নষ্টনীড়ের ভ্রষ্ট কাহিনী

নষ্টনীড়ের ভ্রষ্ট কাহিনী 


আমাদের নষ্টনীড় সংগীতের আসরে

গভীর ক্ষতের প্রশ্নপত্র জুড়ে

নির্বাচিত রেট্রোস্পেকটিভ।

পরিযায়ী প্রেমের পসরা নিয়ে

পরকীয়া সন্ধ্যায় তোমার রক্তক্ষরণ জুড়ে

দুই বাংলার মানচিত্র।

তবুও চেতনার বিপরীত শব্দতরঙ্গ

রাজসূয়ো যজ্ঞে পৌরহিত্য করে।

এ আঁধার আলোর অধিক নয়,

বৌদ্ধিক কারুকার্যে।

এ আঁধার গর্ভযন্ত্রনা নয়,

মানবিক ঔদার্যে।

জীবনের ফলবন খণ্ড নয়।

নয় সত্য মূল্যে অর্জিত

প্রেমের অখণ্ড অবকাশ।

নয় রাত্রিযাপনের তটভূমি জুড়ে

প্রথম আলোর টাপটুপ পদধ্বনি।

কিংবা আলিঙ্গন নিবিড়

সোহাগ রাতের মায়াবী আশ্বাস।

এ আঁধার জুড়ে রক্তের ধমনী

শুধু লাম্পট্যের ভাষা বলে।

এ আঁধার জুড়ে মানবিক প্রতীতি

ডুবছে অতলে।

 

 (১১/০৮/১৩)

 

নষ্টনীড়ের স্পষ্টকথা

নষ্টনীড়ের স্পষ্টকথা 


ভালোবাসার মানুষ মুখ ফেরালে মনের খোপে

যত নতুন গল্প জমে ওঠে

তত বিক্ষোভ দানা বাঁধে না সব।

 বাঁধলে কি হতো বলা যায় না।

 

ভালোবাসার মানুষ চলে

গেলে ফাঁকা ঘরে সংলাপ জমে ওঠে।

না নতুন কথা হয়ত না।

পুরানো সংলাপে নতুন বিলাপ হতে পারে।

 

ভালোবাসার মানুষ চলে গেলে হয়ত আত্ম নিপীড়নে

স্বস্তি ধরা দিতে পারে।

আত্মহননের সাধ সফল হয় না তবু।

নয়ত জনসংখ্যার সুরাহা হতো হয়ত কিছু।

 

ভালোবাসার মানুষ নিয়ে এমনই সব কত গল্প।

আমাদের ঘরের ভেতরে।

সব সময় নিজেদেরই হূঁশ থাকে কি?

 বিক্ষিপ্ত সময়ের প্রক্ষিপ্ত ব্যবহারে।

 

ভালোবাসার মুখ ফেরানো মানুষগুলো

যখন আবার নতুন করে

ভালোবাসার তত্ব বলে,

আমরা সবাই জানি মানুষ মাত্রেই ভালোবাসায় মন গলে।

 

(৩০/০৭/১২)

নাজনীন

 

নাজনীন


আমি যেন নবীন হয়ে উঠি আরো,

তোমার ওই ঠোঁটের স্বাদে নাজনীন।

বিবর্ণ প্রাসাদের ছায়া ফেলে পিছনে;

সোনালী আগুনে তোমার সারাদিন--

 

পুড়ে পুড়ে রাঙা হয় রাঙা হয়ে ওঠে

তোমার শরীরে ঐ আমার শরীর

এ দাহ প্রদাহ নয়

পৃথিবীর বয়সী হয়েও অনেক গভীর

 

মৃত সব প্রেমিকের হাহুতাশ

এখনো খেলে বেড়া

তোমার এলো চুলে তবু আমারও মৃত্যু হলে

নাজনীন। আমাকেও কি যাবে বল ভুলে?

 

আজ রাতে প্রলয় হবে না জানি,

তবুও আমার ঢেউ সাঁতরালে তোমার ভিতরে-

পৃথিবী সবুজ হতে পারে মায়া সভ্যতার মশাল নিয়ে

আমাদের নাগরিক ভিড়ে

 

সন্ধ্যার নদীর মতো  তোমার তনুর শ্রী-তে তবু-

সমাগত প্রেম ভালোবাসা সব।

সাম্রাজ্য পতনের মতো লোভ লালসার রেখে যাবে

শেষ অনুভব।

 

(০৫/১০/১২)

 

 

নাবিক

 

নাবিক

 

সমুদ্র বুকে নিয়ে চলেছে নাবিক;

পাখির ডানা ঝরা আলোর বন্যায় যত নদী

মোহানা খুঁজে পায়--

তত আশা মাস্তুলে খাটিয়ে নাবিকের সংগতি।

যদিও কুয়াশার বন্দরে নোঙর ফেলবে এবং তুলবে আবার।

তবু দিগন্তের রেখায় ঐতিহ্য আর স্মৃতির

বরণডালা নিয়ে স্বপ্নিল ভোর।

দিনান্তের উজানে সন্ধ্যার তটে মায়াবী দুটি হাত

আরক্তিম প্রত্যাশার ধূপ জ্বেলে যদি সার্থকতা পায়;

যুগান্তরের মানুষ: তোমারও আস্তিনে জ্বলবে

বাতিঘরের নয়নপ্লাবী আলো-

নাবিকের স্বপ্ন নিয়ে চোখে।

যে আলো নেভে না নাবিকের মাস্তুলে কখনো।

 

সমুদ্র বুকে নিয়ে

চলেছে নাবিক

সপ্তর্ষীর পথে বতিঘর মুখী।

মহাকাল নিদ্রিত কিনা

জানা যাবে তখন।


(১১/০৫/১২)

নারীর মতোন তুমি

নারীর মতোন তুমি


আকাশটাও যদি নীল আঁচল খুলে দাঁড়িয়ে যেত?

তোমার আদরের মতো।  শ্রাবণের বৃষ্টিবিন্দুর ভিতর

পৃথিবীর সমস্ত চুম্বন তোমাকে খুঁজে পেলে-

অক্ষর জুড়ে স্বরলিপির স্বাক্ষরে হয়ত নতুন ভোর।

সমস্ত প্রোটোকল ভেঙ্গে কৃষ্ণা গোদাবরী

তোমার নাভি কুণ্ডের ওমে।  স্লীভলেস ব্যালকোনির মতো

মুক্ত হাসির ঝর্ণায় বিকেল হলে?

মকর সংক্রান্তি স্নানের পূণ্যের মতো সময়।

জাফরানি আবেগে নবান্নের পরমান্নের মতো

তোমার আলিঙ্গনে- মধ্যরাতের সৃজন হলে?

ইতিহাস কেবলই শুশ্রূষার কথা বলে।

ক্লান্ত মরুভূমির নিদ্রায় তোমার বুকের ঢেউয়ের মতো

স্বপ্নগুলো অমৃত সিঞ্চন করলে।

সব প্রেমিক খুঁজে পেতে পারে তার প্রেমিকার হাত।

তোমার চুম্বনের মতো যেন অবশেষে বিপ্লবী প্রভাত।

 

 (১৯/০৮/১৩)

 

নিপুণ অহঙ্কার, তবু

নিপুণ অহঙ্কার, তবু


তোমার গোপন কথারা যবনিকার অন্তরালে

নিচু স্বরে তৎপর হলে---

রাজহংসী গ্রীবার বিভঙ্গে তোমার বরাভয় বাণী।

সব কথাই দৃশ্যমান নয়। নয় হো হো হাসি।

নিপুণ ছুরির চকিত মোচড়ে

রাজত্ব বেহাত সন্ধ্যায় তুমি সাফল্যের হাসি।

সাম্রাজ্যের উচ্ছ্বসিত দেওয়ালে

চীনের প্রাচীর হওয়ার সাধ।

তবু ভিন্ন জনপদ

সময়কে মেপে নিতে চেয়ে তোলেনি দেওয়াল এখনো।

লেখেনি স্লোগান কোনো।

তবু নোঙর দেখনি তুমি? প্রত্যয়ের।

অশান্ত যুক্তি তক্ক গপ্পের সূতিকা গৃহে?

অনেক দুরূহ কষ্ট

পাক খায় মাথার ভিতরে।

"বঙ্কিম দৃষ্টির ইসারা"

আসরে নামেই যদি।

থাক তাতে ক্ষতি নেই

এসময়।

এথেন্স রোম বার্লিন ভূপতিত।।

এবার তোমার অহংকার।

 

(০৬/০৫/১২)

নিভৃত সংলাপ

নিভৃত সংলাপ


লাল নীল সবুজের বুননে

ধুমায়িত বাসনার স্বাদ

আদরের অক্ষরগুলো জুড়ে

সোহাগের গল্প ছড়িয়ে দিলে

তোমার নাম রাখতাম স্বরলিপি।

অনেকটা আকাশ পেরিয়ে এসে

ঢেউ ভাঙ্গা জলের বৃত্তে

যতটা জীবন করেছি সৃজন;

ততটুকু স্বরবিতান জুড়ে

এসো তবে স্বরলিপি হয়ে।

পাটভাঙ্গা ভালোবাসার,

মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টির চোখে

চেয়ে দেখো মরুভূমিও

রূদ্যানে রেখেছে সমস্ত হৃদয়।

গ্লেসিয়ার যুগের শেষে

সবুজ বনানীর ফাঁকে সঙ্গমের সময়।

মরুঝড় থেকে তুষারপাতের রাতে,

উন্মত্ত ভিসুভিয়াসের পিঠে চড়ে

তবুও আদিম রমণী মিলনের রাত ভোলেনি।

শরৎ শিউলি তাই ফুটেছে সময়ে।

নাগরিক রাতের আড়ালে

আজ তাই তোমাকেই ডেকেছি আমি।

তোমার শাড়ীর নিভৃতে

আমাদের অক্ষর

নিরিবিলি ছায়া খুঁজে নিক।

 

(২৭/১০/১২)


নির্জনে একা

নির্জনে একা

 

আমি রোজ একটা নির্জন রাস্তায় হেঁটে যাই

গোলাপের পাপড়ির খবর জানা নাই

তবে কাঁটাগুলো গুছিয়ে রাখি সযত্নে

যে হিরণ্যগর্ভের খোঁজে আমার প্রেমিকার অধরে

আদর ছড়িয়ে ছিলাম অকৃপণ

সেখানে সম্প্রতি কার্ফিউ জারী করেছে

নির্বাচিত সরকার

আমার ভালোবাসা গলিত লাভার মতো

ছড়িয়ে যাচ্ছে বাংলার ত্রিভূবনে

না প্রতিটা বুলেটের হিসাব যারা রাখছে

তাদের শহীদবেদীতে

আমার অঞ্জলি পৌঁছাবে কিনা ঠিক নেই

তবু এ বাংলার মাটি হোক স্বদেশী

এই নির্জন পথের সেতুতে

এখনো অনেক মেরামতি বাকি আছে জানি

তবু মতবাদের রামধনুতে ভোলাই নি দুচোখ

ইতিহাস বারবার ভুল করে গেছে বন্ধু

এখন নিজের হাতেই থেকো

গোলাপের পাপড়ি না থাক

কাঁটাগুলো গুছিয়ে তুমি রেখো

 

(০২/০৬/১২)

নির্বিকল্প সমাধি

নির্বিকল্প সমাধি


জীবনের ধারাপাতে মানুষের মন

গুমোট গরম ভাদ্র মাস অথচ মাংসের দোকানে

হাঁড়িকাঠের আগে,

শেষ কয়েক মুহূর্তের জীবন নিয়ে

কি ভাবে অনুভবি খাসি?

 

তথাপি মানুষ বই - এর বহরে

অন্ধকার জমা করে শানানো অক্ষরে

ডিগ্রি’র ছাঁচে ঢালাই মানুষ

সকলেই চলেছে সকলের আগে

মুখে খই ফোটে তুবড়ির মতন মুখস্ত যতই

হৃদয়ও দামী হয়ে ওঠে কাগজের নোটের মতন

মনের জানলায় গুমোট গরম ভাদ্র মাস

ব্যস্ত জীবন অভ্যস্ত তাতেই

চমক চমকে ওঠে সর্বজ্ঞ মানুষে

পৃথিবীও বুঝি গৃহপালিত মানবের ঘরে

ঈশ্বর তখনও নির্বিকার হাঁড়িকাঠের দিকে চেয়ে।

 

(১৯৯০)

নির্ভয়

নির্ভয়


তোমার কথা মনে করে যত দূর ভালোবাসা যায়

বেসে দেখেছি এ হৃদয় অতলান্ত নয়।

রোজকার দেখাশোনার বাইরে অন্য কোথাও

কোনো অচিনপুরীর সিংহদ্বারে

কিংবা ধরো, তোমার স্বপ্নের ছন্দে যেখানে চলে যাও!

সেরকম কোথাও তোমার গন্ধের টানে

খুঁজতে চেয়েছি কি আমি জীবনের মানে?

এ জীবন কোনো কবির মায়াবী আঁচল নয়।

শব্দের নিপুণ আঁচড়ে মানসকন্যার প্রেম

জীবনের আটপৌরে ফ্রেমে হবে মায়াময়?

 

এখানে আমার তুলিতে জীবনের রঙ, বরং

রোজকার ব্যালেন্সশীটেই বেশি নির্ভয়।

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন