মেটাফোর ২০১৯

 


মেটাফোর ২০১৯

 

প্রায়ান্ধকার এই ঘরে বসে আছি

দেওয়ালের দিকে মুখ করে একদম

হলুদ পাতার মতো পলকা স্বপ্নগুলো

এলোমেলো ছড়িয়ে পড়েছে  নীচে

পায়ের একেবারে নীচে চতুর্দিকে

ওদিকে তাকাচ্ছি না আমি আর কিছুতেই

 

আমি দেখে নিয়েছি উদ্ধত ক্ষমতার থাবা

প্রেতযোনির মতো অকালকুষ্মান্ড প্রসব করে

তাদের মিছিল থেকে নির্গত বিদ্বেষ বিষ

পতাকার রঙে ঢেকে ফেলে আকাশের নীল,

বিশুদ্ধ বাতাসের ঘ্রাণ অবলীলায়। তারপর

নিস্তব্ধ রাত্রি থেকে তুলে নিয়ে যায় মানুষের ঘুম

 

মার্ক্স লেলিনের দেশ থেকে উড়ে আসা

ছেঁড়া পাতা জুড়ে যারা ভেবেছিল দিন বদলাবে

সে সব আহাম্মকের মৃত্যুর পর আজ, আহা

টিভির পর্দায় রূপকথার জন্ম হয় রোজ

বাধ্য ছাত্রের মতো দেশ, মন্দির মসজিদ‌ গীর্জা

গুরুদ্বারে ঐশী বাণী খুব মনযোগ দিয়ে শোনে

 

১৩ই জ্যৈষ্ঠ’ ১৪২৬


যা হারিয়ে যায়

 

 

যা হারিয়ে যায়

 

কখনো কখনো

তোমার বুকে হাত রেখে

শুয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়

 

তোমার নাভিকুণ্ডের ওম মেখে

স্বপ্নের রৌদ্রে বাতাসের হাত ধরি

যে হাতে তোমার স্পর্শসুখ ছুঁয়ে আছে

 

অতিদূর মানবসমাজের প্রান্তর জুড়ে

নরনারীর আলিঙ্গনের সময় হলে

ঈশ্বর রং তুলি তুলে রেখে

খোলা বারান্দায় বৃষ্টির ঘ্রাণ নেন প্রাণভরে

শূন্যে তাকিয়ে খুঁজতে থাকেন হারানো অতীত

 

৯ই আষাঢ়’ ১৪২৭

যে কবিতা লেখা হয় নি....


 

যে কবিতা লেখা হয় নি.....

 

সেদিন নাটোরের বনলতা সেনের মুখোমুখি

বসে আছেন কবি শিশিরের শব্দের মতো সন্ধ্যায়

ধূসর পাণ্ডুলিপির আয়োজনে

চারিদিক অন্ধকার সাজিয়ে রেখেছে তার

স্মৃতি সত্ত্বা ভবিষ্যৎ-ঐতিহাসিকের পঙতিমালায়

 

একটি কলম আর শাদা পাতায় সমগ্র জীবন

আর শুধু দুটি চোখ, গভীর গভীরতর অসুখের

স্টেথোস্কোপ নিয়ে বন্দর থেকে বন্দরে

নবান্নের ঘ্রাণ নিয়ে তবুও শেয়াল ও শকুনের খাদ্য হয়ে

শতাব্দীর পাতা ওল্টায় বারুদের আঘ্রাণে

 

তারপরও আহত নিহত লাশের স্তুপে মড়া মানুষের কান্না

শুনে শুনে বধির হয়ে গিয়েছি আমি

তবুও লাশকাটা ঘরে ইতিহাসের লেকচার শুনতে

লাইনে দাঁড়িয়ে আছি আমার কবিতার খাতা নিয়ে

আগাগোড়া শাদা পাতার নিভৃত স্বাক্ষরে

 

২৪শে মাঘ ১৪২৫

রাতের পর রাত

 


রাতের পর রাত

 

পরস্পর আর কি্ছু নয়, অন্য কিছু না

উষ্ণতায় জড়িয়ে থাকা রাতের পর রাত

 

রোজকার বন্দর ছেড়ে চলে যাওয়া নৌকা

স্মৃতি বিস্মৃতির ভগ্ন প্রাসাদে জড়ানো ইতিহাস

 

চুম্বনের সীমারেখা জুড়ে, আমি আর সে

এলোমেলো স্পর্শের আদরে নিষিদ্ধ স্বপ্ন

 

অজস্র মরা নদীর বাঁকে আশত্থ বট পিপুল

ঘুমন্ত জলের শরীরে পরস্পর জড়ানো শিকড়

 

শরীরের গলিঘুঁজি ঘুরে, ডুবতে ডুবতে ডুব

বিন্দু বিন্দু গোপনাঙ্গ সুখ ডুবুরির মগ্নতায়

 

অন্তিম কবরের পাশে, ফণিমনসার ঝোপ

শিরায় শিরায় শিহরণ রাতের পর রাত

 

১২ই জ্যৈষ্ঠ’ ১৪২৪

রাত্রি তৃতীয় প্রহর

 

 

রাত্রি তৃতীয় প্রহর

 

রাত্রি তৃতীয় প্রহর

জানলার ওপাশে নিস্তব্ধ ক্লান্তি নিয়ে

ঝিমিয়ে পড়েছে নিশুতি রাত

এপাশে বিবস্ত্র আমরা পরস্পর

প্রতিদিনের আয়োজনে

কামারের হাপরের মতো একটানা

রক্তিম জীবনকে রাঙিয়ে তুলেছি আরও

ঘুটঘুটে অন্ধকারের বুকে

উজ্জ্বল নীহারিকার মতো

 

এখানে স্বপ্ন নাই নিদ্রা নাই

চিত্রকরের তুলির অমেয় আঁচড় কিংবা

ভাস্করের অসামান্য শৈল্পিক প্রসিদ্ধির

প্রদর্শনী নাই উদ্ভাবনী শক্তি নাই

আমাদের হাতের রেখা বরাবর

হেঁটে যাওয়া শুধু অন্ধকারের বুক চিরে

অলো নয় উষ্ণতা নয় ভালোবাসা নয়

মৃত্যুর আগে চলে যেতে যেতে

সাম্রাজ্য বিস্তারের অকৃত্রিম আনন্দ শুধু

 

 

রূপকথার কথকতা

 


রূপকথার কথকতা

 

কত শতাব্দীর শূন্য মরুভূমি বুকে নিয়ে

দাঁড়িয়ে আছে প্রলম্বিত নিঝুম আকাশ

এখানে সর্পিল অন্ধকার চিড়ে

শুধুই -

রুদ্ধশ্বাস বারুদের গন্ধ

 

এসময়ে তোমাকে আসতে নেই

এসময়ে তোমাকে ভাবতে নেই

 

এসময় অন্ধকারের চোখে

সমস্ত সূর্যের আলো ঢেকে দিয়ে

পরমাণু চুক্তির গোলটেবিল বৈঠক

 

মানুষের অক্ষরে স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণের আনাগোনা

রূপকথার গল্প শোনাতে ব্যস্ত ততক্ষনে।

 

 

রোজনামচা

 

রোজনামচা

 

কিছুই ধরা হলো না দুই হাতে

সাহিত্য পুরস্কার নারীর কোমর

ভালোবাসা

 

গোলাপের তোড়া কিংবা ট্রিগার

মেজনতী হাত সহবাস রাত

একবার

 

যেখানে ব্যাথা জমে ওঠে

নিরন্ন মিছিল কবিতার মিল

নারীর ঠোটে

 

কিছুই ধরা হলো না দুই হাতে

খালি হাত একলা রাত

একার সাথে

 

২৪শে আষাঢ়’ ১৪২৭

রৌরব

 

রৌরব

 

তোমরা যারা আছ‌ো সুখে

সেলফি তোলা হাসিমুখে

সকাল বিকাল ওয়াল জুড়ে

আনন্দেতে বেড়াও ঘুরে

 

এই তোমাদের রকম সকম

রাতভোর দিন বকম বকম

নাচ গান আর গল্প বলা

ঢাক পেটানোর ষোলকলা

 

খুবই ভালো খুবই ভালো

মুখ মুখোশে খুশির আলো

যে যার মতো খুঁটি খুঁজে

নিরব থাকো চক্ষু বুঁজে

 

তাইতো দেখি বক্ষ জুড়ে

নাই কোন খেদ ব্যথার সুরে

যখন শোন কৃষক মরে

ধর্না দিতে পথের পড়ে

 

দিল্লী ঘিরে লক্ষ কিষান

বাজায় ডঙ্কা বাজায় বিষাণ

মরবে তবু ফিরবে না ঘর

কৃষি আইন নিয়ে মাথার উপর

 

জানি, তোমরা ভাবছো এসব

সেই রাজনীতি সেই রৌরব

শিখ খেপেছে আমাদের কি

আমরা বরং তফাৎ থাকি

 

তফাৎ থাকো যেমনটি চাও

নৃত্যগীতের লাইভ দেখাও

যে যার খুঁটি জড়িয়ে ধরে

গলা মেলাও ভক্তি ভরে

 

তোমার যারা আছো সুখে

কি এসে যায় চাষীর দুখে

বরং দেখো বাজিয়ে তালি

বর্গী আনতে ছোটে বাঙালি

 

২৫শে পৌষ’ ১৪২৭

লক্ষ কোটি পা

 

 

লক্ষ কোটি পা

 

রক্তার্ত পায়ের বুকে নীরব পরিযায়ী

মাইল মাইল ইতিহাসে ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী

 

লবণাক্ত ব্যাথার ভারে অপমানের মার

মুঠো মুঠো স্মৃতির ঘরে অস্ফূট চিৎকার

 

ভারতবর্ষ এফোঁড় ওফোঁড় পথের ধারে লাশ

পথে পথে গড়ায় ভারত এমন সর্বনাশ

 

শৃগালেরা হুক্কাহুয়া ডাকছে অবিরত

দলে দলে ফেউয়ের দল হচ্ছে সমবেত

 

আমি তুমি সেল্ফি তুলি হাসি হাসি মুখ

ঘরে গরে মজুত রাখা অন্ন বস্ত্র সুখ

 

নিঝুম পথে এগিয়ে চলে লক্ষ কোটি পা

দ্রিদ্রিম বাজনা বুকে আগুন ভিভবে না

 

৪ই জ্যৈষ্ঠ’ ১৪২৭

শত জীবনের রূপরেখা

 


শত জীবনের রূপরেখা

 

শরীর দোলায় মন দুলছে

খোঁপায় তোমার ফুল ছিল

ঠোঁট ছড়ানো লাজুক হাসি

আমার দেখায় ভুল ছিল?

 

সন্ধ্যা তখন বৃষ্টি ভিজে

মেঘজ্যোৎস্নায় ধরা দিল

উষ্ণ বুকের ছন্দ দোলায়

মনটা আমার কে নিলো?

 

শ্রাবণ তিথির গহন রাতে

তোমার গলায় সুর এল

বানভাসি সেই সুরের স্রোতে

আমার বাণী ভাষা পেল

 

সেসব স্মৃতির আসর জুড়ে

মহাভারত যায় লেখা

এক জীবনের কান্না সুরে

শত জীবনের রূপরেখা

 

ভাদ্রের পঞ্চম দিবস’ ১৪২৫

 

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন