সময়ের ক্ষত

 

 

 

সময়ের ক্ষত

 

মৃত হাড়গোড় নিয়ে সময়ের ক্ষত

মাটি পাথরের বুকে, ক্ষোভ লালসা

বারুদের গন্ধ সব জমা করা আছে

 

ক্রমাগত মিথ্যের আঁচড় বুকে নিয়ে

দাঁড়িয়ে থাকে শপথের অক্ষর, শব্দ-

মালা, ফাঁপা প্রত্যয় আর অভিসন্ধি

 

আমি দেখেছি কিভাবে ইতিহাসের

পাতা জুড়ে, ভুল আর ভুলের পাহাড়

একই নাটক মঞ্চস্থ হয় প্রতিদিন

 

যতদূর চোখ যায়, চতুর্দিক জুড়েই

যতদূর যায় না দেখা, তারও বেশি

এক পৃথিবী পাপের পূর্ণ ঘড়ায় –

 

পুণ্যের নকশীকাঁথা বোনা হয় যত্নে

প্রযত্নে সুশীলসমাজ বুদ্ধিজীবী মোহন্ত

মুখ আর মুখোশ এক হয়ে যায়, ক্রমে

 

৬ই সেপটেম্বর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

 

মড়ক

 

 

 

মড়ক

 

ছাই চাপা দিতে দিতে দেখি

খসে পড়ে লজ্জার আবরণ

ধামাচাপা দেওয়া অধ্যায়গুলি

দুর্গন্ধ ছড়ায় মড়কের

 

ভোকাট্টা ঘুড়ির সুতোর মতো

আত্মসম্মান ধুলায় লুটালে

ঘুণ ধরা কাঠের মতো অট্টহাস্য

আনন্দ করে নেয় বিরোধী শিবির

 

সব অক্ষর ম্লান হয়ে গেলে

ভিড় পাতলা হয় দিনে দিনে

উদাসীন সময় সরণীতে

ইতিহাস পাতা উল্টিয়ে নেয় ধীরে

 

৪ঠা সেপটেম্বর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

এই আমি

 

 

 

এই আমি

 

স্বপ্নের ইতিবৃত্ত ঘিরে রাখে

আকাঙ্খার বনেদি চৌকাঠ

শতাব্দীর পাকদণ্ডি বেয়ে বেয়ে

দোতারার সুর ঝংকারের নদী’র মত

এই আমি, পাপ নয় পুণ্য নয়

ইতিহাসের শাদা পাতা জুড়ে

স্বপ্ন থেকে স্বপ্নের ভিতরে

আকাঙ্খার বনেদি চৌকাঠে

 

সময়ের বালুতটে নির্জন রাত নামে

উদাসীন ঈশ্বরের মতো নিষ্পলক

এই পৃথিবী, কিংবা আরও দূর

সময়ের পিছনে এগিয়ে গেলে

এই আমি, স্বপ্ন থেকে স্বপ্নের ভিতরে

আকাঙ্খার বনেদি চৌকাঠে…

 

৩রা সেপটেম্বর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

রেলিং

 

 

 

রেলিং

 

দুই চোখে ঘুম লেগে রয়েছে…

যাপিত জীবন জুড়ে

টলমল সাঁকোর রেলিঙ ধরে

হেঁটে যাই। আমিও বকিদের মতো

চোখ বুঁজে জানি

কোন দিকে হেঁটে যেতে হবে কতখানি

তারপরে সরকারী বেতার ভাষণে

দেশপ্রেমের পাঠ নিতে নিতে

একদিন ইহকালের শেষ চৌকাঠে

বেহেড মাতালের মতো

নিশ্চিন্তের একটানা ঘুমে পড়ে থাকা

যে ঘুম ভাঙ্গে না কখনো!

 

দুই চোখে ঘুম লেগে রয়েছে…

যাপিত জীবন জুড়ে, এই ভালো

রেলিং ধরে হেঁটে যাওয়া শুধু

টলমলে সাঁকোর উপরে

 

২রা সেপটেম্বর’ ২০২২

©শ্রীশুভ্র

 

আত্মজৈবনিক ২


  

 

আত্মজৈবনিক ২

 

আমি ঈশ্বরের কথা ভাবি না

তার ঘেকে ভালো পেট ভরা সাদা ভাত,

নামাজ দোয়া, সন্ধ্যাহ্ণিক জানি না

খাদ্যের সন্ধানে আয়ু ফুরিয়ে যায়

গীতা বাইবেল কোরান ত্রিপিটক

আপাতত কুলুঙ্গিতে তোলা থাক

মৃত্যুর পর, অখণ্ড অবসরে

ধর্মের কথা নিশ্চিন্তে পড়া যাবে

 

আমি ঈশ্বরের কথা ভাবি না

তার থেকে ভালো প্রেমিকার হাসি মুখ

নামাজ দোয়া সন্ধ্যাহ্ণিক জানি না

মধ্যরাতের মিলনেই পাই সুখ

 

২রা সেপটেম্বর ২০২২

© শ্রীশুভ্র

 

 

 

আঘ্রাণ

 

 

 

আঘ্রাণ

 

নারীর গন্ধে ভরপুর সন্ধ্যা

তুলসী প্রদীপ থেকে

বলড্যান্সের ফ্লোর,

 

বিজ্ঞাপন আর হলিউড

হরিপদ কেরানীর বৌ

কিংবা প্রিন্সেস ডায়না

 

গন্ধবিধুর সমীরণে

কবিতার অক্ষর কিংবা

দলিলের স্বাক্ষরে

 

পুরুষ তার লেখে নাম

বীর্য পতনের শব্দ, কিংবা

কালের কপোলতলে

 

শুভ্র সমুজ্জ্বল তাজমহল

নারীর গন্ধে ভরপুর

স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যত

 

আর আদরের ধুম!

 

১১ই নভেম্বর’ ২০২১

©শ্রীশুভ্র

 

পতাকার মাপে

 

 

পতাকার মাপে

 

কিছুটা অন্ধকার খুঁড়ে নিলে

আলোর ফুলকিগুলো -

চাপা দেওয়ার কাজ

অনেক সহজ

 

যতদূর চোখ যায়

ততদূর বশ্য মানুষ

বারুদের গন্ধ নাকে এলে

মন্দিরের ঘন্টায় কাজ হয়ে যায়

 

ঈশ্বরের মর্জি ভালো

দর্জির কাজটা শাসকের হাতে

পতাকার মাপে  জনশক্তি

নিয়ন্ত্রণে থাকে

 

জন্মের ব্যাকরণ মেনে

আমি তুমি, আমাদের পোশাকে

কতই আর ভিন্ন হব, তাই

মুখ দেখি পরস্পরের মুখে

 

৭ই নভেম্বর’ ২০২১

©শ্রীশুভ্র

 

 

 

 

প্রস্তুতি

 

 

 

প্রস্তুতি

       

ইহলোক ত্যাগের সময় হয়েছে

যদিও পরলোকের টিকিট

কনফার্ম হয়নি এখনো

ওয়েটিং লিস্টে রয়েছি

 

যাবার তাড়ায় ব্যস্ত,

গোছগাছে সময় কাটাই

দরকারি থেকে প্রিয়

জিনিসপত্তর আর স্মৃতির ভাঁড়ার

 

যা কিছু পৈতৃক, যৌতুকে পাওয়া

অর্জিত মাথার ঘামে, বাঁকা পথে

স্বাক্ষরিত দলিলের শেষ পাতায়

মোহভঙ্গ হয়নি এখনো

 

১১ই নভেম্বর’ ২০২১

©শ্রীশুভ্র

 

 

বিদগ্ধ পায়ে’র সরণীতে

 

 

 

বিদগ্ধ পায়ে’র সরণীতে

 

ভীষণ রকম শুকিয়ে গিয়েছেন

চিনতেই পারিনি প্রথমে

শুকনো মুখ, ফাকাশে চাহনী

 

এলোমেলো আঁচলে বিহ্বল সংলাপ

ধামাচাপা দেওয়া স্মৃতির ভ্যাপসা গন্ধ

বুকে নিয়ে, সন্ত্রস্ত পা ফেলে ফেলে

 

কোথায় চললেন? এদিকেই কোথাও?

কাছে পিঠে কারুর কাছে?

না’কি নিজেকে খুঁজতেই বেড়িয়েছেন

 

সাতজন্মের দেনা শোধ করে

অবশেষে, পুরুষের গন্ধ শুঁকে শুঁকে

বিদগ্ধ পায়ে’র সরণীতে ……

 

১১ই নভেম্বর’ ২০২১

©শ্রীশুভ্র

 

 

মধ্যরাতের সিম্ফনী

 

 

 

মধ্যরাতের সিম্ফনী

 

পরিত্যক্ত এই মন,

ভাঙা কুলোর মতোন যেন

উদোম আকাঙ্খাগুলো

বেআব্রু দৃশ্যের মতোন

বিসদৃশ সময় রচনা করতে থাকে

অপ্রসন্ন বিকেলের মেঘের মতোন

মুখ কালো করে বসে রয়েছি

নিভৃত সংলাপের সময় এখন নয়

দীর্ঘায়িত বেদনার নিশ্ছিদ্র নৌকা

ভবঘুরেদের মতো কাণ্ডজ্ঞানহীন

মাঝ দরিয়ায় ঘুরপাক খায়

মাঝরাতের ছায়াদের পায়চারির শব্দে

ঘুম ভেঙে গেলে, মন খুলে কথা বলা যায়

আসর জমে ওঠে উত্তরপুরুষ পূর্বপুরুষে

 

১১ই নভেম্বর’ ২০২১

©শ্রীশুভ্র

 

 

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন