নিঃশব্দ নির্জনতা ভালো

 

 

নিঃশব্দ নির্জনতা ভালো

 

নিঃশব্দ চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আছি

ভিতরেও নেই। বাইরেও নয়

দুইদিকেই বহমান সংসার

সময়ের অলিগলিতে প্রাত্যহিক

 

অন্তিম বিশ্বাসের খড়কুটো

হাতড়ায় যারা অনেকটা তাদেরই মতো

আত্মহত্যা ঠেকিয়ে রাখা দায়

তবুও নিঃশব্দ নির্জনতা ভালো

 

ভালো নয় ভাঙনের শব্দ

হারানো শপথ উদসীন অবহেলা

জলের মতো ক্রমাগত গড়িয়ে পড়া

নীচ থেকে আরও আরও নীচে

 

৭ই মে ২০১৮

নিজের কথা……

 

 

নিজের কথা……

 

আমার এই বাড়িটা দেখে

শুনেছি ভুতেরাও আঁতকে ওঠে

তাই আমি একাই থাকি

 

প্রাচীন বটের মতো ঝুরি নামিয়ে

সময়ের হিসাব কষি

কালের পাতা ওল্টাই

 

কথা হয় অনেকের সাথে

তারা হয়তো বেঁচে নাই

না থাক তবু শহীদ হয়েছে

 

এই বাড়ির আনাচে কানাচে

যুক্তি তক্কো সাজাই

বিধিলিপিকে তোয়াক্কা না করে

 

ওরা হাসে হাসাহাসি করে

অর্বাচীনের ছেলেখেলা

দেখে হয়তো বা দুঃখ পায়

 

কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা

খাবি খাই ক্ষতি নাই

তবু সতত একগুঁয়ে

 

হাল না থাক হাতে

ভাঙা থাক মাস্তুল

তবু দেখ দাঁড় টানছি জোর

 

পলেস্তরা খসে গেছে

ভাঙা ছাদ সন্ত্রস্ত ভিত

তবু আমি অবিচল স্থির

 

স্বপ্নের অক্ষর বাছি

ভরসার দেওয়াল জুড়ে

বিশ্বাসের সাঁকো আঁকি আজো

 

নিজের কথা আজ আর

নিজের মত করে কজন

বলতে পারে……………..

 

১৮ই ভাদ্র’ ১৪২৫

নিভৃত সংলাপে

 


নিভৃত সংলাপে

 

আমার সাথে কে যেন হাঁটাহাঁটি করে

রোজকার দেওয়ালে তুমুল তর্কের হট্টরোলে

মুখোমুখি প্রতারাশের টেবিল থেকে

ভাজা মাছ উল্টিয়ে খাওয়া না খাওয়ার

জরুরী টাইমটেবিলের বনেদী আখড়ায়

 

তুমি তাকে কখনো দেখনি মেয়ে

কখন যে সে তোমার আঁচল টেনে ধরে

তোমার প্রগলভ হাসির চৌকাঠ ডিঙিয়ে

মনের ধারাপাতের কড়িকাঠ গুনে নিয়ে

ফিরে আসে নিশ্চুপে, ফিসফিস করে

 

আমি তার অর্থ বুঝি না জেনেও সে

প্রায় ছিনে জোঁকের মতো লেগে থাকে

অদম্য প্রয়াসে, আমি শুধু দেখি তোমার রূপ

আহা এক আকাশ ভরা বিষাক্ত বাতাসে

সুন্দরী মেকআপ বাক্স হাতে তুমি এখনো বসে

 

আয়নায় কথা বলছো মৃদুহেসে ভালোবেসে

এই পৃথিবীর মাটি আর ঘাসে মেঘে রোদ্দুরে

আণবিক বর্জ্যের আবাস জুড়ে সন্ধ্যা সকালে

ইতিহাস পোড়া ছাই হয়তো বা ব্যস্ত রয়েছে

ঠিক তোমারই মতো এমনই নিভৃত সংলাপে

 

৭ই অগ্রহায়ণ’ ১৪২৫

নির্জন বন্দরে একা

 


নির্জন বন্দরে একা

 

ভালোবাসার নারীরা নক্ষত্রপতনের মতো

নিঃশব্দে খসে পড়লে, আজকাল

নতুন করে দুঃখের কাছে নতজানু হই না আর

না বলা কথা কয়টি দাঁড়ে বসা

পাখির মতো ঠোক্কর দিতে থাকে

নির্জন পাঁজর উদাসীন দুপুরের মতো

শুকনো মুখে পশ্চিম আকাশের দিকে

চোখ মেলে রাখে, না কোন রামধনু আশায় নয়

শরীরের মৌতাত কমে এলে

এমনই হয়, পশ্চিম দিগন্তে

শেষ বিকালের আলোর মত ম্লান

অনকটা ম্রিয়মান স্মৃতির প্রদীপ

আগলিয়ে চলার মতো অবসর জুটে গেলে

দেখা যায়, নির্জন বন্দরে

নিঃসঙ্গ জেটির মতোন পড়ে আছি

বাকি সব নোঙর তুলে চলে গেছে কবে

 

২৫শে অগ্রহায়ণ’ ১৪২৭

নিষিদ্ধ প্রেম

 


নিষিদ্ধ প্রেম

 

আসুন আপনাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখি

বলেছিলাম একদিন, একমুখ উজ্জ্বল হাসিতে

বিস্মিত চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন

তখন শেষ বিকালের আলো সাঁকো হয়ে দুলছিল

 

দুইদিকে দুইজন পরস্পর ঘনিষ্ঠ সময়ের দূরবর্তী

অবস্থানে। কবিতা লেখা কি পোর্টেট আঁকা? নাকি

তেলরঙে নারীর শরীরে সৌন্দর্য্যের আত্মরতি

যে বসে থাকতে হবে কবির সামনে অপলক স্থির।

 

নাকি ডানা মেলা পাখির মতো সাঁতরাতে হবে

কবি হৃদয়ের গহনে একটা দুটো করে শব্দ অক্ষর

তুলে নিয়ে আসতে? স্মিত হেসে উঠে পড়েছিলেন

তাড়াতাড়ি। যেমন টুপ করে ডুবে যায় অস্তমুখি চাঁদ

 

তারপর এতদিন বন্ধ কলম নিয়ে বসে আছি

সাদা পাতার হাত ধরে। আপনার সাথেও দেখা হয়নি

আত্মরতির অক্ষরগুলো শিশিরের মতো নিরবে দিনে

দিনে টুপটুপ ঝরেছে শুধু, কবিতা হয়ে ওঠেনি তো আর

 

কার্তিকের ৪ তারিখ’ ১৪২৫

 

 

নীরোর সুরে

 


নীরোর সুরে

 

আমিও কি চলছি না? চলছি

কিন্তু কোথায়? সহযাত্রী কারা

পারস্পরিক সম্পর্কের বুননে

স্বার্থ না কি আত্মীয়তার নির্ঘন্ট

 

আমিও কি ভাবছি না? ভাবছি

কিন্তু কি ভাবি? কাদের কথা

ছেলে মেয়ে বৌ কিংবা পরকীয়া

এর বাইরে ভাবনার মানুষ কোথায়

 

আমিও কি ঠকাচ্ছি না? ঠকাই

কিন্তু কাকে? ঠিক কিভাবে

খুড়োর কল বিকিয়ে চলেছি

পরম্পরায় উপরতলার নির্দেশে

 

আমিও কি পালাচ্ছি না? পালাচ্ছি

কিন্তু কেন? কিসের থেকে

নীতি সৎ উপদেশ আর আদর্শ

শ্যওলার মতো পথে বসিয়ে দেয়

 

আমিও কি টের পাই না? পাই

কিন্তু কি করে? কোন সত্য

সকলেই আমার মতো তাই সকলে

মিলেই বেহালা বাজাই নীরোর সুরে

 

ভাদ্রের ৭’ ১৪২৫

নীলডানা রোদ

 

 

নীলডানা রোদ

 

এসো মেয়ে বসো একটু এইখানে

নিরিবিলি একান্তে

 

তুমিও সেই স্লোগান মিছিল মিটিং দিয়ে

ঘেরা রয়েছো দেখছি

 

পাড়ার চৌমাথা থেকে গড়ের মাঠ

ভোটের মন্ত্র পড়া সিলেবাসে বন্দী

 

আমিও তোমারই মতোন, শোন

এ কল্পকথা নয় কোন

 

তবু এখনো নীলডানা রোদ

পথের ধুলো মেখে চেয়ে আছে দেখো

 

ঐখানে, এখান থেকে সোজা পথে

ডানদিকে নয়, একটু বামদিক ঘেঁষে

 

জানে না কোনদিকে তাকালে

দেখা যাবে মানুষের মুখ

 

তবুও হয়তো তোমারই অপেক্ষায় সে;

নয়তো আমার মতোন, চোখে ঠুলি পড়া

 

স্তাবক কিংবা ঠ্যাঙারে, লেঠেল,

ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী কবি শিল্পীদের এই ভিড়ে

 

এখনো কার অপেক্ষায়, সে

বসে থাকবে!

 

৯ই ফাল্গুন’ ১৪২৭

 

নেমেছে লক্ষ রাত

 


নেমেছে লক্ষ রাত

 

তুমিও যদি নাই ধর হাত আজ

থাক তবে আর নাই বাড়ালাম হাত

ভিটে মাটি কেড়ে লুটেছে ভোটার কার্ড

স্বদেশের বুকে নেমেছে লক্ষ রাত

 

এ মাটি আমার বাংলায় কথা বলে

হাজার বছর এ মাটি আমার ঘাম

দস্যু ব্রিটিশ সু-শাসনের ছলে

এ মাটির সাথে জুড়ে ছিল আসাম

 

সেই ইতিহাস ভুলেছো বন্ধু সব

রাজনীতি আর ধর্মের ঘোলা জলে

শত্রুরা তোলে অসত্য কলরব

ঘরশত্ররাও শত্রুর সাথে চলে

 

বাংলার বুকে অনুপ্রবেশকারী

বাঙালি তো নয় অবাঙালিই ওরা সব

বর্গীর থেকে গুজরাটি মারোয়ারী

তাদের নিয়েই তোমাদের গৌরব

 

পুড়ছে ঘুঁটে হাসছে গোবর আজ

এখানে ছেঁটেছে চল্লিশ লক্ষকে

ওখানে যেদিন ফেলবে মাথায় বাজ

ছেঁটে দেবে ওরা কয়েক কোটি’কে

 

আমার বাংলা তোমার বাংলা তাই

যেখানে বাঙালি সকলেই সংকটে

অবাঙালিরা আজ একজোট ভাই ভাই

বাংলা দখলে সব দল এক রুটে

 

শ্রাবণের ১৫’ ১৪২৫

নো-ম্যান্স ল্যাণ্ড

 

নো-ম্যান্স ল্যাণ্ড

 

আমি ঢাকায় যাই নি কোনদিন

পাসপোর্ট লাগবে কেন?

ভিসা চাইতে হবে আমায়!!!

আমারই নিজস্ব ভুখণ্ডে পৌঁছাতে

 

তোমাকে তাই আসতে বলিনি আর

কোলকাতায়। কার কাছে চাইবে ভিসা?

কোলকাতা তোমারও কি’ না!!!

অ আ ক খ আমার তোমারও

 

যে আকাশের নীচে তোমার আঁচল

আমার চোখে স্বপ্ন ফোটায়

সবুজ অবুঝ কুঁড়ির মতো

ছোট্ট একটা দেশ বাংলা

 

তোমার আমারও। আমার তোমারও

তবুও নো-ম্যান্স ল্যাণ্ড আমাদের

বুক চিড়ে। দুদিকে বেয়নেট ট্রিগার-

হ্যাপি নিশপিশ আঙুল

 

আমাদের বোবা করে রাখে

মন্দির মসজিদ ভোটের দামামা

এ মাটির ঘ্রাণে বারুদের কুচকাওয়াজ

আমাকে ঘুম পাড়ায়, তোমাকেও

 

তবুও ঐ ঢাকা আমারও

এই কোলকাতাও তোমার- ঠিক যেমন

মাটির সবুজ আর আকাশের নীল

তৃষ্ণার জল আর ছন্দের মিল

নোয়ার নৌকায়

 

নোয়ার নৌকায়

 

অস্থির কোলাহল থেকে দূরে অনেক দূরে

কিছুটা শব্দহীন সময় হাতে পেলে

যে সময়ের চিত্রপট এতটা ধূসর নয় হয়তো বা

অস্পষ্ট আবছা কিংবা দূরত্বজনিত

নীল আকাশের মতো অমলিন স্নিগ্ধতায় সুন্দর

 

শব্দহীন সময়ের কোলে দুদণ্ড জিরানো যেত

 

শহরের অলিতে গলিতে কাঠখড় পোড়ানো লড়াই

সকাল বিকাল বাঁচার অদম্য আগ্রহ উৎসাহ

হাতের মুঠোয় ধরা স্বপ্নের উতরোল উচ্ছাস

ভালোলাগা মুহুর্তগুলির পিঠে চড়ে

স্মৃতির পাতা ওল্টালেও ক্লান্ত লাগে কখনো সখনো

 

সে সব সময় শব্দহীন সময়ের ডাক শুনি

 

এত কথা, কথার পাহাড় শব্দের আগ্নেয়গিরি

তর্ক বিতর্ক প্রশ্ন কিংবা প্রতিশ্রুতি

সব কিছু পেরিয়ে একদিন নোয়ার নৌকায়

তখন শব্দহীন ইতিহাস আকাশের নীল

আর সমুদ্রের আলাপ শান্ত ঢেউয়ের মতো নিরিবিলি

 

শব্দহীন রাত্রিদিন নোয়ার নৌকায় তুমি আমি

 

১লা শ্রাবণ ১৪২৫

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন