বিষণ্ণ অবকাশ

বিষণ্ণ অবকাশ

 

ওগো মেয়ে আমার মন ভালো নেই.....

তোমার চিবুক ছোঁয়া অন্ধকারে

বড় বেশি কুটুম্বিতা জমে আছে

মনোময় আলো হাতে

 চলে যাওয়া অতীশ দীপঙ্করের পথে

তোমারও তো যাওয়ার কথা ছিল একদিন

কিছুটা অন্তরঙ্গ আদরে

চুবিয়ে নিতে বেশ রোজকার তুলি

বিয়ের পিঁড়ি থেকে শ্লীলতাহানির ধারায়

সব জ্যোতিষীই ব্যার্থ হলে

তোমারও তো বলার কথা ছিল কিছু ......

গান্ধারীর চোখের পটি খুলে

আকাশের চাঁদ নয় তোমার কুসুম কোমল ঠোঁটে

অমলিন জ্যোৎস্না ছড়িয়ে

যত কবিতা লেখা হয় রোজ,

সামাজিক ঘূণপোকারা ছন্দের ছদ্মবেশে করে ভুড়িভোজ

 

 

ওগো মেয়ে আমার মন ভালো নেই

তোমার চিবুক ছোঁয়া অন্ধকারে এবার

সূর্য হয়ে জ্বলো

অতীশ দীপঙ্করের পথ

এখনো

নিরালা পড়ে আছে

 

(২৮/০৭/১২)

বিষাদসিন্ধু

বিষাদসিন্ধু

 

বিণ্ণ মোমবাতির নীচে পাণ্ডুর চাঁদ

অমাবস্যার ধ্যানে

কফিনের শেষ পেরেকের বিলাপে

এলবামের পাতা জুড়ে

আজও নাভিকুণ্ডের ওম

এখানে অজস্র শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হৃদয়

খেলা করে যদিও আজকাল

স্তম্ভিত যমুনার নিস্তরঙ্গ জলের স্মৃতি

অনুবাদ করতে গিয়ে স্থবির কলম

যৌবনের পরপারে বুকের শাদা লোম জুড়ে

শূন্য ক্যানভাসে বিশীর্ণ গল্প

সম্পূর্ণ হয়নি আজও

বিষাদের আর এক নাম যদি হয়

দুটুকরো ছেঁড়া চিরকুটের মতো বিচূর্ণ প্রত্যাশা,

তবে প্রতিদিন মহাকাব্য হয়ে ওঠে জীবন

শাশ্বত জ্যোৎস্না ভেজা জলে

মন ডুবুরির সেতারে বিলম্বিত মালকোষে

ক্যামেরা চলেছে

ঢেউয়ের পর ঢেউ জুড়ে

শুধু প্রেমিক প্রেমিকার কাহিনী নয় এ পৃথিবী

বিষাদসিন্ধুর

এক বিপুল বিস্ময়

 

 (১৬/০৫/১৩)

 

বুকপকেটে ছেঁড়া ফুটপাথ

বুকপকেটে ছেঁড়া ফুটপাথ

 

আসঙ্গ সঙ্গসুখের মৌতাত নয় বরং এক পোয়া চাঁদের আড়াল

রাত্রির গালে চুমু দিয়ে ছুটে চলে যায় শেষ ট্রেন

যন্ত্রনার মন্থনের মতো দূর্বার স্বপ্নগুলো

ভাঙ্গা টুকরোর প্রজাপতিগুলো

সবুজ শিশিরে দূর্বা বুনেছিল বুক পকেটেই

কোথাও ডুকরে কাঁদা মাস্তুলে

নাবিকের সম্ভ্রম চলে গেলে যেমনটা হয়

শেষ চিঠির পর

লজ্জিত প্রতীক্ষার সিঁড়ির শেষ ধাপের মতোন

ঠিক বিণ্ণ আকাশের একার গল্প নয়, তবু

এখানে এখনো কেবলি স্বপ্নভঙ্গ হয়

তবু তুমি চলে গেছ বলে আজ এ প্রভাতে

স্মরণবিন্দু এঁকে ডাকিনি তোমাকে

সমস্ত কথার শেষে নতুন কথা জমে গেলে

পায়ে পায়ে স্থবিরতা ভালো

বুক পকেটে ছেঁড়া ফুটপাথ বৃথাই ভরসা দেয় ঠিকানার

 

(কবি রত্নদীপার একটি লাইন থেকে লেখা)

(২৪/০৪/১৩)

 

বৃষ্টিবিন্দুর ভিতর

বৃষ্টিবিন্দুর ভিতর

 

কিছু কিছু বৃষ্টিকণায় আঁকতে চেয়েছি

তোমার সারাৎসার অনিমিখ মধ্যরাতের বিজন প্রহরে

যে আলপনায় গর্ভফুলে ফল ধরে ভালোবাসার

তেমন কোজাগরী বাসনার নাভিমুলে বৃষ্টির মতো

ঝরাতে চেয়েছি পূর্ণিমার শ্রাবণ অবিরাম অবিরত

তোমার রূপদক্ষ দৃষ্টির উজানে

নৌকাবাইচে যারা ব্যস্ত

তাদের মিছিল দেখেছি

ঘোর অমানিশির ঘূর্ণিতে ডুবে যেতে

বিস্মরণের বিস্মৃতিতে

তাইতো সে পথ আমার নয়

যে অভিসারে দুটি হৃদয়

স্বর্গ মর্ত্য পাতাল এক করতে পারে

মধ্যরাতের ঘোর চুম্বনে

সেখানেই ঝরুক দুটি শ্রাবণ শরীর থেকে শরীরে

উষ্ণ প্রস্রবনের মন মাধুরীর কোজাগরী ঝুলন তিথিতে

শান্ত সহিষ্ণু; অবিশ্রান্ত বর্ষণেও সিক্ত মৃত্তিকার আনন্দে

সেইখানে তোমার জন্যে আমার হৃদয়

 

 (৩০/০৮/১২)

 

বেওয়ারিশ

বেওয়ারিশ

 

আমাদের হাড়গোড় নিয়ে

যারা পড়ে আছি মাটির ভিতরে।

মিছিলে নেই। মিটিংএ নেই।

নেই গোপন বৈঠকে আর।

ভোটার লাইনের গুনতি মাথা থেকে

বাংলার রাতের অন্ধকারে

ভো কাট্টা

বেওয়ারিশ লাশ।

নিখোঁজের তালিকায় নাম লিখিয়ে নর কঙ্কালের

মাটির ভিতরে।

মাটির ভিতরে

গণতন্ত্রের ভিতের গভীরে।

এখন কথা হয় মাটির কানে কানে হৃদয় গহনে।

আমাদের হাতেও কত আহত নিহত মিছিল ফেরত।

কত নিখোঁজ,

কত ঘর থেকে টেনে আনা টাঙ্গির কোপ।

দিন বদলের গল্প এ নয়।

বদলার আগুনে দেশলাই হয়ে পুড়িয়ে পুড়েছি।

 

তবুও

এখনো সদরে উৎকর্ণ কান

কত সকাল রাত জেগে হিসেব রাখে তারিখের।

 

  শুধু

রক্তের রঙে মিলে যায় সব

পতাকার রঙ। ইস্তাহারের ঢং।

 

(০৭/০৪/১২)

বেহূলার ভেলা

বেহূলার ভেলা

 

বয়সের গাছপাথর নিয়েই বসে আছি

সাঁতারের ওপর জল নেই জেনে

তবুও দু চোখে অঞ্জন

নিরঞ্জনের লগ্নে টিম টিম সন্ধ্যার আলোতে

গঙ্গার কোনো এক পাড়ে

এই সেই শতাব্দী প্রাচীন সহস্রাব্দের জলে হয়তো বা

পা ধুয়ে নিয়েছিলো সিরাজের সৈন্য সব

বাড়ি ফেরার কিছু আগে

যে পায়ে কার্ফিউ জারি ছিল

সেনাপতির হুকুমনামায়

সেইদিন আম্রকাননে পলাশীর অদুরে

 

কিম্বা তারও বেশ কিছু আগে বাংলার সবুজ মেয়ে

অবুঝ অভিমানে ডুব দিয়েছিল ভালোবাসায়

ভালোবাসার বুকে অন্তর্জলির সংবেদী সুরে

 

অথচ গোলাভরা ধান পুকুর ভরা মাছ

তেপান্তরের মাঠ এই দেশে

বেহূলার ভেলা ভেসেছিল একদিন

লখীন্দরের দেহ নিয়ে

আজও ভাসে কত ভেলা

লখীন্দর পড়ে থাকে

বেহুলার খোঁজ নেই আর

 

(১৭/০৫/১২)

বৈনাশিক নয়

বৈনাশিক নয়

 

সেদিনের সোহাগের পর

অনেক চুম্বন ঝরে গেল অঝোরে

হয়ত সূর্যকণায় র্ষার আলো লেগেছিল

প্রথম প্রভাতের উকিঁতে

সময়ের সংকেতে অনেক গূঢ়তর ইংগিত

শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যায়

অসময়ের বিলাসী উপেক্ষায় হয়ত

চক মেলানো চৌষট্টিখোপের মঞ্চে

সবটাই মূলত কাল্পনিক হয়ত নয়

নয় সবটাই গাণিতিক বিশুদ্ধতা

হয়ত শুধুই হারজিতের উল্লাস ব্যর্থতা

নয় শুধুই দেনা পাওনার সূক্ষ্ম কেতাবি হিসেব

তবু তোমাকে চিনতে ভুল হয়ে গেল

সন্ধ্যার অবকাশ প্রলম্বিত হলে সহসা

এই পৃথিবীর সমস্ত বিভ্রান্তি ঠেলে—

অমল প্রভাত মুঠোর মধ্যে ধরে

যদি পারতাম বলতে তোমায়

ভুলটা আমারই

এসো আবার ফিরতি পথ ধরি?

পুরানো নোটের মতো সংকোচে

সব নদী মজে গেলেও

পিপাসা বালি খুঁড়ে মরে

 

(১৭/০৩/১৩)

 

বোধিবৃক্ষের খোঁজে

বোধিবৃক্ষের খোঁজে

 

কাল রাতে সহস্র সহস্র আলোকবর্ষের তীরে বুদ্ধের বাণী

মিছিল করছিল তখন

নবান্নের আঘ্রাণে সুজাতার হাত

পরমান্ন নিয়ে চলে বোধিবৃক্ষের খোঁজে

রাজপ্রাসাদের গোপন কক্ষ জুড়ে

সাঁজোয়া বাহিনীর বোমারু বিমানগুলি

তীব্র উত্তেজনায় আরও ক্ষিপ্র হয়ে উঠবে এবার

মহাকাশ বিজ্ঞানী বসেছেন রাষ্ট্রনেতার ডানপার্শ্বে

বামপার্শ্বে ধর্মগ্রন্থজুড়ে হিতোপদেশ নিয়ে অর্থমন্ত্রকের উর্বসীনৃত্য

শিক্ষাবিষয়ক সাবকমিটি ডিগ্রী বিতরণ করে

মেধা টাঙিয়েছে দেওয়ালে

নৃমুণ্ডু শিকারীরা বাজপাখি চোখে

নোবেল শান্তি পদক নিয়ে গোঁফে তা দিচ্ছিল দেখে

আত্মারাম খাঁচার মধ্যে

অনেক মকশো করল বিপ্লবের

বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি বলে সকালের রোদ

ঘুম ভাঙালো তখন

 

 

বোধিবৃক্ষের বেদীতে

বোধিবৃক্ষের বেদীতে

 

মহাপ্রস্থানের পর ছায়াসূর্য প্রলম্বিত

কবরের মধ্যে স্তব্ধ বিশুদ্ধ আগুন

মরা ঘাসের জঞ্জাল

 দিশাহীন অপাঙক্তেয় হয়ে পড়ে আছে পায়ে চলা পথ

অতীশ দীপঙ্করের পদধ্বনি নিয়ে পদচিহ্নের প’রে

সাম্রাজ্যের ইমারতের ভাঙ্গা ইটঁ

গোপন রক্ত লুকিয়ে লজ্জাবনত

ভোরের সূর্য রোদের রঙ সবটুকু সোনালী নয় তত

ফলন্ত শস্যের বীজে কঙ্কালের হাড়গোড় লেগে থাকে

সর্বহারা প্রণামী নিয়ে তপ্ত দুপুর

মানচিত্র একেঁ দেয় করোটিতে

কঠিন মাটির শুষ্ক দহন নিয়ে

বাতাসের ছন্দে মৃত্যুর নির্ঘোষ

তবু সেই সোনালী ভোর আনতে সকাল সকাল---

এক পা দু পা করে

দীপঙ্কর চলেছেন পদব্রজে

 

ক্ষীণায়ু এই সভ্যতা হয়তো তবু কবরে

ভালোবাসার ফুল ফুটবে

 

(মে দিবস)


বোধোদয়

বোধোদয়

 

সুচেতনা যে পথে আলো জ্বেলে,

যে পথে পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবার কথা

সে পথ নিলামে উঠেছে কবে

হয়তো ইজারা পেয়েছে বণিকের দল কিংবা পাবে

অনেক শতাব্দীর বিপ্লব এখন তাদেরই তাঁবে

এ বাতাস যতটা সূর্যকরোজ্জ্বল ভাবা গিয়েছিল

ততদূর ভালো নয় মানব সমাজ

আমাদের মতো মূঢ় ক্লান্তিহীন ভাবুকের হাতে;

কিছুটা অলস সময় আর শীর্ণ পাণ্ডুলিপি

বিবর্ণ অন্তিম প্রভাতে সুচেতনা;

বুদ্ধ কনফুশিয়াসের মতো আমরা কেউ নই

এশতকে বিশ্বায়নের গানে মজেছি সবাই

এ জন্মের মত অনুভব যদি করে যেতে হয় কিছু

দেখিবে অগণন ভাঁড় শুধু চলিয়াছে শয়তানের পিছু

পৃথিবীর গভীরতর অসুখ ছাড়া নেই কোনো সুচেতন সঙ্গ

শাশ্বত রাত্রির বুকে চেয়ে দেখ কেবলই স্বপ্নভঙ্গ

 

 (১৮/০৮/১২)

 


যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন