায়ে পায়ে ঈশ্বরের মুখোমুখি হলে।

বসন্তের রাত গায়ে গায়ে মালোবিকার আঁচল হয়ে ওড়ে।

 

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে

ফুলবেলপাতা দিয়ে সন্ধ্যাহ্নিক সেরে

শুনেছি গীর্জার ঘন্টা-

বেথেলহেম মক্কা মদীনা

কিংবা বৃন্দাবনে নয়,

বসন্তমাতাল রাতে মালোবিকার স্থিতপ্রাজ্ঞ

বুকের ভেতরে।

 

প্রতি রাতে ঘুমোতে পারি না আর।

পূর্বরাগের বালুকাবেলায় ফাগুনে পলাশে কৃষ্ণচূড়ায়।

মালোবিকা সান্ন্যালের দেহে

প্রথম বসন্তের মুখবন্ধে

ঈশ্বর কেঁদেছিলেন প্রথম

 প্রাণ ভরে।

 

(০৩/০৪/১৩)

ফেরা

ফেরা

 

মৃত্যুর কবর থেকেও

অনেক বড়ো অন্ধকার, শূন্যতা

নিস্তবদ্ধ হয়ে শুয়ে আছে

শূন্য দৃষ্টিতে তোমার আমার।

যে আঁধার মরুভূমির রাতের মতো ঠাণ্ডা।

হাড়হিম গ্লেসিয়ারের মতো নিশ্চল পাষাণ।

তার কোলে মন রেখে হৃদয়ের উষ্ণতা খুঁজি

তবু কি বলে? জানি না।

হয়ত রূঢ় ইতিহাসই নয় শুধু

শব্দের শৃঙ্খল ভেঙে ভেঙে

টুপ টুপ ঝরে পড়া সত্যে

মুখোশের বিকৃতি লক্ষ্য করে

অসহায় দুজনেই।

সব কাহিনীর মতোই গল্পের রঙে

অন্যতর গল্প লুকিয়ে থাকে জেনে

হৃদয়ের আলোড়ন নিয়ে

নোনা ঢেউ ভেঙ্গে ভেঙ্গে

তবুও ফিরে আসা।

নিস্ফল স্বপ্নের ডানা থেকে

সমস্ত বাসনা ধুয়ে নিয়ে।

প্রেমের আরতি নয়। নয় আত্মসমর্পন।

তবুও প্রাণপণ ফিরে ফিরে আসা। 

আসার প্রয়াস শুধু।

তোমার আমার আজীবন।

 

(০৫/০৮/১৩)

বন্ধ দরজার ওপারে

বন্ধ দরজার ওপারে


কে যেন দরজায় কড়া নেড়ে গেল।

 মধ্যদিনের ব্যস্ততার তাড়ায়।

 তোড়ায় বাঁধা জুঁই বেলী চেমেলীর গন্ধে

তার জন্য স্বপ্ন বিছিয়ে রেখেছিলাম।

জানতাম না যে সে আসবে।

তবু ঘাসের ডগার মতো সূর্যমুখে বসে থেকেছি।

আষাঢ়ের ম্লান আকাশের মতো সজলচোখের বারান্দায়-

তার শূন্য পদচিহ্ন এঁকে দেখেছি,

ভালোবাসার ডালপালায় যতি চিহ্নের

বড়ো বেশি উপদ্রব।

শঙ্খনীল আকাশের উড়ানের পথে,

মনের রঙিন আবির বার বার ধুয়ে যাবে জানি।

তবু মাঝ নিশীথের স্বরলিপি জুড়ে রজনীগন্ধার সৌরভ।

প্লাবনের শেষ নৌকায় বসে সবুজ ঘাসের গন্ধের মতো।

বন্ধ দরজার দেওয়াল জুড়ে তবু প্রশ্নচিহ্নের উকিঁ ঝুঁকি।

মধ্যদিনের ব্যস্ততার তাড়ায় সে কখন কড়া নেড়ে গেল?

শূন্য পদচিহ্নের বুকের উপরে।

 

(১৭/০৬/১৩)

 

বাকি কথা পরে হবে

বাকি কথা পরে হবে

 

একবিংশ শতকের সূতিকাগৃহে

তোমারে খুঁজেছি আমি ব্যস্ত নগরের নাগরিক মঞ্চে

 

তোমার হাতের বরাভয় আমাকে ছেয়ে

মামুলি মিছিল থেকে ফেস্টুন ব্যানারে

ভোটের লিস্টে বাংলার ধাঁধায় কি এসে যায় বলো?

সংখ্যা গণনার কাঁটাপুকুরে ময়নাতদন্তে

যে ই যাবে মসনদে-- নাগরিক মঞ্চ তার পিছু নেবে

 

তুমি পায়রা ওড়াবে সাদায়

কালো পতাকা নিয়ে বন্ধুরা

পাহারা দেবে

 

বাংলার কোষাগারে ঘটি না ডুবলে কি হবে

ঠিক মত সময়ে আতসবাজী পোড়াবে

চোখে যারা সর্ষেফুল দেখবে

তাদের জন্য শিশুপাঠে

তুমিও ইতিহাস হবে

 

(২০১২)

বিকার

বিকার


সে এক মেয়ে ছিল

আমারই ভালোবাসার মতো মুখ তার।

চোখ তার হাতকড়া, চাবি তার

ঠোট স্তন যোনি

 

হেঁটেছি ছুটেছি আমি

মাঠ থেকে ঘাটে

ক্লান্তিতে অবসন্ন ঠিকানাহীন পথে।

নিতম্ব দুলেছে তার আলেয়ার আলো

ফাঁক করে দিয়েছে সে

শুক্রের খনি

 

করেছি প্রশ্ন তাকে ঘড়িবন্ধ রাতে

স্তনেতে স্তনেতে তার

কি আগুন জ্বলে?

বলেছে সে আগুন না গো,

এ আগুন ছাই......

পৃথিবী বন্ধ্যা আজ

রুগী আমি তাই

 

 

 (১৯৯২ মার্চ)

বিক্ষুব্ধ সন্ধ্যা

বিক্ষুব্ধ সন্ধ্যা


প্রগৈতিহাসিক সন্ধ্যার আলো এখনো আমাদের

দুজনার বয়সের ভারে খেলা করে যায়।

সূর্যতামসীর বন্দরে আমাদের মনোমালিন্যের নোঙর জুড়ে

যখন প্রতিদিনের শ্যাওলা সবুজ থেকে সবুজতর হয়।

ঐতিহাসিক প্রেমের পোকাকাটা জীর্ণ ব্লুবুক জুড়ে

রোজকার ঠোকাঠুকিগুলো বয়সের ভারে ক্রমেই ধারালো।

পুরানো সংলাপের ন্যুব্জ ডানা জুড়ে

স্মৃতির বিবর্ণ ঘুড়ি মাঝে মাঝে ভোকাট্টা

বিবস্ত্র চাদরে।

প্রাগৈতিহাসিক সন্ধ্যার আলো

তবু দুজনার বিশুষ্ক হাইওয়ে ধরে যেন

শ্রবাণ ঝাঁপালো।

আজ এতদিন পর পাশাপাশি রাতের গল্পে

রোজকার উপসংহারে

লজ্জাগুলো তবু কি ঢাকল?

সূর্যতামসীর নিরালা বন্দরে

প্রাগৈতিহাসিক সন্ধ্যার আলো

পরস্পরের বিক্ষুব্ধ নোঙরে

তবু যদি লেগে যেত ভালো?

 

(২৮/০৬/১৩)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন