দুষ্টক্ষত

 


দুষ্টক্ষত

 

মৃত কঙ্কালের হাড় পাঁজরা নিয়ে

সময় থেমে গেলে

নাগরিক মরূদ্যানে কবিতাউৎসবের আসর

ক্ষয়রুগীর কাশি আর পাগলের হাসির মতো;

দরবারি আলস্যের মৌতাত আর

রাজসভার পদক ঝুলিয়ে

স্মারক বক্তৃতার মঞ্চে

পরস্পর চেনামুখের মিছিল। সর্পিল সন্ধ্যার

হস্তাক্ষরে নাগরিক দস্তখত।

 

বৃদ্ধ সংবিধান নড়বড়ে দাঁতে

কিছু একটা বলতে গিয়ে

বিষম খায়। থতমত শব্দের এলোমেলো সরণীতে

রংচটা সজ্জা আর বিবস্ত্র লজ্জার মতো;

বনেদী বিপ্লবের স্লোগান আর

চায়ের কাপে তুফান তুলে দিয়ে

মেঠো বক্তৃতার পারদে

পরস্পর চেনামুখের মিছিল। সর্পিল সন্ধ্যার

হস্তাক্ষরে নাগরিক দুষ্টক্ষত

 

 

দেওয়াল ২

 


দেওয়াল

 

আমার বয়সে এসে বার বার

এই আমি থমকে তাকাই

বহুদূর মৃত স্মৃতি বুকে নিয়ে

নাগরিক মিছিল নগরী হেঁটে যায়

 

ফেস্টুন ব্যানার জুড়ে ক্ষমতার সাপলুডো

পেটের দুবেলা ভাত আর

হাড়হাভাতের স্বপ্নের জলপ্রপাত

বাকিটা ঐতিহাসিকের জন্য তোলা থাক

 

এই আমি ভোটার লাইনে

আঙুলের ফস্কাগেড়ো ছাপ নিয়ে

কতবার হৃদয় পোড়ালাম

আসলে প্রতিটা দিনই যার যার তার

 

আমার বয়সে এসে বার বার

এই আমি তবুও থমকে দাঁড়াই

কান পাতি শুনি শোনার চেষ্টায়

কোন ক্ষীণ শব্দ দেওয়াল ভাঙার

 

১১ই ভাদ্র ১৪২৫

দেওয়াল ৩

 


দেওয়াল ৩

 

সব রোদ সাঁতরিয়ে

আরও নতুন রোদের পটভূমি তৈরী হবে বলে

      প্রস্তুত রেখেছি ধর্মগ্রন্থ সব

যারা বলেছিল সব কথা বলা হয়ে গেছে

যারা জেনে গেছে শেষ সত্যের স্বাদ

যারা ভেবে গিয়ে ছিল

      আর কিছু নাই দেখে নেওয়ার

      তাদের মতো নয় আমার দেওয়াল

 

সব রোদের ভিতরে

আরও নতুন রোদের আলো ফুটে উঠবে বলে

       আজ আর কোন বাণী নয়

সব অক্ষরের পিরামিড ভেঙ্গে

সব শব্দের শিকল কেটে

সব প্রচারের মুখে তুড়ি মেরে

        প্রথম দিনের মানুষের মতো

        আজ পরিষ্কার আমার দেওয়াল

 

সব রোদের শেষে

আরও নতুন রোদের কাছে ঋণী হব বলে

        নতজানু আমার হৃদয়

এখানে কোন কিছুই্ব স্বতঃসিদ্ধ নয়

এখানে প্রশ্নবিদ্ধ সকল সময়

এখানে যুক্তি তর্ক বোধ খেলা করুক

         সকাল বিকাল মহা সাগরের ঢেউয়ের মতো

         সজীব থাকুক আমার দেওয়াল

 

ধর্মযুদ্ধ

 


ধর্মযুদ্ধ

 

এই দেখো এখানে আমি

পুরানো ক্রোড়পত্রের মতো

বিজয়ী হাসিতে

 

এখনো ভোর হবে বলে

নিশ্চিত বসে আছি

বাসি কাপড়ে

 

হাড়হাভাতের প্রত্যয় বলে

ব্যঙ্গ করেছিলে

অমন উজ্জ্বল দুটি চোখে

 

তোমার প্রলম্বিত ছায়ার দিকে

মুখ রেখে সবুজ ঘাস

হয়ে জন্মাতে চেয়েছিলাম আবার

 

সেই কথা মনে রেখে

কাছে এসে দেখো

দেখ উজ্জ্বল দুটি চোখে

 

হলুদ ঘাসের দেশের মতো

আমাদের স্বদেশ

চারিদিকে অশরীরী প্রত্যয়

 

আমি জানি

ইতিহাস ঘাস কেটে চলে

তবুও স্বপ্ন অনেকটা গভীরে

 

আজ নয় কাল নয়

অযথা বাকি কটা সময়

বরং নিজের মতো করে আঁকি

 

শ্রাবণের তেরো ১৪২৫

ধুয়ে যায় মানচিত্র

 


ধুয়ে যায় মানচিত্র

 

আমার পুব আকাশে তোমার সূর্য ওঠে

তোমার পশ্চিমে আমার সূর্য অস্ত যায়

আমার তৃষ্ণার জল গড়াতে গড়াতে

তোমার সাগর জুড়ে নৃত্য করে

তোমার আমার মেঘ

বেনাপোল পেট্রাপোল মানে না

কাঁটাতারকে কাঁচকলা দেখিয়ে

পরস্পর কোলাকুলি করে

মানচিত্র পড়ে থাকে পায়ের কাছে

মন্ত্রী আমলা শান্ত্রী সিপাইদের দরকারে

 

তুমি কলেজস্ট্রীটে এসে খোঁজ নাও

আমার নতুন এডিশন

এবার করছে কারা

আমি বাংলাবাজার ঘুরে জোগার করে আনি

তোমার এডিশন গুলি

আমাদের যাবতীয় অক্ষর

পরস্পর সঙ্গত করে কেবলই

মানচিত্র কাঁটাতার বেনাপোল পেট্রাপোল

ধুয়ে যায় শব্দের লাগাতার বন্যায়

মন্ত্রী আমলা শান্ত্রী সিপাইরা সব কাঁদে

 

ঠিক সেই মাহেন্দ্রক্ষণে শুরু হয়

মন্দির মসজিদের রুটমার্চ সবখানে

সন্ধ্যার শঙ্খধ্বনি নয়

নয় ভোরের আজান

তোমার আমার পরিচয় নিয়ে টানাটানি

কানাকানি আমাদের গোপন অভিসার নিয়ে

দ্রুতবেগে গুজব ছড়াবে এবার

কার আস্তিনে মজুত কয়টি অস্ত্র

সন্ত্রস্ত দিকচক্রবাল ঘিরে আমাদের হৃদয় খুঁড়ে

তবু ওরা বাংলার ঘ্রাণই ফিরে ফিরে পাবে

 

২১শে ভাদ্র ১৪২৫

নপুংশক জীবন

 


নপুংশক জীবন

 

না, এখনই চুপ করে

নিরব হয়ে গেলে চলবে না

এই বাতাস নিঃশ্বাস থেকে

হয়ত বা শুষে নেবে প্রাণ

 

এই সময় কালের নিয়ম থেকে

হয়ত বা ছিনিয়ে নেবে সত্য

হয়ত বা কিনে নেবে ঐতিহাসিকদের

 

তবু চুপ করে গেলে মৃত্যু

           

এখনো অনেক কথা

বলে যেতে হবে নিরন্তর

যা কিছু সত্য এবং শাশ্বত

            তথ্য ও তত্ব

 

এখনো উন্মত্ত কোলাহলে

রুখে দাঁড়াতে হবে

ঋতবাক কন্ঠে

            মানুষের দুষ্কৃতির মুখোমুখি

            হতে হবে আমাদের

 

নয়ত আজন্ম নপুংশক আপনি আমি ও সে

 

৬ই শ্রাবণ’ ১৪২৬

নবান্নের সুখ

 

 

নবান্নের সুখ

 

মেয়েটির অন্তর্বাস জুড়ে রঙিন প্রজাপতি

একটু একটু করে ডানা মেলে নবান্নের সুখ

 

উষ্ণ অভ্যর্থনায় সেজেছে মাটি, বাঁশি

বাজবে বলে উৎকর্ণ সময়, উন্মন রোদ

 

রূপকথার জন্মের আগের গল্প সব

অনেকেই জানে না, শোনেনি আগে

 

তবু ছেলেটি কি অস্থির ছিল সেদিন?

অনুমান করেছিল কিছু? কি হবে কি হয়!

 

২৯শে মাঘ’ ১৪২৭

 

না বলা গল্পের কাহিনী

 


না বলা গল্পের কাহিনী

 

এইসব না’বলা গল্পের ভিতর

অজস্র প্রতিধ্বনি রয়ে যায়

প্রিয় প্রলাপের মতোন

 

সংসারী মানুষ, স্মৃতির আলমারি জুড়ে

ভাঙাচোরা দুঃখশোক, রিফু করা

সুখের চাদরে ঢাকা

 

আমি বনেদী বেয়াদব

আদব কায়দার চৌকাঠ ডিঙিয়ে

ডিঙি ঠেলি, জলে কাদায়

 

অসম্পূর্ণ আয়োজন নিয়ে, জানি

তুমি বা তোমার মতোন কেউ’

ঘুমাওনি এখনো হয়তো

 

এখনো রাত্রি কিংবা দিন

শ্লোকের পংতি জুড়ে

কুরুক্ষেত্রের আয়োজন

 

আমি দূর থেকে দেখি সব

একলব্যের কাটা আঙুলের ঘা

শুকায়নি এখনো

 

৯ই ফাল্গুন’ ১৪২৭

 

নাগরিক কোলাজ

 


নাগরিক কোলাজ

 

                        এই সব শব্দাবলী

না, সকালের রোদমাখা বনানীর মত নয়

নাগরিক কড়িকাঠের বিমর্ষ অভ্যাসের মতো

ঘূণধরা মুখস্রাব। নির্বাচনী ইশতাহারের মতোই

অসৎ অক্ষরের মায়াজালে ঋদ্ধ। চতুর বুদ্ধিজীবীর

কলমের ডগার মতোন সাবলীল চক্ষুলজ্জাহীন

লোভাতুর শূন্যগর্ভ স্বাক্ষর

 

অথচ আমরা দেখুন

কী পরম উদাসীন, ভোরের শিশিরের মতো নিশ্চিন্তে

খবরের কাগজ পড়ি। টিভি দেখি। প্রাতঃকৃত্য সারি

মাঝে মধ্যে মোমবাতি মিছিলের ছবিতে দাঁড়িয়ে যাই

আসা যাওয়ার পথে। নয়তো অযথা তর্ক জুড়ে দিই

দাম্পত্য কলহ রাজনৈতিক ডিবেটের মতোই

                        স্বার্থের লেজ হিংস্র স্বভাবত

 

                        বিমূঢ় শতাব্দী নির্বাক

ইতিহাসের জানলায় বেকুব প্রেতাত্মাদের লাশ

মহাপুরুষদের স্ট্যাচু ঘিরে অবস্থান বিক্ষোভ করে

হয় তো বা। কি জানি গর্ভস্থ ভ্রূণের নাগরিক কোলাজে

কি গল্প লেখা হয়, হবে। আজ কোন সুমহান বাণী নেই

এই শতকের ভাঁড়ারে, ভাঁড়েদের মার্চপাস্টে বেকুব জনতা

                         যতদিন ভোটের লাইনে…….

 

১৪ই চৈত্র’ ১৪২৫

নিঃশব্দ কোলাজ

 

 

নিঃশব্দ কোলাজ

 

প্রতিটি শব্দবিন্দুর শীর্ষ থেকে পাতালে

প্রতিশ্রুতিভঙ্গের নিঃশব্দ কোলাজ

উপেক্ষার রঙে তামাশার হাসি

জানি হামাগুড়ি দেয় মুখোশের আড়ালে

 

তবুও মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি

এও যেন পরম এক বিস্ময়

ঈশ্বর বিশ্বাসের মতো ভক্তি নিয়ে

বিষাদের জঙ্গল পার হওয়ার ব্যর্থ প্রয়াসে

 

অবসাদ আসে নাকি? আসে খুব আসে

পরস্পর নিঃসঙ্গতার মহা সড়কে

যারা মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে, তাদের সঙ্গে থাকি

প্রতিটি শব্দবিন্দুর দিকে কান পেতে রেখে

 

২৪শে আশ্বিন’ ১৪২৭

 

 

 


যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন