এই শেষ

 

 

এই শেষ

 

এই শেষ-

আর হয়তো দেখা নাও হতে পারে

এই লাইনে, রাজনীতির ডামাডোলে

ভোট ফর স্লোগানে

পোস্টার ব্যালটে ইভিএম কারচুপিতে

নেতার ভাষণে

 

এই শেষ,

আর যদি দেখা নাও হয় নাই বা হলো,

অফিসের টেবিলে, রাজপথের ভিড়ে

গুঁতোগুঁতির বাড়ি ফেরা বিকালে,

ভাগাড়ের মাংস আর

চপ কাটলেট মেঠো মিছিলে

 

এই শেষ,

আর হয়তো দাঁড়াব না কখনো

মুখোমুখি হাত কচলাতে

বলবো না কথা আর চুপি চুপি

ফিসফিস টেবিলের আনাচে কানাচে

মাছিমারা কেরানীর ধাঁচে

 

এই শেষ,

আর হয়তো বা আসবো না কাছে

রাতের বালিশে পাশাপাশি

চেনা গন্ধ চেনা পরিবেশে

সারাদিন ক্লান্তির শেষে

ঘাম ভেজা আদরের আবেশে

 

এই শেষ,

আর নয়। হয়তো বা আজ কিংবা কাল

এই দেখা শেষ হবে, হোক

হারিয়ে যাবে, যাক স্বপ্ন দেখার দুই চোখ

এই দিন থেকে যাবে তবু

থাকবে না হারানোর শোক

 

বৈশাখী ৯’ ১৪২৬

একা এবং সকলেই….

 

 

একা এবং সকলেই….

 

এখনও হেঁটে চলেছি

না, মাইলের পর মাইল নয়

পরিযায়ী শ্রমিকের পায়ের মতো

 

এখনও হেঁটে চলেছি

না, প্রতিশ্রুতির মিছিলে নয়

হতবুদ্ধি নাগরিকের মতো

 

এখনো হেঁটে চলেছি

না, এক শিবির থেকে অন্য শিবিরে নয়

বুদ্ধিজীবীদের সুবিধের মতো

 

এখনো হেঁটে চলেছি

না, ক্ষমতার অলিন্দে নয়

বেহায়া ম্যাজিশিয়ানদের মতো

 

এখনো হেঁটে চলেছি

না, লংমার্চের জনযুদ্ধে নয়

বিপ্লবী সৈনিকের মতো

 

এখনো হেঁটে চলেছি

প্রজন্মের পর প্রজন্ম

ভারবাহী বলদের মতো একা,

সকলেই

 

১১ই আশ্বিন’ ১৪২৭

 

একা কুম্ভ

 


একা কুম্ভ

 

কারুর কাছে যায় কি পাওয়া সুখ

কোথায় গেলে ভোলানো যাবে স্মৃতি  

কে আর এমন অসময়ের দিনে

আসবে কাছে আনবে নিয়ে প্রীতি

 

এই যে এত ভিড়ের মিছিল- মুখ

ব্যস্ত অতি পায়ের গতি দ্রুত

বাতাস জুড়ে বিব্রত সংলাপ

আশার আলো হয় না কেন শ্রুত

 

তবুও যখন শিউলী ফোটা ভোর

কাঁচা রোদ ভাসায় ব্যালকোনি

আকাশ নীলে হারিয়ে গেল চোখ

মন দেওয়ালে দ্রিদিম দ্রিদিম ধ্বনি

 

তিমিরনাশী অস্ত্র নিতে তুলে

কেউ বলে নি, বলে না কেউ আর

এদেশ এখন চক্রব্যূহ জালে

জাল কাটলে জীবন রাখা ভার

 

আগুন যখন ঘর দুয়ারে পা

দগ্ধ চেতন স্বজন পোড়া ছাই

চোঙা হাঁকে সিংহাসনের ‌’পর

এই তো সুদিন বাজাও তালি তাই

 

এমনই এক ভিড়ের মাঝে আমি

হারিয়ে গিয়ে আমার সাথে একা

বিনিদ্র রাত কলম চলে দ্রুত

যুদ্ধে যাওয়ার মন্ত্র হয় নি শেখা

 

৮ই কার্তিক’ ১৪২৭

 

একুশ শতক বিংশ শতকের পর

 

 

একুশ শতক বিংশ শতকের পর

 

একে একে অতিথিরা সব ফিরে গেলেন

ফাঁকা চেয়ার শূন্য চোখে তাকিয়ে

দেওয়ালের কানাকানি দীর্ঘশ্বাসের মিছিল

টেবিল জুড়ে মুখোশের উচ্ছিষ্টে

মহাকাব্য লেখা যেতে পারে

বৈদ্যুতিক বাতির অবশেষটুকু টিমটিম করে

অন্ধকারের সাথে অসম লড়াইয়ে ক্লান্ত বিদ্ধস্ত

যবনিকা পতনের তখনও ঢের দেরি

 

মহানগরের পথে মরুতীর্থের যাত্রীর মতো

ক্লান্ত পথিক আমি মরীচিকার চারধারে অবিরাম

ওদিকে পাণ্ডুলিপি জুড়ে শিলান্যাসের ধুম

রত্নখচিত দিনের আয়োজনে ব্যস্ত সময়

অতিথিরা সব পুরস্কার মঞ্চের দিকে এগিয়ে

পরস্পর পুরস্কৃত করবেন নিজেদের

 

২৪শে আশ্বিন’ ১৪২৫

এসো ভিজি দুজনে

 

 

এসো ভিজি দুজনে

 

এই ভিজে জ্যোৎস্নার রাত

মেঘের ঘরদুয়ার

বৃষ্টির সাথে সহবাস

 

এত আয়োজন

হৃদয়ের চৌকাঠ পেরিয়ে

না, লজ্জা পেও না মেয়ে

 

অন্তর্বাসের অন্তরাল নয়

স্পর্শসুখের মেঘমল্লারে

আলাপ হোক শুরু

 

শ্রাবণের ১৬’ ১৪২৫

ওয়াটারলু

 


ওয়াটারলু

 

আত্মহত্যার আগে তেষ্টার রঙে

বিবর্ণ জল; কল্পিত চুমুর দুকুলে

পরিকল্পিত খরা; সদলবলে মার্চপাস্ট

ঘূণেদের তূণে অভিষপ্ত রাজনীতি

 

আত্মহত্যার আগে ক্লান্ত রাজপথ

সারারাত জুড়ে ভিআইপি সাইরেন

জ্যোৎস্নার শিশিরের ভেতর খেলা করে

দুঃস্বপ্নের রাত; ছাই দেওয়া বাড়া ভাত

 

আত্মহত্যার আগে উজবুক চোখের

নিস্তব্ধ চাহনী; চশমার কাঁচ চৌচির

দুফোঁটা কালি আর সুইসাইড নোটে

আত্মহত্যার আগে মানুষ নিহত হয়

 

 

কথা নয়

 

কথা নয়

 

বেশি কথা নয়

 

         নয় সোনালী রোদের গল্প

         মায়বী হরিণ আর বিশুদ্ধ বর্ণমালা

 

এখন ক্যানভাস জুড়ে

 

         নিলামে ইচ্ছে ঘুড়ি

         নীরবে নিরব জয়জয়াকার

 

একা চৌকিদার হাঁক পারে

 

         জাঁকজমক মিডিয়ায়

         সুসময় একেই বলে

 

তুমি কথা বলো না কোন

 

          ইভিএমে আঙুল ছোঁওয়াও

          যে বোতামে বিপ্লব হয়

কবি ও কবিতা

 

 

কবি ও কবিতা

 

একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা লিখে বসে আছি

জানলার ফাঁক দিয়ে শ্রাবণ উঁকি দিয়ে যায়

মেঘ ভরা রাত সারারাত সে সব কবিতা পড়ে

আমি শুনি প্রেমের ক্ষত গ্লানি অভিশম্পাত

 

তবুও বৃষ্টি পড়ে আমাদের ওখানে এই শ্রাবণে

টুপটাপ দোতারায় ঝিরিঝিরি নৃত্যে অথৈ

প্রেমের পয়ার থেকে হালফিলের মুগ্ধ ছদ্মবেশে

সাজানো অক্ষর ক্রমশ স্থিতু হয় নাগরিক প্রজ্ঞায়

 

ওদিকে স্বল্পায়ু বেশে মিলনের সুখ কবিতা মানে না

হাত ঘড়িতে মধ্যরাতের যন্ত্রণা অধিকতর যেই

শ্রাবণের ছাঁট জানলা পেরিয়ে মানুষের মতো ঘামে

নিবিড় গাঢ় রাত মহাকালের মতো ঋষিকল্প তখন

 

শ্রাবণের ১৩’ ১৪২৫

 

কবিসন্ধ্যার তিথি

 


কবিসন্ধ্যার তিথি

 

অবকাশ সন্ধ্যায় মগ্ন নির্জনে রাত্রি নামে

দুই চোখে জীবিত প্রেতাত্মার অভিসার

মৃত শব্দের খুঁটিতে বাঁধা পড়ে থাকে

যাবতীয় স্বপ্ন সাধ সাধনা আত্মপ্রত্যয়

 

পুরানো অক্ষর ঘষেমেজে কৃত্রিম গাঢ় রঙ

কিছুটা ছিটানো যাক, তারপর ব্যভিচারী

সময়ের ঢঙে শিবিরী স্লোগানে সাজিয়ে

যাবতীয় বাক্য মানেই শ্রেষ্ঠ কবিতা

 

হেমন্ত জুড়ে উৎসবের স্মৃতি খুলে বসা

আবৃত্তি মঞ্চে নাগরিক সমিতির কলধ্বনি

দিগন্ত বিস্তৃত কালো কালো মাথা আর

তুমুল উল্লাস। উচ্চারিত ভাষণে তিনি কবি

 

 

কার্তিকের ১৫’ ১৪২৫

কয়েক টুকরো আমি

 

কয়েক টুকরো আমি

 

টুকরো টুকরো আমিগুলি জোড়াতালি দিয়ে

খাসখবরের শিরোনামে গল্পের প্লট সাজাচ্ছি

রক্তপাতহীন বিপ্লবের সেমিনারে বক্তৃতা দিই

মুখস্ত কোটেশানে হাততালি পেয়ে আহ্লাদিত হই

 

বিকেলের পর সব পার্বতীদের বিয়ে হয়ে গেলে

মাঝরাতের আকাশে টলমল স্বপ্নদোষ ঘিরে

বাংলার ইতিহাস লেখা হতে থাকে সুনিশ্চিত প্রহরে

টুকরো টুকরো ভাঙা শব্দের প্রতিধ্বনির কোলাজ

 

একপশলা শিশিরের শব্দের মতো ন্যায়নীতি সব

নিশ্চুপ স্থবির, কড়িকাঠ গুনতে থাকে অভ্যাসে

প্রতারিত রোজকার সকাল তাকায় আমার দিকে

কয়েক টুকরো আমি অধোবদন মঞ্চের একপাশে

 

৩০শে আষাঢ়’ ১৪২৬

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন