সিঁদ

  

 

সিঁদ

 

শহরের রোদ চুঁইয়ে চুঁইয়ে

স্বপ্নের অস্থি মজ্জায় বাড়ছে উত্তেজনা

আশার অলিগলি ঘুরে সংকল্পের রাজপথে

 

এসময়ের প্রতিটি পদক্ষেপ

আসন্ন যুদ্ধের মহড়ার মকশো

রাত্রি অথবা দিন ঘুমের ভিতর

 

আরও ভিতরে পাশার দানে

বাজিমাতের আসরে

বণিকের হাতেই রাজদণ্ড শোভা পায়

 

বাইরে ধর্মের সুউচ্চ মন্দির মিনার

এ এক আশ্চর্য্য সমন্বয়

মস্তিষ্কে সিঁদ কাটার

 

                                               ৩০শে শ্রাবণ’ ১৪২৫

সূঁচ

  

 

সূঁচ

 

           ফোটার ব্যাথা নিয়ে

 

পৃথিবীর মুখ দেখেছি আমি

 

মানুষের মুখ দেখিতে চাই নাকো আর

 

          আমার ভাঙ্গা হাড়ে

 

নির্ধূম উল্লাস জেগেছে যে হৃদয়ে

 

সেই হৃদয় কিংবা হৃদয়ও হয়তো বা নয়

 

অন্য কিছু নরপিণ্ড হয়তো বা

 

সারি সারি ইতিহাসের পাতার মতোন

 

           মানুষেরই কথা সব

 

খেলা করে

 

রণ রক্ত সফলতার ভিড়ে

 

                                              (২৩-০৭-২০১৭)

সৃজননিশীথে

 

সৃজননিশীথে

 

রাত্রি তৃতীয় প্রহর

জানলার ওপাশে নিস্তব্ধ ক্লান্তি নিয়ে

ঝিমিয়ে পড়েছে নিশুতি রাত

এপাশে বিবস্ত্র আমরা পরস্পর

প্রতিদিনের আয়োজনে

কামারের হাপরের মতো একটানা

রক্তিম জীবনকে রাঙিয়ে তুলেছি আরও

ঘুটঘুটে অন্ধকারের বুকে

উজ্জ্বল নীহারিকার মতো

 

এখানে স্বপ্ন নাই নিদ্রা নাই

চিত্রকরের তুলির অমেয় আঁচড় কিংবা

ভাস্করের অসামান্য শৈল্পিক প্রসিদ্ধির

প্রদর্শনী নাই উদ্ভাবনী শক্তি নাই

আমাদের হাতের রেখা বরাবর

হেঁটে যাওয়া শুধু অন্ধকারের বুক চিরে

অলো নয় উষ্ণতা নয় ভালোবাসা নয়

মৃত্যুর আগে চলে যেতে যেতে

সাম্রাজ্য বিস্তারের অকৃত্রিম আনন্দ শুধু

 

জানলার ওপাশে নিস্তব্ধ বিস্ময়ে

চেয়ে থাকে করোটিহীন চোখ

অনন্ত প্রতীক্ষার মতো প্রেম

ভালোবাসার রূপকথা বুকে

দীর্ঘশ্বাস ফেলে থেকে থেকে

ক্ষণে ক্ষণে ভেসে যেতে থাকে

স্বপ্ন সাধ ভালোবাসা, সব

ঝাপসা দৃষ্টির মেঘে এখনো সাঁতরায়

পূর্বপুরুষের বিদেহী আত্মার মতো যাকিছু

 

১০ই অগ্রহায়ণ’ ১৪২৫

 

সেলফি

  

 

সেলফি

 

ভদ্রমহিলা চুল বাঁধেননি আজ

সারাদিন কেটে গেছে

আয়না পড়ে থেকেছে নিঃসঙ্গ

আলো জ্বলেনি সান্ধ্য অবসরে ঘরে

 

মোবাইলটা পড়ে আছে সামনে

মাঝেমধ্যেই রিংটোনের মায়াবী ডাক

নোটিফিকেশনের টুংটাং অহরহ

কল ধরেননি কোন, ফোনও

 

শুয়ে আছেন পাশবালিশে মাথা রেখে

খোলা জানলা দিয়ে দখিনা বাতাস

শ্রাবণ ভেজা আদরে ডাকতে চেয়েছিল

শূন্য দৃষ্টি মেলে তিনি নিরুত্তাপ চুপচাপ

 

                                                ১৬ই আষাঢ়’ ১৪২৬

সেল্ফি ২

 

সেল্ফি ২

 

সফল লোকের মতো হতে পারলে

বড়ো সুবিধে হতো

রোজকার জুরুরী কাজগুলো

ঠিক মতো ঠিক ঠাক আখের গোছানোর মতো

যারা গুছিয়ে নেয়

নিচ্ছে বংশ পরম্পরায়

আহা তাদের মতো

 

রঙ বাহারি ক্রেডিট কার্ড হাতে

সমস্ত ডেবিটগুলো মিটিয়ে দিতে পারলে

মুহূর্মুহূ উল্লাসের উল্লম্ফনে

আমিও সফল কবিদের মতো

প্রেমের কবিতা লিখে দিতে পারি

সুখ দুঃখের শৌখিন দঁড়ি টানাটানির শেষে

এক পেগ আমেজে ভালোবাসার গলা ভিজিয়ে আহা

 

প্রেমিকাদের লাইনে অটোগ্রাফ দিতে দিতে

ক্লান্ত স্বাক্ষর চুঁয়ে চুঁয়ে স্ফীতগর্ব উদ্ধত বুক

পুরস্কার মঞ্চের হিসাব নিকেশে

এক বার মহাপুরুষ হয়ে গেলে সবাই সফল

সফল লোকের মতো হতে পারলে

যারা পারে পেরেছে পারবে আরও

আহা তদের মতো

 

বাসি হয়ে যাওয়া মন্ত্রগুলো যদি

ভুল অঙ্কের ফর্মুলার মতো অকেজো না হয়ে যেত

কিংবা ধরা যাক এখনো আমি তুমি সে’ও

আমাদের সকল বিবাদ ভুলে হাতে রেখে হাত

পায়ে পায়ে পথ হয়ে ওঠা যেত

গলি থেকে বড়ো রাস্তা হয়ে ক্রমে

হাইওয়ে ধরে স্বদেশ

 

এসব ভুলভাল আবোল তবোল ভেবে

রাত নিশুতি একলা প্রদীপ জ্বেলে আর

কে আর কবর খুড়তে চায়

সফল লোকের মতো

সবাই সকলেই সকলের আগে

বরং পৌঁছিয়ে যাবে

নিজস্ব বিবরে আহা

 

তারপর যে আসে আসুক

যে পারে পারুক

যে যেভাবে চায়

সফল লোকের মতো বরং

আমি তুমি সে’ও দেখ

কেমন রজকীয় ঢঙে

সেল্ফি তুলে নেব আহা

স্বপ্ন বিনিময়

 

স্বপ্ন বিনিময়

 

রোজকার বীর্যপতনের স্বপ্নে

আশাপ্রদ হয়ে ওঠে নাগরিক পৃথিবী

বন্দরে বন্দরে নারীর মেকআপের মতো

উজ্জ্বল নোঙর ফেলে রেখেছি

 

যত দূর চোখ যায় চেয়ে চেয়ে দেখি

মৈথুনরত নগ্ন ছায়ামূর্তী সব

ঠোঁটে ঠোঁট ঘসে ঘসে ক্লান্ত যদিও

তবু দেখো পরস্পর বিশ্বস্ত কেমন

 

অলোড়িত অন্ধকার ঠেলেঠুলে

মৃত অর্ধমৃত আলিঙ্গন সন্ধ্যায়

যিশুর বাণী নয় মানুষের চোখে

পাউণ্ডে ডলারে স্বপ্ন বিনিময়

 

 

স্বপ্নের আমি

 

স্বপ্নের আমি

 

মৃত মানুষের কবরের পাশে বসে

স্মৃতির পাতায় ইতিহাস পড়ি আমি

টুকরো টুকরো স্বপ্ন বেচে যে বাঁচা

মহাপুরুষের জীবনের থেকে দামী

 

চারিদিকে জল চরাচরহীন দিন

নোয়ার নৌকায় ক্রমেই ঘনায় রাত

তবুও মানুষ পরস্পর ভালোবেসে

চুম্বনে আঁকে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত

 

মনে হতে থাকে কখনো নিজেকে একা

মনে হতে থাকে পথ বুঝি হলো শেষ

বুকের হাপরে স্বপ্নেরা ওঠে নামে

তবুও স্বপ্ন জেগে থাকে অনিমেষ

 

মৃত নদীটির বুকের কান্না জমে

জমা হতে থাকে সাত সাগরের জল

আমিও তেমনই তৃষ্ণার জল ছেঁচে

স্বপ্ন ফোটাই অবিরাম অবিরল

 

৩রা জ্যৈষ্ঠ’ ১৪২৭

 

 

 

স্বাধীনতা তুমি

  

 

স্বাধীনতা তুমি

 

স্বাধীনতা তুমি

চাপাতির কোপে রক্ত তুফান মৃত্যুমিছিল।

স্বাধীনতা  তুমি

কাজীর ফতোয়া মৃত্যু নিদান, দিন প্রতিদিন।

স্বাধীনতা তুমি

ককটেল ব্যোম, শিরদাঁড়া পোড়া নাগরিক ঘ্রাণ!

স্বাধীনতা তুমি

দাঙ্গা বিবাদ, আত্মঘাতী সন্ত্রাসী গান।

স্বাধীনতা তুমি

চালশে চোখের চল্লিশ পার, স্বপ্ন ফানুশ!

স্বাধীনতা তুমি

আখের গোছানো বুদ্ধিতে শান ব্যস্ত মানুষ-

স্বাধীনতা তুমি

ভোটের বাক্সে কারচুপি; আর রাজনৈতিক মিথ্যা ভাষণ।

স্বাধীনতা তুমি

মসনদে গেলে দেশের উর্দ্ধে দলীয় আসন।

স্বাধীনতা তুমি

শহীদ মিনারে লাইভ টেলিকাস্ট পুষ্পস্তবক।

স্বাধীনতা তুমি

পান্তা ইলিশে স্বদেশীয়ানার নমুনা যা’হক।

স্বাধীনতা তুমি

দলীয় পতাকা রঙের শ্লোগান ক্ষমতার গান!

স্বাধীনতা তুমি

ভুলতে বসেছো মুক্তিসেনার রক্তের দান!

স্বাধীনতা তুমি

ফসলের মাঠে বহুজাতিকের চওড়া হাসি।

স্বাধীনতা তুমি

বিদেশী পুঁজিতে মৌলবাদের করছো চাষ-ই!

স্বাধীনতা তুমি

কারফিউ কর মুক্তমনার মেধাবী মগজ,

স্বাধীনতা তুমি

                                                দাবি কর আজ স্বাক্ষর করা না লেখা কাগজ।

হায় বাঙালি হায়

 

হায় বাঙালি হায়

 

তুমিও যদি নাই ধর হাত আজ

থাক তবে আর নাই বাড়ালাম হাত

ভিটে মাটি কেড়ে লুটেছে ভোটার কার্ড

স্বদেশের বুকে নেমেছে লক্ষ রাত

 

এ মাটি আমার বাংলায় কথা বলে

হাজার বছর এ মাটি আমার ঘাম

দস্যু ব্রিটিশ সু-শাসনের ছলে

এ মাটির সাথে জুড়ে ছিল আসাম

 

সেই ইতিহাস ভুলেছো বন্ধু সব

রাজনীতি আর ধর্মের ঘোলা জলে

শত্রুরা তোলে অসত্য কলরব

ঘরশত্ররাও শত্রুর সাথে চলে

 

বাংলার বুকে অনুপ্রবেশকারী

বাঙালি তো নয় অবাঙালিই ওরা সব

বর্গীর থেকে গুজরাটি মারোয়ারী

তাদের নিয়েই তোমাদের গৌরব

 

পুড়ছে ঘুঁটে হাসছে গোবর আজ

এখানে ছেঁটেছে চল্লিশ লক্ষকে

ওখানে যেদিন ফেলবে মাথায় বাজ

ছেঁটে দেবে ওরা কয়েক কোটি’কে

 

আমার বাংলা তোমার বাংলা তাই

যেখানে বাঙালি সকলেই সংকটে

অবাঙালিরা আজ একজোট ভাই ভাই

বাংলা দখলে সব দল এক রুটে

 

                                               শ্রাবণের ১৫’ ১৪২৫

হারানো সুর

 

হারানো সুর

 

যে সব গোপন রমণীর সাথে

হয়নি রমণ কোনদিন,

তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা

জমা থাক নিভৃত নিশীথে

পুরানো অভিসার জুড়ে

যারা এলো গেলো

ধুসর স্বাক্ষরে তাদের স্মৃতি

এলোমেলো হাওয়ায় মিলালো

 

এসময় যদিও একাকী

নির্বাক রাত নিস্তব্ধ তিমিরে

গোপনাঙ্গ জুড়ে সময় ফুরালো

তবু যেন গোপন রমণীরা

ফিসফাস করে শুনি, নিশুতি রাত

আজও দেখি লাগে ভালো

 

২৯শে মাঘ’ ১৪২৭


যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন