সংলাপ আলাপের শেষে

 


সংলাপ আলাপের শেষে

 

সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও

থেকে যায় অবশেষ কিছু

পিছু নেয় সেই স্মৃতিখানি

বিষাদ কিংবা যন্ত্রণার বা গ্লানির

 

না তাই নিয়ে ক্ষোভ নাই কোন

এখনো রয়েছি ছিলাম যেমনই

শুধু ব্যাথাগুলো টুপটাপ পড়ে

ঘরে নির্বাক ক্যালেণ্ডার তেমনই

 

একদিন দিয়েছিলাম কথা

রয়ে যাবো চিরকাল সাথে

হাতে রেখে হাতদুটি শুধু

ধূ ধূ আজ নির্বাক রাতে

 

সেই সব স্মৃতিময় স্মৃতি

গতিহীন স্থবির প্রতীতি

জীবনের ধূসর দেওয়ালে

বৃথা সব একবার খোয়ালে

 

৭ই জৈষ্ঠ’ ১৪২৫

সব পেয়েছি সুখের দেশ

  

 

সব পেয়েছি সুখের দেশ

 

শোনা গেল রাজ পেয়াদা এসে

ধরে নিয়ে গেছে তাহারে

কলমটি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে হেলায়

লেখাটেখা ভারী বুটের তলায়

 

ধর্ষিত নারীর যোনির মতো

বিপর্যস্ত বিদ্ধস্ত

চাপ চাপ রক্তের মতো

অক্ষরগুলি সন্ত্রস্ত স্বভাবত

 

শোনা গেল রাজদ্রোহের গল্প

বিপ্লব ষড়যন্ত্রের নীল নকশা

নিষিদ্ধ মতাদর্শের সাথে সহবাস

অপরাধ কালি ও কলমের, সর্বনাশ

 

জমজমাট রাজসভা সহমত সকলে

সেইমত ঢ্যাড়াঁ পিটানো চৌদিকে

সব পেয়েছি সুখের দেশ

সেটাই সত্যি রাজ-আদেশ

 

শোনা গেল মোসাহেবী হাসি

দক্ষিণে বামে চাটুকার জলসায়

অপরাধী তিনি কালি ও কলমে

রাজাকে ল্যাংটো বলেন কোন শরমে

 

                                               ভাদ্র সংক্রান্তি’ ১৪২৫

সময়ের অন্তরালে

  

সময়ের অন্তরালে

 

আমি নই হয়ত অন্য কোন কেউ

যে ঠিক, না আমার মত করে নয়

ঠিক তার মতো রাত্রি দিন

                        নিয়তির বল্গা ধরে

                        আমাকে ঠেলে ক্রমাগত

                                    জীবনের গোলকধাঁধায়

 

অফুরন্ত জীবনের মিছিলের থেকে

দূরে বহুদূরে, অনেক দূরে

আমি কি তারই ক্রীতদাস তবে

                        শৃঙ্খলিত বোধের মাত্রায়

                        রুদ্ধদ্বার চেতনার অনুলিপি

                                    অপরিচিতের বয়ানে

 

স্বাক্ষরিত জীবনীর আত্মকথনে

যে কথা লিখে যাই দিনলিপির অক্ষরে

সে অক্ষর, না আমার নয়তো, নয়।

                        অপরিচিত সংলাপের আড়ালে

                        প্রবঞ্চিত সময় উট পাখির মত

                                    মুখ লুকায় সময়ের অন্তরালে

 

                                     ৪ই চৈত্র’ ১৪২৬

সমুদ্রবন্দর

 


সমুদ্রবন্দর

 

সমুদ্র ফুরিয়ে গেলে বন্দর জেগে ওঠে

তবুও ইতিহাস জুড়ে কত বন্দর

ডুবে গেল অথৈ ঢেউয়ের অতলে

 

মানুষের বেচাকেনার হাটে

লাভ কিংবা লোকসানের বহর

ধুলোমাখা হিসাবের খাতায়

কীটেদের খাদ্য হিসেবে মন্দ নয়

 

তবু নারীর মন পেতে জাহাজ মাস্তুল জুড়ে

সারেঙ খালাসি কিংবা কবি

বন্দরে নোঙর ফেলে রাখে

 

দু একটা ভুতুরে গল্প বাদ দিলে

সমুদ্র আর বন্দরের গল্প

ধর্মগ্রন্থে যাই লেখা থাক

কীটেরাই শেষ লেখা লিখে থাকে

 

৯ই ফাল্গুন’ ১৪২৭

 

সহবাস

  

সহবাস

 

তোমার শাড়ীর পাড়ে

যে ছন্দ তুমি ফুটিয়ে তোলো

তাকে আমি বলি

ব্যার্থ প্রয়াস!

 

কেননা তাতে তুমি সুচ্ছন্দ নও!

সে কথা আমার মত তুমিও জানো,

আর তাতেই তোমার জেদ যায় বেড়ে!

হয়তো এইটুকুই দেখতে

আমার পুরুষের রোজ ভুমিষ্ঠ হওয়া!

নয়তো শাড়ীর পাড়েই বা কেন

তোমার এ চঞ্চলতা!

 

তোমার শাড়ীর ঢঙে

যে তুমি, তাকে আমি বলি

সে তুমি নও!

 

তাতেই তুমি রাগলে আমার পর,

আমার চোখে লাগলো অনুরাগ!

সে কথা তুমিও জানো.

আর তাই ভেঙ্গে ভেঙ্গে

নাও যে গড়ে আমায়

বারে বার!

 

হয়তো আমার পুরুষের

তাতেই নায়ক হওয়া.

নয়তো শাড়ীর ঢঙেই

বা কেন

তোমার এ দুর্বলতা!

 

                                              (এপ্রিল ১৯৯২)

সাংবিধানিক

 


সাংবিধানিক

 

৩নং বেডে শুয়ে আছি

শব ব্যবচ্ছেদের এখনো অনেক দেরি

আগে তো মরতে দে!

 

ওষুধের চড়া দামে প্রাসাদের জৌলুসে

আমারও রক্ত লেগে থাক

ক্লেদাক্ত মাছিদের ভনভনে

 

ঢিল ছোড়া দুরত্বে প্রতিশ্রুতির গঙ্গায়

তর্পণের প্রস্তুতি নিক বরং

স্বপ্নদোষের স্খলিত বীর্য

 

করতল মেলে দেখে নিয়েছি

ভারতবর্ষ লেখে নাম

সংবিধানের অট্টহাস্য ধারায়

 

২রা কার্তিক’ ১৪২৬

 

 

সাক্ষীগোপাল

 

সাক্ষীগোপাল

 

কথা কমে এলে মনের ঝুলবারান্দায়

আমি একা। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়তো বা

বিক্ষুব্ধ স্মৃতির টুকরো ছড়িয়ে এধার

ওধার। বাসে আছি হাত পা মেলে

 

টিপ টিপ রোদভেজা বৃষ্টির দালানে

কতগুলো সাদা বক। দুই ঠ্যাং মেলে

আমারই মতো ডানা গুটিয়ে জুবুথুবু

তবুও অপেক্ষা করে ফড়িং কিংবা মাছের

 

এদিকের পথে ও রাস্তায় গলি আর

বাইলেনে শান্তির সাইরেন বাজিয়ে

মিছিল এগিয়ে গিয়েছে অনেকদূর।

যতদূর ইভিএম ভোটারের ভিড়

 

আমি আর মুখোশের সংখ্যা গুনি না

বুদ্ধিজীবীদের আঁতুর ঘরে উঁকি দিলে

দেখা যেত হয়তো বা রাম শ্যাম যদুদের

জননী শুয়ে আছে দুই পা ফাঁক করে

 

মধ্যবিত্তের রাত্রি নামলে মশারির ভিতর

সকলেই নৃপতি তখন। ব্যস্ত বংশবিস্তারে

আমার হৃদপিণ্ডের জাদুঘরে থই থই

অক্ষরে মৃত সব মমিদের ব্যাথা নিয়ে

 

প্রসব বেদনা ওঠে। নবজাতকের শ্বাস

প্রশ্বাস আর মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে ইতিহাসের

প্রতিটি পাতা পড়ে দেখে নিয়েছি রং

নাম্বার শুধু। বাকিটা সময়ের প্রলাপ

 

১৫ই ভাদ্র’ ১৪২৭

সাদা ঘোড়া

  

সাদা ঘোড়া

 

একটা ঘোড়া কেনার সাধ বহুদিনের

শাদা মখমলের মতো রোম

স্পীড মিটারে কাঁটা কাঁপবে থরথর

 

বহুদূর জুড়ে পিছিয়ে যাবে একে একে

শহর বন্দর নগর মানুষের চলাচল

ইতিহাসের পাতা ওল্টানোর মতো

 

ক্যানভাস জুড়ে সবুজের আঘ্রান শুধু

রাত নামলে জোনাকির ঝাড়বাতি

শ্রাবণের মেঘে তাথৈ বৃষ্টি ঝিঁঝির সঙ্গতে

 

আদিম রমনীর মতো সম্পূর্ণ অনাবৃত

প্রস্ফূটিত ফুলেল হাসিতে টলমল

আদি অকৃত্রিম নীলাম্বরী সেই পৃথিবী

 

মানুষের ভাষা নয় কথা নয় কাজ নয় কোন

একটা সাদা ঘোড়া ছুটে যাবে শুধু অবিরাম

মখমলের মতো রোম স্পীডমিটার কাঁপবে থরথর

 

                                               ৪ঠা শ্রাবণ’ ১৪২৭

সান্ধ্য খবর

  

সান্ধ্য খবর

 

কেমন আছেন?

ম্লান হেসে মুখের দিকে চেয়ে

ভদ্রতাবশত জানতে চেয়েছিল সে

নাগরিক সান্ধ্য পোশাকে

ব্যস্ত শরৎকাল খেয়াল করেনি কিছু

 

বিস্তীর্ণ জানলা জুড়ে আদিগন্ত দুই চোখ

যেমন হারিয়ে যেতে পারে

পারতো কোন একদিন

আজ আর সে অবসর নাই

হাতঘড়ির কাঁটা মেপে দিনান্তের

জমা খরচ অপেক্ষায় থাকে

জবাবদিহির দায় যাত্রিকের

 

ভালো, আপনি? এদিকে হঠাৎ

কাজ ছিল বুঝি কোন

তারপর অসাড় স্মৃতি ঠেলে

বিস্মৃতির পারাপারে

সামুদ্রিক নুড়ি কুড়ানোর মতো টুকটাক

 

সময়ের উল্টানো পাতায়

বিবর্ণ অক্ষর পথ ছেড়ে চলে গেছে কবে………

 

                                               ২০শে আশ্বিন’ ১৪২৫

সান্নিধ্য ২

  

 

সান্নিধ্য

 

ইতিহাসের হলুদ পাতার মতো

আজ তুমি। অনেক তর্কের শেষে

সবটাই ধূসর মমতা

আমাদের রাত্রিনিবাসে

বিক্ষুব্ধ দীর্ঘশ্বাসের দেওয়াল জুড়ে

সে কি ছেলেমানুষিরই না এক্কাদোক্কা খেলা

তারপর স্তব্ধতার শব্দহীন কোলাজে

পরস্পর একা হয়ে যাওয়া

 

তবু নিঃসঙ্গ গন্ধ রয়ে যায়

শরীর জুড়ে মানসিক বিভ্রম জাগে

এই প্রেম আতসবাজির মতো কেন পোড়ে

ভুলে যাওয়া তবু ভালো

ভুলতে চাওয়ার থেকে

 

না, সবটাই শেষ কথা নয়

হয়তো তুমিও নও

সান্নিধ্যটুকুই স্মৃতিময় জ্বালা

 

                                               ১৯শে চৈত্র’ ১৪২৫

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন