অশ্বখুরের আওয়াজ

 


অশ্বখুরের আওয়াজ

 

সকালের রোদের মতো নয়

বরং রোজকার অবসাদ ক্লান্তির ভার

নিদ্রাহীন রাতের তারার মতো

নিষ্পলক অবিরাম চেয়ে থাকা শুধু

 

চেয়ে চেয়ে দেখে যাওয়া অবিরত

অবিন্যস্ত সময়ের নাগরিক রাজপথ

তলায় চাপা পড়ে যায় হাড়গোড় সব

স্বপ্নের প্রহর অস্ফূট সংলাপ দু-একটা

 

মুখ বাঁধা ইতিহাসের ছেঁড়া পাতা

ইতস্তত বিক্ষিপ্ত স্ফূলিঙ্গ জ্বালবে কি?

শলাপরামর্শের লোকের খোঁজে

অশ্বখুরের আওয়াজ উঠুক পাঁজর জুড়ে

 

৬ই ভাদ্র’ ১৪২৫

অশ্রুবিহীন শুশ্রুষাহীন স্বপ্নহীন চোখে

 

 

অশ্রুবিহীন শুশ্রুষাহীন স্বপ্নহীন চোখে

 

স্বপ্নহীন চোখের কিনারায় আমার বাস

এই আমি আর আমার ভগ্নস্তুপে আমার সমাধি

না, তাই নিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের

রেওয়াজ আমার নাই

 

কবেকার কথা ঠিক মনে পড়ে না

তবে বোধিবৃক্ষের আশপাশ দিয়ে

সুজাতাদের অনেক খুঁজেছি দিনভর

                        রাতভর আত্মরতি নষ্টলগ্নে

 

তারপর দুই চোখে দিগন্ত জুড়ে

যুদ্ধ  মৃত্যু মহামারীর মিছিল চলে গেছে

কোনদিন মানুষকে দেখিনি লজ্জিত হতে

                        ল্যাংটো রাজাদের গোপন বৈঠকে

 

তুমি আর এসেই বা কি করবে আজ

দুই হাত ভরে স্বপ্নের বীজ বা চারা কোন,

চোখেরবালিতে কি করে বুনবে বলো

                        অশ্রুবিহীন শুশ্রুষাহীন স্বপ্নহীন চোখে

 

২৩শে আষাঢ়’ ১৪২৭

অস্থিতে মজ্জায়

 

 

অস্থিতে মজ্জায়

 

নিরালা সঙ্গমকাল জুড়ে

মধ্যরাতের সহবাস

স্পন্দন মুখর দেওয়াল জুড়ে

ছায়ারা নেচে যায় তাথৈ

 

নাগরিক রাজপথ হামাগুড়ি দিলে

ঘড়ির কাঁটায় রাত্রি তৃতীয় প্রহর

তখন, ব্যস্ত ঠোঁটের ফাঁকে

রোদ উঁকি দিয়ে গেল কি?

 

আশ্চর্য্য সব জ্যামিতিক উদ্ভাসন

বুড়ি পৃথিবীরও বুক কেঁপে ওঠে বুঝি

সপ্তর্ষি কালপুরুষে খেলা জমে গেলে

শব্দ পড়ে টুপটাপ অস্থিতে মজ্জায়

 

৬ই ভাদ্র ১৪২৫

অস্পষ্ট ইঙ্গিত

 


অস্পষ্ট ইঙ্গিত

 

একদিন হেঁটে যাব ঠিক

তোমার রূপের করিডোর দিয়ে

সরীসৃপের টানেলের মতো মসৃণ

 

তোমার উদ্ধত অহঙ্কারের আলো

জ্বেলে রেখো রূপের বিদ্যুৎরেখায়

মঞ্চ মাতানো হর্ষধ্বনির মতো উদ্বেল

 

সর্পিল ছায়ার মতো মূক পদধ্বনির

নিশ্চিত প্রত্যয় দেখো

আমাদের অস্পষ্ট ইঙ্গিতে

 

নাগরিক ডায়াসের স্পটলাইটের বাইরে

রাত নামেনি এখনো নিয়নের সিঁড়ি বেয়ে

সেনসেক্সের ক্লান্ত সন্ধ্যার মতো

 

না সন্ধ্যাপ্রদীপের উৎসবে

তোমাকে বিব্রত করতে ডাকবো না

বুদ্ধ যিশু অবোধ লালনের মতো

 

হাজার হাজার বছর খেলা করে গেছে

করে যাবে আরও কয়েক হাজার

তারপরে যদি সম্বিত ফেরে তোমার

 

শ্রাবণের ২৪’ ১৪২৫

 

আগামীকাল

 


আগামীকাল

 

নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে বসে

তবুও নিশ্চিন্তি আগামীকালের

ভোর হবে, কথা হবে, দেখা হবে

প্রিয়জন ব্যাথা দিয়ে চলে গেলে

চলে যাবে। তবুও আগামীকাল

 

নিশ্চিত মৃত্যুর হাঁ মুখে দাঁড়িয়ে

দেখছি হিমবাহ গলে জল

বুভুক্ষু মানবের নাগাল এড়িয়ে

গড়িয়ে যেতে। গড়িয়ে যায়

তৃষ্ণার ফোঁটায় ফোঁটায় তবুও আগামীকাল

 

নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ালে

হৃৎকম্পনের রিখটার স্কেল

তখন প্রশমিত। জীবনের ঋতুচক্র

তবুও হঁশিয়ার। খেলা শেষের শেষবেলায়

কালকের ভেঁপুতে আবারো আগামীকাল

 

 

আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে

 


আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে

 

দুধসাদা অক্ষরের চিত্রলিপি সাজিয়ে

-তোমায় গড়ি

বৃষ্টিবিন্দুর ভিতর দহনলিপির তাপ

-অনুভব করি

যা কিছু বলবার ছিল তোমায়

-মনে মনে বলি

নিরুক্ত উচ্চারণের পথ রেখা ধরে

-চলাচল, চলি

তবুও এই অক্ষর, অক্ষর জুড়ে

-ছবি আঁকা, আঁকি

দহনলিপির তাপ, তাপের ওমে

-ভালো থাকা, থাকি

চারিদিকে অঢেল সময়, সময়ের হাতছানি

-প্রহর গোনা, গুনি

তোমার না বলা বাণীর ঘন যামিনীর মাঝে

-বৃষ্টি পড়ে, শুনি

আত্মকথা

 

 

আত্মকথা

 

আমি একটা উজবুক পাখি পুষি

রোজ খেলা করে আমার জানলায়

সাতের ঘরের নামতা বলতে গিয়ে

তোতলায় সত্তরের দশকের মতো

 

পাখি পড়া করে যত বার শেখাই

ভুল করে তত। ডানা ঝাপটায়

কালবৈশাখী ঝরের মতো করে                                       

দুই চোখ দিয়ে কান্না টুপটুপ

 

আমি চুপ করে চেয়ে দেখি

আমার খোলা বইয়ের পাতা

আরও ঝাপসা হতে হতে হতে

আস্থির অন্ধকারে পাখি হয়ে যায়

 

২৩শে শ্রাবণ’ ১৪২৭

আবহমান সাম্প্রতিক

 


আবহমান সাম্প্রতিক

 

নির্বাপিত অগ্নিশিখার ছায়ার মতো শায়িত শয়ানে

পলাতক ভূবন ডাঙ্গার মাঠ।

কোথাও আর কোনো

 ট্রাফিক সিগনালের হাত দেখানো নেই।

যে যার দ্বীপের মতো দূরতর হৃদয়ে জপেছে সংশয়।

অভিমানে ক্ষমাহীন কঠিন আবেগে কঠিন হয়েছে

দিগন্তের আষাঢ়, বিশুষ্ক জ্যৈষ্ঠের খরার মতো মেপে

গেছে মনের জানালা।

ভালোবেসে ভালোবাসা দিতে গিয়ে তবু

রাত্রি আর সোহাগের সূক্ষ্ম দূরত্বে

হিমশৈল নড়েনি এখনো।

নাগরিক নাগপাশে হাসফাঁস হাইওয়ে ধরে

ছুটেছি আমরা। সকলেই সকলের আগে

সবাইকে ডিঙাবে।

তোমার প্রেমের কৌটো বন্ধ ছায়ার আসরে

আমার অন্ধকার জানি কেবলই রঙ চড়াবে।

সূর্যালো জলনদী ঘিরে তবুও অমেয় প্রতীতি

আজও পায়নি আমাদের-

রাত্রি আর সোহাগের সূক্ষ্ম মোচড়ে।

 

আমাদের পাঁচালি

 

 

আমাদের পাঁচালি

 

ঘোলা চাঁদ থাকে থাক ---আকাশে!

বারুদের স্বাদ যদি থেকে থাকে বাতাসে, থাক---

তবে ক্ষতি নেই এ সময়ে!

ভালোবাসা তোলা থাক আশাতে!

 

ব্লাউজের গন্ধে----

এসো তবে ঢেলে দিই---- নিজেকে

 

সময়ের সাথেতে

ল্যাং মারা ভিড়েতে----

ছিটকে যাই যদি কখনো!

 

চাই কি!

বিবেকের হাতেতে

ধুলো ঝেড়ে ভালোবাসা

পাড়া যাবে তখনো!

 

আজকের পাঁজিতে

ভালোবাসার দাবি যে

অসহায়----

 

প্রয়োজন প্রয়োজন

তারই শুধু আয়োজন!

আজকাল পরশু গতকাল

হয়ে যায়!!!

 

(০৬/০২/৯২)

আমার কোন ঈশ্বর নাই

 


আমার কোন ঈশ্বর নাই

 

আমার কোন ঈশ্বর নাই

বাড়ি ঘর সম্পত্তির মতো, কিংবা নারী

আমার কোন ঈশ্বর নাই

যাকে নিয়ে দাঙ্গা লাগাতে পারি

 

আমার কোন ঈশ্বর নাই

যার জন্য জমি দখল করতে হবে

 

আমার কোন ঈশ্বর নাই

মন্দির মসজিদ কিংবা গীর্জা, এইসবে

 

আমার কোন ঈশ্বর নাই

সারাদিনের কাজ অকাজ, অবসরে

 

আমার কোন ঈশ্বর নাই

সুখ অসুখ শোক, হাহাকারে

 

আমার কোন ঈশ্বর নাই

মানুষের থেকে বেশি পূজনীয়

 

আমার কোন ঈশ্বর নাই

ভালোবাসার থেকে পরম প্রার্থনীয়

 

২৯শে ভাদ্র’ ১৪২৭

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন