এখনো এবং আজও

  

এখনো এবং আজও

 

মধ্যরাত্রির অন্ধকারকুচি ছড়ানো

নারীর পাপড়ির পথ ধরে ধরে

ক্যানভাসে যত রঙ করেছি জড়ো,

তত মধু হয়নি সঞ্চয় এখনো,

কিংবা আজও।

 

মহাপুরুষের খাতায় শুদ্ধস্বর

কিংবা বিশুদ্ধ ব্যাঞ্জনে স্বরবর্ণের প্রশস্তি।

খ্যাতির মনতৃপ্তির রূপকথার

স্বরলিপিতে কন্ঠদীপ্ত হইনি এখনো।

কিংবা আজও।

 

অষ্টধাতুর শরীর নিয়ে নয় সোনা।

ষড়রিপুর আলিঙ্গনের ফুলদানিতে

তোমায় ফোটাতে আজীবন-

দৃষ্টিপ্রদীপে যত চুমুর প্রজ্জ্বলন।

তত আলোকঋদ্ধ হয়নি প্রেম এখনো,

কিংবা আজও।

 

সমুদ্রনীল আকাশনীড়ের মতো ভালোবাসার ঘর।

কালের মন্দিরায় ফাঁকা বোল তুলে

আমাদের অনায়াস সঞ্চরণে;

নারীর মতোন তুমি শাড়ীর ভাঁজে ভাঁজে,

ভাঁজ করে রাখো নিজেকে কি করে এখনো।

এবং আজও।

 

(১৩/০৯/১৩)

 

এলবামের ঘরবাড়ি

  

এলবামের ঘরবাড়ি

 

অনেকগুলো দিন মুখে করে

 ছুটে চলে গেল দেরাজে রাখা এলবাম

ভুলের মাশুলগুলো

ঝলমলে দাঁতে মুখোমুখি হাসি সাজালো

বিবর্ণ সত্য নয়

 ভাললাগে মায়াবী আলোর গল্পে টুং টাং

দু পাত্রে স্বপ্ন আকাশ কুসুম

হয়ত স্মৃতির মানে গোলক ধাঁধায় ঘুরপাক

তবু অভিজ্ঞতা ধোয়া গণ্ডুষে

কেবলই কলার উচুঁ হয়

কিছু লোক ঠকানো সংলাপে শ্রেষ্ঠ কবিতার

ঝুলিতে মুখ রক্ষা অবশেষে

তবু নিরালা আয়নায় হাতঘড়ির স্বীকারক্তি

কিছুটা আম্লান আকাশ ধরে রাখে মুখোশে

নয়তো মাঝ রাতে কালো কালো ছায়াগুলো

সারি সারি দেওয়াল তুলে দেয়

ঘুমন্ত শরীর আর মনের ক্যাম্পাসে

 

মানুষের সংসারে ঘরবাড়ি

কিংবা ফুটপাথে

ছোট গল্পগুলো অতীতমুখীন হয়

কেবলই বয়সের ভারে;

নড়বড়ে দিনের কার্নিশে

 

(১৫/০৭/১২)

কবর থেকে দাঁড়িয়ে

  

কবর থেকে দাঁড়িয়ে

 

হয়তো যা বলতে চাই আজও

হয়তো যা বলতে পারিনি তাও

হয়তো তোমায় চাইনি আমার পাশে।

হয়তো বিষাদ লাল রক্তেই ভাসে।

 

কখন যেন দিনের সূর্যগুলো

মুখোশ নাচে চোখেই দিল ধুলো।

কখন যেন মিছিল পায়ে পায়ে

শপথগুলো পাল্টে পাল্টে যায়।

 

মধ্যরাতের ভাঙ্গা দরজা খুলে

দেখলে হয়তো শহীদ আছে ঝুলে।

দেখলে তুমি আয়না ভাঙ্গা কাঁচ।

প্রতিবিম্বের আঙ্গুল তুলে নাচ।

 

হয়তো তখন স্বাধীনতার মানে

লটকে থাকে কালাহাণ্ডির গানে।

গর্জে ওঠা বারুদগন্ধী ক্ষণ।

বন্ধু বল হারাবে অকারণ?

 

হয়তো আমার শব্দ মানে স্বপন।

হয়তো বৃথাই শরীর জুড়ে বপন;

বদ্ধমুঠি আকাশজোড়া হাত।

দাঁড়িয়ে থাকে প্রহর ভরা রাত।

 

(১৮/০৬/১২)

কবি যদি দুঃখ পায়

  

কবি যদি দুঃখ পায়

 

কবি যদি দুঃখ পায়।

তৃষ্ণার জলেও বিষম।

সকালের ধান ভাঙা রোদে

মরুপথের তাপ।

কবি যদি দুঃখ পায়।

কবিতার ভেতর আমি নেই।

ভালোবাসা অন্ন বস্ত্র

বাসস্থান হয়ে মমি।

বিশ্বাসে সন্ধ্যা ঘনায়।

কবি যদি দুঃখ পায়।

কবিতার খাতায় শব্দের কঙ্কাল।

কথা কাজ প্রশ্নে সব জট।

কবি যদি দুঃখ পায়।

নাভিকুণ্ডে তিলোত্তমা কলঙ্কিত।

পেয়ালা বোতলে ধোঁয়া ওড়ে

সানন্দা শরীরে।

কবি যদি দুঃখ পায়।

বহু প্রসবিনী সবুজ

অবুঝ খরার বুকে দহন।

গর্ভের কোষে প্রত্যয় পোড়ে।

কবি যদি দুঃখ পায়

শ্মশান কবর খোঁড়ে।

ভাস্কর আঙ্গুল মটকিয়ে

ক্রুশবিদ্ধ স্বশরীরে।

কবি যদি দুঃখ পায়।

সাতটি তারার তিমিরে

ঈশ্বর আবার পদ্মাসনে।

ত্রিভূবনে কে।

লোডশেডিংয়ে উন্মোচন

শলতে নেভা প্রদীপের।


কবিবন্ধু শোনো.....

  

কবিবন্ধু শোনো.....

 

কবিবন্ধু আজ

কোনসে কবিতা

তোমার ভালবাসার স্বপ্ন-নরম ছবি।

ধারণ করল শেষে শব্দমাত্রা ধ্বনি

নীরব মুখরে।

 

কবিবন্ধু বল

বইমেলার সেই দিন

প্রকাশ হল বই। এমন নতুন কি তা।

বিশেষত্বহীন। কিন্তু তবু ঐ।

ঐ যে তোমার নাম মলাট উপচে পড়ে

চেনা জানা সব বন্ধুমুখর স্বরে।

কি নাম দেবে তার?

কোন সে কবিতা

ধারণ করে স্মৃতিআত্মজৈবনিক অশ্রুসজল গীতি।

 

কবিবন্ধু তাও

ঐ যে কবিখ্যাতি  

প্রাসঙ্গিকও না। জন্মদিনের কবি  ধূপধূনোরই ছবি।

আবৃত্তিতে আর গবেষনাগার।

 

কিন্তু সেসব হলেও কালের গারদ গলে

নাম না জানা কবির একটি দুটি লাইন

মুখর জ্যোৎস্নায়। একটি দুটি লাইন

মৃত্যঞ্জয়ী স্বর।

বাঁচিয়ে যদি তোলে অনেক প্রত্যয়।

সেই তো তবে কবি তোমার অর্জন।

 মস্ত বড় বর।

 

(১৩/০৫/১২)

কবির মৃত্যু

  

কবির মৃত্যু

 

সেদিন কবির সাথে দেখা পুরানো বইয়ের দোকানে।

শরীরটা শীর্ণতোয়া নদী।

চোখ বসে গেছে কোটোরে। দৃষ্টিতে দেখলাম বিহ্বলতা

দখল নিয়েছে সময়ের।

পুরানো অক্ষরের সাথেই ঘর গেরোস্থলী।

মরে যাওয়া সময় নিয়ে মলাটে,

বিবর্ণ হলুদে ম্রিয়মান অতীত।

বিষণ্ণ বিষাদে সমালোচনার মৃদু তর্কেই পাঁজরে মর্মর ধ্বনি।

সাহিত্যের আসরে নেই। গবষকের খেয়ালে নির্ভর।

তাই কি?

 

কবি তোমার যুগের হাওয়া আজ মমির নিশ্বাসে।

বিশ্বাসের পিরামিডে ভালোবাসার ফসিল

আঁকড়ে বসে থাকতে পারো?

সেসব অলংকার সেদিনের বাণী

অগণন হাততালি

স্তিমিত নক্ষত্রের মরে যাওয়া আলোর রেখায়

প্রাগৈতিহাসিক।

এদিনের উৎসবে সেদিনের আনন্দের

নিমন্ত্রণ নেই আর তাই।

আজকের সূর্যে সেদিনের আলো আর নেই।

কলজে পোড়া ছাই

  

কলজে পোড়া ছাই

 

পাথরের মুখে কে আর নিজেকে দেখতে চায়?

বনপলাশীর পদাবলি নামাবলি গায়।

 

চোরাবালির ঠিকানায় প্রিয় রাস্তার গন্তব্য নয়,

পতাকার রঙ গায় মেখে গন্তব্য সহজ মনে হয়।

 

আশাবরি রাগে সাধা গলা অজান্তে কুমীর আনে টেনে,

বিক্ষোভ প্রতিবাদ মিছিলের আর্তনাদ সময়ের তুকতাক মেনে।

 

সময়ের চর্বিতে মেদ জমে ভারী।

একতলা দোতলা হয়ে চারচাকা কাঁচ ঢাকা গাড়ী।

 

প্রেমের দোসর হতে নগদ বিদায়। ভূলুণ্ঠিত জমি

তবু চিত্রনাট্যে যেমনটা হয়। আসলে তো মন নয় মমি।

 

পাথরের বুকে যেমন রক্তগঙ্গা বয়.....

তেমনই আমাদের ভালোবাসার অনন্ত সময়।

 

শ্বেতকপোতের শপথ  উড়ান দিয়ে, চল পা মেলাই।

মুখোশ নৃত্যে ছড়িয়ে দেব কলজে পোড়া ছাই।

 

(২৪/১১/১১)

কস্তুরীমৃগের ঘ্রাণ

  

 

কস্তুরীমৃগের ঘ্রাণ

 

আমরা যারা ভালোবেসে নারীর মুখে এঁকেছি প্রেমের চুম্বন।

শয্যারাতের গভীরে ডুব দিয়ে তুলে এনেছি

অমল তৃপ্তির সূর্য।

চোখে চোখ রেখে বলতে শিখেছি-"তুমি সুন্দর আমি ভালোবাসি"

তারাও বিশুদ্ধ প্রেমিক নই।

শার্টের আস্তিনে কস্তুরীমৃগের ঘ্রাণ ঢেকে রাখে

পূর্বপুরুষের লালিত অধ্যবসায়।

নারীর চেতনা নয় প্রজ্ঞা নয়

নয় সূর্যতপা ঋদ্ধি?

শরীরের ঘ্রাণ মাঘ নিশীথের রাত্রে

অনেক বেশি মনোময় মনে হয়।

টেনে নেয় উষ্ণ সান্নিধ্যে।

 

মানুষ প্রকৃতির সাথে রোজকার সহবাসে

তবে কেবলি রেখে যেতে হবে স্বপ্ন নয়,

সাধনা নয়,

নয় উন্মুক্ত প্রত্যয়।

শুধুই বীর্য পতনের শব্দ?

পৃথিবীর আহ্নিকে তবে

আরও বড়ো দরজা খোলার স্তব করতে হবে।

নয়তো একদিন মানব ফৄরাবে।

 

(০৯/০৯/১২)

কাউন্ট ডাউন

  

কাউন্ট ডাউন

 

অনেকগুলো টুকরো কাব্য

পেড়িয়ে এলাম।

ঘাসফড়িং এর ডগায়

শিশিরকণা স্মৃতিগুলো

পাঁচ আঙ্গুলে জড়িয়ে।

 

মিউজিয়ামের শো-পিস এর

মতো গুরুগম্ভীর নয়।

নীরব নিথর। তবু

গল্প আছে ভরা।

 

সুখ দুঃখের দুই কাঁটার

সময় ঘড়ি।

জীবনের হিসাব ধরে ধরে

কেবলই ঈশ্বর হতে চায়।

তাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এ

অভিমন্যু আজ।

 

হয়তো নোয়ার নৌকায়

উঠতে হবে ঠিক।

তবুও দিগ্বিদিক শূন্য

হয়ে ২০১২।

 

(১৯শে এপ্রিল) ২০১২

কাব্য কবিতা এবং

  

কাব্য কবিতা এবং

 

না

সব কবিতাই মূলত আত্মরতি।

তবু কখন কোন পদ হয়ে ওঠে কালের দর্পণ

কোন অনুভবে নোঙর ফেলে শাশ্বত মন

নক্ষত্রের ইশারায় নাকি অবধারিত গতি।

 

ঠিক

সে ঠিকানা অক্ষরবৃত্তে জানেন না কোনো কবি।

শব্দের কিনারায় প্রেম অপ্রেমের দোতারায়

জীবনের বিচ্ছিন্ন সিম্ফনীর ঘুঘু চড়া চরায়

এ কেবল সৃষ্টির সলতে পাকানো টুকরো টুকরো ছবি।

 

হ্যাঁ

ক্যানভাস ভেঙে ভেঙে বিবর্ণ রামধনুর সিঁড়ি-

টপকে টপকে নিজের সঙ্গে মুখোমুখি।

রোজনামচায় অযুত নিযুত ঠোকাঠুকি-

আর অমৃতমন্থনে নীলকন্ঠ বিষের হিমগিরি।

 

 

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন