তবুও তাও

 

 

তবুও তাও

 

মুত্যু মুখে তোমার

চোখের তারায়

স্থিরবিন্দু আকঁবে আমার ভূমি

জোনাক জ্বলা

তোমার প্রেমের ফাগে

বসন্তকে যতোই মাতাও তুমি

 

এক্কাদোক্কা জীবন জুড়ে

খেলা

ঈশ্বরেরও ফুরিয়ে আসে

বেলা

 

মৃত্যুনদী

তটরেখা ধুয়ে

তাকিয়ে দেখো

তুমিই আছো শুয়ে

 

আমার চুমোয় অধর

ছুঁয়ে রেখে

দিনরাত্রি, প্রেমের

ভাষা শেখে

 

তবুও প্রেম

 

 

তবুও প্রেম

 

জলের মত ঘুরে ঘুরে যাদের ভালোবাসা

মুখরতার অন্তরে ভাষা পেয়ে যায়.....

তাদের উন্মন হৃদয়ে আমারও হৃদয়।

 

তোমার চোখের মান্ধাতার বারান্দায়

যাদের হল না ঠাঁই আজও। তারাও হয়তো

দৈনন্দিন ব্যাস্ততায় সে রিক্ততা ভুলে থাকতে চায়।

 

তবু যদি সূর্য্য মানে হয় আলো।

জ্যোৎস্না মানে জল। জীবনের সব রিক্ততাই শূন্য তো নয়।

নয় তা হলাহল।

 

আমাদের স্থাবর অস্থাবর ঘেঁটে খুঁজে পেলে একটি দুটি নাম—

প্রিয়োজন সান্নিধ্য আবেগে।

সত্যিই অবাক হতাম।

 

তবু তোমার সময় হলে দেখো,

কৃষ্ণ বিনা রাধা যেমন নয়।

রাধা বিনা কৃষ্ণ সখীময়।

 

বিশ্ব তারে সুর বেঁধেছি যারা।

হয়ত একটু চলেছি লাগাম ছাড়া;

কিন্ত তবু প্রেমের একটা মানে রিক্ত হিয়ায় করে তুলবই খাড়া।

 

 

তবুও শ্রাবণ

 

 

তবুও শ্রাবণ

 

বেদনার মণিবন্ধে স্মৃতিচূর্ণ যাতনার পালাগান

যবনিকা পতনের আগে মেঘদূত সকাশে

পলাশের মতো রঙের উদ্ভাসন নয়

বরং যে নদী মরুপথে হারালো ধারা-

হারানো নদীর মতো সেই! সেই ব্যাথা

ব্যাথার মলম বিচূর্ণ স্মৃতির চৌকাঠে জুড়ে.........

নিরালা মলাটের ভিতর পোড়ো ভিটের গন্ধের মতো

সন্ধ্যার ছায়া! একা দুই পায়ে হেঁটে চলে যাওয়া

মহাপ্রস্থানের পথে নয়! তবু চলে যেতে চাওয়া

বিশুষ্ক স্মৃতির দংশন থেকে দূরে, আরও দূরে-

যতটা দূরে যেতে পারেনি.... পারে না হৃদয়!

নিয়তির মতো নির্ভীক নয়, তবু প্রেমের ক্যানভাস জুড়ে

ব্যর্থ চুম্বন, দিশাহার  ডিম্বাণুর কোলাজ!

জ্যোৎস্নার মতো অবিরল নয় বরং অমাবস্যার মতো

নিঃস্ব রিক্ত সর্বহারা........তবুও নিটোল

 

(২৯/০৭/১৩)

 

তবুও সংশয়

 

 

তবুও সংশয়

 

পুরোনো বাড়ির দেওয়ালের মত

মানচিত্র মনে তাকিয়ো না তো

সংশয় গুলো অশত্থ হয়ে

শিকড় ছাড়ে বিশ্বাসে

 

মাঝে মাঝে শার্সিতে

মুখ রাখলে ক্ষতি কী?

সব ফুল শুকিয়ে গেলেও

কুঁড়ি থেকে যায় পিছনে

 

আদরগুলো সোহাগে ভিজিয়ে

অধরে জড়িয়ে নিলে

অস্থায়ী থেকে সঞ্চারী

নাচানো যেত ত্রিভূবন

 

বয়স তোমার কত? পঞ্চাশ

পেরোলো?  মধ্য রাতের

উসখুশ পোশাক মানে না

যদি না চেপে যাও নিজেকে

 

উড়ো খই উড়ু উড়ু মন

চিবুক ছেড়ে উড়েছে আকাশে

তবু দেখ সকালের রোদ

আর একটা রাত নিয়ে আসে সে

 

সাগর গর্জনে তিমির নাশি

হই এসো! এখনো তাপ

আছে যেটুকু! সেটুকু দেওয়া

যাক হৃদয়,  হ্যাঁ নির্ভয়ে

 

সংশয়গুলি পুড়ুক তবে

বিশ্বাসে! আর নিঃশ্বাসে!

 

 (০৭/০৮/১২)

তাথৈ

 

 

তাথৈ

 

জলের রঙে মন ভিজিয়ে রেখেছি শুক্লা পঞ্চমীর সন্ধ্যায়।

স্মৃতির টুংটাং ভালো লাগার মত রিমঝিম

আষাঢ়ের প্রথম দিন

তেপান্তরের প্রেমের গল্পের

মতো আমার সাথে।

স্বপ্নের সওদাগরের পক্ষীরাজ ছুটে চলেছে

বিন্দু বিন্দু আশার পসরা সাথে করে।

আগুনমুখো সময় যদিও এখন সুসহ নয়,

তবু জলপরী নৃত্যের জলসায় আজ এ সন্ধ্যা তোমার আমার।

অরুন্ধতী আলোর প্রদীপে কালপুরুষের পদস্খলনে।

স্রোতস্বিনী তুবি প্লাবনরাঙা শাড়িতে দুকূল ভাসাতে পারো।

বিন্দু বিন্দু আষাঢ়ের বাণী তোমার জলতরঙ্গে

কোষে কোষে মালকোষরাঙা সুরের প্রস্রবণ যেন।

আজ সন্ধ্যায় অনেক আদর জমা আছে।

আজ সন্ধ্যায় সমস্ত ঋণ ভুলে অকৃতজ্ঞ হলেও;

ভিজে ভিজে আষাঢ়ের ছাঁট

দেখো আমার কথা তোমাকে ভাবাচ্ছে।

 

(১৪/০৬/১৩)

 

 

তিন তুড়ি

 

 

তিন তুড়ি

 

বড়ো বেশি সামাজিক হতে গেলে,

 মুখোশ নৃত্যে পারদর্শী হওয়া ভালো।

সাজানো বাগানের মত বিন্যস্ত হাসির

দুপাটি সচ্ছন্দ সংলাপে মঞ্চ আলোকিত।

ঘাড় ফেরালে যতই অন্ধকার জমাট হোক।

চোখের সামনে কি ভালো ভদ্র সমাজ।

 

বড়ো বেশি কবি হতে গেলে

শব্দের আড়ালে পাঁজর খসানো ভালো।

দূর্গম পাহাড়ের মতো বিস্মিত বিস্ময় বুনে; দু ছত্র

সচ্ছন্দ প্রলাপে পাঠক মোহিত।

ঘাড় ফেরালে যতই অন্ধকার জমাট হোক।

অটোগ্রাফের লাইনে কি দারুণ পাঠক সমাজ।

 

বড়ো বেশি প্রেমিক হতে গেলে অজস্র চুম্বনে

হীরে জহরৎ পড়ানো ভালো। শাজাহানের মত বিমুগ্ধ

তাজমহল গেঁথে; দু-কলি সচ্ছন্দ আলাপে

প্রেমিকা মুর্ছিত।

ঘাড় ফেরালে যতই অন্ধকার জমাট হোক।

সোহাগে আদরে কি অধীর প্রেমিকা সমাজ।

 

(০৮/০৮/১২)

তিনটুকরো কবিতার শতটুকরো জীবন

 

 

তিনটুকরো কবিতার শতটুকরো জীবন

 

(১)

 

সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের

পাশ দিয়ে জীবনের

সর্পিল গতি

তবু পিরামিড পাথরে

লিখো না আমার নাম

একবিন্দু বৃষ্টি নিয়ে বুকে

দূর্বা চোখে যে টুকৄ পেরেছি

দেখো; সবুজ

দিয়ে গেলাম

 

(২)

 

জানি তোমার শাড়ীর পাড়েই

দুরন্ত নীল আকাশ

আর আঁচল জুড়ে

উথাল পাতাল

সাত সমুদ্র ঢেউ

তবু বীর্যপাতের তৃপ্তিটুকু

ছাড়া; তোমার কাছে

আসবে কি আর

কেউ?

 

(৩)

 

লাইম লাইটের বলয় জুড়ে

হেঁটে কতই তোমার

খ্যাতির হিমালয়

তবুও পিদিম

নিভবে যে দিন শেষে

স্মৃতি পোড়া ছাই

দেখবে; কোথায়

সেও গিয়েছে

ভেসে!

 

(২৩/০৫/১২)

তিলোত্তমা বনসাই

 

তিলোত্তমা বনসাই

 

সেদিন গত বসন্তে নরম মায়াবী সকাল

নীল ভাঙা আকাশের ফালি

সোনা রোদ মুখে হাসি মন বলে

এই সেই, এই সেই দিন

 তবুও অন্তহীন যদিও পথ নেই

পথ নেই, এ নাগিরক দিন

ট্রামের তারের মতো স্বপ্ন বাঁধা এ জীবন

 

অথচ আমরা যারা গোটা দুই তিন

বসন্তের আকাশে হেঁটে চলে ফিরি

টান টান পীচ রাস্তা বুকে শন শন ভালোবাসা

হাই ওয়ে ধরে প্রেম হয়ে ছোটে

দুই চোখ হিরণ্ময় বিস্ময় নিয়ে

তুমি মেয়ে রাঙামাটি পায়ে তাদের দু চোখে

মুখোমুখি দাঁড়ালে

 

পোশাকের আড়ালে

আর এক পোশাকে

নাগরিক ভদ্রতাবোধ জিইয়ে রেখে-----

তোমাকে ছাড়িয়ে আরো দূর দূরতর

ধর্মগ্রন্থ মুখে আমরা সবাই

ফুল ফুটুক ফল ফলুক

সকলই তিলোত্তমা বনসাই

 

(১৬/০৩/১২)


তুমি বলেছিলে ~ তাই

 

 

তুমি বলেছিলে ~ তাই

 

তুমি বলেছিলে, তাই মৃত্যুর মুখে মুখ রেখে

উজ্জ্বল চুম্বনে ভালোবাসাকে দিয়েছি

শরশয্যা

 

তুমি বলেছিলে, তাই আটপৌরে হৃদয়

টুকরো টুকরো করে খোরপোশে রেখেছি

অস্থি ও মজ্জা

 

তুমি বলেছিলে, তাই কষ্টগুলোকে উস্কে

দেবদারু সন্ধ্যাপুরোনো চিঠিতেই

সব তরজা

 

তুমি বলেছিলে, তাই উৎসব ছাড়িয়

থোকা থোকা নদীর ঘ্রাণে পুড়িয়েছি

ছিল সব যা

 

তুমি বলেছিলে, তাই মধ্যরাতের আলাপে

নিদ্রাবড়ি সংলাপ শিথিল ধমনী জুড়ে

শুধু লজ্জা

 

তুমি বলেছিলে, তাই নীলকণ্ঠ বিষের যোনি

অমৃত কুম্ভ নিয়েও তোমাকে করিনি

কিন্তু কব্জা

 

তুমি বলেছিলে, তাই আকাঙ্খার খুদকুঁড়ো গুঁড়ো

গুঁড়িয়ে গুঁড়িয়ে ক্যানভাস জুড়ে

শূন্য বাসরসজ্জা

 

(২৭/০৩/১২)

তুমি শুধু তুমি

 


তুমি শুধু তুমি

 

হয়তো আলোর বিন্দুতেই আঁধার সিন্ধুর কোরাস

হয়তো অন্ধকারের সম্পূর্ণ বৃত্তেই

একরৈখিক তোমার আলোয়

আমার বৃত্তাকার সীমানা

হয়তো আমাদের পাণ্ডুলিপির তুলোটে সন্ধ্যায়

প্রাত্যহিক মহাভারতের গল্প

হয়তো তোমার আমার অক্ষর জোনাকির

ডানায় আলোকিত ঘন অন্ধকার

হয়তো ঋতু পরিবর্তনের বাসরে অভিমানী টানেল জুড়ে

ভালোবাসার অ আ ক খ

হয়তো মহাপ্রস্থানের সিঁড়িতে ইতিহাসের হাতেখড়ি

হয়তো প্লাবনের শেষ ডিঙায় আমাদের প্রথম দেখা

হয়তো শুভদৃষ্টির চোখে

ধৃতরাষ্ট্রর সংলাপ,

গান্ধারীর প্রেম কাহিনী

হয়তো একবিন্দু বৃষ্টির

নিরালা ফোঁটায়

তোমার সুরেলা আসর

হয়তো আমার শব্দের বোঁটায়

তোমার সুরভি

হয়তো আদিগন্ত সীমানায়

সংলাপের সবটাই

শুধু তুমি

 

 (২৫/০৬/১৩)

 

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন