ঈশ্বরের বাগান

 

 

ঈশ্বরের বাগান

 

শরীরের সমস্ত জলে যৌবনের গুটানার কথা তো নয়?

ঈশ্বরের বাগানে পাশার দানে বিস্তর গরমিল তবু,

গোঁজামিলে জ্বলছে আমাদের চুম্বন।

বসন্ত পূর্ণিমার রাত পেড়িয়ে

হামাগুড়ি দিলে ইলশেগুঁড়ি ইচ্ছে,

ফুলবেলপাতায় কুঁড়ি ধরে নবজাতকের।

ছাপোষা ঘরকন্নার মাঝে কেবলই মহার্ঘ্য ভাতার হিসেব।

অভিজ্ঞ রাতক্লান্ত শরীর তারিখেই ব্যস্ত।

সমস্ত চুম্বন জুড়ে

যৌবনের কথকতা আর জীবনের উত্তাপ;

মেলাতে পারল কই ইতিহাসে ঈশ্বর।

তবুও প্রার্থনার ঘরে যদি একবার দেখা হতো

তোমায় আমায়।

সবুজ মাটির দুধে শুভ্রমন মেলে দিলে

হে প্রপিতামহী

সূর্যস্তব সত্য হত যৌবন উপবনে।

ঝরে পড়া পাতার হলুদ চোখে-

মহাপ্রস্থানের পথ আমাদের অধর দংশনে

ঈশ্বরের বাগান তখন।

তোমার গর্ভজাত।

 

(১৮/০৪/১৩)

উড়ান

 

 

উড়ান

 

দুচোখ সাহারায় কান্নার কাছে নতজানু নয়।

পৈতৃক শিকড়বাকড়ে ঘূণের সুনামী।

বসন্তবিলাপে বধির সময়, হাত ঘড়িতে

টিক টিক করে না হৃদয়। অপেক্ষার রামধনু এঁকে

রাতের শেষ ট্রেনের হুইসেলে জেগে থাকি না আর।

বিসন্ন বর্ণমালা জুড়ে আহত শয্যার গানে

কে আর অবসন্ন হতে চায়। ধমনী জুড়ে বরং

চেতনার পান্নায় সবুজ নয়; চুনীর ক্যারেটে

শেয়ার বাজার পিঠে হাত রেখে যায়।

সেলোফোনের কল লিস্টে হাই হ্যালো থেকে

বুকিং শুরু পরবর্তী একজিবিশনের।

অলৌকিক ধ্রূপদ ধামার শেষ।

এবার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের হ্যাণ্ডশেক আসরে

ময়ুরকণ্ঠী শাড়ীর নাভিতে মন্দাক্রান্তার সাথে

আবারো দেখা হয় যদি? ধুলোটে স্মৃতির সরণী নয়,

একচোট হাসা যাবে স্কাইস্ক্র্যাপারের ইচ্ছের উড়ানে।

 

 (১৯/১২/১২)

 

এই আষাঢ়ে

 

 

এই আষাঢ়ে

 

আষাঢ় ঘন দুপুরে  ভালোবাসা ভিজে উঠলে টাপ টুপ।

সজল মেঘের আনাগোনা বাতাসে কানাকানি করে।

শরীরের কোণে সময় গ্রন্থির যাবতীয় পিছুটান

চোখের জল ফেলার জন্য আড়াল খোঁজে দরদী মনে।

তুমি বলতে পারো

এখন আমাকে কেমন লাগে।

এক নদী বিস্ময় নিয়ে

আমি না হয় নতুন করে বসবো তোমার পাশে?

আকাশের শামিয়ানার মৃদু উত্তাপে

তোমার সান্নিধ্য হয়তো মোহান্ধ করবে আবার।

বৃষ্টির জলে সংশয় ধুয়ে নেব নাহয়;

এক আষাঢ় ঘন প্রত্যয়ে।

আরব্যরজনীর আঘ্রাণ-

তোমার সংলাপে না থাকলেও চলে যাবে।

আমাদের সমস্ত সৌরভে এই বর্ষায় প্লাবন আনি এসো।

আষাঢ় শ্রাবণ ধুয়ে গেলেও আমাদের শরৎ থাকবে অপেক্ষায়।

আষাঢ় ঘন আকাশে এসো বিস্মিত হই শেষবারের মতো।

আর একবার।

 

(০২/০৭/১২)

 

 

এক খণ্ড প্রেমের গল্প

 

 

এক খণ্ড প্রেমের গল্প

 

আজ রাতে বৃষ্টি হবে নারী?

আমার মধ্য বয়সের সঞ্চিত ভাঁড়ারে?

তোমার শরীর জুড়ে রাত বারোটার গান

আষাঢ় হয়ে নামুক।

মাধবীলতার মৃদু সঙ্গীত নিয়ে এসো টাপটুপ ছন্দে।

আকাশ জোড়া কালো চুলে বজ্রবিদ্যুৎ এঁকো।

আমি পথ চিনিয়ে, নিয়ে আসব ঘরে।

 

এমনই এক আষাঢ় সন্ধ্যা নিয়ে শ্রাবণ বিতানে

বর্ষা হয়ে ওঠার প্রত্যয়ে পৃথিবীর যাবতীয় সঞ্চয়

কেবলই প্রেমের কথা বলে।

 

সরস মৃত্তিকার মতো নারী তোমার ভরা যৌবনে

যত বর্ষা নেমেছে নিয়ত, আমায় ভেজাবে তো।

 

বাইরে নিকষ কালো অন্ধকারে আকাশ ভেঙ্গে নেমে দেখ।

পুরুষের বুকের জলাধারে সাত সমুদ্র তেরো নদীর জল।

তোমারই অপেক্ষায় তবু।

ভালোবাসা শ্রাবণ হয়ে ঝরুক। বর্ষা আরও প্রেমের গল্প বলুক।

 

(১১/০৭/১২)

 

এক জীবন

 

 

এক জীবন

 

ঘুঙুরের শব্দ শুনি স্বপ্নের খুঁটিতে।

রঙমশালের হাসি

থেকে থেকে উড়ে যায় দেখি

বন্ধ চোখের ফাঁকা বারান্দার রেলিং টপকে।

ফিসফিস গুঞ্জনগুলো

 যেন উদ্ধত দুর্বিনীতের মতো

কৈফিয়ত তাক করে আস্তিনে লুকানো গুলতির

নিখুঁত নিশানায়।

বিষাক্ত নাগিনীর ছোবলের মতো

ব্যাঙ্গবিদ্রুপের যতি চিহ্ন

ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিয়ে যায়

ভালোবাসার দুর্বল মুহূর্তের বিবস্ত্র সন্ধ্যায়,

নিষ্প্রদীপ সীমান্তে।

ভাঙাচোড়া টুকরো টুকরো আবৃত্তিগুলো

তখনো লজ্জা নিবারণে স্মৃতির জলসায় স্বরক্ষেপণে মগ্ন।

দিগন্তের দুশ্চিন্তার ধূসর রাগিণী

ত্রিতালে ত্রিভুবন জুড়ে

বুষ্টির দিকে নীরবে তাকালে, তখন-

মহাকবি মহাকাব্যের তোড়জোড় করেন।

মহাপ্রস্থানের আগে।

শেষ রাতের সীমান্তে।

 

(২৫/০৫/১৩)

এক যে ছিল মেয়ে

 

 

এক যে ছিল মেয়ে

 

এক যে ছিল দেশের এক যে ছিল মেয়ে।

গুণবতী রূপবতী হয়তো সবার চেয়ে।

 

গুণের মধ্যে খুব বেশি না গাইতো যখন গান।

গুপি বাঘাও থমকে যেত থরথরিয়ে প্রাণ।

 

রূপ সাগরে ডুব দিলে চোখ প্রাণ মাতানো দিন।

নন্দী ভৃঙ্গী  মোহিত হয়ে তাহার রূপে লীন।

 

গানের মধ্যে মনের বাঁশি জাগিয়ে তোলা সুর

রূপের মধু মোহিত করে অন্তরে ভরপুর

 

এমন করে রূপে গুণে ভরিয়ে রাখে প্রাণ।

তাহার র মাঝে হারায় যে তাই মোর জীবনের তান।

 

এই ভুবনের ছন্দ দোলায় তাহার সুরে রূপে

মন ভরে যায় মুগ্ধ হয়ে বিমুগ্ধ নিশ্চুপে।

 

এমনি ভাবে রূপে গুনে মুগ্ধ করা মেয়ে।

এক যে ছিল দেশের। সে যে শ্রেষ্ঠ সবার চেয়ে।

 

(২৪/০৭/১২)

একরৈখিক বৃত্ত

 

 

একরৈখিক বৃত্ত

 

একরৈখিক বৃত্তের সমদর্শী কেন্দ্রে

স্থির নেত্রে স্থিত হয়েছি অবশেষে।

দেখেছি হেমন্তিকা দৃষ্টির

পঞ্চব্যঞ্জনে;

মুঠো মুঠো মৃত্যুর টোকেন হাতে

সূতিকাগারের প্রথম কান্না কানে এসে বেঁধে।

জলজ সমুদ্রের সংসার থেকে

ক্রমশ আকাশমুখী যে উড়ান।

বাজের নখের মতো ধরালো তীব্রতায়।

তীব্রতারও প্রয়োজন আছে প্রজননের পর।

অভিযোজনের পথে ক্লান্তিহীন অভীপ্সা তবু

মরণের কাছে এসে সৎ।

আমাদের চৌষট্টিকলার পরিসরে

মৃত্যুরও ভুমিকা আছে।

সমস্ত অহমিকার কাছে নতজানু সময়ের গতি

শেষ পংতিতে এসে হয়ত সমদর্শী হবে একদিন।

হৃদয়ের গভীর গিরিখাতে

তোমার জন্য জলপ্রপাত ঝরিয়ে চলেছি প্রিয়ে।

মৃত্যু উপত্যাকা দিয়ে আমাদের আলিঙ্গন

আলপনা দিক চুম্বনের।

মৃত্যুর অধরে জন্মের।

 

(০৪/১২/১২)

 

একাধিক গল্প ততধিক শোক

 

একাধিক গল্প ততধিক শোক

 

নীরোর বেহালায় ইতিহাসের পাতা পুড়লে

নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের দোষ?

পৃথিবীর মাটির ভাঁড়ারে সাম্রাজ্যের জাদুকাঠি আছে,

তবুও মানুষ হাজারো ম্যানিফেস্টো ছেপেছে!

কাঁঠালপাতা প্রসবের পর রঙতুলির এজলাসে

সিং নাড়ে ধর্মের ষাঁড়।

বুদ্ধ কনফুসিয়াসের মর্মবেদনা কোনো দৈববাণীর জন্য নয়,

কাঁদে কাঁদায় ভালোবাসার তাজমহলে।

মিশরের উটের পিঠে পিরামিড দেখে

চমকায় যে শিশু- তার কাছে ভাবী দিনের সুখবর আছে।

ভূমধ্যসাগরের সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসে ক্লিওপেট্রার খোঁপায়

গুঁজে দিতে ব্রহ্মকমল আমাদের প্রস্তুতি চলেছে।

কিংবদন্তীর বয়সিনী দ্রৌপদীর শাড়ির পাড়ে লেগে থাকা

লাঞ্ছনার রঙে এখনো গল্প বিকোবে।

গোলাপী আতর মেখে সস্তার মেয়েদের আঘ্রাণ নিতে

পুরুষার্থের ঘাম, ধর্মগ্রন্থের নামে শপথ নেবে পিতৃতন্ত্রের।

আর তুমি বলবে বিপ্লবের কথা সমাজবদলের স্বপ্নে?


এক্কা দোক্কা

 

এক্কা দোক্কা

 

সিঁড়িভাঙ্গা সুখের মুখে অজস্র পরকীয়া চুম্বন

ডালপালা ছড়াক

বিষধর কৌটোর মধ্যরাতে যুক্তবর্ণের শিলালিপি

ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে খুঁজুক আত্মপরিচয়

মানচিত্র ঘুরে এসে বোমারু বিমান সন্ধিচুক্তির সনদে

স্বাক্ষর করলে;

তোমার অক্ষরে শান দিয়ে দেখ ধুয়ে গেছে যীশুর বাণী অচিরেই

আমিও গণ্ডুষ ভরে পান করছি

শতকের পর শতক নীবিন্দু জলের প্রবচন

বারুদ মাখা হাতে

আজকের অজগর রাতের নিবিড়ে

সব রঙ ফুরিয়ে গেলে,

আমাদের শয্যার ভিতর উকিঁ দিক লাল সূর্য

রক্তিম বিশ্বাসের করমর্দনে

সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে কেবলই বৃত্তে ভ্রমণ আমাদের

কোনো প্রাণিত প্রত্যয়ের বাণী নেই আমাদের শিয়রে যদিও,

তবু একটু আদর পেলে দেখা যেত অমিতাভ দিন

প্রজ্জ্বলিত শতকে যদি

 

(১৮/০১/১৩)

 


এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ

 

 

এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ

 

মাটিতে শান্তি খুঁজতে যাবো না বলে

বুলেটের সাথে মুখোমুখি

সংলাপের টেবিলে

অহংকারের তাস বিছিয়ে বসে আছি নিরুদ্বেগ

ঘড়ি কাঁটায় খবরদারি করতে

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লাভ নেই জেনে

সাইরেনের পিছনে রোডম্যাপ দেখি

নিরক্ষর ভিড় বাড়াতে

ধর্ম পুস্তকের কমিশনে

কয়েকটা সীট রফা করা আছে।

বিশ্বকর্মার বৈঠকখানায়

গোটা পৃথিবীটা ভাগ করে দেখি

 উদ্বৃত্তের তেলে

চোঁয়া গন্ধের মৌতাতটুকুই ঢেলেছি।

 

তোমার রুমালের ভাঁজে ভাঁজে নকশার ভাঙ্গা গড়া

তোমার হাতে চাঁদ এনে দেওয়ার গল্প বলতে পারে।

বুলেটের ফাঁকা খোলে স্বপ্ন পুরে দেখছো হয়তো

চিত্রনাট্যের কপিরাইট আমার নামেই থেকে গেছে!

বিক্ষুব্ধ পতাকার সাথে গোপন বৈঠকে দেখো

মাসোহারা আমার কাছ থেকেই পায় এখনো।

 

(০১/০৪/১৩)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন