সঙ্গোপনে শিরায় শিরায়

সঙ্গোপনে শিরায় শিরায়

 

সঙ্গোপন মাধুর্য্যের শিরায় শিরায়

এসো পরস্পর মুখোমুখি বসি

শেষ ট্রেনগুলো চলে যেতে দাও

প্ল্যাটফর্মের শেষ বিন্দুতে আমাদের হৃদয়

পরস্পর জ্যোৎস্না হয়ে থাক

দিনান্তের সমস্ত ক্ষত চীনের প্রাচীর হতে চায় জানি

তবু তোমার হৃদয়ে মুখ লুকালে

কি আর এমন ক্ষতি হতো পথিকের?

যে তর্কগুলো ক্রমে কূট হয়ে ওঠে

যে কষ্টগুলো ক্ষোভ হয়ে ফোটে

যে অভিমান বিদ্বেষ হয়ে ছোটে;

এসো তোমার ঠোঁটে চুম্বন এঁকে দেখি

অবিরাম উষ্ণতায় এত অন্ধকার আলো হয় কিনা?

প্ল্যাটফর্মের এই শেষ বিন্দু ব্ল্যাকহোল নয় আর

বিগব্যঙ্গ করে দি এসো নক্ষত্রের তারায় ভরা

এই মধু রাতে  হয়তো আত্মপক্ষ সমর্থন নয়,

আত্মগ্লানি স্খলনে ---জ্বলে ওঠে পূনর্বার অমলিন হৃদয়

 

(১৩/০৪/১৩)

 

সঞ্জীবনী সুধা

সঞ্জীবনী সুধা

 

সময়ের সিঁড়িতে দাগ কেটে

রেখে যাওয়া স্বপ্ন সাধ সাধনা,

বিফল রাত্রি নিয়ে মুখে;

সার সার দাঁড়িয়ে আছে

---কবিতার কাছাকাছি

হৃদয়ের কাছে

 

সজীব যৌবন পুড়িয়ে

অভিজ্ঞতার সঞ্জীবনী সুধা

অভিধানে প্রজ্ঞা হতে পারে;

চোরাবালির গল্প বেঁধে গানে

তাই স্বপ্নের উড়ান

ফসলের টানে

 

শব্দের কানে কানে কবি

দুর্বিনীত নিশীথে ডুব দিয়ে

দেখে, ঐতিহ্য ঐশ্বর্য্য

ঐকতান নয় এই পৃথিবীর

আসন সজ্জায় এসে

গোঁজামিলে সুসভ্য রজনী

নয়তো শুধুই খুনোখুনি

 

(১৩/০৫/১২)

সন্তাপ

সন্তাপ

 

আমাকে আর জাগিও না সবুজ পাতার মতো।

হলুদ পুঁথির মতো বিবর্ণ অক্ষর ঝেরে

চাই না অভিবাদন।

শীতের ফাটা ঠোঁটের ফাঁকে রাখা ব্যাথা বেদনার

হিসাব থাক, তোলা থাক।

সব কথা মেলাতে নেই।

সব কথা ধরতে চাই না আর।

কি হবে দঁড়ি টানাটানিতে?

কোথাও ডুমুর ফুলের গন্ধ প্রেমের বাতাস

যদি নাড়ে, নাড়ুক

তুমি থেকো আকাশকুসুম থেকে দূরে।

বহুদূর হীরেরটুকরো নাড়া নথে

জুড়িগাড়ির দীপাবলীতে।

সেনসেক্সের পিরামিডে ইতিহাসকে তুমিও

হাসতে দেখবে একদিন।

কিছু নদী বুকের ক্ষত জুড়ে

প্রবাদের জন্ম দিলে, বিচূর্ণ হতে চায়

আত্মজ স্মৃতি।

তবু দেখ, রোজকার সূর্য কিভাবে পুড়তে থাকে

নিজস্ব রোদে

তবু দেখ, আহ্লাদে আটখানা পূর্ণিমা; কিভাবে-

পাতানো সম্পদে।

 

(০৭/০৮/২০১৪)

সময়ের অগ্রন্থিত কথকতা

সময়ের অগ্রন্থিত কথকতা

 

ভোরের মিছিল চলে গেল ডেকে দিয়ে

অলীক মায়াজালে অব্যক্ত দলিলে

পুষ্পকোরেকের রঙে স্বাক্ষর

এখনো দিকচক্রবালে রামধনু চুম্বন

শরীরে বাৎসায়নের সূত্র এঁকে দিলে রোজ

তোমার নামে অবগাহন জল

ফসলের ধূ ধূ মাঠ মাইল মাইল সময়ের

বিষদাঁতের সাথে লড়ছে

শুভরাত্রির ঠিকানা নিয়ে এসো

 

এবার যদি আস, পাহাড় বল, নদী বল,

কিংবা অগস্তর একগণ্ডুষ জলে  

আচমন করে নিও বনেদী ভুল

স্তব্ধ তমসার মাঝে অচঞ্চল আলোকবর্তিকা

নিয়ে ধ্যানে বসতে গেলে

হৃদয়ে ভালোবাসা লাগে

বিষন্ন ভাঁড়েদের থেকে দূরত্ব ভালো

তিমিরহননের গানে স্পষ্টতা নয়, বরং

ঋজুরেখ বিশ্বস্ত প্রত্যয়

দেখব হয়তো সুগন্ধি ছড়ালো

খাণ্ডবদহন শেষে আমাদের আলিঙ্গনে

অম্লান হয়ে ওঠে প্রভাতী আলো

 

(২৯/০৩/১৩)

 

সময়ের তীব্র সংঘটনে

সময়ের তীব্র সংঘটনে

 

জানিয়ে রাখা ভালো,

আমি তোমার মতো নই

আমার বৃষ্টিদিন গুলো আজকাল কাদা হয়ে ওঠে

স্যাঁতস্যাঁতে বুকের উঠানে

জমিয়ে রাখা বিষাদ আর কষ্টের কফ

বুড়ী দিদিমার মতো স্মৃতির খুঁটিতে বেঁধে রাখে

যাবতীয় বিলাপ

তুমি আঁতকে উঠতে পারো

সে দৃশ্যকল্পের ভাঙ্গা সেতারে

তারে তারে উলঙ্গ যন্ত্রণার আর ক্ষোভের ককটেলে

না সে সব কথা থাক

বরং বলো তোমার বুকের উজানে

উৎসবের আমেজে আজ

সময়ের মেজাজ বুঝে নিয়ে

কজন পারে ডুব সাঁতার দিতে ফিনিশিং ফিতেতে

যারা জানে এক্কা দোক্কা খেলার রীতি

খেলতে খেলতে হাসতে হাসতে

যারা পারে বুড়ো আঙুল দেখাতে

রীতির মুখে আড়ালে আবডালে

 

জানিয়ে রাখা ভালো

আমি তাদের মতো নই

অপটু ছন্দের কারিগরের মতো

জীবনের শব্দে বেআব্রু আঁকিবুঁকি

আমিও তো ঢাকতে পারিনি

ভাঙ্গা পাড়ের মতো কেবলই ভেঙ্গেছে

দুমড়ে মুচড়ে যাবতীয় অক্ষর

তুমি আঁতকে উঠতে পারো

সে দৃশ্যকল্পের বিবর্ণ তুলিতে

আঁচড়ে আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত রঙের প্রলেপে

না সে সব কথা থাক

বরং বল তোমার চোখের কাজলে

উৎসবের মেজাজে আজ

পিরিতের আমেজ বুঝে নিয়ে

কজন পারে আত্মজীবনী লিখতে রঙিন কালিতে

যারা জানে গোলটেবিল বৈঠকের রীতি

কথায় কথায় হাসতে হাসতে

যারা পারে ঠুকরে ঠুকরে ঠুকে দিতে

যাবতীয় রীতি পদ্ধতি …………

 

(২৪-০১-২০১৭)

সর্ষেফুল

সর্ষেফুল

 

আমরা বলে ছিলাম ঝলসানো রুটির গল্প।

অমাবস্যার রাতের দৃষ্টিভ্রম।

মতিভ্রম না হলেও বিভ্রম লেগেছিল চোখে।

সবুজ মাটির মতো অকৃপন পুষ্টির জন্য।

বদ্ধমুষ্ঠির ভিতে ঝুরঝুরে স্লোগান।

 

ভিনদেশী পুঁথির অক্ষর ঝেরেঝুরে

ছাইচাপা থাকে না রক্তের দাগ।

তর্কে বহুদূর ছুটেও লাটিমের মতো আমরা সবাই।

সুখের সাথে দুদন্ড সহবাসের পাকে -

স্বপ্নের জ্বালানীর মূল্যে রোজকার ঘাম।

 

সঞ্চয়ের আঁতুরঘরের লাইন দীর্ঘ হয় না জেনে

সঙ্ঘশক্তির কাছে নতজানু আজ সবকিছু।

বোমারু বিমানের কেরামতির কাছে চিরঘুমে শান্ত

-মার্কস থেকে বিপ্লবী বুদ্ধ কনফুসিয়াস যীশু!

এবং সর্ষেফুল!

 

(১৯/০৮/২০১৪)

 

সাঁকো

সাঁকো

 

বৃদ্ধ পিতামহের মত অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে

এখনো টিকে আছে শতাব্দীর সাঁকো।

কামান বন্দুক নয়। মিছিল স্লোগান নয়

পারাপার হয়নি ভিটে ছাড়া

উদ্বাস্তুর দল।

অসংখ্য উল্লাসধ্বনি নয়।

শোক বিহ্বল।

জননেতা আসেননি

প্রতিশ্রুতির শিলান্যাসে।

ফিতে কাটা হয়নি আজো।

 

তবু তুমি কেন দাঁড়িয়ে আছো?

গৌতম বুদ্ধের পদধ্বনি শোনো? নাকি আঁচল ওরে সুজাতার।

 মৈত্রেয়ী যাজ্ঞ্যবল্কের পর নচিকেতা

পার হয়ে ছিল কি?

 

নিষিদ্ধ রাতের পর তোমার সঙ্গমে

মহাকাল বাঁশি নিয়েছিল টেনে জানি।

হৃদঝর্ণার সুস্থির দিনে

মানবিক আলপনা আঁকার ভার ছিল আমার ওপর ঠিক

 কুরুক্ষেত্রের আগে

পাশার দানে কথা রাখতে পারিনি আমি।

তবু তুমি যোগ চিহ্ন হয়ে রয়ে গেলে আজো।

আমরা বিয়োগ করেছি সুসময়।

 

(১৯/০৫/১২)

সাতকাহন

সাতকাহন

 

কোন আয়নায় নিজেকে দেখা যায় জানা নেই

অনেকটা আবছা অস্পষ্ট ছায়া সঙ্গে সঙ্গে চলে

মুখোমুখি নিভৃত সংলাপে গোলাপ ফোটে না আর

বিশ্বব্যাপী কালের গঞ্জনায়

প্রোলেতারিয়েত ইস্তাহারে আমার নামটাও ওঠে

বিশ্বস্ত ছায়ার দিকে তাকিয়ে ভরসা হয় না

মুখোমুখি সংলাপে গোপন পরামর্শ

রাত্রিকে দিন করে দিনকে রাত্রি

সাদা কালো বয়ানের মাঝে অকাট্য যুক্তিও থাকে

তবুও মসৃণ জীবনের ধারাপাতে মেঘলা মন

ঘাড় গুঁজে বসে জাবর কাটে বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি

গচ্ছিত মূলধনে সূদের হার যত বাড়ে

তত মায়াবী ভিড় আমার চারপাশে

দামী আসবাবের মতো নিজেকে সাজিয়ে রখেছি দেখো

দেখো তোমার নাগালের কাছে

 

শুধু অস্পষ্ট আয়নায় পরিচিত সময়

অস্পষ্ট জবানবন্দী দেয় নিভৃতে

 

(২৩/০৭/১২)

 

সাতটি তারার তিমিরে

সাতটি তারার তিমিরে

 

শস্যের গন্ধ নিয়ে বৃষ্টি নেমেছিল একদিন

দূর্বা ঘাসের জমাটি আসরে

অমাবস্যার গাঢ় অন্ধকারে তুমি বুঝতে পারো নি

সেদিন

তারপর যতবার দেখা হয়েছে খরায় পুড়েছে সারা দেশ

খবরে প্রকাশ সেরকমই

 

মাটির ভাঁজে ভাঁজে আজ তোমার সংশয়

উদাসীনতা হয়ে বালি মুখে ঢেকেছে সংসার

সাতটি তারার তিমির

ধ্রুবতারাকে সাক্ষী রেখে

পৃথিবী দিকে তাকিয়ে হতবাক

 

মুষলধারে বৃষ্টির কিংবদন্তী থেকে কয়েকটা অধ্যায়

টুকে নিলে

ফসল পাড় শাড়ীতে তোমায় মানিয়ে যায়

সেদিন অঝর বৃষ্টি নামলে

ভিজিয়ে নিও তোমার সব সঞ্চয়

বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যার সেই আদরে

 

সেদিন বাংলার নবান্নে ফুল্লরা হাসি

আমরাও উৎসব বসাবো কয়েক ঘর

 

ধ্রুবতারাকে সাক্ষী রেখে

সাতটি তারার তিমিরে

 

(৩১/০৭/১২)

সাদা খামগুলো আজো করে ওড়া উড়ি

সাদা খামগুলো আজো করে ওড়া উড়ি

 

বুকের কপাট হাট খোলা

তবু ছিল, মনের রঙেতে

আকাশ নীলের ঢেউ।

পায়ের চলায় হাইওয়ের যৌবন। হাতের তোড়ায়

বন্ধু ছিল কি কেউ?

 

সেদিন ছিল গোলাপ গোধূলী

বেলা। শিফন শাড়ীতে

আঁচল উড়েছে হাওয়ায়।

পায়ের তলায় রক্তিম

কার্পেট। সময় উজানে

কে যে করেছিল খেলা।

 

সাদা খাম গুলো সাজানো

কথার ঝুড়ি। শব্দের সাথে

হৃদয়ের ওড়া উড়ি।

সব পথ গুলো এলমেলো

বিন্যাসে, সাগর সাগর

কুড়িয়ে গিয়েছে নুড়ি।

 

সিঁড়ির ধাপে কয়েদ

বসিয়ে রেখে, শতকগুলো

জমিয়ে তোলে সোনা।

ঐতিহাসিক মাসিক বেতনে

বাঁচে, সত্যগুলো

যত্নে করে বোনা।

 

তবুও তুমি ম্যানিফেস্টো

হাতে, কতোই বসালে

স্বপ্নের ঘরবাড়ি।

এ পথেই কিনা ক্রমমুক্তি

হবে। হাজার শতক

যুদ্ধের পথ পাড়ি।

 

(২৩/০২/১২)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন