অবিনশ্বর অবিনাশী

 

 

অবিনশ্বর অবিনাশী

 

অনেক অনেক রোদ ফুলকি মেখে,

দুব্বার বুকে জেগেছে প্রত্যয়।

এই সবুজের অন্তর থেকে, প্রাণ

আর কখনো বিনাশ হবার নয়।

 

যে রাত ভরে তারারা মরতে থাকে,

আলো রেখে যায় আলোকবর্ষ জুড়ে।

প্রাণ রয়ে যায় সেখানেও জেনো প্রিয়ে

ছুঁয়ে দেখে নিও কণা কণা আলো খুঁড়ে।

 

তোমার আমার বিচ্ছেদ কোলাহলে

শয্যা জুড়ে বিদায়ের অভিশাপ।

কিন্তু তবু জানি আমি জানি প্রিয়ে,

যুগল বীণায় বাজেনি এখনো পাপ।

 

শরীরকণায় মনের বাতাস যদি,

দিক বদলের পথটি ধরে রোজ।

তবুও তোমার মুখটি তুলে ধরে

অজুহাতের ঠিকানা করিনা খোঁজ।

 

এই যে আলো কণা কণা রোদ মেখে

চোখের পাতায় রামধনু যায় এঁকে।

সেই রঙটুকু; এসো তুমি, দুজনায়।

নাহয় দুজনে একলাই নিই ছেঁকে।

 

(৩০/০৫/১২)

 

অভিমান

 

 

অভিমান

 

সমুদ্র নেমেছে তোমার নিমগ্ন আঁচলে।

সারাদিন সূর্য পোড়া ছাই ঘেঁটে

 ক্লান্ত ঢেউগুলি এলোমেলো শব্দ বিন্যাস  ছেড়ে

ভোরের কোকিলের মতো ছুঁয়ে যেতে চায় তোমাকেই

 

গৃহিনীর নরম চলনে সন্ধ্যা নেমে এলে তুলসী প্রদীপে-

দিগন্ত রেখার মতোন যাদের হারিয়ে যেতে চায় মন

তাদের মতোই ঢেউগুলি খেলা করে তোমার চারধারে।

 

ঘূর্নায়মান ইতিহাসের মুদ্রাদোষের মতন

তুমিও কি পোশাক পড়ে নেবে যত্র তত্র,

অসময়ে অসঙ্কচ বিহল্বতায়,

 কিংবা সন্দিগ্ধ বৈদগ্ধের অভিজ্ঞতায়- দৈনন্দিন?

 

মুহুর্ত্তের মহাভারত এই সমুদ্রের মতোন সব ঢেউ ধুয়ে নিয়ে

লবণাক্ত হলে, আসমুদ্র জলকণা তোমায় সিক্ত হতে চায়,

একবার দুইবার, তারপর কেঁদে ফেলে হঠাৎ হঠাৎ।

 

তোমার পায়ের তলায় মানুষের মতো যত পিছুটান,

অনন্ত এই জলনাশি তত যেন বেশি করে ছুটে আসে

তোমার বুকের কাছাকাছি, বাছবিচার না মেনে দৈনন্দিন।

 

স্মৃতির দোলনকে উপেক্ষা করে ভালোবাসা

প্রেম সঙ্গমের নিখুঁত সময়,

যৌবননৃত্যতটে দীপাবলি জ্বেলেছে দেখ,

তথাপি কি ফিরে যেতে চাও তমিস্রার পারে, দৈনন্দিন!

 

(১৮-০৯-১৪)

অভিমানে নষ্ট সময়

 

 

অভিমানে নষ্ট সময়

 

অভিমানে নষ্ট সময়

আয়ু ভেঙ্গে ভেঙ্গে জল হয় মাথার ঘাম

হতবাক পায়ে।

বলির পাঁঠার মতো ভালোবাসা

কুপোকাৎ প্রেমে।

হাঁটা পথে পায়ের নীচে দুলে ওঠে

প্রত্যয়ী সেতু।

বরাভয় নেই আজ আর।

মরচে পড়া বিশ্বাসের ভিতে আশ্বাস

ভাঁড় হয়ে হাসে।

ওগো মেয়ে,

প্রসূতি সদন থেকে বুকের দুধে-

যে শিশু হামাগুড়ি দিয়ে

একবার দাঁড়িয়ে ওঠে।

সেও যেন

হাতের রেখায়-- অবচেতনে

বারবার বারবার কেঁপে কেঁপে ওঠে।

 

গলাজলে ডুবে আছি অভিমানী বিষে।

রোদ্দুরে ওম নেই আর।

জ্যোৎস্নায় আলো।  তৃষ্ণার্ত মরিচিকা

আশেপাশে থাকে।

নীলকণ্ঠের দেখা নেই।

লজ্জিত বিবেকের নড়বড়ে ভিতে:

সেও যেন ম্রিয়মান

সময়ের দাবি মেনে নিতে।

 

(১৫/০৪/১২)

অভিসার

 

 

অভিসার

 

মনদূর্বার ঘরে শিশিরবিন্দুর মিছিল, যৌথরাত

প্রাত্যহিক গঙ্গাস্নানের মন্ত্র নিয়ে

ঘড়িতে দম দিচ্ছে আজকাল।

কানাঘুষায় গুজবের পাখা ওড়ে যদি

পরচর্চার সরস পরিসরে,

তবুও এসময়ে চক্ষুলজ্জায় কাটছাঁট করাই ভালো।

ম্রিয়মান সংবাদ শিরোনামে নয়,

বিতর্ক মুখে ওড়া যাক ফ্ল্যাশ লাইটের জৌলুসে।

সবুজ পৃথিবী অবুঝ তো নয়।

মানুষের ঘরবাড়ি রিপুর সংসারেই শুধু

মনু, থেকে থেকে থেকে সংহিতা আওরান।

শ্রাবণসন্ধ্যার আসরে পলাশবাসর

কৃষ্ণচূড়া রক্তিম করে দিলে দিক।

মাঝরাত ভরে অমাবস্যা না-হয় পাহারাই দেবে।

ঠিক। তোমার গোপন উষ্ণতার কৌটোয়

আমার স্বাক্ষর ধরা থাক, আকাশের উদাসীন নীলে

সমুদ্রের সফেন স্বাক্ষরের মতোন।

তারপর: কাল কি হবে, না হবে, দেখা যাক।

 

(১৬/০৫/১৩)

 

অভ্যর্থনা

 

 

অভ্যর্থনা

 

একরাশ উত্তেজনার নিকষ কালো রাত নিয়ে

তোমার দরজায় পা রেখেছি।

তোমার অবকাশ নেই বলবে।

হৃদয়ে অন্য পুরুষ ঘর বেঁধেছে

ভালোবাসা প্রেমের ককটেলে।

রোজকার ব্যবহারে সূক্ষ্ম লগ্নগুলির মোচোড়ে দেখো

আর সে বিস্ময় নিয়ে উকিঁ দেয় না ভোরের সকাল।

সূর্যগলা সান্ধ্যবাসরে তোমার মুদ্রায় কই সেই ঢেউ।

শরীরপ্লাবী অনাদী অতীতের

সাত সমুদ্র তেরো নদীর জোয়ারে

আর তো ভেজে না যৌবন তট।

তবু তোমার একবর্ণ দিনে

রামধনু অর্ডার দিয়ে যে অপেক্ষা তোমার।

দেউলিয়া আটপৌরে সাজে শরীর জুড়োনো

এক ভূবন রঙ নিয়ে দেখ আমি তোমারই দূয়ারে।

 

আমিও তোমারই মতো। শুধু...

ফুরিয়ে ফুরিয়ে এসেও শরীরের ভাটায়

উজান ঠেলেছি নতুন সহযাত্রিকের অভ্যর্থনায়।

তুমিও এসো।

 

(২৬/১০/১২)

অমলকান্তিফুল

 

 

অমলকান্তিফুল

 

ঝুরঝুরে রাশিফলের কোলে সূর্যাস্তের সাথে

দুদণ্ড সুখটান দিতে চেয়ে-আমলকি বিতানে

ঝুলিয়ে এসেছি নিরালা হৃদয়।

নিরালানীলে জড়িয়ে রেখেছি উষ্ণ কুসুম।

বিশ্বাসভঙ্গের প্রাক মুহূর্তে।

উজ্জ্বল চুম্বনের ভারতনাট্যমে

লাবণ্যপ্রভার কথাকলি,

মালকোষের বৃষ্টিবিন্দুর ভিতর

হয়ত এঁকে যাবে নতুন কোন প্রভাত।

তখন সেই প্রভাতে নেই আমি।

পাতালপুরীর সমাবর্তনে একরাশ ক্ষোভ জমে

প্রতিরোধ হলে লাবণ্যপ্রভা গর্ভবতী হইও।

আমলকি বিতানে অমলকান্তির স্বপ্নরঙিন তাঁতে

তোমার নামে প্রভাত ফুটবে একদিন।

তোমার নাভিকুণ্ডের ওমে লংমার্চের পদধ্বনি শুনে

বাংলায় রাত নামুক। অমলকান্তি

ফুল হয়ে ছেয়ে যাক সবুজ বাংলা।

লাবণ্যপ্রভার নুপুরছন্দে ধুয়ে যাক রাশিফল।

 

(০৩/১২/১২)

 

অমৃতকুম্ভের সন্ধানে

 

 

অমৃতকুম্ভের সন্ধানে

 

বিষাক্ত নদীর ঢেউ ভেঙ্গে আহত পথে

নারীর কাছে এসেছি

অমৃতকুম্ভের সন্ধানে।

এখানে আসমুদ্রহিমাচল ষড়ঋতুর আবর্তন।

শষ্যমুখ পৃথিবীর বয়সিনীর  মতো হৃদয়ের সবুজে

কেবলই প্রেমের পলাশ দোলে।

কৃষ্ণচুড়া আদর দুহাত বাড়ালে

সকালের রোদ

আজও সহাস্যে কথা বলে।

এখানে সান্ধ্য জলসার আসরে

ঊর্বসীর বিভঙ্গে মহাকাব্য।

মৃদঙ্গে নোবেল শান্তির বার্তা।

নূপুরের তালে সমস্ত মিছিলের ইতিহাস

সংগ্রামের আলপনা হয়ে ফোটে।

এখানে প্রতিশ্রুতির ভোকাট্টা ঘুড়িটা

ব্যাথা আর উপশমের পার্থক্য বুঝতে পারে।

এখানে ক্রুশবিদ্ধ যীশু বিমুগ্ধ আন্তরিক সংলাপে।

শিশুর সহজপাঠ থেকে

সংবিধানের ধারা

নারীর ওমে ভিজিয়ে নিলে

এখনো বলা যায়, তুমি সুন্দর। আমি ভালোবাসি।

 

(৩১/০৫/১৩)

 

অযান্ত্রিক নয়

 

 

অযান্ত্রিক নয়

 

সঙ্গমের সময় আসলে যেমন হয়

তেমনই তিরতির কাঁপে ঘড়ির কাঁটা।

জংশনে দাঁড়ানো ট্রেনের মত

সিগন্যাল সংকেতে ব্যস্ত হুইসেল।

 

কোহিনুরের খোঁজে প্রেমিক শরীর

ঝাঁপ দিতে চেয়ে অন্ধকারে

আগে প্রেমের কাব্যে কলম চালিয়ে নেয়।

হয়তো বিস্ময়ের ঘুড়িটা ভোকাট্টা এ সময়ের বনেদি মেধায়।

 

সকালের ব্যস্ততার মত

রাতক্লান্ত চেনা সময়ের সাজানো সংলাপ-

বসন্তের রঙিন ফাগে হেমন্তের

অভিজ্ঞ প্রলেপ যেন।

 

মরে হেজে যাওয়া তারার আলোর মত

বিন্দু বিন্দু ভালোবাসায় প্লাবনের ঠিকানা

লেখা থাকে না তাই।

কিছুটা জলমগ্ন হয় আধুনিক রতি।

 

নিস্পৃহ জোয়ার ভাটার তত্ত্বে আধুনিক মলাটে

যন্ত্রীর আঙ্গুল নাচে যন্ত্রের তালে।

ওদিকে পুর্বপুরুষরা

ব্যাস্ত তখন যৌবন জোয়ারে।

অরুপরতন আশা করে

 

 

অরুপরতন আশা করে

 

কোথায় পাবো তারে বলে

ক্ষাপা খুঁজে ফিরেছে অরূপরতন

 ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার সব মননে

ঝকঝকে হাই প্রোফাইল থেকে আটপৌর ভ্যানিটিতে

তবুও এক আকাশ আকাঙ্খার তিমিরে

এক গণ্ডুষ আলোও পড়ে নি

কোনোদিন কোথাও কোনোভাবে

সকালের আজান থেকে সন্ধ্যাহ্নিকের কোষাকুষি

এক ঝিনুক শান্তিই কি দিল?

সব মন্ত্র বিফলে গেলে তখনোই এঁকে নেওয়া ভালো ঈশ্বর

নয়তো মানব জন্ম

কেবলই শারীরীক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া

 আড়ালে আবডালে

 

তাই অবগুণ্ঠন খোলার সময় এবার এল

 অপ্রসন্ন মুখটি তোমার তোল

এসো, ভেবে নেওয়া যাক বরং: সেটাই অনেক ভালো-

এ মায়া প্রপঞ্চক বড়ো

ছল করে সখী জল এনে সারা ঘড়া ভল না তবু

তবু এ বাঁশি যে শুনেছে

সেই খুঁজেছে অরূপরতন

আর জীবনের মানে

 

(১১/০৯/১২)

অলিন্দ নিলয়ে

 

 

অলিন্দ নিলয়ে

 

বৃক্ষস্তনী যোনীপল্লবে  ঋষিকুমারদের স্তব

প্রথম সূর্য উস্কে দিলে,

প্রেমের প্রদীপ জুড়ে, বাৎসায়ন।

 

পূর্ণিমার ভরা আহ্লাদে

সঙ্গমসমীর জুড়ে নিরন্তর গর্ভারতি-

ইতিহাস জুড়ে পাতা ওল্টালে, ভোর।

 

বৃক্ষ থেকে নদী প্রবাহের মন্ত্রণায়

সমস্ত ঢেউয়ের কোটরে সাঁতার দিলে,

দূর্বা ঘাসের মতো নরম, হৃদয়।

 

সমুদ্রনীল সন্ধ্যায়

নোনা জল ভেঙ্গে প্রথম ডাঙায় উঠে এলে,

বাংলার সবুজ তাঁতে তুমি, নারী।

 

বিদ্যাপতির পদ থেকে

সুনীল শক্তির কলমের  আঁচড়ে বিবসনা প্রেম

কবিতার শিখা জ্বেলে দিলে, তুমি আমার।

 

আজকের কবিতার আসরে

পুরস্কারের মেঠো পথ পেড়িয়ে  তোমার চুম্বন পেলে,

কুরুক্ষেত্র থেকে মহাপ্রস্থানের পথ- আমিও বাঁধিয়ে দিতে পারি

 

অলিন্দ নিলয়ে।

 

(২৪/০৯/১৩)

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন