শেষ চিঠি কবিকে

শেষ চিঠি কবিকে 


মায়ার প্রবাহে ছায়ার মতন যুগযন্ত্রণা বিড়ম্বিত

লুপ্ত চেতনার বিবেকী হাহাকার সংবৃত বিশ্বায়নে

নির্বাকের ভাষায় লেগেছে কর্পোরেট কপিরাইটের মাশুল

চিত্রবিচিত্র পতাকার রঙে লক্ষণরেখা টেনে

উদ্বৃত্ত সঞ্চয়ে চৌদ্দ পুরুষ

শাসন ক্ষমতার এপা ওপারে হারজিতের খেলা

তলায় গভীর রাতের লেনদেন

তথাপি সংবাদ কড়চায় বাদানুবাদ,

প্রজ্ঞার মকশো করে ব্রেকিং নিউজে

মানবসৃষ্টির চরমলক্ষ্য বলে ভুল ভবেছিলে যারে,

হে কবি, সে যে

প্রোডাকশানের গণ্ডগোল

রিডাকশানের বাজারে নিধিরাম চোখে আজ

কল্পনার জাল বোনে বিপ্লবের

বাকি সব নিবিড় ভনিতা

মূঢ়তার অন্ধকার নয় কবি

রিপুর প্রশ্রয়ে জেনে শুনে

বিষবৃক্ষ রোপন ফলবান করেছে

আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার দেখো..

 

(২৫বৈশাখ ১৪২০)

শেষ পঙক্তির শেষে

শেষ পঙক্তির শেষে

 

মায়াবতী মেঘের স্বপ্নে কাশফুলের বুননে

শ্রাবণ ঘন চুলের আঘ্রাণ

স্মৃতির আতসবাজি জুড়ে ভালোবাসার বারুদে

আগুন পোড়া ছাই

 

তোমার শেষ চিঠির ডানা জুড়ে অলৌকিক আভিজাত্যের

শেষ মৃদু হাসি

নেমে যাওয়া শিহরণ শিরদাঁড়ার পাকদণ্ডী বেয়ে

গুলিবিদ্ধ সাতকাহনের শেষ পঙক্তি জুড়ে

সাদা কালো সংলাপের

বিশুদ্ধ আস্তরণ

 

সমুদ্র ভাঙা নাবিকের ক্লান্তির মতো যেন

এবারের বর্ষার সাথে দৃষ্টির সরোবরে

মেঘের সমস্ত আঁচড়ে

কাশফুলের পাল তোলা ডিঙি

 

অথৈ ভালোবাসা হয়ত নয়, তাথৈ স্বপ্নের খুঁটিতে

তবু বাঁধা এ অক্ষর বিন্যাস

পারিজাত বিশ্বাসে পাড়ি দিতে চেয়েছিল

তোমার চোখের জল

 

মরুচারী বিভ্রমের সুস্থ সকালের মতো

তবু তোমার পদচিহ্ন জুড়ে

আমার আস্ফালন

 (২৪/০৬/১৩)

 

শেষ যাত্রার শেষে

শেষ যাত্রার শেষে

 

নীললোহিতের অন্তিম যাত্রায়

নীরা আর আসেনি।

জন অরণ্যের ভিড় দেখেছে সে অসমর্থ্য শরীরে।

দুপুরের খাওয়া পড়ে ছিলো ঢাকা দেওয়া। তেমনি।

চার দেওয়ালের সীমানায়

গুঁড়ো গুঁড়ো সুখের স্মৃতি অসুখ বুকে টিভির পর্দায়।

শান্ত শকটে সুনীল আকাশ জন অরণ্যে তখনো

কি একা?

জীবনের পর্ব থেকে পর্বে পায়ে পায়ে শুধু

মায়া কাটানোর খেলা।

কাঁচাপাকা স্মৃতির সময় নিয়ে ঠোঁটে,

নীরার অস্ফূটে; ভালো থাকবে হয়ত নীললোহিত।

 বাঁধানো খাতাগুলোর জমা ধুলো মাড়িয়ে

নীরার পায়ের ছাপে আর এক গল্প হয়ত

শুরু হবে নীললোহিতের ভূবন জুড়ে।

পিস হাভেন থেকে বৈদ্যুতিক চুল্লীর দূরত্বে

নীরারা বসে থাকে

নীললোহিত নিয়ে প্রশস্ত বুকপথ জুড়ে তখনো।

 

(২৯/১০/১২)

শোভনসুন্দর

শোভনসুন্দ

 

যে নারীর শোভায় সাতটি তারার তিমিরে

সূর্য ওঠে নতুন ভোরের

খুলে যায় সাতটি জানলা, দিকে দিগন্তে

পৃথিবীর সমস্ত সঞ্চিত আশা, আনন্দ হয়ে ঝরে পড়ে

বুকের সাহারায়

ভরা শ্রাবণের অঝর বর্ষণের মতো

 

সে নারীর দু-চোখের মাঝে

সামান্য ভ্রুকুটি

নিশিরাতের এমনই স্বপ্ন যখন ভেঙ্গে

কাঁচ পাত্রের মত খান খান,

 রোজকার ত্রস্ত সকাল ঠিক তখনই ব্যস্ত।

উকি মারে কাটা পাঁঠার মত বুকে।

পূবের জানলায়।

 

যে নারীর শোভায়

পিপিলীকার পাখা ওড়ে

যে নারীর সামান্য ভ্রুকুটিতে

আহত নিহত প্রেমিক

পড়ে থাকে শহীদ মিনারে থরে থরে

সে নারীর বুকের আঁচলে চোখের কাজলে

ভালোবাসা কি কেবলই ওঁৎ পেতে থাকে।।

নবজাতক কাঁদে

বুড়ি পৃথিবীর ঘরে।।।

 

(১৯৯১)

শ্বেতকপোত

শ্বেতকপোত

 

নোবেল শান্তি কমিটিতে বসে আছি।

কানামাছি খেলা চলছে নিরাপত্তা পরিষদের অভ্যন্তরে।

 

ড্রো ক্ষেপনাস্ত্র শান্তির বাণী নিয়ে উড়ে যাচ্ছে মুহূর্মুহূ।

মরুভূমিতে এখন তেলের থেকে রক্ত বেশি মেলে।

 

বাঙ্কারে বাঙ্কারে নবজাতক খেলে বেড়াবে বলে

সাম্রাজ্যের সমর জাহাজ ভিরেছে বন্দরে।

 

জীবন্ত লাশের ভিড় মিটিঙে মিছিলে।

আকাশে সতর্ক বোমারু বিমান ওড়ে।

 

ওধারে শান্তিদূত বসেছেন পাশায়।

রাতবিরেতে ক্ষেপনাস্ত্রের নির্ভূল নিশান।

নিরস্ত মরেছে বেঘোরে।

 

বনিকের মানদণ্ড রাজদণ্ড পেলে,

খোয়াব ঝোলা খুড়োর কলে লিবর্টি স্ট্যাচু হয়ে

হাসে অন্তরালে।

 

শব বাহকেরাও কাজ পেয়ে উৎফুল্ল ঘরে ঘরে

গোলাপ ব্যবসায়ী ফুল পাঠাবে কবরে।

 

(০৭/০৯/১২)

সংক্রান্তির সলতে

সংক্রান্তির সলতে

 

দ্বিধাগ্রস্ত আমার অক্ষর তোমার ক্ষতবিক্ষত যৌবনে

পদাবলী নিয়ে আসে যদি, যদি চৈত্রসংক্রান্তির রাতে

 

নতুন বছর তোমার রূপে অপরূপ সকাল হয়ে আসে

যদি শরশয্যার গ্লানির ভিতর অক্ষম আর্তনাদ

 

নতুন প্রজন্মের ঠিকানা রেখে যায় প্রিয় জন্মভূমির বুকে?

এ মাটির আঘ্রাণে পূর্বপুরুষের কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্য আছে

 

নিস্তবদ্ধ শিশির অশ্রুত বেদনা ব্যথায়

মৃয়মান বসন্তের রক্তলগ্ন সর্পিল বিষাক্ত তীরন্দাজের

 

সাথে তবু একাকী লড়েছে

ভোরের আলোর কাছে কুয়াশার পরাজয়ের মতো

 

তোমার সান্নিধ্যে আমারও ভালোবাসাটুকু

আলো হয়ে উষ্ণতায় ভাস্বর হয়ে গেলে

 

অবরুদ্ধ বিপ্রতীপ সময় সংহতির একচিলতে সলতেতে

ভালোবাসা প্রেম হয়ে এবার আগুন জ্বেলে দেবে দেখো

 

হে প্রিয়

 

(১৩/০৪/১৩)

 

সংশপ্তক

সংশপ্তক

 

কে যেন ওখানে? কে যেন বলেছিল দাঁড়াবে এখনো

দুরন্ত মিছিলের পদধ্বনির মধ্যে শিকড় ছড়িয়ে প্রতিদিনের ডালপালা

 

কে যেন মৃত্যু ও ভালোবাসার মধ্যে সাঁকো হতে চেয়ে

নারীর শুশ্রুষার মতো হতে চেয়েছিল

 

কে যেন এখনো গোপন সুড়ঙ্গ ধরে হামাগুড়ি দেয়

সমস্ত ম্যানিফেস্টোর ধ্বংসস্তূপের তলায়

 

কে যেন হয়তো কিছুটা বা আমারই মতো পক্ককেশ

তথাপি বুদ্ধিতে শান দিতে পারেনি এখনো

 

কে যেন ওখানে সমস্ত দিনের শেষে নারীর চোখের মতো

আলো হাতে- দাঁড়াবে ভেবেছিলো একদিন

 

কে যেন সেদিন পোকাকাটা

ইতিহাসের হলুদ পাতায় ফটো হয়ে গিয়েও...

 

নারীর মতোন স্মৃতি আগলিয়ে বসেছিল রাতক্লান্ত ভোরের আশায়

মৃত্যু ও মানুষের পায়ে মাথা খুঁড়ে? স্বপ্নের আরতি জ্বেলে?

 

(৩১/০৩/১৪)

 

সংশয় সংকট সংবর্ত

সংশয় সংকট সংবর্ত

 

সমস্ত রাত তারা গুনেছি কাল।

গোলাপী আতরে ভিজেছিল নীহারিকা পুঞ্জের সমস্ত কুঞ্জবন।

বিক মেঘের খেয়ালে যত বিস্ফোরণ আলো জ্বেলেছিল

ছায়াপথের আঁচলে

ততটাই আলো হয়তো জ্বালা যেত দু হাত বাড়ালে।

 

তবুও যখন তুমি পাশ ফিরে শুলে

আমারও কি যে’ হলো, শরীরের নড়বড়ে ভিতে

অনেকটা নিশুতি ঘনালো।

পূর্বপুরুষের কথা জানি না,

এযুগের নামতার ঘরে

অনেকটা দোয়াত ওল্টালো।

 

সে সব রাতের আকাশ জুড়ে, দূরে বহুদূরে

তোমার সমস্ত শরীরের অলিগলি ঘুরে

বেড়ে ওঠে শুধু ঋণ, দিনে দিনে

অথছ আমাদের খেয়ালে

সমস্ত নক্ষত্রের অবশেষে

নারীর হৃদয়ের কাছে এসে

পুঞ্জীভূত অহঙ্কার সব

সব কিছু করে দেয় চুরমার

 

(১৭/০৯/১২)

 

সংশয়

সংশয়


ধরা যাক এই আহ্নিক গতিতে বার্ষিক গতি পেড়িয়ে

আরও কয়েক শতক গেলাম টিকে।

হয়তো অনন্ত যৌবন নয়।

নয় যযাতি প্রকৌশল।

মনের প্রাণ ভোমরায় নিয়ে

শুধু প্রেয়সীর নাম।

ততদিনে স্মৃতির ভার বইবে কি অথর্ব হাঁটু আমার?

এই আকাশের নীলে

দৃষ্টি ধুয়ে নিয়ে

লাম্পট্য লালসা নয়।

লালিত সৌন্দর্যের তীব্র সংরাগে

এতদিন নারীর প্রতি টান থাকবে তো ঠিকমত টানটান?

রোজ রাতে অধরে অধর ছোঁয়াতে যদি যাই ভুলে।

শতকের নবীনা তুমি আমার কোল ঘেঁষে

আরও কয়েক শতক পড়ে।

ভুল ভাব যদি।

এযুগের বুকে প্রেম নয় শিহরণ নয়।

 নয় উন্মোথিত রাত্রির মন্থনে মিলনের উৎসব কোনো।

সেদিনের অভিজ্ঞতায় এযুগের ছবি

তোমার অনুভবে-

নাই যদি তুলে দিতে পারি।

তবে কয়েক শতকও নয়।

নয় অমরতার দাবি

 

(০৬/০৬/১২)

সক্রেটিসের বিষে

সক্রেটিসের বিষে

 

মঞ্জুলিকা তোমার সময় হল

যাবার।

এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা ছেড়ে

কোথায় যাবে তুমি?

 

পাখনা ছাড়া জলে মাছের

মতন সাঁতার।

আঁশ খসানোর দিনে

আশার ইজেল নিয়ে

কোথায় স্বর্গভুমি।

 

মঞ্জুলিকা তোমার কাঁদার মত কাঁধ...............

চওড়া বুকের পাটা

বাড়িয়ে দেওয়া হাত

অভাব হলো খুবই?

 

ঈশ্বরের ঐ মুখ।

হৃদয় পোড়া সাধ।

মাইল মাইল পেড়িয়ে এসে

ঐতিহাসিক পথ...........

আশার ভরাডুবি।

 

মঞ্জুলিকা, এই

ভুবন ছাড়া আলো

কোথায় পাব আর।

সক্রেটিসের বিষে

আগুন ছেঁচে জল

অমৃতটুক ঢালো.

 

(২৬/১০/১১)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন