অলীকসুখ

 

 

অলীকসুখ

 

তুমি আমায় আদর করনি বলে

অভিমানে হইনি পাথর।

স্মৃতির ভিতর দুঃখ পতনের টুংটাং বেজে গেলে

বাগেশ্রী বেহাগে অশ্রুপ্রপাতের শব্দ শুনি।

রূপকথার মতো প্রতিশ্রুতির অট্টালিকা

ভগ্নস্তূপের মতো ভেঙ্গে পড়তে দেখেছি চারপাশে।

তবু ভাঙ্গা দেউলের ফাঁকে ফাঁকে

রক্তকরবীর গুচ্ছ জুড়ে নন্দিনীনৃত্যের আয়োজন অনেক বিষাদসিন্ধুতে।

শতাব্দীর অস্তমিত সূর্যের ম্লান আলো

জ্যোৎস্না ছড়াবে ভেবে

কত রাত জেগে থেকেছি।

সমুদ্রের ঢেউয়ের ভিতর জীবনের উচ্ছল ধারাপাত।

একটুরো ভালোবাসা দুটুকরো স্বপ্ন বুনে গেলে-

তোমার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি

আদরের মতো ভালোলেগে যাবে আবারও

জানি। সেদিনের যুবতীর মিলনস্পৃহায়

পুরুষের ঠোঁট

অম্লকুটের মতো হলেও

ফুরাবে কি আদরের সাধ?

 

(২৩/১০/১৩)

 

অলৌকিক ঈশ্বর

 

 

অলৌকিক ঈশ্বর

 

১)

পাটভাঙ্গা বিকেলের গোধুলি আঁচল!

রোজকার সঞ্চয়গুলি ক্রমশ প্রজাপতির রঙের মতো

খুশির অক্ষরগুলির দলে ভিড়ে যেতে চায়।

 

দুহাতের পাঁচদশ আঙুলে বহুমূল্য রত্নের কনভয়!

হাতের কারুকাজ দেখলে তাক লেগে যায়।

সুখের বিকিকিনি সবটাই চিটফান্ড নয়

 

হারহাভাতের গ্লানি নয়, দুপকেটের দুরকম সঞ্চয়

নিয়ে এখানে লাইন দিতে হয়। এখন

বেহায়াদের সুখের সময়।

 

(২)

নিরব জানলা দিয়ে পোড়া মোমবাতির দৃষ্টি

উদাস, এ পাড়ায় দশ ঘর দলদাসের বসবাস।

লাল নীল গেরুয়া সবুজে বিবর্ণ ক্যানভাসের উল্লাস।

 

কোথায় খবর আছে! ব্রেকিং হেডলাইনে থ্যাতলানো প্রতিবাদী মাথা,

মেরুদণ্ড জমা রাখা মিছিলে ভিড়ে যান দাদা।

 ফাঁকা থাক চিত্রগুপ্তের নাম তোলা খাতা।

 

মধ্যরাতের রাঁদ্যেভু অ্যাভেন্যু ধরে ঈশ্বরদের অলৌকিক আনাগোনা!

বাটপারিব হাটে-  বড়ো সুখ

মিষ্টি মধুর মোলায়াম হাতে ব্যলোটবাক্স গোনা।

 

(০৬/১০/১৪)

অশনি সংকেত

 

 

অশনি সংকেত

 

অচেনা মুখের সারি

চেনা মুখোশের আড়ালে

ঢেকে দিলে হৃদয়ের মিল,

আকাশের নীল থেকে সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউ

আর বরফ গলা পাহাড়ের সারির সাথে কথা বলে দেখো ভালো নেই কেউ

বস্ত্রহরণ সভায় লজ্জা ছিল চেনা মানুষের নির্লজ্জতায়

তবু ছিল না মুখোশ নৃত্যের আড়াল দেওয়া অশনি সংকেত

আজ চেনা হাসির যে গানে হাততালি দিয়ে এলে

কাল সে গান

তোমার নামে সমন জারি করলে

পাহাড়ের কাঁধে মাথা রেখে কেঁদো

আজকের মধুযামিনী শয্যা

কাল যদি চিতা হয় জ্বলে বুকে;

 সমুদ্রের ঢেউ গুনে দেখো কত পোড়া দাগ

জীবাশ্ব হয়ে বাঁচে

আজকের চুম্বনে যত উত্তাপ

কাল ছোবল দিলে নরমে;

নীল আকাশকে কাছে ডেকো

 নীলকণ্ঠ বিষের ভাঁড়ার নিয়ে যদি নেমে আসে পাশে

একবার.....

 

(০৭/১০/১২)

অসুখ

 

 

অসুখ

 

চেনা মানুষটার হেঁটে যাওয়া দেখে

বুঝতে পারি পথটা অচেনা।

ফেলে যাওয়া কথার টুকরো দিয়ে

ভালোবাসা গাঁথতে গেলে অন্ধকার

নামতে থাকে শিরদাঁড়া বেয়ে।

তবু কাজল কালো চোখের মোহে

পাতলা চুম্বনে হালকা আদর এলে

এস এম এস- এ;

শক্তি সুনীল জয়ের পাতায়

ধার যায় বেড়ে।

আর্সেনিক স্তরে কথা জমে

গেলে পক্ষাঘাত প্রেম নিয়ে

হাঁটতে হয় মস্তিষ্কের অলিগলিতে

কারফিউয়ের রেলিং ধরে ধরে।

প্রত্নতাত্বিক খননের আলোকিত জানলা খুলে

বোধিবৃক্ষ খুঁজে পাই যদি

গোলাপ ভেজানো জল নয়,

প্রেমের শপথ নিতে

আবার হাঁটু গেড়ে বসতে

হবে সুজাতার পরমান্ন ঘ্রাণে।

 

(০১/০২/১৩)

অসুখের পাঁচালি

 

 

অসুখের পাঁচালি

 

সম্ভ্রান্ত অসুখগুলো ক্রমেই

ত্যাগ করছে আমাকে।

রোজকার আর্শিতে চোখ রেখে রেখে টের পাই,

গভীররাতের যন্ত্রণাগুলো-

অসম্পূর্ণ সকালের গোটানো ক্যালেণ্ডার-

ভগ্নস্বাস্থের শীর্ণ দুপুর গড়ানো বিকেল-

ক্রমশ শিকড় হারানো সন্ধ্যার গাঢ় অন্ধকার-

উৎকণ্ঠার শিরা-উপশিরা বেয়ে ততটা হৃতসর্বস্ব নয় আর।

পিচ গড়ানো সর্পিল রাজপথ বেয়ে

আমিও সরীসৃপ হৃদয়ে শীতঘুমে আয়েসী হয়ে উঠেছি ক্রমশ।

রাজকোষ বোঝাই

মানবিক যন্ত্রণা থেকে ঐশ্বর্য্যের শ্লাঘার আঘ্রাণে-

আমিও পরিশ্রমী আজ।

আর্শিতে চোখ রেখে দেখি

চোখের কোলে সেই মেহনতি কালি নেই আর।

মধ্যরাতের জলসায় শ্যাম্পেনের ফোয়ারা জমছে ক্রমেই।

লেলিনের ভগ্নস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে

পায়ের তলায় গোটা পৃথিবী

আজ।

 

(২৭/১২/১৩)

অসুখের বাস

 

 

অসুখের বাস

 

তোমার শরীরীক আঘ্রাণ থেকে

আমার ঠিকানা মুছে দিতে পারো।

তোমার চোখের নিশানা থেকে

আমার বিস্ময় হয়তো আমিও সরিয়ে নেবো।

তোমার ঠোঁটের আদরে হয়ত ভিজবে নতুন মন।

বুকের দুধে আশ্রয় পাক তবু নতুন নবজাতক।

আমাদের যে শিশু

ভুমিষ্ঠ হয়নি নিশীথ রাতের কাব্যে;

তারও অবাক বিস্ময় আমাদের ছন্দের দ্বন্দ্বে।

মূক করে রাখে মননের রামধনু রঙ।

হয়তো শরীরও সর্বস্ব নয়- জীবন জুড়ে।

হয়ত মনও যথকিঞ্চিত জীবনের আঁতুরে।

হয়ত রক্ত তার চলার পথে আজ যে কথা বলে,

অসুখের বাস আজ সেখানে।

হয়ত এখনো সময় আছে।

সমস্ত রক্ত ধুয়ে নিতে হবে।

রক্তের বিন্দু থেকে তুলে নিতে হবে

সন্দিগ্ধ দিন,  বাঁকা ঠোঁটের হাসি

নয়তো কে বুনবে আর প্রেমের সতেজ বীজ?

শরীর খোলা রাত্রে।

আঁতুর

 

 

আঁতুর

 

স্পন্দিত নরকে যদি ঠাঁই না হয় ধুসর গোধুলি মুখে

চিরকূটে লিখো নাম

আঁতুরের ঠিকানায় আর একবার।

সবুজে সবুজ লাশের মিছিলে

আদর্শের জয়ঢাক রেখে ঢেকে কথা বলে থাকে।

রাজনীতি রণনীতি পাশাপাশি

ঘনিষ্ট হয় প্রগাঢ় চুম্বনে।

পেশাদার আড়চোখে দেখে নিয়ে চড়া দর হাঁকে।

কোটিল্যশাস্ত্র চলেছে নোবেল শান্তির মেডেল হাত পেতে নিতে।

 

প্রিয় তোমার গল্পটা এইখানে শুরু করে দিয়ো।

স্বর্গের ডেমো রেখো থীম সঙের বিস্তৃত ক্যানভাসে।

তারপর নরক গন্ধ থেকে

উঠে আসা আঁতুরে

তোমার আত্মজা।

শঙ্খ পদ্ম নয়।

বুলেটের ফাঁকা খোল

পোড়া কার্তুজে শক্ত চোয়াল জমা রেখে

নবজাতক কাঁদুক তোমার লেন্সে।

 

আজ কৃষ্ণপক্ষের রাত

আমাদের সঙ্গমে

ছায়া দিয়ে গেছে।

এবার তোমার বুকের ওম।

 

(২১/০৬/১২)

আকস্মিক! কিন্তু অনাহূত কী?

 

 

আকস্মিক! কিন্তু অনাহূত কী?

 

জানি না অনাহূত কিনা

বিঘ্ন কি ঘটল কোথাও আমার আকস্মিক আগমনে?

আকস্মিকও হয়ত নয়

হয়তো জমাট স্বপ্ন গলে ছিল উষ্ণ হিমবাহর মতন

পরস্পর আদরে

স্বপ্ন বীজের মতো অঙ্কুর ফুটিয়ে দিয়ে যায়

আমরাও মহীরুহ হতে চেয়ে

হয়ত হামাগুড়ি দিচ্ছি লতাপাতার মতন

হয়তো পথ আটকিয়ে দিয়েছি কারুর

 আকস্মিক বিঘ্ন ঘটিয়েছি তোমার ব্যাক্তি স্বাধীনতায়

আসলে আকর্ষ ছড়িয়ে জড়িয়ে ধরতে চাওয়াই

প্রেম

হয়ত দম বন্ধ হল তোমার

হয়তো মিলে গেলে আমাতেই

সেটাই আকস্মিক

তবু অনাহুত কি?

তুমিও কি নও আমার মত

আমিও তোমার মত?

আমরা যেন জলের ঢেউ

প্রবাহের মত্ততায় আমাদের জীবন

সঞ্চারিত হোক প্রতি রাতের ব্যাকুল বাসরে

আকস্মিক হয়তো কিন্তু না অনহূত নই কেউই

কারুর

আকাশ কুসুম

 

 

আকাশ কুসুম

 

অনেক দূরের পথ ছেঁকে নিয়ে দু পায়ে জড়ো করেছি দৌড়

হাউই জাহাজ নয় টর্নেডো টাইফুন নয় তবু

অনেক দ্রুত তোমার হাত ধরতে সমস্ত হৃদয়।

শতাব্দীগুলো ছুটে যাচ্ছে হই হই করে।

স্তাহারে রেখে যাচ্ছে ফানুশ রাঙানো গল্প।

ঐতিহাসিক যতোই মুচকি মুচকি হাসুক,

 গল্প শুনতে সবাই ভালোবাসে।

সমস্ত পথের শেষে আমাদের দৌড়

ঠিক যেখানে ফিরে চলে আসে সেখানেই

শহীদ বেদী আর সিংহাসনে আসীন বণিকের মানদণ্ড।

আলোর মোড়কে অন্ধকারের তাপ

খণ্ড খণ্ড অশ্রুলিপিতে তোমার ছবি আঁকে রোজ।

রোদের সোনা ঝরা হাসি নিয়ে অথচ আমি

দু পায়ে জড়ো করেছি যতটা দৌড়।

 ততটা ভালো তোমার হৃদয়।

শতাব্দী শেষের গল্পে

তবু কি খুঁজে পাবো তোমায়।

 

(১০/১০/১২)

 

আকাশলীনা

 

আকাশলীনা

 

সহস্র সহস্র আলোকবর্ষ দূরে

যে আলোটা মরে শেষ হয়ে গেছে বহুদিন আগে;

তারও ছবি আজ আকাশের এই পাড়ে রাত কালো অন্ধকারে

তোমার স্মৃতিই যেন আবার ফিরিয়ে আনে।

 

প্রতিটি মৃত্যুর ইষ্টিশানে দুঃখের প্ল্যাটফর্মে

যত স্মৃতি ভিড় করে শতকের মিছিলে

দক্ষিণ সমুদ্র থেকে মিশরের পিরামিড পাথরে

খোদাই তোমার নাম।

 

এশিয়া আফ্রিকা ছেড়ে আমাদের ঘাড় কুঁজো বাংলাদেশে

মাঘ নীলিমায় মৃদু শীতে স্মৃতির রোমন্থন নামে

স্বপ্নের অবচেতন ভীড়ে ব্যাথার শরীরে।

 

তবু এই ব্যাথা কেবল ঘুরে ঘুরে মৌসুমী বায়ুর মতো

বৃষ্টির আদরে উর্বর করে যায় হৃদয় আমার;

সেইখানে শিশিরসবুজ ঘাসের চিবুকে

তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া যেন আছে;

গোপন আলোকবর্ষব্যাপী

ছায়াপথের কাছে।

 


যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন