আমার দেশ

 


আমার দেশ

 

এখানে মাইলের পর মাইল সবুজ পায়ের ছাপ

গৃহিনীর নরম আঁচলের মতো

শুশ্রূষা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন

শেষ বিকেলের ট্রেনের মতো বাড়ী ফেরার অপেক্ষায়

 

এখানে দেওয়ালের পর দেওয়াল নতমুখী সকাল

শীতে জুবুথুবু রোদের মতো

কীটদস্ট মানচিত্র বিছিয়ে স্তম্ভিত

শহীদমিনারের মতো লড়াইয়ের অপেক্ষায়

 

এখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী বিবস্ত্র লাশের মিছিল

শীর্ণ নদীর মতো দিগভ্রান্ত

সোনালি রুপালী স্বপ্নের ভাঙ্গা মাস্তুল যেন

শেষ প্রহরের দিগন্তের মতো একটা সকালের অপেক্ষায়

 

ওখানে ধর্ষিত যোনির শপথে সবুজ পতাকা

শহীদের উষ্ণ রক্তের মতো লাল

টুপ টুপ স্বপ্নে মশগুল স্বাধীন বর্ণমালা যেন

নিঃশ্বাসে বিশ্বাস ছড়িয়ে বসে আছে

 

ওখানে পরিযায়ী পাখিরা আসে ডানায় পসরা নিয়ে

অভিভাবকের ছেলে ভুলান‌ো ছড়ার মতো

বাণিজ্যের মকশো করে ইয়ার দোস্ত যেন

বড়শিতে চাড় দিয়ে সজাগ বসে আছে

 

ওখানে শহীদের হাইওয়ে জুড়ে হাইজ্যাকারদের কুচকাওয়াজ

সাধু সন্ত ফেরেস্তার মতো

ধর্মগ্রন্থ আউরায় স্বর্গেভ্রষ্ট দেবদূত যেন

মানচিত্র জুড়ে তা দিতে বসে আছে

 

আমাদের দিনের এজলাসে এখনো কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে যাঁরা

কিংবা দাঁড়াবে আর যাঁরা পালিয়ে গিয়েছে বুদ্ধিমনের মতো

তাঁদের কারুর মতো নয় আমাদের এ হৃদয় জানি

তবু বাংলার ক্যালেণ্ডার জুড়ে দেশপ্রেমিক খুঁজেছি আমি

 

সকালের খবরের কাগজে রোজকার স্কুলে কলেজে

রাস্তা জ্যাম দলীয় মিছিলে বন্ধুর- ‘পিঠে হাত রাখা হাতে’

প্রেমিকার লিপিস্টিক চুমু আর প্রেমিকের হাতখরচে

পূর্বপুরুষের বীর্য থেকে নতুন প্রজন্মের গর্ভে

 

শান্ত বিকেল নামে অশান্ত ইতিহাস জুড়ে

কপট শান্তির বাণী দিকে দিগন্তে

নেতাদের হাতযশ আর রঙিন বিশ্বাসের ঘোরে

নেশাতুর আমি ও আমরা আমাদের মতন যারা সবুজ প্রান্তরে

 

১৬ই ডিসেম্বর ২০১৬

আর একদিন!

 

 

আর একদিন!

 

আর একদিন ফিরে আসি যদি তোমার চৌকাঠে-

বয়সসন্ধির গন্ধ মাখা বুকে

সমস্ত বিষন্নতা আমার শুষে নিতে পারো যদি,

সকালের বিশুদ্ধ রোদের মতো।

 

আর একদিন নবান্নের আঘ্রাণের মতো

তোমার আদর নির্জন হেমন্তের সন্ধ্যায়

ছুঁয়ে দিয়ে যেত যদি, আমার -

অক্ষর বৃত্তান্তের এলোমেলো ডানা।

 

সমস্ত নগরীর পিলসুজ গড়িয়ে মানুষ ও মৃত্যুর

মন্থনের মতো তোমার বিদগ্ধ বৈভবে

সবুজের আস্বাদ নিতে ফিরে আসি যদি-

পরিযায়ী পাখির মতো আর একদিন!

 

ঘর গেরোস্থলীর নোনো জলে মাৎসর্য  ধুয়ে নিয়ে

তথাগতর মেঠো পথ ধরে ফিরতে পারতাম যদি!

শিশিরের মতো নিরুদ্বিগ্ন স্বাক্ষরে টুপ টুপ

তোমার বুকের উপর- আর একদিন!

 

আশ্রয়

 


আশ্রয়

 

সবাই ঘুমিয়ে আছে নিজের মানুষের পাশে

রমনীয় মধ্যরাতের বেদীতে

স্বপ্নের রঙ যেমনই হোক, আদরের রঙ আশ্রয়

ভালোবাসার পাতা উল্টাতে উল্টাতে

সাধ সাধনার আলপনায় উচ্ছসিত অনুরাগে

পরস্পর মেঘ বৃষ্টি রোদ

 

মধ্যরাতের ভরা যৌবন রাত

তারায় তারায় রাত ঝিকমিক আকাশের উৎসব

ছায়াপথের প্রান্তে দাঁড়িয়ে মহাকাল

শিশিরের মতো নিঃশব্দে অনুভব করে

পৃথিবীর আঘ্রাণ। ঘরে ঘরে মিলনের উৎসবে

আশ্রয়ের রঙে ভিজে ওঠে টুপটাপ আদরের সন্তাপ

 

তুমিও হয়তো ঘুমে, নাকি রাতজাগা পাখির

মতো অস্থির চোখে খুঁজেছো আমায়?

এই রাত বড়ো বেশি মোহময় সোনা

স্বপ্নের অক্ষরে কবিতা হয়ে উঠতে চায়

হয়তো কোনদিন মধ্যরাতের খরায়

তুমি আমি পরস্পর দেখা পাবো নিজেদের……

 

২৭শে মাঘ ১৪২৫

ইচ্ছাপত্র

 

 

ইচ্ছাপত্র

 

যে ব্যালট লুঠ হলো আজ বুথে

তার ক্ষোভে টের পেলাম;

গণতন্ত্রের মুখাগ্নি চলেছে এ ভোটে,

নতুন জামানার দরবারে নাই ব্যালটের অধিকার

ছাপ্পা আর ধাপ্পার সুতীব্র শীৎকারে!

ক্ষমতার হাতিয়ার, গুলি বোমা বন্দুকের নল

উন্মত্ত, উদ্ধত

কী এক দুর্বৃত্ত প্রত্যয়!

সে ভাষায় জড়ো হয় ফেউ

কেউ ল্যাজ নাড়ে, কেউ ভিড়ে যায় ভিড়ে।

জানি যারা আজ বুঝে চলে সময়ের ভাষা

পেয়েছে নতুন বরাভয় দুঃশাসনের মুখের-

তাদের কথাই শেষ কথা

সুস্পষ্ট হুংকারে মদমত্ত চোখে।

নেমেছে অন্ধকার আজ, তবে কি ছেড়ে দিতে হবে স্থান:

বিবস্ত্র মতবাদের ভাঙা সিঁড়িতে, সমস্ত ব্যর্থতার ধ্বংসস্তূপ –পিঠে

চলে যেতে হবে কি আমাদের?

লড়ে যাবো- তবু আজও যতটুকু বেঁচে আছে মান

প্রাণপণে প্রতিবাদে ভরাবো দেওয়াল,

এ সত্যকে, এ সময়ের প্রতিপাদ্য ক’রে যাবো আমি-

নরখাদকদের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে অনন্ত ধিক্কার।

অবশেষে কচুকাটা করে

আমার দেহের রক্তে এ মাটিকে ধুয়ে

অন্ধকার করে যাব বরবাদ

তারপর বদলাক ইতিহাস।।

 

২৫শে মে ২০১৮

 

ইতিহাসের পাতা থেকে

 

 

ইতিহাসের পাতা থেকে

 

জলপাই রঙের মিথ্যেকে সাক্ষী করে

তোমার নরম বুকে

আদরের ওম মেখে বসে আছি হে

    -কবে ফুটবে বিশল্যকরণী

কাস্তে নয় হাতুরী নয়, নয় বিপিও’র মাউস আর কীবোর্ড

বোর্ড অফ ডিরেকটর্সের ডিসকোর্সে

প্রতিটি ঘামের ব্যালেন্সশীট দেখো

লজ্জা পাবে গৌতম বুদ্ধ থেকে যীশু

দাস ক্যাপিটাল থেকে গীতাঞ্জলীর অস্তিত্ব বিরহ

 

তারপর অসংখ্য স্বপ্নের ভাঙা সিঁড়ি মাড়িয়ে

ইতিহাসের পাতা উল্টাবে

পাতার পর পাতা গল্পগুলো মিলে যাবে

মানুষের মিছিলে হাত নেড়ে যাবে

ঠগ জোচ্চর আর বিশুদ্ধ বেনেরা

ঈশ্বরযোনির মতো একা

 

 

ঈশ্বরযোনির মতো একা

 

বর্ণমালা ভেঙ্গে ভেঙ্গে সমস্ত বর্ণিল স্বপ্নচুর্ণ

বুকে নিয়ে এইখানে, এই ভাবে শুয়ে থাকা

 

মৃত নারীর ঠোঁটে অমৃতপানে উৎসুক ভিড়

থিকথিক কোলাহলে ভীষণই ব্যস্ত চতুর্দিক

 

পাণ্ডুলিপির পাণ্ডুর অক্ষরগুলি খালি পায়ে

বিবস্ত্র মিছিলে ধর্মগ্রন্থের পাতায় পাতায়

 

ঘুম নেই চোখের পাতা পুড়িয়ে জেগে থাকা

ঈশ্বরযোনির মতো একা সম্বলহীন এবং অপূর্ণ

 

১৬ই আশ্বিন’ ১৪২৫

উৎসব

 

 

উৎসব

 

না আর কোন ভয় নেই

যেটুকু শেকড় ছিল পিতৃপুরুষের

কিংবা ভিটের, লক্ষ্মীর পাঁচালী

মনসার ভাসান গাজনের নাচ

 

একুশ শতকের মেমরি-চিপে

সেসব কিছু নাই, নাই কোন আঁচ

পেতলের ঘড়া মাটির সড়া

পৌষপার্বণের পিঠের ছাঁচ

 

ডিজিটাল সময়ের খাপে খাপ

খাইয়ে নিতে নিয়ত দৌড়াই

ল্যাং মারি, খাইও যখন তখন

জীবনেরই চড়াই উতরাই

 

চেয়ারের জোর কিছুটা হাতযশ

সাদা টাকা কালো টাকার সিন্দুক

লাইট ক্যামেরা সাউণ্ড

আমরাও বাইট দিতে উৎসুক

 

ভাদ্রের পঞ্চম দিবস’ ১৪২৫

উত্তাপ


 

উত্তাপ

 

শাদা পাতার কালো কালিতে

নিজেকে লিখতে বসে

ইহজন্ম পরজন্ম সব একাকার

 

শিকড়বাকড়ের ঘুণে সময়ের দাগ

যদিও রাজনৈতিক নয়

তবুও ক্ষোভের বারুদ আছে

 

মনে করে দেখেছি

মহাপুরুষের বাণীর মতো

রোজকার জীবন নয়

 

গুটিকয়েক প্রশ্নের উত্তর পেতেই

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়

তারপর কুলোর বাতাস শুধু

 

শিরায় শিরায় তবু এই গ্লানি

অবসাদ আগুনের শিখার মতো

অঙ্গারের অক্ষর কয়টি গড়াতে থাকে নীচে

 

১৪ই আগস্ট’ ২০১৮

ঊরুসন্ধির নৃত্য

 

 

ঊরুসন্ধির নৃত্য

 

গভীর রাত

রাতের গল্পে তখন ঊরুসন্ধির নৃত্য

টুপটাপ ঘামের আলাপ

শব্দের মিছিল জুড়ে

তৃপ্তির রুটমার্চ

বাকি সব, সবকিছু কার্ফিউর আড়ালে

স্তব্ধ নিস্তবদ্ধ নির্বাক নিশ্চুপ

নিষ্পলক রাত জানলায় উঁকি দিতে ব্যস্ত

তখন

 

তখনই গল্পের শুরু

চোখের গভীরে যে প্রত্যয় ছিল

থাকে কিংবা থাকা দরকার

বুকের অন্তরালে বিশ্বাসের স্থিরভূমি

সেসব, সেসবই ছিল

যথাযথ। যেমনটা থাকে প্রাথমিক

রোজকার অভ্যস্থ রুটিন

কিন্তু

 

এ গল্পের ভাঁজে ভাঁজে

যথোচিত নিশ্চয়তা নাই কোন

কোথাকার ঝড় কখন উঠবে কোথায়

কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে

জানা থাকার কথাও নয়

থাকে না তাই

গল্পের মোড় সেইখানেই

 

সেখানে ঝটিকা সফরে

উদবৃত্ত প্রেম ভালোবাসার বর্ণমালা

অনাহুত, তবুও বাহির দ্বারে- কেননা

অভ্যস্থ রুটিন বিন্যস্ত সময়

বিবস্ত্র রাত পাশ ফেরে কাজ হয়ে গেলে

সকালের এলার্ম দেওয়া ঘড়িতে

 

এই ঘড়ি। ঘড়িই কাল

যে কোন বিন্দুতেই চক্রবৎ

গল্পের প্লট বাঁধা গরুর মতোই

জাবর কাটে। সুস্থির সময় অস্থির

গ্রন্থির সীমানায় ঘাই মারে

 

টলমল রাত অশান্ত প্রভাত

আলাপের তাল কেটে

সংলাপের তি প্রলাপের তীরে

তিরতির করে ছুটে চলে

 

এখানেই গল্পের পরিসমাপ্তি

হলে ভালো ভালো হোক মন্দ হোক

তবু কথা রয়ে যায়

 

গভীর রাত রাতের কালো চোখ

আলো আরও আলো চায় কি?

 

কি বলে মানুষ? ঊরুসন্ধির নৃত্যে

এই প্রেম এই ভালোবাসা

 

 

এই প্রেম এই ভালোবাসা

 

সব ক্লান্তির শেষে মৃত্যুই অপেক্ষা করে

একান্ত প্রেমিকার মতো

অনন্ত ধৈর্য্যের সহন শক্তিতে

 

এই সকাল এই সন্ধ্যার

আলো আঁধারীর মায়া ছেড়ে

স্নেহ প্রীতির বন্ধন কেটে

 

তবু তো একদিন ভোরের বার্তার মতো

টাটকা সজীব অনন্ত সময়ের হাত ধরে

মৃত্যুর জয়পতাকা ওড়ে

 

এই প্রেম এই ভালোবাসা

মৃত্যুর আয়তো দুই চোখে

তৃতীয় নয়নের আলো জ্বালে

 

জীবনের সব গ্লানি ক্ষোভ ধুয়ে নিয়ে

সমাপ্তির সানাই বাজে

মৃত্যুর মতো অনন্ত আশ্রয়ে

 

শ্রাবণের  ১৫’ ১৪২৫

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন