ব্যথা পাবে যন্ত্রণা নয়

 

 

ব্যথা পাবে যন্ত্রণা নয়

 

নিঃসঙ্গ হেমন্তসকাল

পিছনে গোটা পৃথিবী

পূর্বপুরুষরা যেন এখনো প্রেত হয়ে ঘোরে

 

মৃত্যুর কালশিটে নিয়ে

ব্যাথা হয়। যন্ত্রণা নয়।

 

প্রবৃত্তির অসংবৃত আবেগে

এখনো প্রেতেদের চলাচল

রক্তহীন বুদ্ধির প্রকোপ

 

ইতিহাসের আঁতুড়ে

প্রতিদিন জায়মান

 

এই পথে আবারো আসবে যারা

নিঃসঙ্গ হেমন্তসকাল

পিছনে গোটা পৃথিবী রেখে

 

মৃত্যুর কালশিটে নিয়ে

ব্যাথা পাবে। যন্ত্রণা নয়।

 

 

ভারতবর্ষ ২০২০

 

 

ভারতবর্ষ ২০২০

 

দুপায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি

আমার পা গড়িয়ে নেমে যাচ্ছে শুক্রাণু

আমার চারপাশে ভারতবর্ষের সব নারী

শুয়ে আছে। অগুনতি লাশের মতো মৃত।

বিস্ফোরিত চোখ, কাটা জিহ্বার আর্তনাদ

আজও কান পাতলে শোনা যায়, যাবে।

সেই সব ব্যর্থ স্তনী রিক্ত যোনির গর্ভে

ভারতবর্ষ লেখে নাম ধর্ষণের স্বাক্ষরে।

শত শত শতাব্দীর শুক্রাণু জমে রয়েছে

মুনিঋষি নৃপতি সেনাপতি বরকন্দাজের

আমাদের মতো আরও কাপুরুষের মগজে।

কোথাও কোন পরিতাপ নাই, সন্তপ্ত সময়

শুধু দাগ কাটে অপেক্ষার। অনিঃশেষ

 

১৭ই আশ্বিন’ ১৪২৭

 

ভালো তো?

 

 

ভালো তো?

 

রোজকার দেখা সাক্ষাতের পর্বে

বলি ভালো আছি

আপনিও আছেন ভালোই স্বভাবতঃই

হয়তো দাঁতের গোড়া

টনটন করছিল বলার সময়

আপনারও ইউরিক অ্যাসিড

জানান দিচ্ছিল পায়ের গোড়ালিতে

হয়তো বা

      হয়তো নয়

            হয়তো ভালোই লাগছিল

                 রাজপথের ধোঁয়া ধুলোয়

পরিচিত মুখ দেখে

নয়তো কেনই বা পরস্পর

কুশল বিনিময় বাস ধরার

                ব্যস্ততা সত্বেও

 

হয়তো আপনার মুখটাই শুধু মনে ছিল

ধরতে পারছিলাম না ঠিক

দেখেছি কোথায়

নয়তো আরও একটু ঘনিষ্ঠ হওয়া যেত

পারিবারিক খোঁজ খবরে

 

তবু পরিচিত মুখের

একটুকরো হাসিরও ওজন আছে

শুনতেও কত ভালো লাগে

ভালো তো?

 

মনে হয় আমিও আছি তবে

পরিচিত মুখাবয়বে

প্রতিদিনের ধুলো আর ধোঁয়ায়

নাগরিক দুষণে

সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ি নি তবে

 

১৪ই ভাদ্র ১৪২৫

মনে নাই

 

 

মনে নাই

 

এই দেখ

কত সহজে ভোলা যায় স্মৃতি

বেলা অবেলায়, একদিনের সব ছবি

কেমন ফিকে করে দেয় কখনো হৃদয়

দেখ

 

এই দেখ

কেমন দিব্যি একাই থাকা যায়

ভোর বেলায় শীতঘুম দেবার সময়

কিংবা মধ্যাহ্ন ভোজনের ফাঁকা টেবিলে

একা

 

এই দেখ

বলিনি কোনদিন কি? বিচ্ছেদ স্থায়ী হয় হোক

শোক নয় কিছুতেই। তাই সমুদ্রমন্থনের বিষ

সহবাসে অমৃত হয়ে উঠলে পাল্টে যায় দুনিয়াটাই

শেষে

 

এই দেখ

পাতা ঝরে বনেদী স্মৃতির শোকে, সেও

বিবর্ণ হলুদ যখন। ব্যাথাহীন হালকা হৃদয়

ঝরে গেছি  কখন তোমার হৃদয় থেকে

মনে নাই…..

 

১৮ই কার্তিক’ ১৪২৭

 

মহাপ্রস্থানের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে

 

 

মহাপ্রস্থানের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে

 

বেশি কথা না বলাই ভালো

কাজ অকাজের ফাঁকে বেশি চিন্তা

কোন কাজের কথা নয়

 

যে দিকে দু’চোখ চলে যায়

যাওয়া ভালো- আলো

কিংবা অন্ধকার রেলিং ধরে ধরে

 

তুলটে ফটোগুলোর খোপে

ভালোবাসা জমানো

না থাকলে ক্ষতি কি

 

বেশিদূর চলে গেলে

দৃশ্য স্মৃতি মায়া

দিনে দিনে হালকা হতে থাকে

 

হোক। বেশি কিছু নিয়ে

টানাটানি দরকারি নয় তেমন

যেমন নিজের মতো থাকা

 

যেটুকু ছোঁয়া গেল যেটুকু গেল না

সেই সব বানভাসি জলের মতো

বাকি কথা পরে হবে

 

 

মাঝখানে কাঁটাতার

 

 

মাঝখানে কাঁটাতার

 

এই মাটির সবুজ ধরে পথ হেঁটে চলেছি

সামনেই কাঁটাতার মাইলের পর মাইল

অজগরের মতো সর্পিল নৃত্যে মশগুল

 

অসভ্য বর্বরের মতো পাসপোর্ট ভিসা

দেখতে হাত বাড়িয়ে থাকে স্বদেশ

আমার মাথায় তখনও খোলা নীলাকাশ

 

এই মাটি এপার ওপার জুড়ে নির্বাক শুয়ে থাকে

কোলজুড়ে খেলা করে অবুঝ অ আ ক খ

এখনো শেখেনি সে কথা কওয়া

 

নিঃশব্দ বাতাস জুড়ে ইতিহাসের বিলাপ

কপাল চাপড়ায় এপারের সকাল ওপারের সন্ধ্যায়

বিদেশী ক্যালেণ্ডারে রাত নামে প্রতিদিন

 

৩রা শ্রাবণ ১৪২৫

মাধ্যাকর্ষণ পেরিয়ে

 


মাধ্যাকর্ষণ পেরিয়ে

 

মাধ্যাকর্ষণ ভেদ করে হেঁটে চলেছি

অনন্তযৌবনা রূপসীর অমোঘ টানের মত

চারিদিকে শ্রাবণের ধারার মতো ঝরে পড়ছে

ভালোবাসার আদর দুরন্ত আবেগে

 

এখানে দিনরাত্রি নাই সময়ের বেড়াজাল ভেদ করে

এগিয়ে চলেছি সামনে পিছনে সবই অনন্ত

ইতিহাসের ললাট লিখন অতিক্রম করে ফেলেছি

মহাকাব্য নয়, বিধাতাও নেহাতই অপ্রাসাঙ্গিক

 

নীল জ্যোৎস্নার মতো স্বপ্নের রেলিং ধরে

শিশিরের মতো আবেগে ভালোবাসার পঙতিমালা

প্রতিটি মুহূর্তের আয়োজনে ধ্যানমগ্ন….

গৌতম বুদ্ধের মতো আত্মপ্রত্যয়ের স্থির

 

এসময়ে খুব মনে পড়ছে আপনাকে

উপক্রমণিকার আয়োজনে আয়ু ফুরায় আমাদের

সময়ের ব্যস্ত চৌকাঠে হিসাবের ধারাপাত খুলে

পরস্পর কালাতিপাত। মাধ্যাকর্ষণের ভিতর

 

১লা ফাল্গুন ১৪২৫

মারীচনৃত্যের রাতে

 


মারীচনৃত্যের রাতে

 

ভরসাহীন কবিতায় শব্দের সন্ত্রাসে

আমাদের সময় আমাদের পাণ্ডুলিপি

 

শতাব্দীর আঁতুরঘরে বিকলাঙ্গ প্রজন্ম

স্বভাবতঃই মরীচিকার চাপাশে ভিড়

 

মাঝে মাঝে চৌকাঠ জুড়ে মারীচনৃত্য

আর ইভিএম-এ মসনদের ছাড়পত্র

 

প্রায় নিখুঁত মন্ত্রবলে মস্তিষ্কের ভিতরে

ঘূণপোকার চাষ সান্ধ্যটিভির আসরে

 

প্রতিটি অক্ষরে ইতিহাস ধুয়ে মুছে দিয়ে

সময়ের কারিগর মুচকি মুচকি হাসে

 

বাকি কিছু থাকলে পড়ে, এখনো বিস্ময়

জানি না, আমি একা কিনা, তুমি কতদূরে

 

৩০শে অগ্রহায়ণ’ ১৪২৭

 

মিলে যায় সকলে

 


মিলে যায় সকলে

 

দাঁড়িয়ে আছি এখন সমাধির পাশে চুপচাপ

টুপটাপ বৃষ্টি পড়লে এসময় রোমান্টিক

কত কি গল্প সব। অনর্গল ডায়ালগ

পরপর একাকার, সমাধির নীচ থকে নীচে

 

সেই আমি বিপ্লবের ছায়া মাড়াই নি কখনো

রুটিন গৃহস্থ জীবন অর্ধাঙ্গিনীতে সম্পূর্ণ বৃত্ত

বাদবাকি ভাঙাচোড়া অক্ষরবৃত্তের সোপান

ডিঙিয়ে সময়ের শীর্ষে উঠে সমাধিস্থ এইখানে

 

তারপর প্রতিধ্বনি বাজলে ওম শান্তি ওম

অনেকের বিলাপ শুনি প্রলাপের মহড়ায়

দাগ লাগা আশার ক্যানভাস জুড়ে অশ্রবিন্দু

আমিও আশ্বস্ত হই। একা নই, একা নয় কেউ

 

এইখানে রাজা উজির উলুখাগড়া বাড়তি মানুষ

একাকার সব। হাড়গোড়ের হিসাব নিলে

সকলেই সমান। সকলেই প্রতিরূপ সকলের

সময়ের ঘন্টা বেজে গেলে মিলে যায় সকলে

 

১৮ই আষাঢ়’ ১৪২৬

মিসিসিপি নীলনদ ভোলগা পেরিয়ে

 


মিসিসিপি নীলনদ ভোলগা পেরিয়ে

 

তোমার হাত মেঘলা দুপুরের

ভ্যাপসা গরমের ঘামে ভিজে সপসপ

সেই হাত বাড়িয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলে

রোজকার নাগরিক ভিড়ের ভিতর

 

সচকিত চোখে হাতে হাত রেখে

তোমার পাশে নিজেকে দেখব ভাবি নি

পথের ব্যস্ততা পেরিয়ে হাতঘড়ির নিভৃতে

কুলকুল ঘাম মিলেমিশে উষ্ণ প্রস্রবণ

 

আমার হাতে টুপটুপ তোমার উষ্ণতা

বিন্দু বিন্দু সঞ্চয়ে ধরে রাখার প্রয়াস

আঙুলে আঙুলে নিয়ে ঢেউয়ের পর ঢেউ

ভিজে সপসপ সারা শরীর জুড়ে

 

পায়ে পায়ে নাগরিক রাজপথ ক্রমে

ভিড় থেকে হট্টগোল সব পেরিয়ে

তোমার আমার হাতের মুঠোর ভিতর

উথাল পাতাল জোয়ারের ঢেউয়ের মতন

 

মিসিসিপি নীলনদ ভোলগা পেরিয়ে

পিরামিড হরপ্পা চীনের প্রাচীর

আমরা দুজন হাতে হাতে হাতের মুঠোয়

বিন্দু বিন্দু ঘামে ভিজছি তখন………..

 

আশ্বিনের তেরো’ ১৪২৫

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন