মক ফাইট

মক ফাইট

 

আকাশ টিপ হাসিতে আনন্দ ঝরিয়ে বলো

একটা দুটো ভালোবাসার কথা

মান্ধাতার বাবার আমল থেকে বসে আছি

গঙ্গা যমুনা পদ্মার তৃষ্ণায় ফুটিফাটা চৌচির

চুমুগুলো নিয়ে আজো সকালে রোদ উঠেছিল

গোমড়া মুখে ছিটকিনির ফাঁক দিয়ে

বিবস্ত্র কটা আলো এসে তবু হৃদয় কাঁপালো

পাললিক শিলা থেকে পৌরসভার পীচে কেবলি

গর্ত খুঁড়ে চলে যায় সময় হাড়গোড় ভাঙাভুঙো নিয়ে

তবুও ফেস্টুনে ব্যানারে ধরে রাখি শিল্যানাসগুলি

রাতনামা পরীদের সন্ধ্যায় গলা ঢক ঢক বার থেকে

মাসি পিসির ঠেকে...এই বাংলায় সমস্ত বিপ্লব

এসে স্লোগান ভিজিয়ে নেয় তোমার আদরে

তবু উন্নত নাসিকা কুঞ্চনে

আজো আমাদের আঁতেল মিছিলে

লড়াইয়ের ঢাকে কাঠি পড়ে

মান্ধাতার বাবার আমল থেকে চলেছে লড়াই।।

চলছে

 

 (০৭/১২/১২)

 

মধ্যরাতের লজ্জাবতী

মধ্যরাতের লজ্জাবতী

 

তোমার আমার মধ্যে ছিলো

সুতোয় বোনা লজ্জাগুলো।

রং বেরঙের মনের কথা

শরীর জোড়া জমাট ধুলো।

 

জড়িয়ে ছিলো অষ্টপ্রহর

মধ্যরাতের সিক্ত চাদর।

তবুও সখা লজ্জা পেলে

ব্যর্থ হল তপ্ত আদর।

 

রাতের ডানায় উত্তেজনা

ঠিক স্টেশনে মিলিয়ে দিলো

শরীর ভাঙ্গা ঢেউয়ের মাথায়

সব সিগন্যাল সবুজ ছিলো।

 

জ্যোৎস্নাগুলো চার দেওয়ালে

সুখের ঘরে আঁকল সোহাগ

তবুও কেন শামুক হলে

মধ্যরাতে বাজল বেহাগ?

 

মন গহনে ডুব দিয়ে মন

একটু হলে লজ্জাহীনা।

বুঝতে তুমি মিলন মেলা

সাঙ্গ হয় না সোহাগ বিনা।

 

শরীর জুড়ে রাত নামিলে

জ্বেলোই নাহয় সবুজ আলো

মধ্যরাতের নেশার ঘোরে

হৃদয়বীণাও বাজবে ভালো।

(২৭/০৫/১২)

মন ফড়িং

মন ফড়িং

 

সব নারী ঘরে ফেরে না

সব নদী ডুব সাঁতার জানে না

পায়ে পায়ে বাঁধন খোলার আয়োজনে

নকশিকাঁথার দুপুর হাতছানি দিতে থাকে

নদীর বাঁকে গোধুলির আলপনা

নারীর মনের কথা বলে

যে নারীরা ঘরে ফেরে না,

যে নদী ডুব সাঁতার দেবে না,

চতুর্দশীর চাঁদে তাদেরও মন কেমন করে

রাত্রি তৃতীয় প্রহরে নদীর বাঁকে বাঁকে,

শরীরের অপভ্রংশ পূর্বরাগ ধরলে

কুমারী জ্যোৎস্না টলমল করে ওঠে

 স্থির চাঁদ নিষ্পলক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখে

সব সঙ্গম ভালোবাসার জলে ভেজে না

সব প্রেম প্রজাপতির রঙে

ডানা মেলে ওড়ে না

তবু নদীর ঢেউ আর নারীর ওম

দুকূল ছাপিয়ে যেতে চায়

বর্ষার মেঘে আষাঢ় নামলে

শ্রাবণঘন সন্ধ্যায় ভরে ওঠে

নদী আর নারীর সময়

তখন কে আর ঘরে ফিরে যেতে চায়

 

(২১/০৫/১৩)

 

ময়ুর পালক

ময়ুর পালক

 

তারপর

অনেক ময়ুর পালক সমুদ্রনীল আকাশের বুকে

নদী এঁকে গেছে রূপকথার জন্মের অনেক আগে

তারপর রূপবতী পরীদের ডানা ছেঁটে

শঙ্খনীল কারাগার বানানোর কালে

নারীর লক্ষণরেখা এঁকে রেখে গেল তারা

সামুদ্রিক ঝিনুকের মতো সৌখীন সুখের ঘরে

ডানা ছাঁটা পরীর গল্পে তারপর নারী

তাদের আকাশ আর বাতাসের ভেজা স্বর

ধু ধু বালির চরে শুয়ে থাকা নদীর মতো

সুরে গুনগুন করে শুধু

আসবাব ঠাঁটবাট ঘরকন্নার ঘরে

অন্তহীন রাত্রির তৃতীয় প্রহরে শিথিল নক্ষত্রের মতো

আগুনে আগুনে ভিতর দিকে পোড়ে

পৃথিবীর বয়সিনী শব্দরা তারপর কাব্যের প্রস্তুতি ছেড়ে

সমুদ্রের ঢেউ হয়ে ওঠে সুনামির প্রলয়ের পরে

বিধাতা কি আবার বসবেন প্রেমের তুলি নিয়ে দুই হাতে?

তবে?

 

(০৭/০৮/১৩)

 

মরুভূমি

মরুভূমি

 

প্রিয় বন্ধুর ভালবাসা

 জলীয় বাষ্প হয়ে উড়ে গেলে

নিজেকেই বড়ো বিচ্ছিরি লাগে।

পাতা ঝরা ফুলহীন শীর্ণ গাছের ছায়ার মতো

নেহাতই অকিঞ্চিৎকর।

ভালবাসার লম্বা শিকড় নিয়ে সত্ত্বার গভীরে,

শৃঙ্খলিত নিঃসঙ্গতা।

বেআব্রু হয়ে দাঁড়িয় গেল তোমাদের মিছিলের পেছনে।

মুখে রা টি নেই। দৃষ্টিতে ছাদ উড়ে যাওয়া

ঘরের মতো বিভ্রান্তি।

হিমালয়ের মতো ভারী পা দুটো নিয়ে আমিও

স্ট্যাচু হয়ে যাই

বন্ধু স্মরণ সরণীতে।

 

জীবনের এই সব অভিজ্ঞতা নিয়ে পাণ্ডুর চাঁদ

জ্যোৎস্না ছড়ায়

মন কষাকষির বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায়।

যারা আজ ভালবাসা কুপিয়ে চলে গেল,

যারা যাবে কাল।

 

প্রিয় বন্ধু তুমি কি তোমার মাস্তুল থেকে

গুটিয়ে নবে শতচ্ছিন্ন ভালবাসার পাল।

 

(১৬/০৭/১২)

মহড়া

মহড়া

 

আজকের নাটকের নাম রেখেছি জুঁইফুলের সুবাসে

বেলফুলের পর্দা উঠলে

রজনীগন্ধা সময় গোলাপী সংলাপে বিভোর হবে জানি

পদ্মপাতায় জলকেলির রাতে

নাটকের পাত্রপাত্রীর সাজে

আমরা সবাই

কুমারসম্ভব থেকে ডাকঘরের ডাকের অপেক্ষায়

সূর্যমুখীর বুকেও জেগেছে বিস্ময়

ইন্দ্রধনুর ডিঙায় সওদাগরের পালে

ছায়াপথ পেড়িয়ে যাচ্ছি

বিকিকিনির হাটে ভালোবাসা

প্রেমের সাজ সজ্জার বিশ্বায়ন

আমাদের মঞ্চে আলোকসম্পাতে ব্যাস্ত

আজ রাতে নেই মৃত্যুর সুনামীর পূর্বাভাস

তবু মঞ্চজুড়ে চম্পা চামেলীর  অগ্ন্যুৎপাতে

 ধ্রুবতারার ধ্যানভগ্ন হলে ;

দেবর্ষি নারদের হাসি মঞ্চ ভাসাতে পারে নিশ্চয়

 না বিপ্লবের সাইরেন বাজাব না আমরা,

আমাদের নাটক

সে তো রোজকার মহড়া

মহাকালের আয়ুধ

মহাকালের আয়ুধ

 

আমি সব কিছু ছেড়ে দিতে রাজি।

প্রিয়তম শয্যাসুখ রাত্রির আধাঁরে।

লেটার বক্সের ভালোবাসা চাবি।

মোবাইলের প্রিয় নম্বর মুখস্থ সন্ধ্যা।

ভালোবাসার মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর খেলা

শীতের কুয়াশা বসন্তের পড়ন্ত বেলা।

শুধু মন্ত্রমুগ্ধ প্রভাতের একটি

শিশির বিন্দু হয়ে এসো।

তোমার নাভিকুণ্ডে অমৃত যোনির শাশ্বত আলোর

উজ্জ্বল আধার ধারণ করুক আমার

অমেয় পৌরুষ।

এই মাটির ঘ্রাণে তোমার সৃষ্টির সন্তাপ

আমায় দিক আরও মানবিক উজ্জ্বলতা।

আরও কিছু স্থির প্রত্যয়।

স্পষ্ট চেতনা।

লোভ লালসা লাম্পট্যের

অন্ধকারেও জ্বলা যাক জোনাকির মতো দৃঢ় অঙ্গিকারে

তার পর সেই আলোর রেখাই রূপরেখা

একদিন নব ইতিহাস।

মানবিক প্রত্যেয়ের গল্পে

এক বিন্দু আমি।

 

(২৪/১১/১১)

মহাকালের খেয়ায়

মহাকালের খেয়ায়


অনেকগুলো আষাঢ়ে মেঘ

চুমু খেয়ে গেল আমাদের প্রেমিকার সোহাগে

সন্ধ্যাপ্রদীপের শিখা জানি না মুখ টিপে হাসল কি না

তবে শিখা গলে পড়ল কিছু খুশির ফুলকি

যত গুলো বৃষ্টি নেমে ছিল আমার নামে

গুনে গুনে ভিজেছি আমি

সপ্তডিঙা প্রেমের পসরা নিয়ে চলেছি মহাকালের খেয়ায়

সব নারী হয়ত রামধনু আঁকে নি বুকে

হাসিতে ধরেনি বাসন্তী রঙ

তবু আমার এ ডিঙায় প্রেম আছে

ভালোবাসা নামে

সব আঁচল ভিজিয়ে দিতে পারে

আকাশনীল আনন্দে শরীর ভিজিয়ে নিয়ে

হয়ত কোনো সমুদ্রবন্দরে

তার বাতিঘর অপেক্ষায় আছে

সপ্তডিঙ্গা চলেছে অভিসারে

মেঘদূত আজ পিছিয়ে পড়েছে

 

রাত্রিকে খোঁপায় বেঁধে

শূন্য শয্যায় যে আজও শুয়ে আছে

অনেক গুলো নক্ষত্রের আলো তাকে আজ আদর করেছে

 

(০৩/০৭/১২)

মহানগর

মহানগর

 

সুষুপ্তির অন্ধকারের সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেছে

বধির চেতনা।

নাগরিক রাতের শরীরে স্নায়বিক দূর্বলতা

তীব্র থেকে তীব্রতর যখন।

শুদ্ধতর নিরুত্তর প্রশ্ন শায়িত নিশ্চুপে।

আমাদের আলিঙ্গনের মাঝখানে।

জীবাশ্বের সন্ধ্যা এসে কেবলি হাতছানি দেয়

রোজকার সঙ্গমে।

শাদা চাদরের মতো বলয়িত ক্যানভাসে

সব রঙ ফিকে হয়ে এলে;

গর্ভের ভ্রূণে আমল কি হরিতকী ফলাতে পারো কি

শরীরী বিভঙ্গে সামুদ্রিক সুনামির উচ্ছ্বাসে

প্রলম্বিত উষ্ণ আবেগে?

মৃত্যুর অভিষেকে সঞ্চারিত প্রাণের অতলে

বিন্দু বিন্দু প্রেম জমে গেলে,

তোমার চুম্বনে শুদ্ধ করে নিও তবে আমার শরীর।

সন্ত্রস্ত নিস্তব্ধ রাতে যখন ইদুঁর দৌড়ে প্লাবিত নগরী।।

 

(১৯/১০/১২)

মহানির্বাণ

মহানির্বাণ

 

আমরাও চলে যাব একদিন

রোজকার একান্ত অভ্যাস ছেড়ে

কতকিছু টুকিটাকি নিয়ত ভালোবাসা ফাঁকি দিয়ে

প্রিয়মুখ ফিরিয়ে দিয়ে গোলাপী তোড়ায়

সব কাজ ফেলে রেখে সব আশা ভালোবাসা

ভুলবোঝাবুঝির সকল সময়

আমরাও চলে যাব হাড়গোড় ফসিল করে দিয়ে

কবরের স্মৃতিতীর্থ নিয়ে

তুমিই কি থকিবে বাকি প্রিয়ে

 নক্ষত্র আলো নিয়ে হাহাকার আধাঁরে

খুঁজিবে কি আর আমাদের

এই সব পাহাড় সমুদ্র নদী

কত জল বহে যাবে ভাব

তবু কি আর এদিন ফিরে পাব?

তোমার আমার মিলনবিন্দু ফেলে

কে কোথায় ছিটকে চলে যাব,

 তবু আজ কত জোরাজুরি

কত হিসেবের কড়ি? কতো যুদ্ধ মহামারী

কত ছোটাছুটি পকেট ভরিতে

আর খ্যাতির মূর্তি গড়িতে

ওদিকে লখীন্দরের গর্তে

মহাকাল তুলিছে ফণা

নিশ্চুপে নিঃশর্তে

 

(০২/০৬/১২)

যে কবিতাটি খুঁজতে চান তার শিরোনাম দিয়ে সন্ধান করুন