বিচ্ছেদ বিবাহের পর

বিচ্ছেদ বিবাহের পর

 

আমাদের ভালোবাসার পোড়ো ভিটেতে

যৎসামান্য চাঁদ হয়তো আজও উকিঁ দিতে পারে

শ্রাবণ ভেজা শরশয্যার রিরংসার চাদরে

সদর দরজা নয় ঘুনপোকা স্মৃতির ময়লা ঝুল-

পেড়িয়ে ভাঙ্গা জানলার বিষাদ ঠেলে- হয়তো

চাঁদের শরীরে কৃষ্ণপক্ষ নেমেছে এতক্ষণে

ছায়াপথের দুরন্ত গতি আমাদের স্রোতস্বিনীর মজা চরে

উকিঁ দিয়ে গেলে

ধ্রুবতারাও হয়ত কক্ষচ্যুত প্রহেলিকায়

পথ হারাতে পারে

বনস্পতির মতো

ডালাপালা মুখে পুরোনো দগ্ধ স্মৃতির চৌকাঠে

অভিমানী ঋতুর মহোৎসব স্তম্ভিত যেখানে

ভালোবাসার সব পাখি ডানার পালক থেকে

অহং পোড়া ছাই যদি ফেলে দিতে জানে-

যদি মেঘবিষাদের সরণীতে উৎসাহিত হৃদয়ের আলো

সাঁতারে পার হয়ে যেতো বিচ্ছেদের সাঁকো একবার

জীবনের টানে.......

 

(১৬/০৮/১৩)

 

বিচ্ছেদ

বিচ্ছেদ

 

সেই গল্পটা সোনা

আর শোনানো হলো না তোমাকে

দুদ্দার হুইসেলে ট্রেন এসে

ছোঁ মেরে নিয়ে চলে গেল

চলে গেলে যে’ই

 

রিনিঝিনি বালা পড়া

মৃদু হাত নাড়া

তোমার শেষ কথা কটা

কেটে নিয়ে চলে গেল

শেষ রাতের ট্রেনের ঝনঝন

 

স্বপ্নের মতো আগাগোড়া

রাতের আকাশ যেন

চোখ বুঁজে শান্ত ধীর নীরবে

খুজঁছিল কিন্তু তোমাকেই

 

কয়েকটা ল্যাম্পপোস্টের

নিঃসঙ্গ আলাপে গোটা পথটা

তোমার পথ পানে চেয়ে চেয়ে

বুকে ধরে রেখেছিল শেষটুকু শিহরণ

 

বন্ধ দরজার নিবিড় অপেক্ষা

মাঝরাতের ক্লান্ত পায়ের সিম্ফোনি

হয়ত অনেক বসন্ত বদলাবে

পৃথিবীর আয়ু, সোনালী ধানের নবান্নে

মাতাল রাতের আদর চমকাবে যুবকের স্নায়ু

তবু না বলা সেই গল্পটার কথা

তোমাকেই ভাবাবে, ভাবাবে

 

(১৯/১/১৩)

 

বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত

বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত

 

মানুষের পাঁজরে অনেক

ব্যাথার ধ্যান

কালো রাত্রির মৌন আর্তনাদ। সচকিত কোনো আলো

ছিল না যাত্রিকের।

দূর্গম অলঙ্ঘনীয় ভয়ভীতি

বাধার সরণী হৃৎপিণ্ডে অলিন্দে নিলয়ে।

উত্তরাধীকারে নুব্জ শিরদাঁড়া। বাতাসের উত্তাপে তোষামোদে সুরক্ষিত বংশগতি।

ক্রোমজোমে ডিএনএর পরাধীন বিন্যাসে হাজার বছর খেলে গেল যথারীতি।

বিদ্রোহী খড়্গ কৃপা

হাতে নামলেন মহাকাল

অবশেষে।

যথারীতি অভিমন্যু বধের চক্রব্যূহে কুশীলব।

ব্যার্থ মূক মৌন দ্বিধ্বান্বিত

দর্শককুল।

শুরু হলো শব্দের অব্যর্থ শরযোজনা।

ছান্দসিকের টঙ্কারে

নড়ে উঠল স্থবির জঙ্গম।

বিদ্রোহী রণতূর্য

জয়শঙ্খ তুলে দিলেন জাতির হাতে।

শঙ্কিত দূর্বল অপটু হাতে

অর্পিত হলো দৃঢ়তার তেজ।

সেই প্রথমবারের মতো।

 

(২৫/০৫/১২)

বিন্যাস

বিন্যাস

 

মেঘরোদ্দুর মন দহনে আলো অন্ধকার বাড়িয়ে দিল হাতে,

দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর ছায়া পরিমিতির ছক ভাঙতে চায়

বাউন্স করা চেকবইয়ের তালে

বিশ্বাস আর ঘূণপোকাদের গান ধরছে ধৈবত

 

ইজেল নিয়ে ক্যানভাস আর তুলির দ্বন্দ্ব আর দ্বিধা চলন স্বর

ভালোবাসায় তামাক গন্ধ আছে মন নির্জন সুযোগ পেলে তাই

ঘর ভরা আর চৌষট্টি খোপে মন আটেঁনি সূর্যমূখী ধান

নবান্নের আর সংক্রান্তির মাঝে

 

শাদা পালক আজও নাবালক তাই বিপন্নতে বিষণ্ণ হয়ে যায়

নীল শাড়ী আর সিলিং ফানের মাঝে তাকিয়ে থাকে

অবাক বিস্ময়

 

এই তো সময় সেজেছে ঈশ্বরে,

পাণ্ডা নাচায় সব তুরুপের তাস

শয়তান তার ভোজন সভায় আজ আংটি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে আশ

 

খুড়োর কলে মন্ত্রমুগ্ধ তাই

সফল বিন্যাস

বিপন্ন নৌকা

বিপন্ন নৌকা

 

বিপন্ন নৌকার মাঝি যেন

শব্দের শৃঙ্খল ভেঙ্গে ভেঙ্গে

আগোছালো হয়ে যায় রোজ

সকল নারীর জন্য জমানো চুম্বনে-

স্নিগ্ধতা ধরে রাখতে চেয়েছি

তবুও স্পন্দিত হৃদয়

শিকড়হীন নিরালম্ব হয়ে ঝুলে গেল কতবার

আগুনের ঘরবাড়ি প্রাতঃভ্রমণের সময় হানা দিয়ে গেল

পাখির পালকেরা সারা রাত

আরব্য রজনীর সিম্ফোনী হতে চায়

অথচ আমি,

বিপন্ন নৌকার মাস্তুলের অনেক কাছাকাছি

তবু শব্দের শৃঙ্খলে এক-পা দু-পা জীবনের অর্থসঙ্গতি খুঁজি

একটা দুটো অব্যর্থ চুমুর হদিসে

সকালের কাগজ কেবলি বাসি খবরে বিপন্ন

মানবাধিকারের অবসন্ন গ্লানি

তবু টেনে টেনে আনে

নিজস্ব দেওয়ালে পরস্পর ছায়ারা তবু

যেন বলে যায় উরুভঙ্গের পর

ক্ষমা হোক মহাপ্রস্থানের পথ

 

(২৬/০৩/১৩)

বিপ্লবে ঘোরে না ঘড়ির কাঁটা

বিপ্লবে ঘোরে না ঘড়ির কাঁটা

 

স্বপ্নের পদধ্বনি শুনতে গেলে

খানিকটা তরল ঢেলে নেওয়া সুবিধা জনক হয়তো

অন্ধকার ঘন হয়ে পাঁজরের সাথে আলাপ জমালে

সকালের রোদ অলৌকিক জলযানের মতো

দামী হয়ে ওঠে গোপন লিফলেটে

ভারী বুটের আওয়াজ ফিস-ফিস করে

বিশ্বস্ত কমরেডের হাত ধরে

দিন পাল্টাবে ধরে নিয়ে এগোলে

নামের পাশে ঠিকানা বসে যেতে পারে

মাটির আঘ্রাণে কোনো জীবনদায়ী ওষুধ নেই—

শুধু হাতের মুঠোয়

যতটুকু প্রত্যয় লুকিয়ে রাখা যায়....

ততটুকু শান্তি অন্তিমে

তবু যারা হারিয়ে যায় তুঘলকি অঙ্গুলী হেলনে

তাদের কাছে সঠিক চিত্রটি বীজ বুনেছিল অঙ্কুরের

তাই অঙ্কুরেই কংসের সভয় নজর

রাষ্ট্র বিজ্ঞানও ইতিহাসের পাতা উল্টে

সে কাথাই বলে অন্তত যতদিন মানুষ জন্মাবে

 

 

বিপ্লবের সাতকাহন

বিপ্লবের সাতকাহন

 

আদি মানবীর শয্যা সন্ধ্যায়

সমস্ত মহাকাব্যের স্তূপে

আমার শব্দগুলো আজও

স্বপ্ন দেখেছে।

রোজকার সত্য মিথ্যার অচলায়তনের ঠোঁটে

শিহরিত হৃদয় আমার।

প্রকম্পিত ভয়ের মলাটে

অজস্র পরাজয় সয়েছে।

তবু এই ঘরবন্ধ নিরালায়

হৃদয়ে শান দিয়ে চলি।

মুষ্টিবদ্ধ হাতে সপ্নীল ভোরের গন্ধ লেগে আছে।

আদি মানবী আবারও জননী হবে আমার ঔরসে।

 

(১৭/১০/১২)

বিবসনা সময়ের গান

বিবসনা সময়ের গান

 

নির্বোধ ভাঁড়েদের মিছিল থেকে সাপ্তাহিক মিলন

অগ্রন্থিত বিবেকের পাঁচালি

আর শেষ রাতের ক্লান্ত সংলাপ

অভিশপ্ত সংবিধান জুড়ে

মানবিক অভয়ারণ্যের খোঁজ

কেবলই ল্যাণ্ডমাইনের

মুখোমুখি অবিন্যস্ত ভোর

সুবর্ণরেখার জলে কেবলি ধুয়ে নিয়েছি

দেখ আমার নিভৃত অক্ষরগুলো

নুনমাটি কবরের উপর স্বপ্ন নয়,

সংলাপে বিলাপে সময়ের প্রতিলিপি দিয়েছি ঝুলিয়ে

এখন আমি তোমাদেরই লোক

মিনিস্কার্ট জুড়ে বিপণীর অভ্রান্ত জ্যোৎস্নায়

সত্তর দশক নয়, এ এক নতুন শতক

গণিকার বার থেকে একমেরু সিমে,

কবিতা কম্পাসের তীরে আজকের ভোর

হাজার বছরের মেঘমালা হয়ত বিরহী চাতক

তবু আজ নয় কবিতায় দৃপ্ত রসায়ন

আজ আমাদের শান্তিতে নোবেল দেওয়া হোক

 

 (০২/০৮/১৩)

 

বিবস্ত্র তবুও ১...২....৩.....

বিবস্ত্র তবুও ১...২....৩.....

 

এসো তোমার ঠোঁটের কোণায়

এক চিলতে হাসি

ঝুলিয়ে দিই! তুমি

বারুদ ভরে নিও!

 

ভালবাসার কাণ্ড বেয়ে

লালসা লতিয়ে প্রকাণ্ড

হয়ে ওঠে! আমরা উদোম

দেখে নিও!

 

বিবেকে পেরেক দিয়ে

দশটা পাঁচটা কিংবা

ওভার টাইম

এবং পরকীয়া!

 

আগুন আর জলের সহবাস

চোর পুলিশের খেলা!

পরিবর্তনের শপথে

আমাদের গল্প সকর্মক ক্রিয়া!

 

স্বার্থের চব্বিশে সময়ের

কাঁটা স্থির থেকে তবু

মানুষ বিয়োবে! মিছিলের

আয়োজন শ্মশানেও হবে!

 

ম্যনিফেস্টোর অক্ষর ধুয়ে নিয়ে

শানিত বুদ্ধির ইমারত জুড়ে

ইতিহাস লেখা শেষ হলে

তবু কি সময় ফুরোবে?

 

ক্রোধকে ভয় না পেয়ে

তুমি বারুদে আগুন দিও!

দেশকাল সমাজে

আগুন ছড়িও!

 

সময়ের ঘর্ষণে রিরংসার বসনে

হয়তো কোনোদিন

মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে!

তুমি দেখে নিও!

 

 (১২/০৮/১২)


বিলম্বিত বিলাপ

বিলম্বিত বিলাপ

 

ধূপছায়া মনের সাতকাহন লিখতে বসে

 ঘড়ির কাঁটার উল্লম্ফন।

হাওড়া ব্রীজের থেকে গঙ্গার জল মাপতে গেলে

স্মৃতির ডানা ঝটপট।

পাণ্ডুলিপির আয়োজনে বিমর্ষ সমাজ

পরস্পরের মুখে মুখ ঘসতে ভয় পেয়ে

রিপোর্ট এব্যুজে বাটন টেপে।

ধর্মের কলে বাতাস লাগে না বলে

বিচারকের দিবানিদ্রায় পৌষ এসেছে আজ।

শেষ ট্রেনের নিষিদ্ধ কামরায় আইন,

ধৃতরাষ্ট্র সুখে ঘ্রাণ নিতে পছন্দ করে।

এখানে আমার শব্দ টাপুরটুপুর পড়ে না।

গলা খাঁকড়ি দিয়ে শিরোনামের আড়ালে

নিধিরাম শুয়ে শুয়ে হাঁপিয়ে পড়ে।

 তবুও যখন ছন্দের ভানে দেখি কাব্যতীর্থে পুরস্কারের মুখে বুলি,

বাংলার মাটিতে সাতকাহন কাকলি চড়ুই কাকের মত

শালিখের পিছনে ছোটে।

কেবলি বিদেশী লগ্নীর ধ্যানে আমদের ঋণ বেড়ে ওঠে।

 

(০৯/১১/১২)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন