জলঝর্ণার শব্দের ভিতর

 

 

 জলঝর্ণার শব্দের ভিতর

 

নির্মল চুম্বনের ভিতর যে শুশ্রূষার রামধনু জাগে

সেই স্বাদ বুকে নিয়ে হয়তো অনেক হৃদয়।

আহত নিহত ক্ষতবিক্ষত

কবিতার লাইনে উপুর হয়ে পড়ে থাকে।

পার্থিব গল্পের গর্ভগৃহে

এখনো অমৃতমন্থন চলছে

কত বৃদ্ধ নক্ষত্র ধৈর্য্য হারালো।

ছায়াপথ কুষ্ণগহ্বরে আরও ধূসর হলো।

শুভ্র আগুনে স্বপ্ন ছেঁকে নিয়ে

দীর্ঘজীবী বিপ্লব তবু ক্ষণজীবী হল।

সমস্ত দিন তবু এইসব রাত্রির জন্মের ভিতর

এখনো নারীর বুকে পিপাসা সেধেছে।

অমৃতকুম্ভের তীর্থে ক্লান্ত যাত্রিকের পায়ে

এখনও জননী মানে স্নেহ। নারীর মানে শুশ্রূষা।

সাগরের জল নীলিমা হতে চেয়ে

ঢেউ গুনছে মানবের।

অমৃতস্রাবের রাতে

শুভ্র নবজাতকের শিয়রে

মানুষ মানব হবে।

রক্তের অক্ষরে বিন্দু বিন্দু প্রেমে।

 

(১৬/১০/১২)

জানি না কখন

 

 

জানি না কখন

 

কোনোখানে ঈশ্বর লুকিয়ে আছেন জেনে তুমি

নিশ্চিন্তে নদীতে আঁকো জল

ভালোবাসার অমৃতমন্থনে

যতই উঠুক গরল হলাহল

সন্ধ্যা তোমার বুকের নুপুরে শিশুর ঠোঁঠে

ভিজিয়ে চঞ্চল

 

উত্তুঙ্গ ঐ পর্বত শিখর থেকে আমাদের আরবসাগরে

মগ্ন তুষারপাত আর মরুঝরে

ঈশ্বরের লেখ নাম

তুমি আজও কি মনে করে?

 

যত যুদ্ধের বেজেছে দামামা

যত সৈনিক তত শতাংশ খুনি

যত ভালোবাসা হয়েছে উজার

শবের মিছিলে মৃতদেহ শুধু গুনি

প্রেম ভালোবাসা আঁকতে যাইনি আর

দেখেছি যারা মানুষের শয়তানি

 

তবুও তুমি তুলেছ আবার ধ্বনি

ভালবাস বলে হৃদয় খুঁড়েছ খনি

ঈশ্বর নয় ভালোবাসা যদি হয়

এই বিশ্ব এখনো আলকময়

কিন্তু সেতো সুদূরপরাহত

জীবন আজও রয়েছে অবনত

জিজ্ঞাসা

 

 

জিজ্ঞাসা

 

ম্লান স্লেট রঙিন

সঙিন আকাশের তলে

হলুদ শীর্ণ দুচোখের পাতা ক্লান্তিতে তুলে

 

নদী উত্তরে বলে

.....,......ঠেকেছি চড়ায়।

 

শুধালাম তারে

.......এত তাড়াতাড়ি

জীবনের সাথে আড়ি হলো ভাই?

 

ম্লান নোনা হাসির ঢেউ

অধরেতে চেপে

শীর্ণ শুষ্ক পাক খাওয়া দেহে

নদী আবারো উত্তর দেয়

 

.........একলব্য গুরুদক্ষিণা

দিল যেই গুরুর চরণে

 

আর এক অবোধ তাই

এই কথা তুলে ছিল কানে।

 

(০৬/০৬/৮৯)

টাগ অফ ওয়ার

 

 

টাগ অফ ওয়ার

 

দোলনচাঁপা রঙে যাকে ভালোবাসা যায়

মিষ্টি পানের ঠোঁটে যাকে

ভীষণ মানায়

সেই প্রেয়সী আকাশনীল

পড়লে শাড়ী

গৃহবধুর কপাল ঘামে

ভাঙে কলসী হাঁড়ি

 

প্রেয়সী হাসেন মিষ্টি মধুর

রঙিন ঠোঁঠের মাপে

বুকের আচঁল পাল তুলে দেয় ভালোবাসার ভাপে.

সেই প্রেয়সী নরম অতি

বাড়িয়ে দিলে হাত

গৃহবধুর শাপ শাপান্ত

কেবল বাড়ে রাত

 

সাতটিপাকে বাঁধা জীবন

নিয়ম করে সাধা.

গৃহলক্ষ্মীর গৃহপালিত,

তবুও টানেন রাধা

কোন টানটা ভালবাসার

কোন টানটা বিষয় আশার

সেই ধাঁধাঁতেই খাবি খেয়ে

জীবন দেখি হলো অসাড়

 

সত্যি কথা বলতে গেলে

লজ্জা লাগে অতি

বাঁধা মাইনে মোটা মাইনে

তাই এত দূর্গতি.

আকাশের নীল আকাশে থাকে, জলের ঢেউ জলে

ভালবাসা ফর্দ্দ হাতে

সুদের কথাই বলে

 

১৯৯২

টুকরো কাব্য

 

টুকরো কাব্য

 

একটুকরো

হৃদয়ের হাতছানি

সহস্র পদধ্বনি তোলে

মাইল মাইল

ইচ্ছেডানার বিশ্বাসে ভরসায়

 

একটুকরো

ভালোবাসার মন্থনে

শতসহস্র অশ্রুকণা নদী

সাত সমুদ্র ঢেউ ভাঙ্গে

আনন্দে! সানন্দে!

 

একটুকরো

কবিতার আয়োজনে

টুকরো টুকরো জীবনের

গ্রন্থনে আমার অক্ষর

স্বাক্ষর রাখে অনন্তের!

 

একটুকরো

তোমার হাসিতে

কত পৃথিবী সূর্য

তূর্য বাজিয়ে ফেরে

জান কি?

 

 (১৩/০২/১২)


ঠিকানা

 

 

ঠিকানা

 

চৌকাঠ ডিঙানোর ছাড়পত্র পাইনি

কলিং বেলের নরম শরীরে

বৈদিক মন্ত্র জপার ইচ্ছেসুতোয়

আগুন দিয়ে বসে আছি।

প্রেয়সী তোমার বিদগ্ধ চুম্বনের

আলসেতে ভর দিয়ে যারা আরাম পোহায়,

কিংবা মিছিলের অগ্রভাগে

যারা প্রেমের কবিতা পড়ে;

তাদের হৃদয় কিংবা অফুরন্ত সময়

ঠিক আমার মতোন তো নয়।

এ নয় শালবীথির নির্জনে মোনালিসা হাসির সংলাপ

কিংবা বহুতল রজনীর বাৎসায়ন সিম্ফোনী

এ নয় আমরণ মঞ্চসজ্জায় বসন্তবিলাপ

কিংবা যৌথ বিবৃতির আঁতুরে ডিএনএ বাহিনী

রঙমহলের হাততালির চৌকাঠে নয়!

রংমশালের নীচে অন্ধকার বরং বাসি হয়ে এলে,

অমলিন রোদের শিরোনামে আমার দুন্দুভি-

তোমার কানে বাজাবে নিস্তব্ধ দুপুরের বৈশাখী প্রহর

সেদিন তোমায় তারা, ঠিকই আমার ঠিকানা জানাবে

 

(০৬/০৬/১৩)

 

ডেড এণ্ড

 

 

ডেড এণ্ড

 

এখানে ক্লান্ত বরফ পেড়িয়ে

মরুভূমীর বালির মতো রোদে রোদে মিতালী

চৌঁষোট্টিকলায় পারদর্শিনীর আঁচলে অভ্যস্ত সন্ধ্যা

মিতবাক এবং চন্দ্রকেলীর  রাতের প্রস্তুতিতে নিমগ্ন

স্বস্তির কাঁটায় চেপে গার্হস্থ্য তুফানেই

সাঁতরাতে জানতে হয়

শুধু ডুবে ডুবে জল খাওয়াই তো নয়,

ঢুকু ঢুকু হাঁফছাড়া মৌতাত

নিরালা সিন্দুকে

জমিয়ে রাখাই ভালো

শুধু শরীরের তাপ উত্তাপ সন্তাপের দিনলিপি নয়

সমস্ত আদর যদি অভিজ্ঞতার মাটিতে দিবানিদ্রা দেয়,

কিংবা ধরা যাক সুখ দুঃখের  খুঁটি ছিঁড়ে যাবার বেলায়,

স্থিতপ্রাজ্ঞ ময়নার মতো-

কেবল মুদ্রদোষে

সোনার খাঁচা ঠোকড়ায়!

বিধাতা নিয়তির মতো

হয়তো তত নিশ্চিন্তে নয়,

তবু জানেন, সেকেণ্ড এডিশান-

না আর কোনোমতে নয়!

 

 (১৪/০৯/১৩)

 

ঢেউ

 

 

ঢেউ

 

আমাদের হৃদয়সন্ধির বয়স্ক উঠানে;

সময়েরর ঢেউ এসে-

একে একে

নিয়ে চলে গেছে অনেক

অনুপম ঘ্রাণের গোলাপী পালক

আকাশনীল সমুদ্রের

পক্ষীরাজ ঢেউগুলো

একদিন শরীরের বিন্দু বিন্দু জলে

রাত্রি ভরে সঞ্চয় করেছে উত্তাপ

উন্মুক্ত আকাঙ্খার সবুজ স্বপ্নমাখা প্রাঙ্গনে

যুথবদ্ধ লোক-লজ্জার

সাথে লড়েছে

সহজ ভঙ্গিতে উষ্ণ প্রস্রবণে মিলনবিন্দু এঁকেছে

জীবনের জয়োল্লাসে মেতেছে

রিপুর চৌকাঠ পেড়োনো

নিছক ভালোবাসায়

 

আজ সন্ধ্যা-প্রদীপ জ্বেলে আমাদের আরতি!

আজ স্মৃতির সঞ্চিত উত্তাপে নস্টালজিক:

দু-জনার শিথিল পাকসাট

তবু স্নপ্ন ও শরীরের তীব্র দহনে

সূর্যস্নাত প্রতিটি ভোরে-

আমাদের রাত্রির গল্প

কিংবদন্তী হবে একদিন!

আকাশনীল সমুদ্রের ঢেউয়ে!

 

তবু প্রেম তবু ভালোবাসা

 

 

তবু প্রেম তবু ভালোবাসা

 

প্রেম বল ভালোবাসা বল

বিশেষ কিছুই হয়নি সঞ্চয়

সৃষ্টির স্থিরবিন্দু থেকে

যাত্রা শুরু করে যতই

পা ফেল; ফিরেছি

অস্থির শয্যাতেই

 

সাম্প্রতিক পৃথিবীর মঞ্চসজ্জা দেখ

তীর্থক্ষেত্রের পূণ্য করিনি অর্জন

বিষুবরেখা থেকে চতুর্দিক

ঐতিহাসিক তথ্য নিয়ে যতই

বড়াই কর; করেছি

হৃদয় ক্ষত বিক্ষতই

 

বোধিবৃক্ষই হোক কিংবা ক্রুশ

সকল অর্জন হলো বিফল

মানবিক ভোর নিয়ে চোখে

স্বপ্ন সাধ সাধনায় যতই

ঋদ্ধ হও; দেখেছি

জিঘাংসা লোভ রিরংসাই

 

হৃদয় দিয়ে ভালোবেসে দেখ

শরীরী প্রতীতি ছাড়া কিছুই নই

জীবন জুড়ে শুধুই ছদ্মবেশ

কাব্য পড়ে যতই

মুগ্ধ হও; মূলত

সব নির্মাণ অশুদ্ধই

 

 (১০/০৫/১২)

তবুও অনিমিখ

 

                                                            

তবুও অনিমিখ

 

ছায়াশরীর নিয়ে সমুদ্রের সিঁড়ি ভেঙ্গে

রৌদ্র করোটিতে নেমে গিয়েছি মায়া সভ্যতায়

হরপ্পার পাথর ভাঙ্গা বেদনা

তবু মোলায়েম হাতে প্রীতিটুকু বিনিময় করে

নাগাসাকির সাথে

সন্ধ্যার পম্পেইয়ের নিরুদ্বিগ্ন পথে

প্রেয়সীর`উন্নত বুকে

পুরুষের অভীপ্সা গুনে গেঁথে

শরীর ভিজিয়ে নিয়েছি দ্বারকার জলে

সেদিনের বৃন্দাবন মথুরার রাজপথের শিকড়

বিশ্বায়নের ধ্বজা উড়িয়ে ড্রয়িং রুমের চৌকাঠে

মন্টিকার্লোর ক্যাসিনোতে খেলে যায় লণ্ডন ইস্তাম্বুল

পারীর বিষদাঁত

সাম্রাজ্যের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেখে নিলাম

উলঙ্গ শিশুর শেষ হাসি

ঝলসানো ন্যাপামে

 

ছায়াশরীর নিয়ে

ঐতিহাসিকের সেমিনারে চতুর শকুনির সাথে আলাপ

গোয়েবেলস্ থেকে পেন্টাগন সেই একই সংলাপ

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন