সম্বিৎ

 

সম্বিৎ

 

তাহলে এত বোমা বাঁধা ছিল আরশিনগরে?

পুলিশ কিংবা আইনের হাতুরি, কেন্দ্রীয় বাহিনী

বাকি কাজ নির্বিঘ্নে হয়ে যায়- বারুদে বোমায়

 

গলি থেকে রাজপথে, মানুষের জীবনে তবু

গণতন্ত্র নানারূপে নানা বেশে চোখ রাঙায়

গুলি বোমা বারুদে কিংবা গাঁজা কেসে, টাডায়

 

এই আরশিনগরে তবু কতো আলো, কত রূপ

পতাকায় প্রতীকে, ফাঁকা বুলি আর চোখের ঠুলিতে

ভাষণে শপথে স্লোগানে মিছিলে- আইনের ধারায়

 

কাঁচা রোদ, মেঘ বৃষ্টিতে ভিজে এই আরশিনগর

গণতন্ত্রের প্রচণ্ড উত্তাপে দগ্ধ হতে হতে, তারপর

গলি থেকে রাজপথে, মানুষই যদি ঘুরে দাঁড়ায়?

 

১৩ই জুন ২০২৩

 

সমর্পণ

 

সমর্পণ

 

নগ্নতা মানেই উলঙ্গ নয়

তোমার নগ্নতায় উলঙ্গ ইতিহাস

খুঁজে পায়নি কোনদিন কেউ

 

যে নগ্ন সম্মোহনে

বরণ করে নিয়ে যাও

আপন করে নিয়ে

 

উলঙ্গতার বর্বর উল্লাস কই?

সেখানে দেখেছি আমি

নগ্ন সমর্পণের মধুর তৃপ্তিটুকু

 

উন্মুক্ত যোনিতে

আত্মনিবেদনের উদ্বোধন হলে

কে আর উলঙ্গ পড়ে থাকে?

 

১৩ই জুন ২০২৩

 

 

 

 

সংবিধান

 

সংবিধান

 

ঘুমের ভিতর, রোজ

জেগে থাকি, দেখি

নিজেকে, দেখি তাকে

দেখতে পাই অনেক কিছুই

 

সারাদিন যে সব ছবি

ভুলে থাকার রেওয়াজে

মনুসংহিতা আউরাই

সভ্য থাকি চলনে বলনে

 

ঘুমের ভিতর, আমি

প্রস্ফূটিত সত্যের মতো

নক্ষত্রের আলোর মতো

ঝরণার আনন্দ টের পাই

 

সারাদিন যে সব আনন্দ

চেপেচুপে লুকিয়ে রাখি

চক্ষুলজ্জা, ধর্মভয় আর

সংবিধানের খাতিরে

 

ঘুমের ভিতর, রোজ

আমি জেগে থাকতে চাই

ঠিক যেমন উন্মুক্ত স্বপ্নের

পাখিরা ডানা ঝাপটায়

 

১৩ই জুন ২০২৩

 

 

 

শরণার্থী

 

শরণার্থী

 

নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে কাজ নেই

নেমে এসেছি নারীর বুকের মাঝে

সেখানে রহস্য রোমাঞ্চ আছে

আছে বীর্যপতনের সুখ

 

তাই আমি নারীর কোলের কাছে

শামুকের খোলের মতোন ধীরে

সমস্ত উপেক্ষা উপহাস, উপেক্ষা করে

দিনে দিনে এগিয়ে চলেছি

 

ক্রমাগত ভালোবাসার শপথ নয়

নারীর বুকের মাঝে আশ্রয় পেলে

অন্ধকার মহাশূন্য নক্ষত্র ফেলে

শরীর ঠাণ্ডা হয়, গভীরে গহনে

 

তাই আমি নারীর কোলের ভিতর

শরণার্থীদের মতো ভিসা পাসপোর্টহীন

ইতিহাস উপড়িয়ে নিয়ে হয়ে যেতে লীন

ধরে রাখি বীর্যপতনের সুখ

 

১৩ই জুন ২০২৩

 

 

 

 

 

ধ্বংসস্তুপের সামনে

 

ধ্বংসস্তুপের সামনে

 

ধ্বংসস্তুপের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি

আভুমি নতজানু হয়ে স্তম্ভিত প্রত্যয়

 

বিনাশের নীলনকশা হাতে খেলা করে

ক্রোরপতির জোট, যুথবদ্ধ ভাবে

 

আর শিঙা ফোঁকে উচ্চস্বরে, দুইবেলা

সাদা কালো রঙ, ঠিক করে দিতে

 

বিভ্রান্ত জনতা, মিছিলে মিটিং-এ

কেউ বুক চাপড়ায়, কেউ হাততালি দেয়

 

ধ্বংসস্তুপের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি

আভুমি নতজানু হয়ে স্তম্ভিত প্রত্যয়

 

সংবিৎ হারিয়ে যেতে চায়, কি হবে আর

সৎ চিৎ কিংবা গভীর দূরদৃষ্টিতে?

 

বিনাশের লম্বা হাতে, সব সুতো বাঁধা আছে

কখন কোন টানে কে চিৎ হয়ে উপড়ে পড়ে

 

মার্কস, লেলিন মাও, দেখা হয়ে গেছে

সংঘবদ্ধ প্রত্যয় খুঁজে পায়নি তবুও মানুষ

 

১৩ই জুন ২০২৩

কলঙ্ক

 

কলঙ্ক

 

পায়ের তলায় জন্মভুমির মাটি

তার গভীরে, শত শত শতক

শুয়ে রয়েছে অনন্ত ঘুমে

 

কত নারী এলো গেলো

গর্ভবতী হলো যৌবনবতীরা

জননী স্বর্গাদপি গরীয়সী

 

তবু নবজাতক কাঁদে

ভাঙাচোরা দেশের শ্মশানে

সে কান্না জমেছে মাটির গভীরে

 

এই বাংলার মাঠ ঘাট প্রান্তরে

ইতিহাস লজ্জা পায়, বারবার

যতবার জন্মাই, কলঙ্কিত হয়ে

 

১৩ই জুন ২০২৩

এখানে লম্বা লাইন

 

এখানে লম্বা লাইন

 

এখানে লম্বা লাইন, মানুষের মাথা

স্লথ গতি, সোজা কিংবা বাঁকা

 

সেই ভিড়ের মাঝে, আমিও উৎসুক

খুঁজে চলি, মনের মতো একটি মুখ

 

মুখে হাসি, প্রলম্বিত ভালোবাসার টান

জীবনের নাগরদোলায় আবাহনী গান

 

শূন্য থেকে মহাশূন্যে উড়ুক্কু মন

মিছিলের ভিতরে নয়, বাইরে জনগণ

 

কিংকর্তব্যবিমূঢ় লাইনের পিছনে একা

সময়ের স্লথ গতি, তবুও অপেক্ষা

 

আমি আছি, জানি তুমিও রয়েছো ভিড়ে

আকাঙ্খিত হাতের প্রত্যাশাকে ঘিরে

 

হয়তো এই জন্মে নয়। দেখা হবে

অন্য কোথাও, অন্য কোন ভাবে

 

হয়ত‌ো বা এই ভিড়ের মতো অগণন-

মিছিলে নয়, বাইরেই পড়ে থাকবে জনগণ

 

১৩ই জুন ২০২৩

 

 

ইহকথা

 

ইহকথা

 

নারীর নিভন্ত আলোয়

স্পর্শসুখের স্মৃতিমুখগুলি

উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে

 

সেই সন্ধ্যায় পৃথিবীর ছায়া পড়লে

স্নিগ্ধ চাঁদের বুকে রোমাঞ্চ জাগে

রূপকথা নয়, ইহকথার পাতায় পাতায়

 

এইসব ইতিহাস খোদাই করা আছে

আরও আছে, পুরানো খাটের গল্প,

যে গল্প পুরানো হয় না কোনকালেই

 

১৩ই জুন ২০২৩

 

আমি ও সে

 

আমি ও সে

 

চেতনায় সেই ছায়া ঘনায়

দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে

একটি মেয়ে, যৌবনবতী

সঙ্গম গর্ভবতী জননী তারপর

 

রক্ত মাংসের সচ্ছলতা ভালো

না হলে বিষণ্ণ যাত্রীর মতোন

রাত্রিও ভোরের অপেক্ষা করে

ক্লান্তি এবং অবসন্নতায়

 

ব্রহ্মাণ্ড মন্থনের মতোন

রাতের বিছানা আলুলায়িত হোক

যতদূর রক্তের ঢেউ তরঙ্গায়িত হয়

মাঝখানে পড়ে থাকি আমি ও সে

 

১৩ই জুন ২০২৩

অনিঃশেষ

 

অনিঃশেষ

 

সব কিছু শেষ হয়ে গেলে

শুরু হতে পারে নতুন গল্প

সব কিছুর শেষে, পড়ে থাকে

শিকড় জুড়ে বাসনা অল্প

 

সব কিছু শেষ হয়ে গেলে

চোখ জুড়ে জমাট অন্ধকার

সব কিছুর শেষে পড়ে থাকে

শিকড় জুড়ে ব্যর্থ হাহাকার

 

সব কিছু শেষ হয়ে গেলে

ভাবা যেতে পারে কি করা  যায়

সব কিছুর শেষে, পড়ে থাকে

শিকড় জুড়ে স্মৃতি বেকায়দায়

 

সব কিছু শেষ হয়ে গেলে

মন হতে পারে আগাগোড়া ভুল

সব কিছুর শেষে, পড়ে থাকে

শিকড় জুড়ে ভুলের মাশুল

 

সব কিছু শেষ হয়ে গেলে

দেখা যায় রয়ে গেছে রেশ

সব কিছুর শেষে, পড়ে থাকে

শিকড় জুড়ে কথা অনিঃশেষ

 

২৯শে জুন ২০২৩

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন