যে কথা হয়নি বলা

 

যে কথা হয়নি বলা

 

আপনাকে যে কথা বলার ছিল

শপথ বাক্য পাঠ করার মতো

 

সময়ের তাড়া ছিল হয়তো

আপনার সময় ছিল না শোনার

 

কিংবা অতশত কিছু শোনার

অভ্যাস ছিল না আপনার মজ্জায়

 

সে কথা আমিও ধরে রাখি নি

যে নদী একান্তে সব কথা শুনে যায়

 

শতাব্দীর ঢেউ গুণে গুণে

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে

 

তার কাছে সে কথা বলে দিয়েছি আমি

সব কথা উপুর করে দিয়ে একেবারে

 

যদি কোনদিন একা লাগে, একা একা

নদীর ঘাটে পা ডুবিয়ে ঢেউ তুলে দেখবেন

 

সে কথা আপনিই নদীর কানে কানে

চুপি চুপি বলতে চলে এসেছেন একান্তে

 

©শ্রীশুভ্র ২৮শে মার্চ ২০২৪


ভালবাসি ভালবাসি

 

ভালবাসি ভালবাসি

 

পৃথিবী ফুরিয়ে গেলেও তুমি রয়ে যাবে

কারণ, আমি তোমায় ভালবাসি

একথা আকাশ নদী জল জানে

মাটি বাতাস আগুন জানে

আর জানে চিতাভস্ম ছাই,

ছড়িয়ে থাকা ফসিল…

আর কেউ জানুক না জানুক

তুমি তো জানো!

 

এই পৃথিবীর শেষে এক পৃথিবী স্মৃতি নিয়ে

তুমি রয়ে যাবে, অনির্বাণ জ্যোতির মতো

কারণ, আমি তোমায় ভালবাসি

হাজার হাজার মাইল পথ চলেও

যে চলার শেষ নেই, সেই চলার পথে

কত রাজা উজির মন্ত্রী সান্ত্রী এলো গেলো

কত যুদ্ধ মারী মৃত্যু উপত্যাকা পার করে

দেখ, সেই আমি তোমাকেই ভালবাসি

 

আলো কিংবা অন্ধকারে, দুঃখ থেকে

আরও গভীরতর ব্যাথা বেদনায়

সমস্ত শোকের ভিতরে দিয়েও দেখ

সেই আমি, তোমাকেই ভালবাসি

শত শত মানুষের চোখের জল সাঁতরিয়ে

ক্রুশবিদ্ধ যন্ত্রণার মতো প্রতিটি রক্ত ফোঁটায়

সেই আমিই, তোমাকে ভালবাসি

তাই পৃথিবী ফুরিয়ে গেলেও তুমি রয়ে যাবে

 

পৃথিবী ফুরিয়ে গেলেও তুমি রয়ে যাবে

শেষ সত্যের মতো ধ্রুব হয়ে

পৃথিবী ফুরিয়ে গেলেও তুমি রয়ে যাবে

অনাদী এবং অনন্ত হয়ে

পৃথিবী ফুরিয়ে গেলেও তুমি রয়ে যাবে

ভালবাসার মতোন ভালবাসার ভিতরে

পৃথিবী ফুরিয়ে গেলেও তুমি রয়ে যাবে

কারণ, আমি তোমাকেই ভালবাসি, ভালবাসি

 

©শ্রীশুভ্র ২৯শে মার্চ ২০২৪

 


বৃক্ষদর্শন

 

বৃক্ষদর্শন

 

গাছেদের মতো কিছু মানুষ আছে

বটবৃক্ষের মতো ছায়া দেয়, কোলে বসিয়ে

শক্ত শিকড় দিয়ে ঘিরে রাখে

প্রাণ ভোমরা জীয়ন কাঠি,

 

গাছেদের মতো কিছু মানুষ আছে

অভুক্তের মুখে অন্ন তুলে দিয়ে

স্মিত হেসে তৃপ্তিতে ডালপালা জুড়ে

খুশির হিল্লোল ছড়িয়ে দিতে পারে

 

গাছেদের মতো কিছু মানুষ আছে

ফুলের গন্ধের মতো সুমিষ্ট আদরে

অন্তরের অনেক কাছে ডেকে নিতে পারে

ভালোমন্দ বাছবিচার না করে

 

গাছেদের মতো কিছু মানুষ আছে

লতায় পাতায় ভালোবাসায় আষ্টেপৃষ্টে

জড়িয়ে নিতে পারে জীবনের পরতে পরতে

সব ভেদাভেদ রেখা মুছে দিয়ে

 

গাছেদের মতোই কিছু মানুষ আছে

ক্রুশে ঝুলিয়ে দিলেও ক্ষমা দিয়ে

পাপীর পাপকেও হারিয়ে দিয়ে যেতে পারে

নিখাদ ভালবাসায়, ভালবেসে ভালবেসে…

 

©শ্রীশুভ্র ২৭শে মার্চ ২০২৪

 

 


বিশ্রাম

 

বিশ্রাম

 

ভারসাম্যের মতো উজবুক তত্ত্বে

বিশ্বাস করতে শুরু করেছি

চুলে পাক ধরেছে কিছুদিন হল

 

পায়ের গতি স্লথ হয়েছে, চোখ

ততদূর অবধি এগোয় না আর

যতদূরে প্রশ্নের উত্তর আছে

 

ঘর সংসার গুছিয়ে নিয়ে বসে আছি

আর পাঁচজনের মতোই ভয় হয়

ঝড়ঝঞ্ঝা বিপদ আপদ প্লাবনের

 

কে বা কার পাকা ধানে মই দিলো

কে রইল অভুক্ত, কে গেল মসনদে

কি হয়নি আর কি হলো ভেবে

 

কে আর অযথা মাথা ঘামায়!

পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝে

ভারসাম্যের মগডালে বিশ্রাম এখন

 

©শ্রীশুভ্র ২৮শে মার্চ ২০২৪

 


পূতিগন্ধময়

 

পূতিগন্ধময়

 

আমার আর কবিতা পড়তে ভালো লাগে না

এইসব শব্দ অলঙ্কার উপমা

চিত্রকল্প গল্প স্লোগান এবং ছন্দ

ছন্দহীন সময়ে, বড়ো বেশি

ব্যাভিচার বলে মনে হয়

কবিতা কারা পড়ে তবে? আমারই মতো

উজবুক কয়েকজন বাদে? এইসময়ে

কবিতার ভিতরে আর কি খোঁজে?

আর কি বাকি থাকে

জনপ্রিয় কবি’র অটোগ্রাফ ছাড়া!

সেই কিছু তাবড় অটোগ্রাফের কোলাজ

সেই নিয়ে এত কোলাহল তবে?

কে কে পাবে পুরস্কার, কে বাদ যাবে

কে পাবে কল্কে আর কে শোনাবে

বিপ্লবের গান শাসকের কোলে

দোল খেতে খেতে…….

 

নাহ, আমার আর কবিতা পড়তে ভালো লাগে না

একবার মনে হয়, সব পড়া শেষ হয়ে গেছে

একবার ভাবি নতুন কথা সব ফুরিয়েছে

এই যে কবিসভা আলো করে বসে থাকে দেখি

বাঁধা গৎ আউড়িয়ে, মুখে হাসি চোখে লোভ

পায়ে ভারী শিকল নিয়ে, প্রায় স্থবির

তবু কোন ব্যাথা নেই লজ্জা নেই শব্দে অক্ষরে

স্তাবকেরা তবু ঘুর ঘুর করে, টুক টুক করে

সেল্ফি তুলে নিয়ে হাসিমুখ গর্দভের মতো

বাড়ি ফেরে, মুখস্থ বুলিতে ঝুলিতে কবিতা ভরে নিয়ে-

 

ফসিলের মতো মড়া অক্ষর সব, চোখ উল্টিয়ে

চিৎ হয়ে সময়ের চিতায় দুর্গন্ধ ছড়ায়।

 

 

১৭ই মার্চ ২০২৪

 


নিজের মতো একান্ত

 

নিজের মতো একান্ত

 

সারাদিন বসে থাকি, অপেক্ষায়

শব্দের অপেক্ষায়, সারাদিন

অক্ষরের মালা জপি অন্ধবিশ্বাসে

অন্ধের মতো বিশ্বাসকে সাথে নিয়ে

 

সব শব্দ সকলের জন্যেও নয়

কিছু শব্দ থাকে একান্ত নিজস্ব

যত দিন বেঁচে আছি, নিজের সাথে

নিজের কাছে তত শব্দ জমে নি ভাঁড়ারে,

 

কোন কোন শব্দ পছন্দও হয় বেশ

চটপটে, ঝটপট করে বিমোহিত করে

তারপর চট করে নিজের স্বরূপ ধরে

ফটাফট জানিয়ে দেয় বশ্যতার শর্ত

 

ওখানেই যত ভয়, সভয়ে তফাত হই

নিজের পথে চলি ফিরি, নিজের শর্তে

শব্দের অপেক্ষায়, অপেক্ষায় থাকি নিজে

যে শব্দ খুঁজেছে আমাকে, আমারই মতো করে

 

সেই শব্দের স্বপ্নে কিংবা ধ্যানে এই জীবন

যতগুলো দিন বেঁচে আছি, স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি

একান্ত নিজেরই শব্দ, আমার আত্মার মতো!

ধার করা নয়, শোনা কথা নয়, প্রবঞ্চক নয়

 

ভোরের মত সজীব, ফুলের মত সুন্দর

শিশুর মতো নিষ্পাপ, নারীর মতো ফলবতী

আলোর মতো তিমিরনাশী, মৃত্যুর মতো অমোঘ

আমারই মতো একরোখা, বেকুবের মতো সরল

 

©শ্রীশুভ্র ২৬শে মার্চ ২০২৪

 

 


নাচতে নাচতে

 

নাচতে নাচতে

 

সেই যে মেয়েটিকে আমি ভালবাসি

আমার ভালবাসার রঙে রাঙিয়ে নিয়ে

 

তাকে সেদিন হঠাৎ জনঅরণ্যে দেখলাম

কোন এক ছোকড়াকে পটিয়ে নিয়ে চলেছে

 

সে ব্যাটাও বেশ কেষ্ট ঠাকুরটি সেজে

বাঁশিতে সুর ধরেছে মেয়েটির নাচের তালে

 

ও মেয়ে নাচও জানে, নাচাতেও জানে

ছোকড়া তার কতটা জানে, কে জানে

 

তবু আমি চেয়ে চেয়ে দেখি, নাচ দেখি

নাচানোও দেখি, সে’মেয়ের তালে তালে

 

সময়ে অসময়ে কত প্রেমিক, কত পুরুষ

নাচতে নাচতে একদিন হারিয়ে গেল

 

©শ্রীশুভ্র ২৮শে মার্চ ২০২৪

 

 


কবি’র প্রশ্ন

 

কবি’র প্রশ্ন

 

একটা কবিতাও লেখা না হলে

কোনদিন, কার কি যায় আসে

আসতো? ধরা যাক পৃথিবী

কবি শূন্য হয়ে গেল একদিন

 

হঠাৎ, কবিতার পাতগুলো সব

আলোর পতঙ্গের মতো ডানা মেলে

সূর্যের অভিমুখে চলে গেল জ্বলতে

তাতে কি রোদের উত্তাপ বাড়তো?

 

কিংবা ধরা যাক এই আলো, সাতরঙ

কবিতার রঙ কি রামধনু ধরতো?

একটা কবিতাও লেখা না হলে

কার কি যায় আসে, আসতো?

 

©শ্রীশুভ্র ২৮শে মার্চ ২০২৪


একান্ত সংবাদ

 

একান্ত সংবাদ

 

আমি তার ফোনের জন্য বসে থাকি

টুংটাং রিংটোন যদি বেজে ওঠে

বলেছিলেন সময় পেলেই কল করবেন

আমি তাই সেই থেকেই অপেক্ষায়

 

টুংটাং রিংটোন বেজে ওঠে, হ্যালো

না, অন্য কেউ। কিংবা মানুষও ঠিক নয়

এটা টিপুন ওটা টিপুন বলে সময় নষ্ট করে

এত সময় কোথায়, আমি তার অপেক্ষায়

 

বসে থাকি, ঘড়ির দিকে চেয়ে থাকি

সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়, সন্ধে থেকে রাত।

এলোমেলো হাওয়া ওঠে জানলা জুড়ে

সময় হারিয়ে যেতে থাকে, আমি বসে থাকি

 

ঈশ্বরের কথা জানি না, নিজের কথা বলি

টুংটাং রিংটোন বুকে নিয়ে বসে থাকি

সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়, সন্ধ্যে থেকে রাত

এই বুঝি বেজে ওঠে তাঁর একান্ত সংবাদ!

 

©শ্রীশুভ্র ২৭শে মার্চ ২০২৪

 

 

 


অহঙ্কার

 

অহঙ্কার

 

না, এখানে আর কেউ নেই সাথে

কারুর কি থাকার কথা ছিল?

না মনে হয়, যত দূর চোখ চলে যায়

তত দূর শান্ত জীবন, মেঘরাঙা –

শাড়ীর আঁচলের মতো আলোছায়ায়

স্মৃতির পাতা ওল্টাই একা একাই

 

কখনো মনে হয় ভুল অংকের নির্ভুল

উত্তরের খোঁজ রাখে যারা, তারা বুদ্ধিমান

আমার জন্য নির্জনতা ভালো, ভালো

নিরব অহংকার, নিজের কথা

নিজে বলা- ভণিতাহীন, ভয়ডরহীন,

মন রাখা কথা নয়, মনের কথা একান্তে

 

এক জীবন আদৌ যথেষ্ঠ কি? মনের মতো

একটা ভাষ্য রেখে যাওয়া, ভালবাসার

মতন সুদৃঢ় ভুমিতে ঘরবাড়ি গড়ে তোলা?

বরং অনেক ভালো, এইরকম নির্জনতার সাথে

একা একা কথা বলা মনে মনে একান্তেই

পথ হারানো নদীর পথে পথে, পথ চলা

 

©শ্রীশুভ্র ২৯শে মার্চ ২০২৪


শূন্যদৃষ্টির ওপারে

 

শূন্যদৃষ্টির ওপারে

 

শূন্যদৃষ্টির ওপারে দাঁড়িয়ে থাকে কি হৃদয়

আলো অন্ধকারে গিয়ে আলোর থেকে

আরও যেন গভীর অন্ধকারে

পাকে পাকে জড়িয়ে ধরে আরও গভীর,

গভীরতর অন্ধকার কোন

 

আমিও সেইরকম এক ঘনঘোর গোলকধাঁধায়

চারিদিকে ধু ধু শূন্যতার মাঝখানে একা

হয়তো বা তোমারই মতো, কিংবা

বাড়ি ফিরতে না পারা পরাজিত সৈনিক

যেমন হাতড়াতে থাকে জীবনের মানে

 

শূন্যতার মাঝে শূনত্যার মানে খোঁজা বৃথা

জানি, তবু কি এক অমোঘ তাড়নায়

সেই কবেকার কোন উন্মাদের মতো

প্রতিটি প্রলাপের ভাঁজে ভাঁজে আজও

জীবনের মানচিত্র আঁকার প্রয়াস

 

শূন্যদৃষ্টির ওপারে কি থাকে জানি না

শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি, প্রতিটি পলকের ভিতরে

স্বপ্ন সাধ সাধনা কিভাবে মুখ থুবড়িয়ে পড়ে

আলো থেকে অন্ধকারের ভিতরে

অন্ধকারই যেন আলো হয়ে ফোটে বারংবার

 

©শ্রীশুভ্র ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 

 


শকুন

 

শকুন

 

ভাগাড়ে শকুনেরা ডানা ঝাপটায়

লাল বাতি নীল বাতি সাইরেন

সকালের হেডলাইন রাতের ব্রেকিং

নাক ডাকে, নাক ডাকে সংবিধান

 

ভাগাড়ে শকুনেরা ডানা ঝাপটায়

মিছিলের ধারাপাত জুড়ে কত রঙ

রঙিন পতাকা কাঁধে কনিষ্করা

নামতার মতো আউরায় স্লোগান

 

ভাগাড়ে শকুনেরা ডানা ঝাপটায়

প্রতিশ্রুতি শিলান্যাস ফিতে কাটা

মিডিয়ার তাথৈ তাথৈ মাভৈ নৃত্য

সিধেঁল চোরের চৌকিদারি গান

 

ভাগাড়ে শকুনেরা ডানা ঝাপটায়

হাড়গোড় রক্ত ঘাম, পচা ঘন্ধ

ইতিহাসের অধ্যায় মানচিত্র জুড়ে

রামমন্দির ভক্তি ভাতা অনুদান

 

©শ্রীশুভ্র ২৪শে ফেব্রুয়ারী ২০২৪


বোঝাপড়া

 

বোঝাপড়া

 

স্বপ্নের ভিতরে ঘুমিয়ে রয়েছি

দুপাশে চলমান দেওয়াল

মনে হয় নিজেই চলেছি

 

দৃশ্যমানতা

খবরের হেডলাইন অব্দি

অন্ধের হস্তীদর্শন তারপর

এবং চায়ের কাপে তুফান

 

এবংবিধ সময়ে তাঁর প্রবেশ

তিনি, ঈশ্বর প্রেরিত কিনা, জানি না

তবে, বাদবাকি যা কিছু হচ্ছে,

হয় নি, হবে কিংবা নাও হতে পারে

সবকিছু তাঁরই একক প্রেরণায়

 

স্বপ্নের ভিতরে ঘুমিয়ে রয়েছি

রাজসভা আলোকিত মোসাহেবে

মোসাহেবি গান শুনছি

 

ঘুমের সময় জাগাতে নেই

ঘুমের ভিতরে আরও অনেক ঘুম

সাত কুঠরি নয়’ দরজা নয়

আরও অনেক বেশি গোলকধাঁধা,  

 

এবংবিধ সময়ে যাঁদের পথ হারিয়ে যায়

কিংবা গেলেই ভালো হয়, নয়তো

শিয়রে সমন, লোকলজ্জা

তার থেকে পথ হারানো ভাল

নিজেকে প্রবোধ দেওয়া যায়

 

©শ্রীশুভ্র ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 


প্রত্যাশা পূরণের রাতে

 

প্রত্যাশা পূরণের রাতে

 

নিশীথ চুম্বনের মানচিত্র জুড়ে

প্রত্যাশা পূরণের রাতে

অনেক কথা গোপন করতে হয়

 

রাতের পোশাকের মত

মনের বাকল খুলে ফেলা

সহজ কথা তো নয়

 

মানবগর্ভ জুড়ে ইতিহাসের ভ্রূণ

ক্রমে ক্রমে আরও বেশি অন্ধকারে

আত্মক্ষরণের দহন জ্বালার ভিতরে

 

তবুও কি মনস্তাপের সন্ধ্যায়

আত্মসমর্পণের তিথিতে

ঝাঁপ দিতে পারি প্রার্থিত হৃদয়ে!

 

©শ্রীশুভ্র ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 


দূরবীনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে

 

দূরবীনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে

 

দূরবীনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছি

বহুকাল পূর্বে কিংবা পরে

যারা এসেছিল কিংবা চলে আসবে

তাদের মুখশ্রীর মতো

আমাদের মুখ নাকি?

 

বহুকাল আগে, বিষাক্ত বর্শাফলকে

বিষদৃষ্টির আগুন আমি দেখেছি

বহুকাল পরে হয়তো বা সে আগুন

আরও ভয়ঙ্কর রূপে ভয়াবহ তাণ্ডবে

দগ্ধাবে জীবন,

 

তারপরেও দূরবীনে দাঁড়িয়ে রয়েছি

রক্তস্রোতের গহনে যদি কোথাও

অমৃতমন্থনে প্রীতি ভালবাসা

সব গরল ধুয়ে নিয়ে স্থিতু হয়

জীবনের আগে পরে, মরণের সীমানায়

 

©শ্রীশুভ্র ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 

 


তখন মাঝ রাত

 

তখন মাঝ রাত

 

তখন মাঝ রাত,

অস্ফূট পায়ের আওয়াজ

বাইরে অমাবস্যা এলো চুল খুলে

 

ঘুম নেই অনেক প্রহর,

খালি চোখে অন্ধকার ঘোর

হঠাৎ হঠাৎ দরজা ওঠে দুলে

 

দেওয়ালে টিকটিকি জাগে

ওঁত পেতে শিকারের আগে

আমি তখন ঠুঁটো জগন্নাথ

 

ওদিকে দরজা ওঠে দুলে

কেউ কি দুয়ারে পথ ভুলে?

তখনও আমি ঠুঁটো জগন্নাথ

 

©শ্রীশুভ্র ২৮শে ফেব্রুয়ারি


ছায়া হয়ে ছায়ার মতোন

 

ছায়া হয়ে ছায়ার মতোন

 

প্রতিদিন আমি লোকটাকে দেখি

একদমই আমার মত নয়

তবু ছায়ার মতোন ছায়া হয়ে

ঘোরে পিছনে পিছনে

 

মুখে কোন কথা নেই

চোখের দৃষ্টি চোখে পড়ে না ভাল

শুধু পায়ে পায়ে চলার সাথে,

সাথে চলে পিছনে পিছনে

 

প্রতিদিন লোকটাকে দেখি, একদমই

আমার মতোন নয়, অচেনা-

জানি না সে কেমন, কেমনতর

শুধু জানি থাকে পিছনে পিছনে

 

তবু আমি বারবার পিছন ফিরি

ভাল করে জানা যেত যদি

কি চায় সে, কি’বা তার পরিচয়

কেন আমার পিছনে পিছনে

 

প্রতিদিন তাকে নিয়ে চলি

মানুষের ভিড়ে, আলো অন্ধকারে

সিসিটিভির মতো আমি তার নজরে

কোন কথা নেই, অভিযোগ নেই

নিঃশব্দে আমার পিছনে পিছনে

 

©শ্রীশুভ্র ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪


ঈশ্বর কিংবা ভালবাসার কেউ

 

ঈশ্বর কিংবা ভালবাসার কেউ

 

মন্দিরে মসজিদে যাই না

ঈশ্বরের সাথে কোন

ডাইরেক্ট কানেকশন নেই

 

অষ্টপ্রহর নিজের নাম জপি

পরনিন্দে পরচর্চা ছাড়াও

আমার বিস্তর কাজ বাকি

 

মুখ আয়নায় নিজেকেই দেখি

অন্য কারুর কথা জানি না

নিজেকে দেখা সহজ কথা নয়

 

এরপর বাকি থাকে যা কিছু

সেসব বিষয় নিয়ে কেউ কেউ

ঢাক পেটায় হয়ত, আমি নই

 

শুধু জানি অষ্টপ্রহর এই এক গ্লানি

নিজের মতোন আর কেউ নেই,

ঈশ্বর কিংবা ভালবাসার কেউ

 

©শ্রীশুভ্র ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 


আত্মরক্ষার সহজপাঠ


আত্মরক্ষার সহজপাঠ

 

দেখুন, অলরেডি অনেক লাশ পড়ে গিয়েছে

শুনুন, এরপরেও আপনারা যদি সরকারের বিরোধীতা করেন

তবে, আইন কিন্তু আইনের পথে চলবে

 

দেখুন, ভোটের ম্যানডেট সবাই মানতে বাধ্য,

শুনুন, সংবিধান কিন্তু তাই বলে

বিশ্বাস না হলে সমস্যা আপনার

 

দেখুন, আপনার কাজ ভোটের লাইনে দাঁড়ানো

শুনুন, সরকারের কাজ আপনাকে শাসনে রাখা

বুঝুন, নয়তো ভুগুন আইনের যে’কোন ধারায়

 

দেখুন, নিজের ভালো পাগলেও বোঝে

শুনুন, সরকারের পাশে থাকুন। সরকারের কথা মানুন

না’হলে আরও আরও লাশ গুণুন

 

দেখুন, লাশগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে

শুনুন, কথায় বলে বোবার শত্রু নেই

সব লাশ সেই কথা বুঝতে পারে, তবে মরণের পরে

 

দেখুন, নাগরিক কর্তব্য সরকারী দাওয়াই মেনে চলা

শুনুন, গণতন্ত্রের সেটাই কিন্তু শেষ কথা

তারপর জয়ধ্বনি দিন, আবীর খেলুন সমর্থনে

 

©শ্রীশুভ্র ২৮শে ফেবরুয়ারি

 

 

 


অবনী ভালো আছে

 

অবনী ভালো আছে

 

দুয়ার এঁটে জেগে ঘুমায় পাড়া

যতই আমি নাড়তে থাকি কড়া

অবনী আর দেয় না কোন সাড়া

 

মিছিল এগোয়, কনিষ্করা হাঁটে

কারুর কারুর জলপানিটা জোটে

অবনী এখন হিসেব কষে খাটে

 

মঞ্চ জুড়ে সেলিব্রেটি মুখ

হাসে কাঁদায় নাচিয়ে পায় সুখ

অবনী দেখি নেই আর উজবুক

 

নেতামন্ত্রী বাড়িয়ে দিলে হাত

বাঁদর নাচন আনন্দে কুপোকাৎ

অবনী তাই আড়াই চালে মাত

 

মিডিয়া জুড়ে মাভৈ বারোমাস

রাজার নামে জয়দ্ধধ্বনি উল্লাস

অবনী এখন সব পরীক্ষায় পাশ

 

দুয়ার এঁটে জেগে ঘুমায় পাড়া

যতই আমি নাড়তে থাকি কড়া

অবনী আর দেয় না কোন সাড়া

 

 ©শ্রীশুভ্র ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪


যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন