মৃত্তিকার মত তুমি

মৃত্তিকার মত তুমি

 

আমরা যারা সমুদ্রের ঢেউয়ে লুটোপুটি খেয়েছি

মৎসকুমারীর ধ্যানে

বিশুদ্ধ জলকেলির শাদা রাতে,

বৃন্দাবনের ঘাটে রূপবতী করে গেছি

গোপিনীর গোপন রাত

শুশ্রূষার মতো চুম্বনে সব ক্ষত ধুয়ে নিয়ে ফিরেছি বারবার

জেনেছি নারীর মানে বিষাদসিন্ধুর বিন্দু ছেঁচে;

নীলকণ্ঠ বিষের পাত্রে সুজাতার পরমান্ন

আনবিক বিস্ফোরণ, আর বিষাক্ত গর্ভের লড়াইয়ে

তবুও যিশুর প্রতীক্ষার দশমাস

জেনেছি নারীর মানে কলকাতা আবার কলোল্লিনী হবে

অভিভাবিকার মতো কবিতার নির্ধূম আনন্দে

ডেকে নেবে বুদ্ধ এবং কনফুসিয়াসকে

দেখেছি নারীর মানে শতাব্দীর সূর্য জুড়ে

অবরুদ্ধ নগরীর চৌকাঠে বার বার মাথা ঠোকা

বিচূর্ণ হৃদয়ের নদী বেয়ে তবু- মানুষের আলেক্ষ্য লিখে রাখা

 

(১২/০৮/১৩)

 

মৃত্যু দেওয়াল

মৃত্যু দেওয়াল

 

আমিও কিন্তু ভেবেছিলাম

আলাদীনের প্রদীপ শিখা

উস্কে দেবো প্রেমের জোরে

বুকের ভিতর কেউ যদি বা কবর খোঁড়ে,

বোধিবৃক্ষের জন্ম দেব রাখবো ধরে

এমন কথাও ভেবেছিলাম

হৃৎপিণ্ড খুবলে নিলে

হৃদয়খানি দুলবে তবু প্রতিদিনের ক্রশে ঝুলে

 

তার পরেতে যুদ্ধ এল

বর্শা থেকে এটোম বোমা

কুরুক্ষেত্র পথ দেখালো

এথেন্স থেকে হিরোশিমা

 

এখন আমি সক্রেটিসের

বিষ এনেছি

চুমুক দিতে নিজে নিজে

ইতিহাসের দেওয়ালগুলো

দাঁড়িয়ে থাকুক রক্তে ভিজে

 

(২২/০৫/১২)

মৃত্যুর ঘরবাড়ি

মৃত্যুর ঘরবাড়ি

 

সুস্থদিনের ভগ্নাবশেষ নিয়ে স্বপ্নের সলতে পাকানো

ম্রিয়মান ঠোঁটের হাসি পরিত্রাণের লোকশ্রুতির মতো

বেহুলার ভেলায়

লাল ভেলভেটের কারপেট যদি জনপ্রিয় অভ্যর্থনা দিতে পারে

মেরুনীল আকাশের সীমায়,

দিকচক্রবাল হয়ত ততটা অভিশপ্ত নয়

বনজোৎস্নার গল্পে ঈর্ষাতুর কবিখ্যাতি

দু একটা এডিশনের পরই বিরল প্রজাতি

তবুও জন্মের কার্যকারণে জোয়ারের রাত

ক্তের চৌকাঠে ঠায় বসে থেকে দেখেছে,

বীর্য পতনের শব্দে

কিছুটা ভালোবাসার ব্যকরণও আছে

অসংখ্য শব্দের ভিতর

প্রতিদিন নিস্তব্ধতার ক্রমিক বিন্যাসে

আমাদের স্বরূপ ফুটেছে

আত্মস্থ তথাগত আর ফেরননি তার বোধিবৃক্ষের কাছে

ডিভোর্সের সনদে স্বাক্ষর করে দেখেছি

হিরোশিমা নাগাসাকি

কত তুচ্ছ হয়ে গেছে

 

(২৫/০৩/১৩)

 

মোস্ট ওয়ান্টেড

মোস্ট ওয়ান্টেড

 

এখানে সমস্ত কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে

কোনো গীতার বাণী নেই

এখানে সারথী আসনে বসেছেন ভণ্ড

শান্তির নোবেল তত্ত্ব নিয়ে

 এখানে সন্ত্রাস রপ্তানি করে ড্রোন ক্ষেপনাস্ত্র ওড়ে

এখানে নিরাপদ দূরত্বে সেনাপতি শান্তির পাঠ দেন

শীততাপ নিয়ন্ত্রিত শ্বেত শুভ্র ঘরে

 

তুমিও যুক্তির কথা বলো না

তুলো না অধিকারের কথা

চেও না ন্যায্য হকের দাবি

ভেবে তোমার সার্বভৌমতা

এখানে সাম্রাজ্যবাদ খনিজ শুঁকে চলে

সন্ত্রাসের গল্প বলে

গোয়েবেলসের কলে

 

তোমার রক্তে আগুন হয়ে নদী

যদি মোহনা পথে চলে----

মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে

মুণ্ড তোমার

দূরাত্মার ছলে।।

 

 (০৬/০৫/১২)

ম্যারাথন

ম্যারাথন

 

আজ এই অজগর পুর্ণিমার রাতে

জ্যোৎস্না ছেঁকে ছেঁকে

সূর্যরশ্মিগুলো পরপর

সাজিয়ে রাখছি

শতাব্দীর ক্রমানুসারে

প্রজননের পর্দায়

ডিএনএর ক্রমিক বিন্যাসে

তিমিরবিনাশী কোনো

তিলোত্তমা আলো

খুঁজে পায়নি মনীষীরা

তবুও কত কবিতা ফুরালো

 

নোয়ার নৌকা নিয়ে

অভিসারে বেড়িয়ে রমনী

শব্দের স্তুপে চাপা পড়ে

গেছে কবির ফিসফাস

ধমনীতে তবু শীৎকার

ফালি ফালি রোদের

সংবেদনে

 

সাগরমন্থনের সেই ভয়াবহ রাতে

যোনিসম্ভূতা লেলিহান লোভ

আর ডাকাতিয়া শুক্র

নিষিক্ত হলো আধুনিক ভ্রূণ

কুরুক্ষেত্র থেকে বাগদাদ

মূষলপর্ব থেকে হিরোশিমা

 

অথচ হাতের মুঠোয়

ধরতে চেয়ে অরুন্ধুতী আলো

ধুমকেতুগুলি কেবলি

শহীদ হয়ে এলো

শহীদস্মৃতির ফলক

খুঁজে নিতে এবার ম্যরাথন

 

 (০১/০৫/১২)

যখন বৃষ্টি নামল

যখন বৃষ্টি নামল

 

ঝিরিঝিরি বৃষ্টির অধরে

পয়ারের চুম্বন পাখা মেলেছে

আজ ১৪২০-র কবিসম্মেলনে

মৌসুমী মেঘের রঙে ঈশ্বরের ইশারায়

উতরোল আঁচল পাল তুলে দিক ভিজে চুলের স্বাক্ষরে

কবির অক্ষর জুড়ে তখন আদিম অরণ্যের বুকে

আপেল ফলবে

যৌবনের দুকূল ছাপিয়ে নদীর দিনলিপি

সঙ্গমের একান্ত আলাপে বিভোর হলে

হোক ক্ষতি নেই

সমুদ্রস্নানের পর সাগরকন্যার ঠোঁটে

কবিতার আমলকি ছুঁয়ে দিও কবি,

তোমার পয়ারের তরণী ঠেলে

সান্ধ্যবৃষ্টির জলসায়, শ্রাবণের সাথে সঙ্গতে

আমারো হৃদয় আজ, মেতেছে প্রেমের বন্দিশে

স্মৃতির এক্সপ্রেসে দূরন্ত ক্যালেণ্ডার জুড়ে

মহাকাব্য থেকে মানুষের মিছিলে

মেঘদূতের আনাগোনা শুধু

ঝিরিঝিরি বিরহের

অধরে মহাকালের আদর নিয়ে

১৪২০-র কবিসম্মলেন

 

(২২/০৫/১৩)

 

যদি আসো

যদি আসো

 

যদি পারো

হাতে করে এনো একটু ধৈর্য্য

আমার উঠোনে

 

যখন ছায়া তার  দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাকা

দৈর্ঘ্য নিয়ে ধীরে ধীরে

গলতে থাকবে ঘড়ির কাঁটার উঠোনে.

 

তোমার হাত ঘড়ি

হয়তো উসখুস করবে জীবনের ঠোঁটে,

সময়ের স্বাদে আঙুর ফলও টক,

 

তবু তোমার দৃষ্টি

চোখেমুখে সব ব্যস্ততা  সরিয়ে

স্থিতু হতো যদি ধৈর্য্যে এসে

 

যদি পারো একটু

ধৈর্য্যও এনো তবে

তোমার সাথেই

 

কবে আসছো তবে..........

তুমি?

 

(৩০/০৩/৯০)

যদিও একাকী

যদিও একাকী

 

আমরা যারা পথের পর পথ গেঁথেছি।

ঘরের পর ঘর ভেঙ্গে, পয়মন্ত অমৃতের সুধাক্ষরণের স্বপ্নে।

নবান্নের ধান ভেনেছি দুর্ভিক্ষের তাঁতে।

আমাদের গৃহিনীর বাসি আঁচলে তেপান্তরের ঘোড়া ছুটিয়েছি অম্লান।

ম্লান অক্ষরের সন্ধিপত্রে

দেখেছি নিজেদের বিবস্ত্র মুখ।

 তবু প্রতিদিনের অভিমন্যু বধে

থেকেছি শোকমিছিলের পুরভাগে।

অন্ধকার স্নায়ুর সিঁড়িতে পেখম মেলতে চেয়েছি

প্রতিদিন একটু একটু করে।

প্রস্ফূটিত আঁতুরের নরম সকালের মত।

তবু কুরুক্ষেত্র বাধে প্রলম্বিত দীর্ঘশ্বাসের চৌকাঠে।

 স্বপ্নের ডানা থেকে টুপটাপ

শিলিবৃষ্টি হলে আছাড় খাই।

জীবনের ভগ্নস্তুপ, ইতিহাসের দলিলে জমা রাখে মহাকাব্যগুলি।

মহাপ্রস্থানের পথে যদিও একাকী।

আমরা সবাই।

 

(১৩/০৬/১৩)

যদিও বসন্ত

যদিও বসন্ত

 

ঝড় থেমে গিয়েছে অনেক দিন, স্থিতু হয়েছে বৃষ্টি

হাড়হিম শীতে বৈরাগ্যের সুতো ছিঁড়ে মাটির বুকে

সিক্ততার ঘাস জুড়ানো ওম

শিকড়ে লেগেছে বিস্ময়

শাখাপ্রশাখা অনন্তকে ছুঁতে চেয়ে ফুলে ফলে

ডালি দিয়েছে ভরে

বিশ্বভরা প্রাণ কলমের নির্ঝরে ঝরিয়ে ব্যাস্ত কবি

শতাব্দীর পর শতাব্দী

প্রথম প্রেমের গল্পটুকু নিয়ে

ফাগুনে পলাশে ঘর বাঁধতে চেয়ে

 

ডানকাটা পরী নয়, হাতকাটা ব্লাউজের নীলে

শরীরের ওম মিলে গেলে বসন্ত নোঙর ফেলে

মিলনের অনেক গভীরে

সুষুপ্তির উন্মন তিমিরে উদ্দীপ্ত তিথির দূয়ারে

অম্লান সূর্য ছেঁকে নিয়ে

এক গণ্ডুষ আদর ঢেলে দিতে

ভীষ্মের শরশয্যা ঠোঁটে

প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে

প্রত্যেক শতাব্দীতে

 

(০৫/০৪/১৩)

 

যযাতি

যযাতি

 

তবুও জলপ্রপাতের মতো শব্দ শুনতে ভালো লাগে

এখনো কড়িকাঠ গোনার সময়ে

এখনো প্রজাপতি হৃদয়টাকে

জ্যোৎস্না গুনে গুনে স্বপ্নের মধু খেতে দেখি

বল্গাহীন উদ্দাম আকাশের উড়ালে পাঁজরের মর্মরে

ঘোড়সওয়ার সাজ

হাতের রেখাগুলি দাঁড়িপাল্লায় স্থির রাখতে পারেনি

স্বপ্ন সাধ সাধনা

কিন্তু আঙ্গুল  অন্য কথা বলে

 সেতারের সব তারে মরচে হয়তো বাকি থেকে যায়

সুর না থাক গান হাল ছাড়েনি এখনো

 

গুটিকেটে রেশমের সময় এখন নয়

তবুও জড়ির কাজের সময় নরম সোহাগ

যেন গল্পের নকশী কাঁথায় সহস্র আরব রজনী

গোধুলির স্বলাজ ইশারা

ঈশ্বরের বাতিঘরমূখি হলে এখনো

উত্তেজনা আসে

পাথরে বৃষ্টি হলে

শস্য নয়, কষ্টতো ফলতে পারে

যেমন ফলে যযাতি শরীরে

 

(২৭/০৫/১২)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন