দলিল

 

দলিল

 

এখানে আকাশগুলো মুঠো মুঠো আলো ছড়াবে বলেছিল

কিন্তু ক্ষমতার গদিতে বসে সে কথা আর কে মনে রাখে?

অনেক সাগর মন্থনে যেটুকু অমৃত উঠে আসে

তাতেও নাকি ভেজালের গন্ধ পাওয়া গেছে

 

ওদিকে নোবেল কমিটির ইস্তাহারে

স্বজনপোষনের জন্য

 কূটনৈতিক কোটা খোলা হয়েছে সম্প্রতি

কিন্তু সম্প্রীতির বাতাবরণে সবাই কুলুপ এঁটেছে মুখে

 

বোধদয়ের বইয়ে এবং বর্ণপরিচয়ে,

আর মিডডে মিলে ভর্তুকির কোঠায়;

 বুদ্ধ হেসেছে

মধ্যরাতের শারীরীক বিন্যাসে

এইচ আই ভি পজিটিভের সূক্ষ্ম সংশয় আছে

 

তবু তো এসেছি পরস্পরের কাছে

আমাদের চুমুতে যতটুকু হিসাব পত্তর আছে

যতটুকু আদর- থেকেও হারিয়ে গেছে,

ততটুকু সম্ভাবনা নিয়ে গর্ভের ভ্রূণে যারা জন্মাচ্ছে

তাদের কাছে আমাদের দলিল

 

(৩০/০৭/১২)

দস্তখত

 

দস্তখত

 

চুপ কর মালোবিকা নিপাট বনানীর মাঝে এখনো

বুড়ি চাঁদ জংলাডুলির জলে জ্যোৎস্না হয়ে ওঠে

তোমার ঐ অধর দংশন হাসিতে নেশা আছে,

তাই কাছে এসো বসো এই নেশারুর পাশে

কথা নয় আর, বলো না কথা কোনো

বুড়ি চাঁদ সব কথা জানে

 

বিরল মুহুর্ত মালোবিকা, একবার তাকালে

বসন্ত আসবে আবার মাঘ নিশীথের আড়ালে

মালোবিকা চুপ করো কথা বলো না কোনো

বুড়ি চাঁদ হামাগুড়ি দেয় কিন্তু কি হবে দাঁড়ালে?

 

সংসার- দেরাজে কাগজ দস্তাবেজ দস্তখতে

নিশ্চিন্তে ডিম পাড়ে। মালোবিকা তোমার দুধের

রঙে আমাদের অর্জন যুগান্তর আনবে হয়তো

হয়তো না নয়তো ঝিমাবে

 

তোমার অধর দংশনে বুড়ি চাঁদ তবু জ্যোৎস্না ছড়াবে

কোনো এক নেশারুর ঘোরে যুগ যুগান্তর ধরে

 

 (০৮/০২/১২)

 

দারুচিনি দ্বীপের ভিতর

 

দারুচিনি দ্বীপের ভিতর

 

আমাদের ভালোবাসার শতবর্ষে মাছরাঙা রঙে উড়বে সময়

বাতাসের মৌসুমী মন

আরও বেশি ভিজবে মনে হয়

গোলাপের অস্ফূট কুঁড়ি বলাকার পাতা থেকে পড়বে কবিতা

আকাশ নুপুর ছন্দে মোমের পুতুলের দেশে

নাচিবে বালিকা

আমাদের ভালোবাসার শতবর্ষে সুজাতার পায়েসে

কয়েদের গারদ যাবে খুলে

বিচারের বাণী আর কাঁদবে না ফাঁসীকাঠে ঝুলে

 

দারুচিনি দ্বীপের ভিতর পাণ্ডুলিপি নিয়ে বনলতা সেন

জানি না তখন কবিকে কি বলবেন

তখন সূর্য সূর্য ঠোঁটে জোনাকির ঝিলমিলে

কারা যেন রাষ্ট্রপুঞ্জ গড়বেন

 

আমাদের ভালোবাসার শতবর্ষে অমলকান্তি

সকালের রোদ হয়ে

ধ্রুবতারা হয়ে যাবে

সকল বাঙ্কার থেকে গুপ্তঘাতকের প্রয়োজন ফুরাবে

আমাদের ভালোবাসার শতবর্ষে

হয়ত এমনটাই সব হবে?

 

(২৬/০৬/১২)

দিবা স্বপ্ন

 

দিবা স্বপ্ন

 

এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে

যতটুকু বৃষ্টি করেছি সঞ্চয়

সে জলে সাগর হয়নি হয়তো

তবে তোমাকে ভেজানো

যেতো তো নিশ্চয়

 

এ কথা সে কথা করে

যত কথা বলেছি ক্রমান্বয়ে

সে কথায় রাজত্ব জোটেনি হয়তো

তবে তোমাকে দেওয়া

যেতো তা নির্ভয়ে

 

এক পা দু পা করে

যত পথ পাড়ি দিয়েছি জীবনে

সে পথে এগনো হল না হয়তো

তবে তোমাকে নিয়েছি

তো ঠিক চিনে

 

একটা দুটো করে

যে কটা প্রেমিক রয়েছি এখনো

তাতে স্বর্গ হয় না পৃথিবী

তবে বাকিদের যেতোই তো

খুব ভাবানো

 

 (২৭/০৪/১২)

দিবারাত্রির কাব্য

 

দিবারাত্রির  কাব্য

 

যেদিন আমাদের মন ভালো থাকে না

সোনালী ভোর কিংবা রূপালী সন্ধ্যা

শরতের মেঘমুক্ত আকাশের

ভালোলাগা নীলে শুভ্র রজনীগন্ধা

বসন্তের পলাশ কিংবা শ্রাবণের

অঝর নদীর ছলাৎ ছলাৎ মন

প্রথম প্রেমের লাজুক চুম্বন

কিংবা অধীর আলিঙ্গনের

প্রথম শিহরণ

পরস্পরের ভ্রুকুঞ্চন বিন্যাসে,

সাংসারিক টুকিটাকি

রোজকার নিয়মিতফরমাশে অন্তর দহন

কিংবা স্মৃতির আগোছালো প্রতিভাসে

অভিমানী শয্যায়

শেষ এবং অন্তিম চক্ষুলজ্জায়

সব! সব! ব্যর্থ এবং

বড়ো মিথ্যে বলে মনে হয়

তখন মধ্যরাতের সিম্ফনি

ঝুরঝুর ভেঙ্গে ভেঙ্গে

ঘন্টা মিনিট সেকেণ্ড

মহাকাব্যের পাতা জোড়া

আমাদের লাইন জুড়ে জুড়ে

এযুগের গল্পও হয়ে ওঠে

এক একটা লেজেণ্ড!!!

 

 (১৮/০৭/১৩)

 

দিবাস্বপ্ন নয়

 

দিবাস্বপ্ন নয়

 

স্বপ্নের মধ্যে যারা মরে যায় দমবন্ধ হয়ে

ভয়াবহ প্রেমের আরতি

দিকশূন্যপুরের ঠিকানা হাতে উদভ্রান্ত হৃদয়

বালিঘর বাধঁতে চায়

কুরুক্ষেত্র তাদের জন্য নয়

মধ্যরাতের ক্লান্তি সকালের রোদে ধুয়ে নিলে

কেউ আর আত্মীয় তো নয়

 

জীবন আর দিবাস্বপ্নের

মধ্যে ইচ্ছেগুলো পেণ্ডুলাম হলে,

 কিছুটা সংশয় যেন সেতুতে টলমল করে

 

অনেক পথ নিরালা পড়ে থাকে

অনেক পথে বিপদের গন্ধ আছে

তবু অস্ত্রের ঝনঝনানি আর পরামর্শ কিংবা মন্ত্রের কানাকানি

এ হৃদয়ে রোমহর্ষ জাগালে

অনেকটা জমি হয়ত ফিরে পাওয়া যায়

পায়ের তলায় জমির সত্ত্ব চাই বন্ধু

নয়তো বাঁধবেই কুরুক্ষেত্র

সকালের রোদে

স্বপ্নের আস্তিনে মুগুর না ভাঁজলে মহাপ্রস্থানের পথও রুদ্ধ তাই

 

(০৮/০৮/১২)

দু একটি লাইন

 

দু একটি লাইন

 

[১]

শঙ্খচূড় সাপের বিষেও

ভালোবাসার ওম জমানো আছে

মাটি পৃথিবীর প্রেম

সাপের বুকেও জাগিয়েছে শিহরণ

সেই বিষের থলিতে করেছি অমৃত মন্থন

জলে কুমীর ডাঙ্গায় বাঘ নিয়েও

মানব ছুটেছে তার মানবীর কাছে

শ্বাপদের হুঙ্কার নিয়ে

বুলেটের ঝাঁক থাকে ওঁৎ পেতে

পোড়া বারুদেও লিখেছি তাও মিলনের গান

 

[২]

পা ভাঙ্গা নদীর ঢেউ নিয়ে

পারে আজ মিলনতিথির উৎসব

মানুষ এসেছে তার মানুষীর কাছে

মাটির নিচে আজ যারা ঘুমিয়ে আছে

যুদ্ধ মারী হিংসার দগদগে

ক্ষত নিয়ে বুকে;

তারাও তাদের ভালোবাসা

পাঠিয়ে দিয়েছে আজ সবুজ তরতাজা ঘাসে

সমস্ত সূর্যের আলো নিয়ে প্রিয়া চেয়ে দেখ আজ

কে এসে দাঁড়িয়ছে পাশে

 

 (২১/০৯/১২)

দু ঢোক স্মৃতির গল্প

 

দু ঢোক স্মৃতির গল্প

 

ইতস্তত চুপচাপ ঘুমন্ত দুপুরগুলো শুয়ে আছে।

খোলা আকাশের দিকে নিধিরাম স্বপ্ন ভনিতাবিহীন।

হারানো দিনের বৃক্ষশাখায় ঝুলন্ত ঝুরঝুরে স্মৃতির ঝুরি থেকে

টুপ করে নেমে পড়তে পার এবার।

সংসারী মানুষ।

পলেস্তরা খসা দেওয়ালের মত খিটখিটে যদিও।

তবু নাভিকুণ্ডে ওম এখনো কিছু অবশিষ্ট আছে।

হয়ত জানো না।

হয়ত  জানতে চাও না।

নয়ত ভয় পাও জেনেছি।

তবু দেখ;

নিধিরাম স্বপ্নের বোতলে তোমার জন্য

সামুদ্রিক জ্যোৎস্নার মত

মধ্যরাতের স্কচ থেকে বেলোয়ারী হূইস্কি ঢেলে

রেখেছি আবার।

দু ঢোক তোমার আমার।

মঞ্জরিত পলাশের নৃত্যে সঙ্কোচিত চিত্তে-

পুরানো ঠোঁট দুটিতে দেখ

শীর্ণ শিহরন--

তবু বারণ মানে নি তোমার।

 

(১২/০৮/১২)

দুঃশাসনের সময়

 

দুঃশাসনের সময়

 

বর্ণপরিচয়ের মুখবন্ধে

আমি তোমার আঘ্রাণ নিয়ে বসে আছি।

ময়ুরপঙ্খী নাওয়ে

বিশ্বস্ত বটের ঝুড়ি নামিয়ে রেখেছি তোমার নাভিমূলে।

নীলপদ্ম মানস সরোবর থেকে আমার পক্ষীরাজ

তোমার প্রতিটি অক্ষরে টগবগ করতে উন্মন।

 জলঝর্ণার রূপালী সন্ধ্যার বেসামাল নেশার মতো হয়তো বা।

হয়ত বা চাঁদের সিঁড়ি বেয়ে জ্যোৎস্নার স্থিতপ্রাজ্ঞ অধরের মতো।

ভোরের চুমুর স্বপ্নবিভর প্রত্যয়ে।

তবু বলাকা সন্ধ্যার নীড়ফেরা লগ্নে তৃপ্তির টুপটাপে তুমি এলে কি?

মঙ্গলশঙ্খের প্রলম্বিত ঢেউ বিছিয়ে মাধবীলতা উঠোনে-

কাঞ্জিভরমের বিদগ্ধ রূপের মতো?

হয়ত অযুত শ্যাওলার যোনগন্ধ্যা দূরত্ব

অশনি আসতে দেয়নি।

ভোরের কাগজ খুলে দ্রৌপদী লজ্জায়

মুণ্ডুপাত করি নিজেরই। কৃষ্ণ হতে পারিনি।

 

(০২/০২/১৪)

দুই মলাটের কাব্য

 

দুই মলাটের কাব্য

 

আয়ুর কাপে চুমুক দিয়ে চলেছি রোজকার ছাপোষ বয়স।

প্রেয়সীর ফিকে স্মৃতি...

গৃহিনীর তর্জনী...

ইনবক্সে মাঝরাতের...

অক্ষর সজ্জার ফাঁকে ফাঁকে

বয়সের ভাঁড়ার ক্রমেই হালকা হচ্ছে দেখে

সকালের রোদের সাথে

অহরহ নিভৃত আলাপের

সময় যায় বেড়ে....

সুখ দুঃখের মলাটের রোজনামচায়

একান্ত স্বাক্ষরে কালি কম পড়ছে

একটু একটু করে।

সন্ধ্যার বাতাসে আবহমান ইতিহাস

মিটমিট করে হাসে; ফিরে ফিরে আসে।

পূর্বপুরুষের ফ্রেমে প্রতিবিম্ব পড়ে দুশ্চিন্তার।

চৌষট্টি খোপে কিস্তিমাতের আসরে,

নিধিরাম সময়সরণী তাড়া দেয় শেষঘন্টার।

তবু মাথার চুল গুনি।

আতরের গন্ধে অপেক্ষা ঊর্বসী মেনকার।

শিথিল রাতের পাহারায় তবু,

বয়সের নোনাস্বাদ মধু হয়ে ঝরতে চায়

আরও একবার।

 

(০২/০৬/১৩)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন