৪৭-এর পর

 

 

৪৭-এর পর

 

মন্দিরে মসজিদে

সন্ধ্যাহ্নিক নামাজে

বাংলার উষ্ণতা

কেঁপে কেঁপে ওঠে হাড়হিম শীতে।

 

সেই শীত চাদর গায়ে

আমি আর তুমি পরস্পর,

পাসপোর্ট ভিসায়

প্রতিবেশী সাজে।

 

ধর্মগ্রন্থ পূরাণ লোকাচারের

ঝুরি নামতে থাকে

বাংলার শিকড়ে।

নিত্য নতুন করে।

 

বর্ণমালা স্বরলিপির

দূরন্ত কোলাহলে

এ সবুজ কাঁদে।

 

রাজনীতি অর্থনীতির

সার্বভৌম ফাঁদে

গলিত স্থবির ইতিহাসের ছাঁদে.....

আমাদের এক বৃন্তের

ভালোবাসা........

আধঘণ্টা আগে আর পরে।

 

(০৭/০৪/১২)

 

১৪২০

 

 

১৪২০

 

কোথাও শান্তির ললিত কণ্ঠ নেই শুশ্রূষার সময়ে?

কোথাও প্রেমের উদ্দীপনাও নেই

বহুদূর ব্যাপৃত তর্কের সীমানায়?

কোথাও মৃত্যুর জয় পতাকা নেই,

প্রলম্বিত শপথে? তবু:

মৃত্যুদীর্ণ মিছিলের অগ্রভাগে

বঙ্গ আমার জননী আমার ধাত্রী আমার, আমার দেশ।

সকালের শিরনামে

বাসি খবরের মানে স্থির থাকে জেনেও; হৃদয় পোড়া

আঘ্রাণ পেলে পরস্পরের চোখে দৃষ্টি রেখে স্থির---

সূর্য হয়ে যায় সর্বত্র।

ফিরে আসা যায় ময়দানে।

ইতিহাসের শেষে নয়।

অগ্রহিত পর্বে।

সময়গ্রন্থীতে অযথা গিঁট পড়লেও। যত্র তত্র।

ব্যাপৃত নিঃশ্ছিদ্র তমিস্রার মাঝেও;

আড়ালে আবডালে সংক্রমক

হয়ে গেলে তিমিরহননের গান;

১৪২০ পোয়াতি হোক।

সন্তান সন্ততিতে ঘিরুক প্রজ্জ্বলিত সীমানা।

অবশেষে।

 

(০১/০১/২০)

অকথিত বাণী

 


 

অকথিত বাণী


 রক্তের ভেতর কত দহন                                                         

প্রতিদিন ব্যস্ত বন্দরে নোঙর ফেলে অপেক্ষা করতে থাকে।

এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা সত্য

তবু সুজাতার পরমান্নে

স্থিতু হতে চেয়েছে সময়।

সেমিনারে কথামালা সাজানো

হয় সনাতন প্রথায়।

সমাবর্তনে রেখেছে মিথ্যের কূহক।

তবু এই সময়গুলির মুঠো মুঠো কৈফিয়ত গর্ভের ভ্রুণে

হয়তো আবারও প্রাণ নিষিক্ত করে যাবে- সমাবর্তনের পাশে পাশে ।

জনবিপ্লব হয়তো নয়

কোনো ফেস্টুনে ব্যানারে;

তবু হয়ত সেমিনারে

উচ্চকিত বাণীর আড়ালে

দৃঢ় হবে অকথিত বাণী।

 

ততদিন বন্দরের কাল হয়নি শেষ।

নোঙর থাকুক গভীরে।

উচ্চকিত বাণীর আড়ালে

দৃঢ় হোক অকথিত বাণী।

 

(০৩/০৬/১২)

অগ্রদূত

 

 

অগ্রদূত

 

সময়ের অগ্রভাগে দাঁড়িয়ে দেখি

মরুভূমির উষরতা নিয়ে নিষ্ঠুর বালির প্রপাত

অক্লান্ত প্রতিরোধে।

যদিও মনীষীদের বাঁধানো পথ জন বিরল মূলত।

তবু যেটুকু ভিড় বেড়ে ওঠে ইতস্তত, ছন্নছাড়া।

যুগধর্মের কোরাস শ্রবণে  সন্ত্রস্ত;

তাই ভীত সম্ভবত তোমার বাণীতে।

বাকিদের কথা। বলাই বাহুল্য তা

সৃষ্টির বাণী বোধহয় নিয়ত পরিমার্জন?

অনন্ত পরিশোধন সুন্দরতর পথে সুন্দরতমে।

অথচ সময় সংহতিতে

নিরলস "স্থিতাবস্থা নিশ্চয়তা দেয়

জমানো সুখে"র অনুভবে আমাদের হৃদয়;

শুধু ঐ সুখটুকুর আকাশ ছুঁতে চাওয়া

তাই তোমার বাণীতে খ্যাতির ছোঁয়া লাগেনি এখনো।

তাই তো তোমার প্রত্যয় সরণী আজও হয়নি বাঁধানো।

 

(০৫/০৬/১২)

অঙ্গরাগ সুরভিত

 

 

অঙ্গরাগ সুরভি

 

অঙ্গ জুড়ে রাত নেমেছে

সুরার স্বাদের ছন্দে

আকাশ ভরে ঝিকিমিকি

রজনীগন্ধা গন্ধে

 

নয়ন জুড়ে ফেনিয়ে ওঠে

তন্বী তনুর নৃত্য

কন্ঠ মদির সুরের টানে

ভরিয়ে তোলে চিত্ত

 

বাহুযুগল মেললে ডানা

হৃদয় ওঠে ছলকে

নৃত্য তালের বিভঙ্গেতে

কামনা নাচে ঝলকে

 

রাত সুরভি অধর ছোঁয়ায়

মত্ত অধীর চুম্বন

মিলন তিয়াস ব্যাকুল করে

অঙ্গ ভরা যৌবন

 

আজকে সখী চাঁদনী রাতে

বক্ষযুগল বিহ্বল

শয্যাবাসর মিলন রতি

তোমার ছোঁয়ায় উজ্জ্বল

 

হাজার তারার এইযে আঁধার

অঙ্গে তোমার দুলছে

পূর্ণিমা রাত ঢেউ এর মত

অন্তরে মোর ফুলছে

 

আজকে সখী মিলন রাতে

লক্ষ যুগ সঞ্চিত,

প্রেমের বাঁশি উঠল বেজে

আর রবে না বঞ্চিত

 

তোমার আমার যুগল তনু

সোহাগ রঙে রঞ্জিত

 

অচিনপুরের রূপকথা

 

 

অচিনপুরের রূপকথা

 

রাজকন্যার আখিঁর রঙে মদিরাময় সুর

কাব্যভরা পেয়ালা হাতে ছন্দেতে ভরপুর

মধ্যরাতের বিজন বাসে নিরালা মজলিস

রাজকন্যার ছন্দেসুরে নৃত্য অহর্নিশ

এই যে এখন মদির নেশায় রাজকন্যার গান-

অচিনপুরের রাজপুত্রের জাগিয়ে দিল প্রাণ

 

অঙ্গজুড়ে লাগল নেশা গুঞ্জরিত মন্দিরা

রাজকন্যার চুম্বনে আজ শিহরিত শিরদাঁড়া

পেয়ালা ভরে উঠচে জমে তন্বী সাকীর রূপ

অচিনপুরের রাজপুত্র আর কি থাকে চুপ

রাজকন্যার অঙ্গ দোলে দৃপ্তশিখার উজ্জ্বলে

রাজপুত্রের নয়নজুরে সোহাগ জাগে উচ্ছলে

 

এখন যদি রাজকন্যার নেশায় লাগে ঘোর

অচিনপুরের সখার ওপর খাটায় প্রেমের জোর?

মধ্যরাতের বিজন বাসে হাজার তারার বাতি

অঙ্গ জুড়ে উঠবে মেতে অচিনপুরের  রাতি

 

অজর অমর অক্ষয়

 

 

অজর অমর অক্ষয়

 

জানি বয়সেরও গাছ পাথর আছে

সালোকসংশ্লেষ বুড়িয়ে গেলে

দাহ্য ঐতিহ্য ছাড়া থাকে না উত্তরাধিকার অন্য

 

পাপ পূণ্যের ভানুমতী খেলায় চৌষট্টি খোপের রাজত্বেও

শেষ হাসি ঝরে যাবে এমনিতে

 

তবু দেখ মেয়েটা ছেলেটার বুকে ঘরবাড়ি তুলে

নাতি নাতনি নিয়ে বুড়ি হয়ে গেলেও ক্রমে......

স্নো পাউডারে ভ্যানিটি ভরেছে

 

তন্বীর বুকে মৌতাত খুঁটে খুঁটে

বিবস্ত্র বিষদাঁত মনু-সংহিতা প্রসব তবু করে

প্লাবলিক প্লেসে

 

বেতনভুক ঐতিহাসিকের পেছনে তাঁবেদার মিছিলে

এক পা দু-পা দৌড়ের নিয়মিত অডিশানের

ব্যবস্থা  করা আছে

 

ঢপবাজির সিলেবাস জুড়ে

রাষ্ট্রীয় সংবিধান থেকে দাম্পত্য প্রেমের ইমারতে

সময় শুধু দেখ কেমন স্থিরবিন্দু হয়ে

দাঁড়িয়ে গিয়েছে?

 

(১৫/০৩/১৩)

অদ্বিত্বীয়া অদিতি

 

 

অদ্বিত্বীয়া অদিতি

 

তখন ইতিহাসের কুঁড়িতে প্রথম ধরেছে কলি।

সমুদ্রনীল আকাশের পটে সবুজ মাটির বুকে

জেগেছে প্রথম শিহরণ।

রক্তের রঙে রঙ ধরেছে বসন্তের ফাগুনের।

ইন্দ্রিয়ের স্বরলিপি জুড়ে নেমেছে মালকোষ।

মনু সংহিতার ব্যকরণের

তালা চাবি ভেঙ্গে ঢুকে পড়েছেন বাৎসায়ণ।

রাত্রি তখন তৃতীয় প্রহর।

সমুদ্রের ঢেউ ভেঙ্গে ভেঙ্গে প্রজননের দরজা খোলা নয়,

এ এক বিপুল বিস্ময়।

সৃষ্টির বেদনা সুখ নয়।

পূর্ণ শুধু পূর্ণ হয়ে ওঠার অনন্ত সময়।

তখনি সার্থক হল পৃথিবীর মাটিতে প্রথম,

বিধাতার শেষ অভিপ্রায়।

তোমার অধরে আমার সিক্ত চুম্বনের প্রথম স্বাক্ষর।

শরীরে শরীরে প্রীতি বিনিময়। অনন্ত রাত্রির কোলে

নাগরিক কোলাহল না,

শুধু আমাদের প্রথম আলিঙ্গন তোমার আমার।

প্রথমবারের মতো

 

অনন্ত যৌবন

 

 

অনন্ত যৌবন

 

তোমার সাথে এত কথা হলো জীবন ভর।

যৌবন সঙ্গমের মধ্য রাতের সোহাগ থেকে আজ

পাঁচটি দশক।

তবুও বার্দ্ধক্য গুঁড়ি মেরে হাসে আমাদের শরীরী শিহরণে।

এই বিশ্বের মঞ্চসজ্জা থেকে জানি এবার বন্ধ হয়ে যাবে

কখন সব কানাকানি।

তবু কি তুমি বা আমি তৃপ্তি নিয়ে যাবো?

যৌবন জোয়ারের ঢেউ অবশ স্নায়ুর মৃত কোষে

তাও স্বাক্ষর রেখে যায় স্মৃতিরেখায়।

রোমহর্ষে।

শিহরনে আজও স্থবির চুম্বনের ঠিক আগে।

নতুন দিনের মানুষ।

এসে গেছে যারা,

আমাদের ভাব ভাষা ভালোবাসা সঙ্গম নিয়ে

তাদের অনুভবে

আমাদের বার্দ্ধক্য দেখ ঠিক জব্দ হয়ে যাবে

আজ এই বার্দ্ধক্যের মুখোমুখি তাই

আজও আমি তোমাকে যে চাই।

ভালোবাসা জানো সোনা।

সময় মানে না।

অনন্ত যৌবনে।

 

(০২/০৬/১২)

অনিমিখ সন্ধ্যা

 

 

অনিমিখ সন্ধ্যা

 

কবিতা লিখতে পারিনি কখনো

শুধু অক্ষর পতনের শব্দ শুনেছি

আলাদিনের প্রদীপ দেখিনি

কোনোদিন

শুধু রাজকন্যার স্বপ্ন

দেখেছি

প্রেমের উড়ো চিঠি দিইনি

কাউকে

শুধু রূপসীর এলোচুল গুনেছি

মহাভারতের যুদ্ধে যাইনি যদিও

তবু মহাপ্রস্থানের পদধ্বনি শুনছি

 

(১৭/১০/১৩)

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন