কাব্যসংকলন

 


কাব্যসংকলন

 

আঙুলের ফাঁকে ধরা কলমের মুখে চেয়ে

কি ভাবছিলেন কবি?

ভোরের প্রথম সূর্যের মুখরিত তরঙ্গ ধ্বনির

আনন্দে বিভোর হয়ে প্রতিদিনের ধ্যানে…….

না, সে কথা লেখা নাই রক্তকরবীর পাতায়

 

সেদিনের আকাশে বারুদের গন্ধে

লোভের নগ্ন আগুনের লেলিহান শিখা

ইতিহাসের পঙতিমালায় নতুন মহাকাব্যের

কুচকাওয়াজ, মানুষের বর্ণমালায়

কি দেখছিলেন রবীন্দ্রনাথ নতুন করে?

 

আজ তার শতবর্ষ পরে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে

যারা বসে আছি আজও- সুসজ্জিত ড্রয়ইংরুমে

প্রেমের কবিতার বই খুলে

আমাদের রোজকার পঙতিমালায়

নারীর সোহাগ আর বিয়ারের বোতল নিয়ে

           

হিমযুগের মতো নিস্তব্ধ মধ্যরাতের ঘুম

জলপরীদের গান নিয়ে গুনগুন করে কানেকানে

নাগরিক মৌতাতে মাথার ভিতর

স্বপ্ন নয় সাধনা নয় বন্ধুমহলে আলোড়িত খ্যাতির মহিমায়

বরং আরও একটি কাব্যসংকলন সামনের বইমেলায়

 

২৪শে মাঘ ১৪২৫

কাস্তের মতো চাঁদের স্মৃতি

 


কাস্তের মতো চাঁদের স্মৃতি

 

করতল জুড়ে অনেক কাটাকুটি খেলা

বিস্তর গোঁজামিল তবু তার কথা

 

স্তব্ধ রাতের হাতঘড়িতে টিকটিক করে

এ যেন অশরীরীর ছায়ার মতো

 

অদিগন্ত সাহারার রাতে নিঃশব্দ প্রহরায়

বিনম্র সুজাতার মতো পরমান্ন রাঁধে

 

উন্মোচিত আয়ুর রেখায় হয়তো

এবার গোটাতে হবে নিজেকে

 

নক্ষত্রদোষের কথা বলি না, তবু

স্বপ্নদোষের রং এতদিনে হয়ে গেছে ফিকে

 

৩রা আশ্বিন’ ১৪২৬

 

কি দেখছো অমন করে

 

 

কি দেখছো অমন করে

 

কি দেখছো অমন করে এই অবেলায়

আশ্বিনের ভাদুরে ঘামে

তোমার মেয়েলি রূপরেখায়

 

পশ্চিমের ক্লান্ত আকাশ

পুবে ছায়াদের আনাগোনা

বাড়ি ফেরা বাদুড়ঝেলা বাস

 

তুমি জানলা জুড়ে

কাজলটানা দুই চোখ

বাড়ি ফেরার রাস্তা থেকে দূরে

 

কি দেখছো অমন করে

 

২৩শে ভাদ্র’ ১৪২৫

 

 

কোয়ারিন্টিন থেকে….

 


কোয়ারিন্টিন থেকে….

 

ধরো অস্তিত্বের গলিঘুঁজিতে

করোনা বাসা বেঁধেছে

গায়ে জ্বর, গলা ব্যাথা,

শরীরের শেষ উত্তাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে

এই পৃথিবীতে

বাস করছি নিস্তব্ধ কোয়ারিন্টিনে

এমন সময় তোমার

মুখে মুখ রেখে

যদি বলি ভালোবাসো?

তুমি কি মুখ সরিয়ে নেবে?

নাকি আমায় আরো আরো

চুমু দিয়ে বলবে

ভালোবাসি ভালোবাসি ….

কোলাজ

 


কোলাজ

 

শেষ দিন……………………….

কিংবা ধরা যাক এই সেইদিন

       দিনের শেষ ট্রেন চলে গেলে

       আলো অন্ধকার প্ল্যাটফর্মে

               আমি একা

               এবং ছন্দপতন

 

 

বাসর………………………….

মানুষের মতো অসুখ যাদের

        আমিও তাদেরই মতো

        প্রেয়সীর আঁচল ভেবে

                রাত্রি জেগেছি রাত্রিদিন

                ওদিকে হয়তো তুমিও বা

 

 

শপথ…………………………

নেওয়ার দিন এলে দেখেছি

         আমিও তোমারই মতোন

         বিশ্বাসের দানা ছড়িয়ে

                  ডেকেছি কবুতর

                  বাকিটা ইতিহাস

 

 

আলিঙ্গন…………………

ছোঁয়াচে রোগের মতোন

       আসক্তির ভাইরাস নিয়ে

       আমিও টেনেছি তোমায়

                  বিকলাঙ্গ চুম্বনের

                  গোপনাঙ্গ ক্ষতে

 

 

প্রেম…………………………

সর্ষের মধ্যে ভুতের মতোন

        পরস্পর হৃদয়ের চৌকাঠে

        উঁকি ঝুঁকির দিন

                    ভালোবাসার অ আ ক খ

                    স্লেট পেনসিল

 

(২৩-০৭-২০১৭)

ক্ষুধা

 


ক্ষুধা

 

মেয়ে তোমার বয়স কত হলো

কুমারী তো এখনো

হেঁটে গেলে পথে

পিছন ফিরে তাকায় তো লোকে

কিংবা বেপাড়ার ছেলেরা

শিস দিয়ে যারা

মেয়েদের দুধ টিপে দেখে

এখনো কি পথ চেয়ে থাকে?

বাসে ট্রামে বুড়ো ভাম গুলো

কলপে আতরে কিংবা পরচুলো

নিতম্ব দুলায় এখনো?

নাকি শুধু আড় চোখে তাকানো

ঘন ঘন, ঠোঁট থেকে বুকে

পায়ের পাতা থেকে আরও একটু উর্ধমুখী সুখে

 

মেয়ে তোমার বয়স কত হলো

যৌবনের মধু কতটা ফুরালো

নাগরিক রাজপথে ছেলেবুড়োর সঙ

এখনো কি দেখে রেগে হও টং?

বয়সের ভারে শুকানো শরীরে

স্বস্তি কি পাওয়া যায় লোকালয়ে ভিড়ে?

এ পৃথিবীর আলো মায়া ছেড়ে

যেতে হবে চলে

তখনো কি ছেলেদের ছায়া

পিছু নেবে এমনই বেহায়া

হায়াহীন ছায়ার বেআব্রু উল্লাসে

হয়তো বা তখনো মেয়েদের লাশে

পুরুষের ঠোঁট ক্লেদাক্ত মাছিদের মতো

আদিম রিপুর টানে প্রাণে প্রাণে এমনই ক্ষুধার্ত

 

১লা আশ্বিন

খোঁজ

 

 

খোঁজ

আপাতত যে ডেডবডিটা দেখা যাচ্ছে

সেটা আমার পরিচয় পত্র নিয়ে শুয়ে আছে

বাড়ি ফেরার তাড়া নাই আর তার

 

এখন শান্ত, প্রায় সমদর্শী ঋষির মতো

স্থিত প্রজ্ঞ, পঞ্চভুতের রাজপথের

সবটাই পরিস্কার হয়ে উঠেছে

 

এই যে আমার লেখার টেবিল

আমি নাই আর তবু শেষ লেখার পাতা

ওড়ে হাওয়ায়। অসমাপ্ত শব্দের অক্ষরে

 

সব কথা শেষ হয়ে গেলে

যবনিকা পতন। তাই এই ভালো

যতটুকু বলা হল আর যতটুকু বাকি

 

শব্দমালার কয়েদ আর নয়

ওখানে যে আমি শুয়ে, ওকে চিনি

বাকিরা ভুলে যাবে দুদিনে

 

না তাই নিয়ে শোক নয় কোন

মৃত শব্দের ওম পেরিয়ে…… যে আমি

তাকে পেয়েছি আজ খুঁজে অবশেষে হাতের মুঠোয়

 

ভাদ্রের তৃতীয় দিনে ‘১৪২৫

গভীর রাতের আমি

 


গভীর রাতের আমি

 

গভীর রাত

অন্ধকার তখন নিজের সাথে মশগুল

জোনাকির তালে তালে

নৈঃশব্দের নাচ দেখছি

 

হাজার বছর আগে হারিয়ে গিয়েছে

-যে সময়

সে সব স্মৃতি নিয়ে নির্বাক আকাশ

আমারই মতো হতবাক

 

বিস্ময় না, বিস্ময়ের বিষয় নয়

এসব। তবু শিহরন জাগে আনাচে কানাচে

শরীরে প্রাক মুহুর্তে

নিরবধি অম্লান অনুরাগে

 

এই অন্ধকার

অন্ধকারের সময় কিংবা অসময়

হাজার বছরের স্মৃতি বিস্মৃতি

আর গভীর রাতের আমি

 

৩২শে আষাঢ় ১৪২৫

 

 

গর্ভবতী দিন

 


গর্ভবতী দিন

 

আমি জানি, জানি আমি

তোমার শরীরের কোনখানে

বসন্ত বইছে হুহু করে

কোনখানে তুমি চিচিং ফাঁকের

খেলা দেখাও, হাসিমুখে

চিচিংবন্ধ করে আমাকে

তোমার করে নাও রোজ

 

যে শব্দ প্রলম্বিত চুম্বনের

স্বাদে দীর্ঘায়িত হয়

যে শব্দে আদিম নিশুতি

নিশ্চিন্তে পাশ ফিরে শোয়

সেই শব্দের সাধনায়

এই তুমি খেলা দেখাও

জানি আমি। আমি জানি

 

অস্থির প্রাত্যহিক নামগানে

ভালোবাসার নামাবলি গায়

তোমার লাবণ্যে তুমি

সামুদ্রিক ঢেউয়ের মতো

আমাকে নাচাও। আমায়।

গর্ভবতী দিনে শুক্রাণুবধ

আয়োজন। আমি জানি

 

১৮ই ভাদ্র’ ১৪২৫

গল্প হলেও সত্যি

 

 

গল্প হলেও সত্যি

 

ঘোড়ার ডিমে তা দেওয়ার সময়

মুখে বরাভয় হাসি

আর বাঁ হাত নাড়তে নাড়তে তাকিয়ে দেখুন

উদ্বেলিত জনজ‌োয়ার আপনার সাথে

একটি সেল্ফি তোলার সুযোগ পেলে

চাইবে না আর কিছু

 

যতদূর বিস্তৃত জনতার লাইন

ততদূর নিশ্চিন্ত মসনদ

ততদূর সুরক্ষিত বলয় সংবিধান হাতে নিয়ে

ঠিক আপনার পাশে পাশে

আবহমান ভাঁড়েদের সভায়

হাজার হাজার ঝাড়বাতির জৌলুসে

 

না, এসব অভিজ্ঞতা আপনার আছে

হয়তো বংশ পরম্পরায়

হয়তো সময়ের আঘাটায়

যোগবিয়োগ গুণভাগের জাদুতে

হঠাৎ শিকে ছেঁড়ায়, নয়ত ঘোড়ার ডিমে

তা দেওয়ার সুযোগ কজনই বা পায়?

 

 

 

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন