শরীর জুড়ে ইস্তাহার

শরীর জুড়ে ইস্তাহার

 

শূন্য পেগভর্ত্তি নিঃস্ব আকাশ জুড়ে

নিঃসঙ্গ টেবিলল্যাম্প

স্মৃতির চারমিনারে

শরশয্যায়

 

শপথের সিন্দুক জুড়ে

সময়ের কীটে কুট কুট করে

কেটে গেছে বাঁধানো এস এম এস

এন্টিভাইরাসের দূর্গে তছনছ ইমেইল

ব্যাকআপ ফাইলে অট্টহাসির তর্জ্জনী

 

তবু সকালের রোদ

হামাগুড়ি দিলে অনভ্যস্ত চুম্বনে

ডানা মেলে বসতে চায়

দূরন্ত প্রজাপতি

 

সাত সমুদ্র তেরো নদীর দেওয়াল

পেড়িয়ে পক্ষীরাজ

ছুটে গেলে, তেপান্তরের

মাঠে দম নেয় সফেন বিশ্বাস

 

শিলালিপি জুড়ে

গ্রানাইট পাললিকে পলির অন্বয়

তুষারপাত কিংবা মরুঝড় নয়

ঘূণ পোকার অদম্য খেয়ালে

এখানে চৌষট্টি খোপে

কেবলই কিস্তিমাতের আসর

 

তবুও আবারো

এবার নতুন ইস্তাহারে

শুধু আমারই ইশারা এঁকে যেতে চাই

 

(১২/০৪/১৩)

 

শাহবাগ থেকে ফিরে

শাহবাগ থেকে ফিরে

 

দুটুকরো চুমুর অভিলাষে

মেঘ বৃষ্টি জল ভেঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি।

শহর নগরের ধুলোবালি কাঁকরে তুলা মীন বৃশ্চিকের

দংশন সয়েছি।

ভারিবুটের হাড়হিম শব্দে কানের পর্দা ফাটিয়ে

উৎকর্ণ হয়েছি।

আস্তিনে গোটানো গুপ্তঘাতকের অব্যর্থ লক্ষ্যের

সাথে লড়েছি।

শুধু দুটুকরো চুমুর একটুকরো ভালোবাসার সকাল হওয়ার জন্য

হে অনন্ত প্রেম আমাকে শক্তি দাও।

তোমার রাত্রি নিবিড় প্রভাতের উল্লাসের মতো।

তোমার মৃত্যু ঢেউয়ের পিঠে সফেন জীবনের মতো।

তোমার ভুমিকম্পে ধুলিসাৎ উদ্ভিদের প্রকম্পিত শিকড়ের স্বপ্নের মতো।

আমিও রেখে যাবো আমার ভালোবাসার স্বাক্ষর

আঁজলা ভরে---

তরুণ তরুণতর প্রত্যয়।

সুতীব্র আবেগে কয়েক কোটি দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ বিশ্বাস

যেমন শাহবাগ প্রান্তরে।

 

(১৮/০২/১৩)

শিরোনাম

শিরোনাম

 

প্রাণবন্ত সকালটা সন্তরনের মনে ধরল।

ব্রেকফাস্টের টেবিলে প্রভাতী সংবাদ।

প্রভাতী আলো

আকাশের নীলের সন্তরণে

সন্তরনের কাগজের শিরোনামে।

কচি কলাপাতা রঙের  তোয়ালের নরমে মুখ মুছে

প্রাভাতী আলোয়

সন্তরনের কাঁধে আলতো চাপে এসে দাঁড়ালো আলো...

প্রভাতী সংবাদ থেকে

মুখ তুলল সন্তরন.

আলোর মুখ ডুবল সন্তরনে.

উষ্ণতা নেমে এল

প্রভাতী আলোর চঞ্চলতায়।

ঠাণ্ডা হাওয়া আর সকালের রোদ ওদের সঙ্গে ছিল।

 

শুধু পেপার ওয়েট তখন ব্যস্ত

দৈনিক শিরোনামের রণ রক্ত  রিরংসার

ইতিহাস

উত্তুরে হাওয়ার কবল

থেকে উদ্ধারে.............

 

(১৫/১১/৯০)

শিরোনামে একুশ শতক

শিরোনামে একুশ শতক

 

শিকড় ওপড়ানো বিকেলে ঝুরঝুরে শিকড়ের সাথে

মুখোমুখি সংলাপ।

 

দোয়েলের শীর্ষে

কুরুক্ষেত্র থেকে মহাপ্রস্থানের আজান।

 

বিশ্বশান্তির পাকাধানে নিরাপত্তা পরিষদে

পতুলনাচের ইতিকথা।

 

লাইন অফ কন্ট্রলে প্রাতরাশের টেবিলে বুলেটের ধোঁয়া

হাঁফিয়ে উঠলেও ইদানিং।

 

বিপননে ব্যাস্ত সময়

মেধা আর শ্রম ককটেলে হৃদপিণ্ডে অসাড় কণ্ঠ।

 

ওয়াল স্ট্রীটে ক্লাস নিচ্ছেন জ্যাঠামশাই।

সর্বত্র সজাগ সতর্কতা।

 

কথামালা বোধোদয় গড়িয়ে

সান্ধ্যসোপে সজ্জিত গৃহ। জীবন বিমার স্কীম।

 

বিপ্লব ছেঁকে নিয়ে

হীরকের রাজা ভগবান। যা শোনাবেন তাই গান।

 

বিপ্রতীপে মুখর হলে মূর্খ  তার কাঁটা বর্ডারে পায়ের তলায়

নোম্যান্স ল্যাণ্ড এসে জমে

 

(১০/০৪/১২)

শিরোনামের আড়ালে

শিরোনামের আড়ালে

 

আমি আর তুমি আমরা সবাই

রাত্রি আর দিন সকাল সন্ধ্যায়

দেওয়ালে টাঙানো ইচ্ছে রঙিন সুতো

ঝোলানো আত্মপ্রবঞ্চনা আর বাদুড় ঝোলা.

আত্মনির্মাণের সিঁড়িতে পা ডোবেনা কারোর

এক পা দু পা

আত্মপ্রচারের পাঠশালায় নাম লেখানো

এই পৃথিবী ঠিক ততটাই ভালো যতটা হাততালি

তোমার কথায়

যতটা মিছিল আমার পেছনে

এ কথা যথেষ্ট নয় কতটা হৃদয়

এ কথা যথেষ্ট নয় কতটা সময়

দিতে পারি, দিতে চাই।

কতটা রঙিন হলো তোমার দিন

কতটা টপকালে সিঁড়ি বাধাহীন

 বড় কথা

তবুও স্ট্যাটাস দেখো

নীতি কথা খোদাইয়ের আত্মরতি

ও দিকে

প্রচারের আলোয় ভালোমানুষী মুখোশের

অবাধ গতি

এই তো গল্প! স্বল্প কথায় বন্ধু

অতি সম্প্রতি তোমার আমার

 

(০৭/০৩/১২)

শিলালিপি

শিলালিপি

 

শিলালিপি রেখে যাব আমিও।

কবরের পাশাপাশি সংলাপে

পেড়িয়ে যাক আলোকবর্ষ সময়।

নক্ষত্রপুঞ্জের  বুক চিরে

কোনো এক সূর্যতপা সকালে

কর্মব্যস্ত জীবনের কথা স্মরণে-

আবারো জন্ম নেবে ভালোবাসা।

সহস্র নক্ষত্রের জীবাশ্ম মন্থনে উঠে আসা

অমৃত প্রত্যয়ে।

সেদিনের বাণীতে

মানুষ নয়, হয়ত বা অন্যতর অভীপ্সা।

খুঁজে নেবে আমারও শিলালিপিখানি।

 

এ পৃথিবি হয়ত ততটা সূর্যকরোজ্জ্বল নয়।

যতটা ভেবে ছিলেন কবি।

তবু স্বপ্ন সাধ সাধনার ক্রমিক বিন্যাসে

যতজন হয়েছে আহত।

নিহতের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে

আমরা যারা এখনো চলেছি অন্তত।

আমাদের পথরেখা ধরে

সেদিনের নক্ষত্রমণ্ডলে সুরে সুরে ফুটবে নাকি

আমারও শিলালিপিখান।

অবিকল অবিরত?

 

(০১/০৬/১২)

শুধু এই চঞ্চলতা

শুধু এই চঞ্চলতা

 

কেন পান্থ এ চঞ্চলতা

আজি শ্রাবণঘনগহন মোহে

দিয়ে গেল কি কেউ

মৌনমুখর মনে শতেক ব্যাথা?

 

কেন পান্থ এ চঞ্চলতা

এসেছিল তবু কি আসে নাই

বিন্দু বিন্দু চরণ চিহ্নে ফেলে

চলে যাওয়া সে উদাসীনতা?

 

কেন পান্থ এ চঞ্চলতা

ঝড়ের রাতের হৃদয় অভিসারিকা,

ছলছল নদীধারা নিবিড় ছায়ায়-

প্রদীপ নিভাল কেন তন্দ্রাগতা?

 

পথিকবিহীন পথের ধারে

আজি শ্রাবণনিশীথ বর্ষাহারা,

মর্মরমুখরিত মৃদুপবনে

ক্লান্ত পান্থ আজি সঙ্গীহারা

 

বিদায় বিষাদে উদাসমত

বিরহবিশঙ্কিত করুণ কথা

ব্যর্থ শূন্য নিয়ে প্রতীক্ষা রত

ক্লান্ত পান্থ তার চঞ্চলতা

 

তিমিরনিবিড় হৃদয় হুতাশে

বিদ্যুৎ শিখা জ্বালো

হৃদয়মন্দ্রিত মিলনস্বপ্নে তবু

(পান্থ) এ চঞ্চলতা ভালো

 

(০৪/১০/১২)

 

শূন্য একক

শূন্য একক

 

আরও শুভ্র মানবিক হতে চেয়ে তুমি নক্ষত্রের মতো

বিশুদ্ধ স্ফূলিঙ্গে সোনালী নবান্নের ঘ্রাণে

প্রথম- শিশুর মুখ দেখতে গিয়েছিলে

দীপ্তিমান পয়ারের মতো হৃদয়ের মিল,

সব বিপন্নতা ভয় সংশয়ের তন্তুজাল গুটিয়ে নিতে চায়

কাস্তের মতো চাঁদের অন্ধকারে ঠোক্কর

খেয়ে গেলে খালি পড়ে থাকে সহস্রাব্দের নিরালা বোধিবৃক্ষতল

সবুজের অন্তরে কোনো কালিমা নেই জেনে

সজল অনুভবের বাতায়ন; তোমার নরম হাতে

কাকে খুঁজেছিল যুদ্ধ মধ্যবর্তী শান্তি পর্বে?

রূপালী জ্যোৎস্নার টকশোতে তোমার বিতর্কসন্ধ্যা

তোমারই দিকে চেয়েছিল জানি অনাথ শিশুর মতোন

তবু আমি আজকের সেমিনারে এসে

প্রেম ভালোবাসা মৃত্যু নিয়ে কিছু বলিনি

মধ্যরাতের পর সবকিছু নিরর্থক মনে করে

 

(৩১/০৯/১৩)

 

শূন্যতা

শূন্যতা

 

রঙ তুলিতে সবাই মজুত

মন জঠরে আগুনও জলে

শুভ্রনীল আকাশ তলে

ক্যানভাসটাই শূন্য শুধু।

 

ক্যালেন্ডার থাকে না থেমে

ডায়েরী ভরে শাদা পাতায়

চিন্তা আকুল অধীর মাথায়

মনের মাঝে হৃদয় ধূ ধূ.

 

ক্যানভাসটা হাতের কাছেই

মন বাড়ালেই যায় যে ছোঁয়া

মন আগুনে পুড়ছে ধোঁয়া

রক্ত ছোটা বুকের খাঁজে ।

 

সবুজ মাটি সোনালী রোদেও

স্পন্দনেতে কবর খোঁড়া

নিরালা নিমেষ একলা ঘোরা

কপাল ছাওয়া ছায়ার মাঝে

 

(১৪/১১/১১)

শেকল

শেকল

 

খুব কি বুড়িয়ে যাচ্ছে শুভ্র

ভুল করে কেবলই

খিটখিটে মেজাজে হাতরাচ্ছে দেরাজে

কার ঠিকানা সে খোঁজে?

কত বন্ধু এল গেল

মিত্র হল না কেউ

ভালোবাসা শেকলে বাঁধবে কি কেবলই

জীবনের পরিমিত ঢেউ?

ইদানিং স্নায়ু শিরা জুড়ে

বড় বেশি আগুনের আঁচ

কুরে খাওয়া আক্ষেপে চশমার দুমড়ানো কাঁচ

বড়ো বেশি দীর্ণ মনে হয় হাসিমুখ শীর্ণ মুখোশে,

মানুষেরা বেশ হেঁটে যায় ফিলগুড নিয়ে বাতাসে.

একা তবে আরও একা হয় চুম্বনে বিম্বিত ভয়

কাঙ্খিত সমুদ্রতট, দেখা, না এ জীবনে তো নয়

 

অনর্গল আয়ুর প্রশাখা হিমায়িত হাড়হিম রতি

বাংলার মাঠ ঘাট ঘেঁটে প্রণয়ের ছবি সম্প্রতি

চিন্ময়কলসের জল দেয় কি অমৃত ফল?

প্রজন্মলম্বিত আঁধার বুড়ো পায়ে পড়েছে শেকল

 

(১৯/০১/১২)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন