কালপুরুষ

  

কালপুরুষ

 

ছায়াপথের সাথে হাঁটছি

প্রাগৈতিহাসিক নারীর সুরভী সন্ধানে।

ম্যামথের জন্মের আগে

শিশু সূর্য তখনো দাঁড়াতে শেখেনি।

নীহারিকা সন্ধ্যায় এলোকেশীর উদ্বিগ্ন গ্রীবা

জোনাকির আসরে প্রজ্জ্বল ছিল কতকাল।

ধ্রুবতারার সাথে সপ্তর্ষীমণ্ডলের আকাশকেলির রাতে।

সে সব রাতের নাভিকুণ্ডের তিমিরেও

আশা ছিল সহবাসের পর

ভালোবাসার প্রেমে পড়বে সময়।

সময়যোনিসন্ধিতে

উঠে দাঁড়াবে মনস্বলা নারী।

রজনীগন্ধা রাতে শিউলি ফোটা ঠোঁটের সৌরভে।

স্বাতীনক্ষত্রের গর্ভজাত স্মরণ সন্ধ্যার সেই আশা হাতে

ছায়াপথ থেকে ছায়াপথ পেড়িয়ে পা ফেলে চলেছি।

চলেছি প্রাগৈতিহাসিক

নারীর সুরভী সন্ধ্যায়।

আজ সূর্যসকালে আমার ওমে

কেবলি ক্লান্তির ঘর গেরোস্থলী।

অনেক দিন পর।

 

(১২/০৩/১২)

 

কিংবদন্তী আবক্ষ

  

কিংবদন্তী আবক্ষ

 

মৃতদেহের পাকদণ্ডী বেয়ে উঠে এসেছি কিংবদন্তীর পথে।

স্তব্ধ জলের বিবর্ণতার মতো;

ফ্যাকাশে মুখে মঞ্চে উপবিষ্ট আবক্ষ নিয়ে শান্ত সমাহিত

ঈষৎ বিরক্ত যদিও। রিক্ততার আঙ্গিকে

খসে গেছে বিনম্র লজ্জা।

মাঝে মাঝে মনে হয় সমুদ্রমন্থনে:

অম্লান অমৃত ভেবে

হয়তো বা বিষধর গরলই ঢেলেছি শিকড়ে।

তবুও সহ্য করি।

জন্মদিন মৃত্যুদিন ইত্যাদি।

ভাষার অহংকারে প্রশস্তির মিথ্যা মোহ

জাপটে ধরতে চায় অহরহ

বিষধর তিক্ত কামড়ে।

আজীবন সকল সঞ্চয় নিস্ফল গোলযোগে

শতাব্দীর ভাঁড়ামো বলে মনে হয়।

 

সময়ের স্রোতে কিংবদন্তী আবক্ষ

প্রত্নতাত্বিক খননে গবেষণার আলো দেখবে হয়ত।

নবজাতকের হাতে সেদিন নতুন সূর্য না থাক,

ব্যার্থ কিংবদন্তীর দিন হয় যেন বিগত।

 

(৩১/০৯/১২)

কুহক

  

কুহক

 

এই আমি ঠিক আমি নই।

অনেকটাই ভড়ং নিয়ে আছি।

সে কথা জেনে বুঝেও দেখ, কেমন এসেছ কাছাকাছি।

ব্র্যাণ্ডেড সময় এখন।

সাতরঙা রামধনু নয়। সবটাই রঙিন কারসাজি।

ভালোবাসা মিথ্যে কুহক।

তবুও ঠোঁটে ঠোঁট ভেজাতে

এক কথায়

হয়ে গেলে তুমি রাজি।

সতর্ক দুপুর থেকে রাতে,

দুচোখের সুনিপুন নাটকে

রেখে যাই মিথ্যা সংলাপ যত

----তাতেও পিছপা নও।

তুমিও শরীর নিয়ে ঠিক

তলে তলে

খেলে গেলে সেইতো অবিরত।

 

তোমার আমার মাঝে গুঁতোগুঁতি খুনসুটি

আর ভালোবাসার শরীরের ভাঁজে

যে মিথ্যা গল্পগুলো ছবির মতো একেঁ যাই রোজ।

আজ থেকে হাজার বছর পর

প্রত্নতাত্বিক নেয় যেন তার খোঁজ।

 

(২৮/০৪/১২)

কে তুমি নন্দিনী

  

কে তুমি নন্দিনী

 

নিরিবিলি শয্যার ভাঁজে

পূর্ণিমার ঢেউ আমানিশি রাতে,

তোমার দরজায়

কড়া নেড়ে গেলে...

সপ্তর্ষিমণ্ডলের বিপন্ন সভায়

কোর্ট মার্শাল বসে।

 

বেআব্রু রোদের কিনারা

তোমার কাঁধে নিষ্পলক

ঝুলতে থাকলে

মন্থরা মনু সংহিতা পড়ে।

 

বালুকাবেলার নাতিদীর্ঘ

ঝিনুক কুড়ানো ছায়া

তোমার গা ঘঁষাঘেঁষি

করে আদিখ্যেতা করলে

সমুদ্র সফেন।

 

পানশালার মাধবী সন্ধ্যায়

কয় পেগ মৌতাত তোমায়

আদর সোহাগে অভিবাদন

জানাতে গেলে

সরকারী নথিপত্র নড়েচড়ে ওঠে।

 

তোমার হাসির ইজেলে

ঈশ্বরের ভাবমূর্তি

টাল খেয়ে গেলে

ভাস্কর উৎসাহিত হন।

 

তবুও তোমার ঠোঁট ফুললে

কারণে অকারণে।

আমার গোনাগুনতি অক্ষর

তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে আসে

ছন্দে অনুপ্রাসে আগাগোড়া

নিষিদ্ধ বিন্যাসে।

 

(১১/০৫/১৩)

 

কেউ কথা রাখে নি

  

কেউ কথা রাখে নি

 

কেউ কথা রাখেনি। কেউ কি রাখে?

সকালের কাঁচাসোনা শিশুরোদ

চোখে মেলে বলেনি সুপ্রভাত।

যার পিঠে যার হাত ছিল রাখার

রাখেনি তবু। কি হবে রেখে!

শিশুরোদ মানুষের পাড়ায় এসে

পথ হারিয়ে ফেলে পথে।

কেউ আসেনি সঠিক ঠিকানা হাতে।

 

কেউ কথা রাখে নি। কেউ কি রাখে?

সাদা খামগুলো শুধু ওড়া উড়ি করে।

সাদা পাতা বুকে নিয়ে কোলে করে।

কেউ আঁচর কাটে নি। কত হৃদয়

তবু উৎকর্ণ প্রহর আঁকে প্রহরে

আলপনা কল্পনার কল্পনায়।

শুধু আলাপন নীরবে নীরবে

নিথর নির্বাক যুগে ফিরে যায়

 

কেউ কথা রাখে নি। কেউ কি রাখে?

ঠোঁট ফেটে ফেটে চৌচির চুমুগুলো

শুধু দাঁড়িয়ে দেখেছে। নামেনি শ্রাবণ তবু।

ফাগুন ফাগে বসন্ত বিলাপে

যৌবন ঝরে গেছে হেমন্তের আগে।

কেউ কথা রাখে না। কেউ কি থাকে তবু

নিভৃত প্রলাপে বিলাপে বিলাপে।

কারুর অপেক্ষায় প্রহরে প্রহরে

 

(০৬/০৩/১২)

 

কেমোথেরাপির শেষে

  

কেমোথেরাপির শেষে

 

কোনো হ্রদ নেই আর অমৃত সিঞ্চনের।

আলোড়ন নেই দিন রাতের সংবর্তেও।

চতুষ্কোন জীবনের অন্ধ দৃষ্টির নিরুৎসাহিত প্রভাব,

শতাব্দীর সূর্যে।

মৃত সারসের মতো শিথিল পালক ফেলে

মানবিক ক্ষণায়ু ভোর।

স্মরণীয় স্মৃতির উত্তরাধিকার নেই আর অবশিষ্ট কোনো।

পরস্পরের হাতে অমলিন প্রথম কদম ফুল নয়।

কিংবা কস্তুরীমৃগের ঘ্রাণ।

শকুনের উল্লাসের মতো সব গ্লানি- মৃতজীবী পরজীবী

অথর্ব কোষের শেষ সম্বল কেমোথেরাপিও ম্লান।

আমাদের পারস্পরিক স্নায়ুর গ্রন্থনায়

গুপ্ত আয়ুধের প্রস্তাবনা। আনবিক বিস্ফোরণের ছক।

শব্দের প্রাচীর ব্যাপী তবু অনৃত সংলাপের কারুকাজ।

প্রত্নতত্ত্বের মৃত কবর খুঁড়ে তারপর-

শতাব্দীর হাড়গোড়ে বিপ্লবের কংকাল শুধু নড়াচড়া করে।

 

(১৪/০৮/১৩)

 

কোরাস

  

কোরাস

 

বাতাবিলেবুর গন্ধে রেখে পা,

মালোবিকার চোখে অর্জুনপাখি

রাত আকাশে বে-সুর মালকোষে,

শিয়ালেরা কোরাস সাধে দেখি

 

বাদুরঝোলা কলিকাতার বাস

চলল মিছিল প্রতিশ্রুতির ঝর।

অফিস ঘরে চেয়ার টেবিল হাসে

মালোবিকার শিলান্যাসের

 

এক-পা দু-পা শাড়ীর আঁচল হাতে

চলছে মানুষ বর্ষা বৃষ্টি সাথে

মালোবিকার জলা জঙ্গল ফাঁদে,

শিয়াল কুকুর নিয়ম করে কাঁদে

 

হাসির ফাঁকে মালোবিকার দাবি,

পচা লাশে শকুনের উল্লাস

ঐতিহাসিক মুচকি মুচকি হাসে

যুদ্ধ মৃত্যুর নিয়মিত ফরমাস

 

খবর পড়া পোষাক পড়ার ফাঁকে

বাড়া ভাতে রক্তের ভাপ থাকে

পৃথিবীটা সবুজ করতে রোজ

মালোবিকারা চড়া নিলাম হাঁকে।।

 

(১৯৯২)

ক্ল্যাপস্টিক- ২০১২

  

ক্ল্যাপস্টিক- ২০১২

 

পাণ্ডুলিপির আয়োজনে অটোগ্রাফের লম্বা লাইন

বইমেলার নরম শীতে মেখে

আরক্ত প্রীতির উৎসাহে।

ফ্রিজ শটের পরই

কাট টু হাইওয়ের লংড্রাইভ।

..."রাঙিয়ে দিয়ে যাও গো এবার যাবার আগে..."

ডিজল্ভড ইন্টু-

আকাদেমী সভাঘর।

এবার পুরস্কার নিতে....

তৃতীয় সারির দ্বিতীয় কলমে

আঁচলে নীরাবতী উষ্ণতায় স্থানুবৎ বিহ্বলতা।

জাম্প টু পেনসিলভানিয়া:

কবি সম্মেলনের প্রখর উত্তাপ।

 জাম্প টু প্যারীর মধ্য রাতের সীন নদীর অববাহিকায় কয় পেগ বাংলা।

জাম্প টু প্রভাত ফেরী ঢাকা: ...

"আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো....

স্টার্ট প্যানিং শীতের ঠাণ্ডা গুনে গুনে

একা এবং কয়েকজনের প্রথম আলো।

 পূর্ব থেকে পশ্চিম, অরণ্যের দিনরাত্রে

সীমাবদ্ধ নীল আকাশ । ফেড টু ২৫ অক্টোবর।

 

(০৩/১১/১২)

খণ্ডচিত্র অখণ্ড কাব্য

  

খণ্ডচিত্র অখণ্ড কাব্য

 

(০১)

 

শব্দ নিঃশব্দের সঙ্গমে

শিশির ঝরা হৃদয় নিশ্চুপ:

মৃত হাড়গোড় কবরে।

সোনার চেয়েও দামী

একটি মেয়ে নিষ্পলক সন্ধ্যা

নিয়ে চোখে।

তৃতীয়ার জ্যোৎস্না ধরে

তবু নেমে এল।

সহচরী নয় সহযাত্রিকের

স্টপেজে।

 

(০২)

 

মুঠো মুঠো আশ্লেষ ছড়িয়ে

মুছে যাওয়া দিন চাদরে।

সোনালী রুপালী সকাল

কচিরোদ মুখে চৌকাঠে।

খোলামকুচির মতো

নষ্ট সময়ে সিঁড়ি দিয়ে

নেমে গেছে প্রেম। বিবাহের

আগে কিংবা পরে।

 

(০৩)

 

ব্রিফকেস জুড়ে শুকনো

কাগজে ফিসফিস

পাশাপাশি স্বাক্ষর নিয়ে।

এজলাসে ভিড়

তবুও কাঠগড়া প্রস্তুত নয়।

বিচারের বাণী

মৌনী সঙ্কল্প নিয়ে,

ঈশ্বরের দরবারে।

 

(০৩/০৫/১২)

খোঁজা

  

খোঁজা

 

কখনো মৃত্যুর ছবিতে তুলি ঘোরাতে ঘোরাতে

অজস্র স্ফটিক স্বচ্ছ হয়ে ওঠে।

ভালোবাসার রঙেও মৃতের ওষ্ঠ হিম হয়ে লেগে থাকে জানি।

চুম্বনের রঙ থেকে সমস্ত অস্থিরতা ছেঁকে নিতে গিয়ে দেখেছি

প্রেয়সীর চলন ঝাপসা হয়ে ফোটে।

মিলনের অশ্বক্ষুর রাত বুকের ওপর দিয়ে চলে গেলে

দুটো দেহ পাশাপাশি পড়ে থেকে দেখে-

ভালোবাসার বন্ধন নয়।

দুজোড়া হাঁটুর জোরই যেন বেশি করে লাগে।

প্রেম আসুক না আসুক

মৃতের আয়ু নিয়ে

মিলনের রাত নিবিড় হয়ে আসে।

রোজকার তুলি নিয়ে

তালা খোলার খেলায় নেমে দেখ

তোমারও বুকের দৌ

ভালোবাসা খুঁজে পায়নি আজও।

রাতের গভীর ঢেউ এসে ঘর্মাক্ত করে গেলে তাপ,

মৃতের রঙ তুলি নিয়ে

আয়ু ভালোবাসার নকল ছবি আঁকে।

 

(৩১/০১/১৩)

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন