অভিমান ২

 

অভিমান ২

 

চলে গেছে চলে যায় যারা

সরে সরে আরও বহুদূরে

 

সব কিছু নিয়ে সরে গেছে

ভালোবাসা, প্রাণের তিয়াসা

 

আরো আরো যত কিছু থাকে

সময়ের খাপে বনেদি উত্তাপে

 

ফেলে যাওয়া সাপের খোলসের মতো

ফেলে রেখে গেছে স্মৃতি, বিস্মৃতি

 

চলে গেছে চলে যায় যারা

সরে সরে আরও বহুদূরে

 

ধীরে ধীরে স্মৃতির কুয়াশায়

ছায়া থেকে আরও গভীর ছায়ায়

 

যত কথা বলা হয়ে গেছে

যত কথা বাকি থেকে যায়

 

সেসবও হয়ে গেছে ফিকে

ভাঙা রেকর্ডের গানে, অভিমানে

 

২৮শে জুলাই ২০২৩

ঈশ্বরের খোঁজে

 

ঈশ্বরের খোঁজে

 

সেই ঈশ্বরের দেখা পাইনি জীবনে

লোকে বলে, সে আমার চোখের দোষ

 

ইতিহাসের প্রগাঢ় সন্ধ্যায় দেখি

মানুষের খুনে মন্দির মসজিদ

 

ঘাতকের হাতে ক্ষমতার দণ্ড

নিহতের ছায়া মৃতবৎ নড়েচড়ে

 

ধর্মের ধ্বজায় উড়তে থাকে লোভ

মানুষে মানুষে বিভেদের সুড়সুড়ি

 

তবু যারা নাকি ঈশ্বরের পাণ্ডা

ধর্মগ্রন্থে ভালো কথা লিখে রাখে

 

সে সব কথায় কান দিয়ে রাখে যারা

শান্তি কি পায় যুদ্ধে, আর্তনাদে!

 

সেই ঈশ্বরের দেখা না পেয়ে আমি

বলেছি কেবল ভালোবাসারই কথা

 

তবু যদি কেউ আমার কথাটি শোনে

ভালোবেসে দেখে ভালোবাসাটুকু শুধু

 

৩০শে জুলাই ২০২৩

গুপ্তঘাতক

 

গুপ্তঘাতক

 

তুমি বরং অরুণকে ভালোবেসে দেখো

হয়তো অনেকটা বেশি আলো দেবে

জমকালো, ঠিক যেমনটা তুমি পছন্দ করো

 

নতুন কিছুতে  আসক্তি থাকা ভালো

জহুরির চোখে জহর চেনা আলো,

এবার তুমি আমাকে ছাড়তে পারো

 

পুরোনো ঘাম একঘেয়ে গন্ধ

চেনা উত্তাপ মুখস্থ সংলাপ

সেই সাথে বিরক্তির পাহাড়-ও

 

তুমি বরং অরুণকেই ডেকে নাও

নতুন ঘাম নতুনতর আঘ্রাণ

দেখে নাও কতটা লাগে ভালো

 

আমি বরং সেই অবসরে খুঁজে দেখি

নিজের ভিতরে, কে আছে লুকিয়ে

কে তোমায় অরুণের কাছে পাঠালো

 

এই দেহ এই মন এমনকি হৃদয়’ও

গুপ্ত ঘাতকের মতো, কে জানে কখন

কাকে কাকে করে ফেলে আহত!

 

৩০শে জুলাই ২০২৩

 

ছায়া

 

ছায়া

 

একা একা কবরের পাশে একা

ছায়ার মতোন প্রায় দিনরাত

ছায়া হয়ে আনাচে কানাচে ঘুরি

 

জানি, মাটির গভীরে এখন

সে সব অনেক জটিল কথা

ফিসফাস কেবল প্রতিধ্বনি

 

অন্ধকার সুড়ঙ্গের মতো সব

গোলকধাঁধায় ঘেরা, তত্ত্ব মতবাদ

অনুসিদ্ধান্ত থেকে অনুপ্রেরণা

 

সৃষ্টিকর্তার কথা জানি না

মড়া মানুষের কথা শুনি

মাটি চাপা দেওয়া আর্তনাদে

 

সব কথার মানে জানি না

ছায়ার মতো আবছা সব

শুধু মাটি বসে বসে কাঁদে

 

একা একা কবরের পাশে একা

নিজেকেই খুঁজি পচা ফসিলের মাঝে

ছায়ার মতোন আরও ছায়া হয়ে শুধু

 

৩০শে জুলাই ২০২৩

 

দিক

 

দিক

 

স্মৃতি নেই, ভবিষ্যত জানি না

আর আজকের দিনটায় এসে

বোঝা গেল, দুঃসহ বোঝা

 

চারপাশে অচেনা মুখের সারি

সব ভাষা বোঝাও যান না ঠিক

কে ভালো কে মন্দ’ বা

 

আমি তাই ব্রেকিং নিউজ শুনি

কামান বন্দুক বারুদ গেলাগুলি

পোড়া লাশ, সাফ ভিটেমাটি

 

রাত নামে, অন্ধকারে আলো

খুঁজে নিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ি

টের পাই কোন পায়ে ক্ষত

 

স্মৃতি নেই, ভবিষ্যত জানি না

হামাগুড়ি দিতে থাকি সবদিকে,

ক্ষত পায়ে, যতটুকু যাওয়া যায়

 

কোনদিকে জানি না, তবু

কোন এক দিক থাকা জরুরী

যে দিকে মানুষের ঘরবাড়ি

 

৩০শে জুলাই ২০২৩

 

পুঁজ

 

পুঁজ

 

জলের ভিতর ঝুলে পড়া প্রতিবিম্ব দেখি

বাতাসের উড়ো চুলে প্রাণ খুলে গান শুনি

দেবদারু পাতায় দুলতে থাকা স্বপ্নের মাঝে

দোল খাই গভীর ঘুমে, পাশে পাশবালিশ রেখে

 

টোবিলল্যাম্পের আলোয় গল্পের বই খুলে রাখি

না পড়া গল্পের মাঝে দিক হারিয়ে ফেলি প্রায়ই

এভারেস্টের শিখরে না হোক, মনুমেন্টের উচ্চতায়

ইচ্ছেগুলি টাঙিয়ে রেখে পাশ ফিরি পাশে, নিশ্চিন্তে

 

চিড়িয়াখানার জন্তুদের মতোই আন্দোলনে নেই,

বাকি’রা ব্যারিকেডের ওপারে গান গায়, হাত ছুঁড়ে

আমার হাত জুড়ে শুধু বাড়া ভাত রেশনের চালে

চাল ফুটো হলে ত্রাণের ত্রিপলে ঢেখে রাখি ফুটো

 

আমি’তো পাথরের মতো সহ্যশক্তি নিয়ে চুপ আপাতত

অন্তর্গত লজ্জাশরম সব দগদগে ক্ষত পুঁজে বিষাক্ত যদিও

তারপরেও জলের ভিতরে ঝুলে পড়া প্রতিবিম্ব দেখি

সেই চোখ, নাক মুখ, দুই কান কাটা বেহায়ার মতো……

 

২৮শে জুলাই ২০২৩

 

ভালোবাসার কথা

 

ভালোবাসার কথা

 

কি খুঁজছে ওরা কে জানে

বুঝি না ওরা কোন পথ দিয়ে চলে

এখনো ওরা কি রকম অক্লেশে

 

আবারো ওরা ভালবাসার কথা বলে

 

স্বপ্নের মতো ক্ষণজীবী আলপনায়

বিবেকী আবেগ সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে

এত যে রক্ত প্রতিদিন পথে ঘাটে

 

তবু তো ওরাই ভালবাসার কথা বলে

 

আমি তো দেখেছি করুক্ষেত্রের আগেও

বর্ষা ফলকে টাটকা রক্ত লেগে

হৃৎপিণ্ড খুবলে নিয়েছে কারা

 

তবু কেন ওরা ভালবাসার কথা বলে

 

চামড়ার রং, ধর্ম কিংবা ভাষা

কাঁটাতার হয়ে বেড়া দিয়ে দিয়ে রাখে

সেটাই যখন দস্তুর মতো ঠিক

 

সেখানে কি করে ভালবাসার কথা চলে

 

তবু যে কি খোঁজে এখনো ওরা আজও

হাড় হিম করা হিরোশিমা প্রান্তরে

আমি তো কিছুই বুঝি না ওদের কথা

 

কি করে যে ওরা ভালবাসার কথা বলে

 

৩০শে জুলাই ২০২৩

 

 

 

মণিপুর

 

মণিপুর

 

দিকে দিকে মণিপুর হোক

এসো আমরা বুঝে নিই

কার কতটা শোক

 

নাম ধাম বংশ পরিচয়

কে বড়ো কে ছোট

কে বা আমাদের নয়

 

মুখগুলো চিনে রাখা ভালো

শত্রু মিত্র দালাল কিংবা

মুখ ঢাকা বরাভয় আলো

 

হাতে হাতে হাতিয়ার নিয়ে

মুখোমুখি প্রতিরোধ,

ঘৃণা আর বিদ্বেষ দিয়ে

 

এসো তবে আগুনে পরস্পর

ঢেলে দিই ঘি, ধিকি ধিকি

দাউ দাউ জনপদ, ঘর

 

কে থাকে কে’বা চলে যায়

সব হিসাব মিলে যাবে শেষে

মাটির কবরে, শ্মশানের চুলায়

 

৩০শে জুলাই

 

 

 

রিংটোন

 

রিংটোন

 

ঘুম আসেনি কাল রাতে

ফোনে বাজেনি রিংটোন

 

চোখ খুলে রাখা ছিল

টিক টিক ঘড়িতে ছিল মন

 

সে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা

চারপাশ নিস্তব্ধ নির্জন

 

ছায়াগুলো খাচ্ছিল ঘুরপাক

কে জানে, শত্রু না স্বজন

 

ফিসফাস কানাকানি শুনছিলাম

গোঙানির মতো চাপা গর্জন

 

হাত পা অবশ শরীর জুড়ে ভয়

বাজেনি তবু ফোনে কোন রিংটোন

 

৩০শে জুলাই ২০২৩

সে

 

সে

 

সে বসে ছিল অনেক্ষণ

সময়ের কোন খেয়াল না রেখে

সময়ের অনেক ধাপ

কোনটা অবুঝ কোনটা সেয়ানা

সময়ের অসাধ্য কিছুই নেই জেনে

সে অপেক্ষায় ছিল

 

তবে তার ইচ্ছা ছিল সময়ের ধাপে ধাপে

যুক্তি আর আবেগের সমন্বয় করা

সময়ের ধাপে ধাপে সুস্থতার সাথে

সুরুচির আরাধনা করা

 

সে ভেবে নিয়ে ছিল

সক্রেটিস কিংবা গৌতম বুদ্ধ থেকে

দাস ক্যাপিটালে পৌঁছাতে

সময়ের হাত ধরা প্রয়োজন

 

সে কি জানতো না

শিশিরের মতো শুভ্রতা নিয়ে

যে ভোর হয়, ভালোবাসার মতো রোদ্দুর

যে পথে আলো ফেলে

 

সেই পথে গররাজি সময়

সেই ভোরের স্বপ্ন দেখতে রাজি নয়!

 

৩০শে জুলাই ২০২৩

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন